নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলম চোর পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি নিজের ব্যাপারে উদাসিন, অন্যের ব্যাপারে সচেতন, এবং দেশের ব্যাপারে বেশি সচেতন।

কলম চোর

কলম চোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কখন খুন হলেও অপরাধ হবে না

২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৫



কার কোন প্রকার ক্ষতি সাধনের কথা আমরা সুস্থ মানুসিকতায় চিন্তাও করি না। কিন্তু তারপরেও সারা পৃথিবী তে লেগেই আছে কলহ – বিবাদ ,এমনকি কখন বা মানুষ মানুষ কে খুন ও করে ফেলছে । অবশ্যই প্রতিটা ঘটনার পিছনে ছোট বড় অনেক কারন থাকে । এবং কোন বাক্তি যদি অপর কোন বাক্তি কে খুন বা খুনের চেষ্টা করে তা সাস্তি যোগ্য অপরাধ । বাংলাদেশ দণ্ড বিধি ৩০২ ধারা অনুসারে তার সাস্তি মৃত্যু দণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে ও জরিমানা দণ্ডে ও শাস্তিযোগ্য হবে।
এখন কথা হচ্ছে কখন কোন খুন অপরাধ হবে না । বাংলাদেশ দণ্ড বিধি ধারা ৯৬ অনুযায়ী বাক্তি গত প্রতি রক্ষার ক্ষেত্রে যদি কোন বাক্তি কে খুন ও করা হয় তাহলে তা অপরাধ হবে না । এখানে বাক্তি গত প্রতিরক্ষা বলতে নিজের ও অপরের জান ও মাল রক্ষা করতে আক্রান্ত বাক্তিকে পতিপক্ষের দিকে অগ্রসর হতে বলেছে ।কারন আইন তাকে দুর্বল ও মেস সাবকের মত আক্রমণের সময় সব কিছু মেনে নিতে আদেশ দেয় না ।
বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত মানুষের প্রতিরক্ষার অধিকারের কথা বর্ণনা করা আছে। ধারা ৯৬ সম্পর্কে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। এবার পরবর্তী ধারা গুলোতে কি বলা আছে তা জানা যাক।
দন্ডবিধির ৯৭ ধারায় বলা আছে যে ৯৯ ধারায় বর্ণিত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তির-
প্রথমত, মানুষের দেহে আঘাতকারী যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে তার স্বীয় দেহ ও অন্যের দেহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।
দ্বিতীয়ত, চুরি, দস্যুতা, অনিষ্ট বা অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশের উদ্যোগের বিরুদ্ধে নিজের ও অন্যের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।
শুধু আইনেই নয় ইসলাম ধর্মেও প্রতিরক্ষার কথা বলা আছে। আল-কোরআনে বলা আছে, নিজেকে রক্ষা কর ও পরিজনকে রক্ষা কর।
তবে এই প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করারও একটা নির্দ্দষ্ট সীমা আছে। দন্ডবিধির ধারা ৯৯ অনুসারে-
• সরকারী কর্মচারীগণ সরকারী কর্মচারীরূপে আইন বহির্ভুত যে কাজ করেন তা যদি মৃত্যু বা গুরতর আঘাতের আশঙ্কা সৃস্টি না করে তবে সেই কাজের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকে না।
• সরকারী কর্মচারীর হুকুমে যদি কোন আইন বহির্ভূত কাজ সম্পন্ন হয় এবং তা কোন মৃত্যু বা গুরুতর জখমের আশংকা সৃষ্টি না করে, তবে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকে না।
• সরকারী কর্তৃপক্ষের নিকট আশ্রয় নেয়ার মত যথেষ্ট সময় থাকলে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকে না।
• ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যতটুকু আঘাত বা ক্ষতি করা প্রয়োজন তার বেশি করা যাবে না (বেশি করা অবৈধ)।
• সরকারী কর্মচারীর কাজের বা তার নির্দেশ বলে অন্যের কৃত কোন কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার অধিকার ততক্ষন পর্যন্ত থাকে যতক্ষন পর্যন্ত প্রতিরক্ষার দাবিদার ব্যক্তি ঐ সরকারী কর্মচারী বা তার নির্দেশ বলে কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির পরিচয় না জানতে পারেন। (তবে সরকারী কর্মচারী বা তার নির্দেশে কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তি জেনেও ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গেলে তা অবৈধ হবে)

একজন ব্যক্তি তার প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে যেয়ে যদি ৯৯ ধারার বিধিনিষেধ সাপেক্ষে অন্য কোন ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটান তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। কারন জীবন রক্ষার প্রয়োজনে অন্যের জীবন নাশ করাও বৈধ (AIR 1959, punjab 332)।
মানুষের দেহের উপর আক্রমণ হলে নিম্নবর্ণিত ৬টি ক্ষেত্রে আক্রমণকারীকে হত্যা করাও বৈধ। ক্ষেত্র ৬টি হল-
• দেহের উপর আক্রমণ যদি এমন প্রকৃতির হয় যে, আক্রান্ত ব্যক্তি উপলব্ধি করে যে তার মৃত্যু সন্নিকটবর্তী।
• এমন কোন আক্রমণ যা আক্রান্ত ব্যক্তির মনে আশংকার সৃষ্টি করে যে তিনি গুরতর আঘাত পাবেন।
• ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আক্রমণ।
• অপ্রাকৃতিক কামলালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ।
• নারী হরণ বা শিশু হরণের উদ্দেশ্যে আক্রমণ।
• অবৈধভাবে আটক করে রাখার উদ্দেশ্যে আক্রমণ যেখানে কোন সরকারী কর্তৃপক্ষের নিকট আশ্রয় নেয়া সম্ভব নয়।
তবে, কোন আক্রমণ যদি উপরোক্ত ৬ ধরনের না হয় তাহলে আক্রমণকারীর কোনভাবেই মৃত্যু ঘটানো যাবে না। যদি কোন আক্রমণ উপরোক্ত ৬ ধরণের না হয় এবং ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে যেয়ে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটে তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
শুধুমাত্র দেহের উপর আক্রমণের ক্ষেত্রেই প্রতিরক্ষার অধিকারের বিষয়টি আসে না সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রেও প্রতিরক্ষার অধিকার আছে। নিজের বা অন্যের সম্পত্তি রক্ষা করতে যেয়েও যদি কারোও (সম্পত্তির উপর আক্রমণকারীর) মৃত্যু ঘটে তবে তা বৈধ হবে (অপরাধ হবে না)। তবে সেক্ষেত্রে সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের জন্য করা অপরাধগুলো অবশ্যই নিম্নোক্ত ধরনের হতে হবে-
• দস্যুতা,
• রাতের বেলা অপথে গৃহে প্রবেশ,
• বাসগৃহ বা সম্পত্তি সংরক্ষনের জন্য ব্যবহার করা হয় এমন ইমারত, তাবু বা জাহাজে অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে ক্ষতিসাধন,
• রাতের বেলায় গৃহে বা সম্পত্তি সংরক্ষনের স্থানে চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশ যা যুক্তিসংগতভাবে এইরুপ ভয়ের সৃষ্টি করে যে ঐ ব্যক্তি (গৃহ বা সম্পত্তি সংরক্ষনের স্থান যার) প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগ না করলে তার মৃত্যু বা গুরতর জখম হবার সম্ভাবনা আছে
তবে, যদি উপরোক্ত কাজগুলোর সময় মৃত্যু বা গুরতর জখম হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয় তবে আক্রমণকারীকে হত্যা করা যাবে না। এইসব ক্ষেত্রে হত্যা ব্যতীত অন্য যেকোন ক্ষতি সাধন করা যেতে পারে (ধারা ১০৪)। চুরি, দস্যুতা, অনধিকার গৃহপ্রবেশ বা উপরে বর্ণিত যেকোন অপরাধের সময় যদি আক্রমণকারী হত্যা বা জখমের আতঙ্ক সৃষ্টি না করে তবে আক্রমণকারীকে হত্যা করা যাবে না, আঘাত করা যায় মাত্র।
দেশের জনগনের জান ও মাল রক্ষা করার দায়িত্ব যদিও সরকারের কিন্তু সারকারের একার পক্ষে এটা সম্মভপর হয়ে উঠে না । তাই বাংলাদেশ দণ্ড বিধি ধারা ৯৬ থেকে ১০৫ এ নিজের জান ও মাল রক্ষার দায়িত্ব আইন বলে নিজেকেই দিয়েছে। আইন অনুযায়ী নিজের ও অপরের জান ও মাল রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই দিয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮

মহা সমন্বয় বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম। :)
ধন্যবাদ।

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৪

কলম চোর বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথেই থাকুন :)

২| ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

সিগনেচার নসিব বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে !!
পোস্টখানা পড়ে অনেক অজানা বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে উপকৃত হলামে
একরাশ শুভেচ্ছা রইল !!!!

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৬

কলম চোর বলেছেন: বলেছেন: আইনজীবীগণ এখন ব্লগেও চলে এসেছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সাথে থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.