![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন ও ফরাসী প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড দালাদিয়ার এডলফ হিটলারকে সতর্ক করে বলেছিলেন, থার্ড রাইখ যদি পোল্যান্ড আক্রমণ করে তাহলে ইউরোপে যুদ্ধ বেধে যাবে। ওই নেতাদের হুঁশিয়ারি শুধু কথার কথা ছিল না, তারা সত্যিই তা বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু হিটলার ভেবেছিলেন রাইনল্যান্ডের সামরিকীকরণ, অস্ট্রিয়ার সংযুক্তি, চেকোশ্লোভাকিয়া ভেঙে দেয়ার পর মিত্রশক্তি হয়তো কেবল ধাপ্পা দেয়ার জন্য এসব কথা বলছে। হিটলার পোল্যান্ডে প্রবেশের দুই দিনের মাথায় ফ্রান্স ও ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অনেক কষ্টে অর্জিত ইউরোপের প্রতিরোধক ব্যবস্থা ভেঙে যায়, ভয়াবহ মূল্য ও বিপদের সম্মুখীন হওয়া ছাড়া আস্থা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার কর্মকর্তারা ওবামা প্রশাসনকে রোমানিয়ায় অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম বসানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলে, এই উদ্যোগ বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি করবে। আমেরিকান উদ্যোগে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে স্বাগতিক দেশটির ‘নিরপেক্ষতা’ নষ্ট হওয়া এবং ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরপেক্ষ সুইডেনের প্রতি রাশিয়ার চোটপাট, মার্কিন জাহাজ ও বিমান হয়রানি, ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে সতর্ক করা এবং বাল্টিক ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোকে অব্যাহত হুমকির প্রেক্ষাপটে এই নতুন বিতণ্ডা শুরু হলো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বসানো নিয়ে। চীনও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে, যেন তার জাহাজ ও বিমানগুলো নতুন সৃষ্ট কৃত্রিম দ্বীপ ও স্প্রালটি দ্বীপপুঞ্জে বসানো সামরিক ঘাঁটির আশপাশে না যায়। দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝামাঝি এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে জাহাজ চলাচলের আন্তর্জাতিক রুট নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্য দিকে, ইরান নিয়মিতভাবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে। উত্তর কোরিয়া ও ইরান তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষার তেজ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পারমাণবিক হামলা চালানো থেকে মার্কিনিদের ‘হত্যার তালিকা’ তৈরিÑ কোনো কিছুই বাদ যায়নি তাদের হুমকি থেকে।
২০১৬ সালের গোড়া থেকে এসব যুদ্ধংদেহী হুঙ্কারগুলো ১৯৩০-এর দশকে ফ্যাসিস্ট ইটালি, সা¤্রাজ্যবাদী জাপান ও নাজি জার্মানির কথাই মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু প্রায় শতাব্দীকাল পুরনো পরিস্থিতি কেন আবার ফিরে এসেছে?
২০১১ সালে ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শোচনীয় প্রত্যাবর্তন এবং এর ফলে মার্কিন বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ভয়াবহ আস্থাসঙ্কট, সিরিয়ায় রেডলাইন তৈরির ভুয়া হুঁশিয়ারি, রাশিয়াকে স্বমতে ফিরিয়ে আনার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, লিবিয়ার বেনগাজি বিপর্যয় এবং সামরিক বাহিনীর ফোঁসফাঁস শব্দ ছাড়া আমেরিকা তার পুরনো ‘ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করা’র শক্তি (deterrence) হারিয়ে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, সিরিয়ার ব্যাপারে মার্কিন উদ্যোগে তিনি সন্তুষ্ট এবং পাশাপাশি তিনি কয়েকটি মিত্র দেশের (সম্ভবত ফ্রান্স ও ব্রিটেন) ব্যাপারেও অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করেন। তিনি নিজেই নিজের প্রশংসা কুড়াতে চান। ইরানকে নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বহুদিনের পুরনো শত্রুদের নিয়ে একটি জোট গড়ে তুলেছে ইসরাইল। ইসরাইলের মতো সৌদি আরবও ওবামা প্রশাসনের মতিগতি নিয়ে বিভ্রান্ত। তারা বুঝতে পারছে না যে, ইরানকে শান্ত করার জন্যই পারমাণবিক চুক্তিটি করেছে, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে দেশটিকে একটি নতুন মিত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে।
প্রতিবেশী চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি থেকে নিরাপত্তা সুরক্ষা দেবে বলে আমেরিকার পুরনো প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান ইতোমধ্যে নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। নিই ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের সাথে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্সিয়াল স্পিস রাইটার বেন রোডস ওয়াশিংটন ডিসির ফরেন পলিসি স্টাবিশমেন্টকে ‘ব্লব’ বলে উপহাস করেন। সিনেটের অনুমোদন ও জনগণের সমর্থন ছাড়াই ইরানের সাথে চুক্তি করে ধোঁকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ওবামার সেই পৌরাণিক ‘কায়রো ভাষণ’ রচনা করেছিলেন রোডস। কুখ্যাত বেনগাজি আলোচনার পয়েন্টগুলোও তারই তৈরি। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহ্যগত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ না করার যে অভিযোগ রয়েছে তা নিশ্চিত করলেন রোডস।
ওবামা এবং তার উপদেষ্টাদের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, ওয়াশিংটনের বর্তমান অভাগা প্রশাসন বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকা থেকে পিছিয়ে গেছে। বিরুদ্ধবাদীরা বুঝে গেছে আরো আট মাস সময় আছে পরিস্থিতিকে কাজা লাগানোর। রাশিয়া, চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও মুসলিম বিশ্বের সন্ত্রাসবাদীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, তারা শক্তির মাধ্যমে বৈশ্বিক বাস্তবতাকে পরিবর্তন না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য কিছুই করবে না। দক্ষিণ কোরিয়া, এস্তোনিয়া, জাপান, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ উসকানির আশঙ্কা করছে। তাদের আরো আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্র আরো রেডলাইন, ডেডলাইন, স্টেপওভার লাইন এসব ঘোষণা করবে, কিন্তু তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। আগ্রাসী শক্তিগুলো এখনো নিশ্চিত নয় যে নির্বাচিত হলে হিলারি ক্লিনটন কি একজন গতানুগতিক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের মতোই পশ্চিমা জোটকে নেতৃত্ব দেয়ার ভূমিকা নেবেন, নাকি বাড়তি কিছু করবেন। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি নির্বাচিত হন তাহলে তিনি কেন, কখন, কোথায়, কিভাবে তাদের ওপর আঘাত হানবেন তারও নিশ্চয়তা নেই। এতসব অনিশ্চয়তার কথা না ভেবে ২০১৭ সাল আসার আগেই যা করে ফেলা ভালো- আগ্রাসী শক্তিগুলোর মনে এই ভাবনাই কাজ করছে। আর এ কারণেই আগামী কয়েকটি মাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮
বিজন রয় বলেছেন: সর্বনাশ!