নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলম চোর পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি নিজের ব্যাপারে উদাসিন, অন্যের ব্যাপারে সচেতন, এবং দেশের ব্যাপারে বেশি সচেতন।

কলম চোর

কলম চোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত!!

২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১




বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চারটি মন্ত্রণালয়ের কাছে গত ছয় বছরে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২২ বার তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো চিঠিরই জবাব দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৪ জুন কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি দল ২৫টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের তালিকা দিয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে।

কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের এসব মন্ত্রণালয় যদি এভাবে অসহযোগিতা করে, তাহলে আমরা কাজ করব কীভাবে। তাই আমরা আমাদের শেষ আশ্রয় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’

২৫টির মধ্যে ২২টি ঘটনার ক্ষেত্রেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুটো ঘটনা এবং একটি করে ঘটনার জন্য প্রতিবেদন চাওয়া হয় শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে।

২৫ অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনোটি ২০১০ সালের। ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের পরিচয়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার পিরোজপুর গ্রাম থেকে মইনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই ব্যক্তির সঙ্গে সেলিম নামের আরেকজনকে তুলে আনা হয়। পরে মইনুলকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় হস্তান্তর এবং মোহাম্মদ আলীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেলিমের সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। বিষয়টির তদন্ত চেয়ে কমিশন ৯ মে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রসচিবকে অনুরোধ করে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদন না পাওয়ায় কমিশন ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট অসন্তোষ জানিয়ে আবার সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু কোনো জবাবই মেলেনি।

কমিশন যে ২৫টি অভিযোগে প্রতিবেদন চেয়েছিল, এগুলোর মধ্যে ২০টিই ছিল পুলিশ ও র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের। এর মধ্যে হত্যায় সহযোগিতা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনে মৃত্যু ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় থাকা ২৫টি ঘটনার মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২২ বার প্রতিবেদন চেয়ে তাগাদা দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল র‌্যাবের পরিচয়ে সাভারের আমিনবাজার থেকে অপহরণের পর শহীদুল্লাহ ওরফে সুমনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই রিজভি হাসান নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশি নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগও রয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কেন সহযোগিতা করেননি—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এসব চিঠির বিষয়ে আমার জানা নেই।’

এই মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘আমার কাছে যখনই যে চিঠি আসে, তখন তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিই। তাঁদেরই এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।’

প্রতিবেদনে খুন-গুম ছাড়াও সরকারি চাকরিতে বৈষম্য, বিদেশগামী ব্যক্তিদের সঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা এবং মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসকের পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বৈষম্য-সংক্রান্ত একটি অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসচিবের কাছে ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয়। এ বিষয়ে উভয় মন্ত্রণালয়কে আটবার তাগিদ দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া মাহবুবুল আলম নামের এক মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসকের পেনশনের ক্ষেত্রে হয়রানির ঘটনায়ও প্রতিবেদন চাওয়া হয়।

গতকাল রাতে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা খুবই আন্তরিক। উত্তর না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয়ই যোগাযোগের ত্রুটি (মিস কমিউনিকেশন) আছে কোথাও। নথি দেখে বলা সম্ভব হবে।

কমিশন ২০১৩ সালে ১১ নভেম্বর ইরাকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে। অভিযোগে বলা হয়, চাকরি দেওয়ার নাম করে ইরাকে লোক পাঠানো হলেও সেখানে অভিযোগকারীর সন্তানদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। বন্দিশিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে ১১ বার তাগাদা দেয় কমিশন। কিন্তু মন্ত্রণালয় বা মহাপরিদর্শক কেউ কোনো উত্তর দেননি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চাইতে পারে কমিশন। আইনে বলা আছে, ওই ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো প্রতিবেদন দেওয়া। আবার কেউ যদি প্রতিবেদন না দেয় বা কমিশনের তা পর্যাপ্ত না মনে হয়, তবে কমিশন এসব ঘটনা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরবে। আর রাষ্ট্রপতি এই প্রতিবেদনের কপি সংসদে তুলে ধরার ব্যবস্থা করবেন।

কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতিকে সংসদে প্রতিবেদন তুলে ধরার অনুরোধ করেছি। তিনি তাতে সম্মত হয়েছেন।’

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের দেশে দলগুলো ক্ষমতায় আসে। কিন্তু নির্যাতন, নিপীড়ন প্রতিরোধ করার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্তরে সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে না পাওয়াটা সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরে।’ তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের মুখপত্র হিসেবে কাজ করে। তাদের গুরুত্ব না দেওয়ার অর্থ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করা।
সূত্র: প্রথম আলো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:২১

বিজন রয় বলেছেন: ডঃ মিজানুর রহমান । একা কি আর করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.