নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো সরকারি পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।”

কলিমুদ্দি দফাদার

“ঘুরছি আমি কোন প্রেমের ই ঘুর্নিপাকে, ইশারাতে শিষ দিয়ে কে ডাকে যে আমাকে”

কলিমুদ্দি দফাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় পার্টিকে তার স্বাভাবিক রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত ...

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৮



জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে ঝুড়িহীন কিছু রাজনৈতিক দল। অভিযোগ জাতীয় পার্টি ফ্যাসিবাদীর সহযোগী, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী ডামি নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। সেই একই যুক্তি মেনে নিলে চরমোনাই সহ ১৮ এর নির্বাচনে বিএনপির কয়েকজন এমপির  নিষিদ্ধ হওয়ার কথা!!! দৃশ্যত বুঝাই যাচ্ছে কর্মী সমর্থকহীন হটাৎ টাইম লাইনে আসা ও কিংস পার্টিরা জাতীয় পার্টির অফিস দখল ভোট ব্যাংক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়াসহ দলটির তৃনমুল কর্মীদের  দলে ভিরানো‌‌ পাঁয়তারা করছে। উওরবঙ্গে জাতীয় পার্টির একটি শক্ত অবস্থান আছে; ১২-১৫ টি সিট মোটামুটি সবসময় তাদের পকেটে থাকে। সারাদেশে তাঁদের কিছু সলিড কর্মী সমর্থক আছে।

৯১ এর পর জাতীয় পার্টিকে কখনো‌ ই স্বাভাবিক রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি। অহেতুক মামলা হয়রানি দিয়ে সব পক্ষই এরশাদকে নিজের রাজনৈতিক বলয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ রাঙা, মুজিব, আনিসুল ইসলামের মত ধুরন্ধর জাতীয় পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগ থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে  আজ্ঞাবহ বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে দলটি; পারতপক্ষে ব্যাপারটি দৃষ্টিকটু হলে নিজ দল ও কর্মী বিবেচনায় ইহাই পলিটিক্সে।  

বর্তমান জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী একজন সৎ, মেধাবী, বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।‌ তার বাস্তবভিত্তিক আলোচনা,‌ যুক্তিনির্ভর কথা যতই শুনি ততই মুগ্ধতা ছড়ায়। জিএম কাদের, শামীম হায়দার পার্লামেন্টে এমনকি ২৪ আন্দোলনের সময় টকশোতে আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করেন। এখনকার ভুইফোঁড় অনেক রাজনৈতিক দল আর রাস্তা থেকে উঠে আসা নেতাদের থেকে একজন শামীম হায়দারের গুরুত্ব, মতামত প্রজ্ঞা অনেক বেশি। জাতীয় পার্টি ভুলত্রুটির উদ্ধে নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিক্তিতে অবশ্যই তাদের বিচার করা উচিত কিন্তু দেশের আইন-আদালত উপেক্ষা করে মব সৃষ্টি মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের দোশর আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা আরো একটি ফ্যাসিবাদীর শামিল।

একটি ন্যারেটিভ বাজারে প্রচার করা হচ্ছে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ফিরানোর  চেষ্টা চলছে? জাতীয় পার্টির কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে কি আওয়ামী লীগের  নেতৃবৃন্দ উপস্থিতি পাওয়া গেছে নাকি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আওয়ামী  ফান্ডিং এর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে? সর্বশেষ জাতীয় পার্টির অফিসে সামনে উস্কানিমূলক আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ- আর্মিদের হাতে আহত হোন নুরু সহ‌ গনঅধিকার কর্মী। যেখানে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ কোন সম্পৃক্ততা নেই। কোন এক অদৃশ্য কারনে আর্মি-পুলিশের বিচার না চেয়ে সারাদেশ মিডিয়া মেতে উঠেছে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধে! সেই যেন হোমারের সৃষ্টি গ্রীক মহাকাব্যের  "হেলেনা পলায়নের অজুহাতে ট্রয় নগরী আক্রমণের মত"...


মন্তব্য ২১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শামিম হায়দার পাটোয়ারির এত গুণ আছে, আমি জানতাম না। বনানিতে তার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আছে, যেখানে আমার ইউনিভার্সিটির একজন বড়ো ভাই কিছুদিন ক্লাস নিয়েছেন। তিনি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নিজ খরচে গ্রামে নিয়ে ভোট কেম্পেইন করিয়েছেন। সাধারণত প্রাইভেটে পড়ে মানুষ পলিটিক্স থেকে দুরে থাকতে ।

জাপাকে নিয়ে ভয় পাইতেসে জামাত-এনসিপি জোট । জাপা না জানি আবার লিগের ভোট পেয়ে যায় । তাহলে উহাদের বিরোধি দলে যাওয়ার খোয়াইশ পুরণ হবে না । বিএনপির সাথে দেনদরবার করা , ইলেকশনে না যাওয়ার হুমকি সহ খোদ ইলেকশন ভনডুল করা তখন সহজ হবে । এখন যে সুবিধা তারা ভোগ করছে ইলেকশন হলে সব ওফ হয়ে যাবে ।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: সাধারণত প্রাইভেটে পড়ে মানুষ পলিটিক্স থেকে দুরে থাকতে ।
কুতুব সাহেব, জাপার রাঙা পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি থাকা অবস্থায় কতশত কোটি টাকা কামিয়েছে আপনার কোন ধারনা আছে? এমনকি আওয়ামী লীগের একজন ওয়ার্ড কমিশনার প্রভাব ও আয়ের তুলনা করলে জাপার শামীম বিরুদ্ধে অভিযোগ অতি নগণ্য? সংসদ, টকশো গুলোতে ওনার বক্তব্য গুলো শুনবেন। বাস্তবিক, প্রাসঙ্গিক কতোটা পড়াশোনা আর জ্ঞান থাকলে এর ভিতর থেকে চিন্তা করা যায়।

জাপাকে নিয়ে ভয় পাইতেসে জামাত-এনসিপি জোট ।
জামাত-এনসিপি অতি কৌশল বড়জোর এক টার্ম কাজে দিবে; এরপর সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১০

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



এরশাদ ঢাকার সুন্দরী মহিলাদের স্বামীদের ভালো চাকুরী দিয়ে, প্রমোশান দিয়ে, ১০/২০টা নারীর সাথে ঘুমায়েছে; কয়েকজনকে বৃটেন ও আমেরিকায় থাকার ব্যবস্হা করেছিলো।

সে বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের মত জীবন যাপন করেছে; আপনি থাইল্যান্ডে আছেন; ২ জনের মাঝে ভালোই মিল আছে।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫০

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: দুনিয়ার তাবৎ শয়তানী নেয়ামত স্বর্গীয় শূরা,‌ ঢাকার সুন্দরী-যুবতী কন্যা শুধু  হামিদ, আমু, তোফায়েল আর আপনার জন্যে; আপনারা ই ঘুমাবেন তাঁদের সাথে।

ঢাকার সুন্দরীরা শুধু বাকশালীদের গনিমতের মাল।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



জিয়া ও এরশাদের বুটের লাথির অভাব অনুভব করছে কয়েক কোটী বাংগালী

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: মিলিটারি বুটের লাথি কপালে জুটলে কিছু ডলার আর চিকিৎসার আশায় আমেরিকা পড়ে থাকতে হতো না।

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০৬

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: জিয়া রাজাকারদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা অথচ তাকে পছন্দ করা লোকেরা (দল বিএনপি না) জাপা-আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে রাজনীতি করতে দিতে চায় না। আজব কারবার।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৪

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: আপনার কি মনে হয় বিএনপি জাপা-আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায়? তারা এখন জামাত-এনসিপির ইসলামী দলগুলোর অতি কৌশল আর হুটহাট সংঘঠিত রাজনৈতিকরোষের বলির পাঁঠা মাত্র।

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৮

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: @ অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য,

জাপা-আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে রাজনীতি করতে না দেওয়াটা আজব কারবার নয় এরা ভারতে দালাল ছিল, প্রকৃত দালাল বলতে যা বোঝায় এরা তাই ছিল।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩২

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: ভারত বিরোধিতা এদেশের শুধু রাজনৈতিক ভোট ব্যাংক। সকল সরকার ই ভারতের আশির্বাদ আর মদদ পুষ্ট। কালকে এনসিপি ক্ষমতায় আসলে প্রথমে ভারত সফর করবে এই মুলা ধরিয়ে যে- "ভারত বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী দেশ; দুই দেশের সম্পর্ক হবে সমতার ভিত্তিতে"।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ভংগুর অর্থনীতি, জ্বালানি নিরাপত্তার অনিশ্চিয়তা ভারতের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই।

৬| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

কামাল১৮ বলেছেন: আওয়ামী লীগ সহ সবার অধিকার আছে স্বাভাবিক রাজনীতি করার।এটা মানবাধিকার।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৫

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: সহমত!

কিন্তু আওয়ামী সময়ে বামেরা জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছিল।

৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৮

ক্লোন রাফা বলেছেন: জামাত , এনছিপি সহ সকল দল জাপা আতঙ্কে ভুগছে। যদি জাপা বিরোধী দল হয়ে যায় পরবর্তীতে। আসলে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করবে ক‍্যান্টনমেন্ট ও বিদেশী অপশক্তির গোষ্ঠী।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৯

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: জামাত-এনসিপির অতি কৌশল নির্বাচন পর্যন্তই.....

৮| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৪৪

গোবিন্দলগোবেচারা বলেছেন: @জেনারেশন রাজাকার- আপনি নিজ নামে না লিখে ছদ্মনামে লেখার কারণে মনে হয় ব্লগ অ্যাডমিন আপনাকে প্রথম পাতায় লিখতে দিচ্ছেনা।
আপনি এক কাজ করেন, আপনার নিজ নাম "কুত্তার লেজ" এই নিকে লেখা শুরু করেন, অতিসত্বর প্রথম পাতায় এক্সেস পাবেন।

৯| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: এরশাদ মারা যাবার পর জাতীয় পার্টি খুবই নিরীহ দল।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৯

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

১০| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫০

বিজন রয় বলেছেন: সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এখন যে সুবিধা তারা ভোগ করছে ইলেকশন হলে সব ওফ হয়ে যাবে ।

সঠিক।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৮

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক‌ দিন‌ পর...

১১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০১

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: জাতীয় পার্টি কি ভারতের ক্রীড়নক?
আমি জাতীয় পার্টির একজন কার্ডধারী সদস্য ছিলাম এবং আত্মীয়তার বদৌলতে পেয়েছিলাম নেতৃস্থানীয় পদ। এই লেখাটি আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, যেখানে দলটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
শৈশব থেকেই রাজনীতির প্রতি আমার গভীর আগ্রহ ছিল। তরুণ বয়সে যখন আমি একজন আইনজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করলাম, তখন রাজনীতির বিশ্লেষণকে বাস্তবে প্রয়োগ করার ইচ্ছে জাগলো। জাতীয় পার্টি বেছে নেওয়ার পেছনে কারণ ছিল এইচ. এম. এরশাদ এবং জি. এম. কাদের ছিলেন আমার বাবার মামা। আমার বাবা ছিলেন একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা এবং ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তিনি মারা যান। তিনি কখনো রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। আমি ভাবলাম, যদি রাজনীতিতে অবদান রাখতে হয়, তবে এই দলটিই হবে আমার জন্য স্বাভাবিক পছন্দ। শুধু যে আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতি একটি পরিচিত পরিবেশ তৈরি করবে তা-ই নয়, আমার মনে হয়েছিলো দলটিকে ঢেলে সাজানোরও সুযোগ আছে।
২০১৯ সালে আমি প্রথম জি.এম কাদেরকে (যাকে আমি “দাদু” বলে সম্বোধন করি) আমার আগ্রহের কথা জানাই। আমার পেশাগত জীবনের কথা জেনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী আমার জন্য উপযুক্ত হবে এবং বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের খালি পদে আবেদন করার পরামর্শ দেন। আমি আবেদন জমা দিলে তিনি প্রাথমিক অনুমোদন দেন এবং পরে এরশাদ— যিনি তখন দলের চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা— দলের সংবিধানের বিতর্কিত ধারা ২০(১)(১)(ক) ব্যবহার করে আমাকে নিয়োগ দেন। ধারাটিতে বলা আছে, চেয়ারম্যান ইচ্ছেমতো যে কোনো পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্ত করতে পারেন, কাউকে নিয়োগ বা অপসারণ করতে পারেন এবং তিনি যোগ্য মনে করলে পদে যেকোনো পরিবর্তন আনতে পারেন। আমি আদর্শবাদী স্বপ্ন নিয়ে দলে যোগ দিই— দলকে সঠিক পথে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে এরশাদের মৃত্যুর পর ডিসেম্বর মাসে দলীয় কাউন্সিল হয়। এর ঠিক পরেই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হয়। কাদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, আর আমার আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদও স্থায়ী হয়। সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর ২০২১ সালে আমি পূর্ণাঙ্গভাবে দলীয় কাজে নামি। আমার মূল দায়িত্ব ছিল দুইটি— বিদেশে জাতীয় পার্টির কমিটিগুলোর পুনর্গঠন এবং ঢাকার কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে দলের প্রতিনিধি হিসেবে যোগাযোগ রাখা।
বাংলাদেশের আইনে রাজনৈতিক দলের বিদেশে শাখা থাকার অনুমতি নেই। কিন্তু সব বড় দলই বহুদিন ধরে মূলত প্রবাসী এবং অভিবাসীদের অনুদান পেয়ে আসছে। এসব অনুদানের লোভে আইন অমান্য করে দলগুলো “কমিটি” গঠন করে আসছিল। এরশাদের ঘনিষ্ঠ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা অনুদানের বিনিময়ে বিদেশে কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব অনুদান দলের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি এবং এইসব কমিটির কথা কাদের জানতেনও না। ফলে কাদেরের একজন বিশ্বস্ত লোকের দরকার ছিল। এসব সমস্যার সমাধানে আমি নিশ্চিত করেছি, যেন কাদেরের সম্মতিতেই সবাই নিয়োগ পান। দলের নথির জন্য তার স্বাক্ষরও নিয়েছি, এবং যথাযথ কাগজপত্র সংরক্ষণ করেছি। এমনকি অফিসে বাড়তি একটি ফাইল রাখা হয়েছিল, যেখানে ওইসব কমিটি থেকে দলের পক্ষে দেওয়া রসিদ ও অর্থপ্রদানের প্রমাণ সযত্নে নথিবদ্ধ করা ছিল।
আমি জানতাম যে, আত্মীয়তার কারণে আমি এই পদ পেয়েছি এবং কাউন্সিলের লোক দেখানো অনুমোদনও ছিল। চেয়ারম্যানের আত্মীয় হওয়ায় আমার সঙ্গে তার সবসময় সরাসরি যোগাযোগ ছিল, যা অন্যদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করত। তাই আমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকি, যাতে কেউ মনে না করে আমি অযোগ্য।
২০২২ সালের মে মাসে আমি ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসভবনে এক নৈশভোজে যোগ দিই। নিমন্ত্রণটি ছিল প্রধানত শিক্ষাবিদ, শিল্পী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের জন্য। আমি একদিকে শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে দলীয় নেতা হিসেবে কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আমার দায়িত্ব ছিল। সেদিনের একটি ছবি, যেখানে আমি নিমন্ত্রণকারীর সঙ্গে ছিলাম— ভারতীয় রাষ্ট্রের জন্য সেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতীয় হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি সরাসরি দলের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান।
আমি তখন দলের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ নেতাদের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রচারের জন্য পরিচিত হচ্ছিলাম। হঠাৎ কাদের আমাকে জানালেন যে, ভারতীয় হাইকমিশনের রাজনৈতিক সচিব অনিমেষ (আইএফএস ২০১১ ব্যাচ) আমার পাকিস্তান হাইকমিশনারের সঙ্গে তোলা ছবিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভারতীয় কূটনীতিকের পাকিস্তান-বিরাগ স্বাভাবিক, কিন্তু একটি বিদেশি কূটনীতিক কেন জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদককে নিয়ে দলের চেয়ারম্যানকে মন্তব্য করবেন? আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কেন সেই মন্তব্য কাদের বা কোনো বাংলাদেশি দলের প্রধানের কাছে গুরুত্ব পাবে?
অনেকদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল যে, ভারত জাতীয় পার্টি ও দলটির চেয়ারম্যানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষ করে যখন দলটি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সর্ববৃহৎ জোটসঙ্গী বা সংসদের বিরোধীদল ছিল। কাদের কখনো ভারত সফরে তার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদের বৈঠকের বিবরণ আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করেননি। তবুও আমি অবাক হলাম যে, অনিমেষের হস্তক্ষেপে কাদেরের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অনিমেষ তাকে একটি বার্তা পাঠান, যা কাদের আমাকে ফরোয়ার্ড করেন— “স্যার, ব্যাপারটি আমাদের দেশে গুরুতরভাবে নোট করা হয়েছে। বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত। শুভেচ্ছা।”
কাদের আমাকে জানান, তাকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আমাকে সরাতে হবে।
আমাকে শুধু আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ থেকেই নয়, দলের আইটি সিস্টেম ও ওয়েবসাইট থেকেও মুছে ফেলা হয়। আমার সাধারণ সদস্যপদও বাতিল হয়। কাদের আমাকে বলেন কিছুদিন কূটনীতিকদের থেকে দূরে থাকতে, পরে আবার ফেরাবেন। কিন্তু আমার বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক চিঠি কখনো আমি দেখিনি। যদিও অনিমেষ তা দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। অর্থাৎ ভারতীয় কূটনীতিক বরখাস্তের কাগজ দেখেছেন, কিন্তু আমি বা বাংলাদেশি জনগণ কেউই তা দেখিনি।
২০২৩ সালের মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ আমি লজ্জা ও অনর্থক কাজে নিজের সময় নষ্ট করছি, এই হতাশায় দল থেকে দূরে সরে আসি। তখন আমাকে বরখাস্তের দশ মাস পরে কাদের আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফোন করে জানান যে ভারতীয় হাইকমিশনের আপত্তি আছে। দলের সঙ্গে ভারতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলো কাদেরের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে ছিল, আমি কোনোটি দেখিনি বা জানতামও না। হয়তো তা জানলেই বুঝতাম, কেন কাদের দিল্লির প্রতি এত অনুগত। শেষ পর্যন্ত, এই অবিচল,অদৃশ্য, অদম্য ভারত রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শক্তির কাছে হেরে আমি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় পার্টি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার ঘোষণা দিই। বিজ্ঞপ্তিটি দি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়। এরপর আমি আর জাতীয় পার্টিতে ফিরে যাইনি, যাওয়ার ইচ্ছেও নেই।
এই দায় স্বীকার আমার পক্ষ থেকে সত্য প্রকাশের চেষ্টা। আমার সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবনে আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু অন্যায়ভাবে বরখাস্ত হয়েছি, যা আমি এখন জনসম্মুখে প্রকাশ করছি। এই অন্যায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানে। যদিও আমি কয়েকজনের দিকে আঙুল তুলতে পারি, যারা আমার অপসারণে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল কাদেরের। তিনি নিখুঁতভাবে এক দালালের ভূমিকা পালন করেছেন। আমার বরখাস্তের সময় আমি বুঝেছি, এই দল কখনোই নিজের পরিচয় বহন করেনি। এটি আওয়ামী লীগ ও দিল্লির স্বার্থ বাস্তবায়নের হাতিয়ার ছিল। আমি আশা করি, একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় রাজনৈতিক দল ও এর চেয়ারম্যানের অভ্যন্তরীণ কর্মপরিচালনার এই তথ্য প্রকাশ হলে তা জনগণের কাজে আসবে। এই ব্যাপারটি জানার পর কাদের ও জাতীয় পার্টিকে বাংলাদেশের জনগণ কিভাবে দেখবে, তা পুরোপুরি তাদের ওপর নির্ভর করছে।
●লেখা-সাকিব রহমান (রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রগ্রেস ম্যাগাজিন-এর সম্পাদক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার।)

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪১

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: ধন্যবাদ মেঠোপথ অনেক বড় মন্তব্যর জন্যে।
কিছুটা পড়লাম; সময় করে আবার পড়ে মন্তব্য করবো।
তবে সারমর্ম যা বুঝলাম জাতীয় পার্টি ভারত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি রাজনৈতিক দল।
জি এম কাঁদের কে এখনো গ্রেফতার করছে না কেন সরকার?
এই সরকার কে তো আর ভারতীয় হাইকমিশনার থেকে
বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.