নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলম চোর পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি নিজের ব্যাপারে উদাসিন, অন্যের ব্যাপারে সচেতন, এবং দেশের ব্যাপারে বেশি সচেতন।

কলম চোর

কলম চোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

টকশোর নিরপেক্ষ ময়নাতদন্ত!

২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৬




বাংলাদেশে টকশোর ইতিহাস বেশি পুরনো নয়, পশ্চিমা দেশগুলোতে টেলিভিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই টকশোর অনুষ্ঠান চালু হলেও গত ৫০ বছরের মধ্যে সিএনএনের ল্যারি কিং লাইভ এবং বিবিসির হার্ড টক সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্যদিকে এশিয়ার মধ্যে স্টার টিভির সিমি গাড়োয়াল উপস্থাপিত টকশোটি গুণগতমানে সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করার গৌরব অর্জন করেছে। বাংলাদেশের টকশো চালু হয়েছিল চ্যানেল আই-এর মাধ্যমে ২০০৩ সালের জুলাই মাসে।

ইদানীংকালের টকশো নিয়ে দেশের জনগণের আবেগ-উচ্ছ্বাস আর আগের মতো নেই। সাধারণ মতামত হলো— জনগণ আগের মতো টকশো দেখে না। ফলে টকশোর আলোচক, উপস্থাপকদের আগের মতো সমীহ তো দূরের কথা, ঠিকমতো চেনে না। পূর্বে টকশোর নিত্যকার আলোচনা নিয়ে প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলো প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডলাইন প্রকাশ করত। কোনো কোনো অনুষ্ঠান নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করত। প্রতিটি পত্রিকা টকশো শিরোনামে একটি নির্দিষ্ট জায়গাজুড়ে প্রতিদিন নিবন্ধ প্রকাশ করত। সরকারি দফতর, সরকার এবং বিরোধী দল প্রবল আগ্রহ নিয়ে রাত জেগে প্রতিটি টকশো দেখত এবং আলোচনার বিষয়বস্তু, আলোচকদের মন্তব্য এবং উপস্থাপকের উপসংহারের বক্তব্য অতীব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করত। বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতের ইতিহাসে টকশোর মতো অন্য কোনো অনুষ্ঠান, নাটক বা সিনেমা এতটা গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করতে পারেনি। ফলে শান্তিপ্রিয় জনগণ এবং গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ যেমন টকশোকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করত তেমনি অগণতান্ত্রিক এবং দুরাচার শক্তিসমূহ টকশোকে ভয় পেত যমের মতো।

এখন প্রশ্ন হলো— টকশোর বর্তমান দুরবস্থায় কার কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান দুরবস্থার জন্য কে বা কারা কতটুকু দায়ী। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে বলে নেই টকশো নামক অনুষ্ঠানমালার নামে টেলিভিশনগুলোতে আসলে হচ্ছেটা কী? ২-১টা অনুষ্ঠান বাদে সবগুলোতেই আলোচক-উপস্থাপক সবাই মিলে সরকার বন্দনায় মত্ত এবং ক্ষেত্রবিশেষে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। মাঝে-মধ্যে সরকারবিরোধী ২-৪ জনকে ডাকা হয় বটে— কিন্তু তারা তেমন সুবিধা করতে পারেন না। উপস্থাপকের সনির্বন্ধ অনুরোধ, নিজেদের নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা এবং ভয় নতুবা টকশোতে অংশগ্রহণের সুযোগ হারানোর ভয়ে বিরোধী দলের লোকজন কৌশলে ধরি মাছ না ছুঁই পানির কায়দায় কথাবার্তা বলতে থাকেন। অন্যদিকে তারকা খ্যাতি পাওয়া লোকজন তো নয়ই এমনকি মোটামুটি যুক্তিগ্রাহ্য এবং সাহসী কথাবার্তা বলতে সক্ষম এমন লোকজনকে টকশোগুলোতে নিমন্ত্রণই জানানো হয় না।

সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকার টকশোর ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। অন্যদিকে, সরকারি নীতিনির্ধারণী মহলের দাবি সরকার কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। গত ছয় মাস কোনো টেলিভিশনে সরকারের পক্ষ থেকে ফোন করে কোনো টকশোর ব্যাপারে আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি অথবা কোনো আলোচককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি নীতিনির্ধারণী মহলের কয়েকজন আমাকে বলেছেন যে, টিভিগুলো অহেতুক আশঙ্কায় আক্রান্ত হয়ে নিজেরাই নিজেদের ওপর সেলফ সেন্সরশিপ জারি করেছে। তারা সরকারকে খুশি করার মানসে অথবা তেল মারার অভিলাষে সরকার তোষণে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। অন্যদিকে তারা নিজেদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কথা বলতে পারেন এমন আলোচকদের নিমন্ত্রণ করা থেকে বিরত থাকছে।

গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, কয়েকটি টেলিভিশন কেন্দ্র সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবং কয়েকটি জনপ্রিয় টকশোর অনুষ্ঠান সরকারি চাপে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়ার কারণে টেলিভিশন মালিকরা রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা নতুন করে যেমন ঝামেলায় জড়াতে চান না, তেমনি সরকারি রোষানলে পড়ে নিজেদের পুঁজি এবং বিনিয়োগ বিনষ্ট করতে মোটেও ঝুঁকির বলয়ে প্রবেশে আগ্রহ দেখান না। ফলে পুরো টকশো শিল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। টিভিগুলো তাদের নিয়মিত দর্শক হারাচ্ছে এবং বিদেশি চ্যানেলমুখী হয়ে পড়তে জনগণকে বাধ্য করছে। পরিণামে দেশের বাজারের শত কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং টেলিভিশন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক এবং কলাকৌশলীরা তাদের চাকরি জীবনের জৌলুস হারানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।

সাম্প্রতিককালের টকশোগুলোতে অতিমাত্রায় সরকারি তোষণ, একপেশে বক্তব্য এবং একতরফা প্রচার প্রোপাগান্ডার কারণে সরকার যেমন দেশ-বিদেশে ইমেজ হারাচ্ছে তেমনি টকশোতে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণ মানুষের হাসির খোরাক এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য-ঠাট্টা মশকরার পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। আলোচকদের অতিমাত্রার সরকার তোষণ নিয়ে খোদ সরকারি মহলে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে নিজেরাই অবাক হয়ে ভাবেন— ওরা কারা? অন্ধভাবে দলের পক্ষে বলতে গিয়ে ওরা তো দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে এবং সরকারকে ক্রমেই গণবিমুখ বানিয়ে ফেলছে। রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদ সম্পর্কে জনগণের মনে ঘৃণা-ধিক্কার পয়দা হচ্ছে। গণতন্ত্রে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনরোষ ধূমায়িত হচ্ছে। আর এ কারণেই অখ্যাত এবং অচেনা মুখের সরকার সমর্থক টকশোজীবীরা একাকী জনগণের মধ্যে যেতে ভয় পান— তাদেরও বডিগার্ড দরকার পড়ে।

গত ১০ বছরে টকশোর কল্যাণে অনেক কিছু হয়েছে। মাইনাস টু থিউরি ব্যর্থ, ১/১১’র কুশীলবদের বিদায়। ২০০৮ সালের নির্বাচন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মানুষের মনে গণতান্ত্রিক ভাবধারা জাগরূক করা। প্রশাসনকে গণমুখী, জবাবদিহিতামূলক এবং স্বচ্ছ করার ক্ষেত্রে টকশোগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তেমনি রাজনৈতিক সদাচার, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি এবং গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমানের বেহাল এবং আজব প্রকৃতির টকশোর কারণে অতীতের সুফলগুলোর ঠিক বিপরীত প্রতিক্রিয়াগুলো নীরবে-নিভৃতে সৃষ্টি হয়ে পুরো দেশকে গ্রাস করে ফেলার উপক্রম করেছে। চারদিকে শুরু হয়েছে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং একজন অন্যজনকে অসম্মান ও অপমান করার প্রতিযোগিতা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পরিণতি কারও জন্যই শুভকর হবে না।

এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে কিছু বলে নিবন্ধের ইতি টানব। আজকের শিরোনাম ছিল— আজব টকশোর নিরপেক্ষ ময়নাতদন্ত। সম্মানিত পাঠক নিশ্চয়ই জানেন যে, কোনো প্রাণী মারা যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটন করার জন্য ময়নাতদন্তের প্রয়োজন পড়ে। টকশোর নামে গত দুই-আড়াই বছর ধরে যা চলে আসছে তার বেশির ভাগই ছিল এক আজব এবং অদ্ভুত তামাশা। কালের বিবর্তনে এটা প্রমাণিত যে, জনগণ ওসব তামাশা পছন্দ করেনি। ফলে টকশোর নামে প্রদর্শিত আজব এবং আজগুবি উপাখ্যানগুলো মাঠে মারা গেছে। খুব দ্রুত যদি লাশগুলোর সৎকার করা না হয় তবে এখনো যারা সুস্থ ও সবল আছেন তারাও লাশের মাংস পচা দুর্গন্ধ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়বেন।
(গোলাম মাওলা রণির লেখা থেকে সংগৃহীত)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:




টক শো নয়, কয়েক বেকুরের বকবকি

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:০০

কলম চোর বলেছেন: রামকৃষ্ণ পরমহংসের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে " যত মত তত পথ "। আপনার দৃষ্টিতে বেকুবের প্রলাপ হতে পারে। আবার অন্যের দৃষ্টিতে নাও হতে পারে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৫৮

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: ক্লাস টু পাশ করেনি, এদের ও দেখি মাঝে মাঝে টকশো তে আসতে!! এরা আসলে টকশোর শাব্দিক অর্থই জানে না!!
,
হায়রে.....!

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৪০

কলম চোর বলেছেন: বর্তমানের টকশোর হালচাল এমনই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.