নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলম চোর পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি নিজের ব্যাপারে উদাসিন, অন্যের ব্যাপারে সচেতন, এবং দেশের ব্যাপারে বেশি সচেতন।

কলম চোর

কলম চোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রণাঙ্গনের বীর

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৪



ছবির ব্যক্তিকে কেউ কি চেনেন? জানেন তিনি কে??
ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এখনো চেনেন নাই?? উনার নামে একটা নামকরা গার্লস স্কুল & কলেজের নাম আছে....................
তাও মনে করতে পারছেন না!!
স্কুলটা শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল & কলেজ নামে পরিচিত................
এবার চিনেছেন নিশ্চই! কিন্তু স্কুলটা যার নামে, তার সম্পর্কে কি কিছু জানেন?? হয়তো ভাবছেন আজাইরা এসব জানবার কি দরকার, আমি বিসিএস পরীক্ষা দিব নাকি, নাকি ভর্তি পরীক্ষায় নামবো ??
ভর্তি পরীক্ষায় নামার দরকার নাই, বিসিএসের প্রয়োজন নাই। কিন্তু জেনে রাখার প্রয়োজন এই জন্য যে, আপনি যে দেশে বসবাস করছেন, যে দেশের আলো বাতাস পানি খাদ্য গ্রহণ করে এখনো দিব্বি বেঁচে আছেন, ছবির ব্যক্তি হচ্ছেন প্রথম দু-চারজন আর্মি অফিসারের মধ্যে অন্যতম যিনি এ দেশের জন্য শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছিলেন।


[ গতকাল এই বীরের কবরের সামনে থেকে যাওয়ার সময় ছবিটা তোলা ]

৭১ এর রণাঙ্গনে শহীদ লেফটেন্যান্ট আনোয়ার
শহীদ লে. আনোয়ার হোসেনের জন্ম হয় ভারত ভাগের বছরে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে, বাড়ি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার সোনাইমুড়ি গ্রামে। ১৯৭১ সালে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। এ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি রেজাউল জলিল। অফিসারদের মধ্যে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (বীর বিক্রম) ও মো. আনোয়ার হোসেন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন পাকিস্তানি। ১৯৭১ সালের মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকলে তাঁদের রেডিও শোনা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় আবার এই ব্যাটালিয়নের অর্ধেক যশোরের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশিক্ষণে, অর্ধেক ছুটিতে ছিলেন। ২৫ মার্চ মো. আনোয়ার হোসেনও ছিলেন প্রশিক্ষণস্থলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবর তাঁরা সময়মতো পাননি। ২৮ বা ২৯ মার্চ অধিনায়ক রেজাউল করিম নির্দেশ দেন তাঁদের অবিলম্বে সেনানিবাসে ফেরার। সেদিনই তাঁরা সেনানিবাসে আসেন। সেনানিবাসে আসার পর রেজাউল করিম সবাইকে অস্ত্র জমা দিতে বলেন। তাঁর নির্দেশে তাঁরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অস্ত্র জমা দেন। সেদিন তাঁরা বেশির ভাগ ছিলেন ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। এ জন্য তাঁরা রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে যশোর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ ও ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। নিরস্ত্র সৈনিকদের কয়েকজন ঘুমন্ত অবস্থাতেই শহীদ হন। বেঁচে যাওয়া সৈনিকেরা অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করেন। সৈনিকেরা অধিনায়ক রেজাউল জলিলকে অনুরোধ জানান বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অন্যদিকে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও আনোয়ার হোসেন সৈনিকদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাঁদের নেতৃত্বে সৈনিকেরা বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করতে থাকেন। হাফিজ উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন এই অসম যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন।


[ চিত্রেঃ মেজর হাফিজ (বীর বিক্রম) ]
তাঁদের সাহস ও বীরত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও মনোবল বেড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। এর মধ্যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনেকে শহীদ ও অনেকে আহত হন। একপর্যায়ে তাঁদের গোলাগুলিও কমে আসতে থাকে। এ অবস্থায় হাফিজ ও আনোয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সেনানিবাস এলাকা ছেড়ে চৌগাছায় একত্র হওয়ার। এরপর তাঁরা ফায়ার অ্যান্ড মুভ পদ্ধতিতে খোলা মাঠ দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকেন। আনোয়ারও সেভাবে পশ্চিম দিকের খোলা মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেশিনগানে ছোড়া গুলি এসে লাগে আনোয়ার হোসেনের কোমর ও পিঠে। গুলির আঘাতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি শহীদ হন। প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী এক গ্রামে নেন। সেখানে স্থানীয় জনগণ তাঁকে নজরুল ইসলাম কলেজের সামনে সমাহিত করেন। ( সূত্রঃ Click This Link )

শহীদ লেফটেন্যান্ট আনোয়ারের সাথে এ যুদ্ধে সঙ্গী ছিলেন মেজর হাফিজ (বীর বিক্রম) কিন্তু পরিতাপের বিষয়, শহীদ লে. আনোয়ারের সাথে রণাঙ্গনে দেশের জন্য বীর বিক্রমে লড়াই করা মেজর (অব: ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এর মত প্রকৃত বীরেরা আজ উপেক্ষিত আর মুরগি সাপ্লাই কারী & চেতনা ব্যবসায়ীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচয়িতা !!
কিন্তু যদি এসব চেতনা ব্যবসায়ীদের লুঙ্গি/ধুতি টান দেন, তবে দেখবেন তারা ৭১ এ ঠিকই যুদ্ধ করেছিল, তবে সেটা লে.আনোয়ার, মেজর হাফিজ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর জলিলদের মত রণাঙ্গনে না, বরং ভারতের সোনাগাছি ফ্রন্টলাইনে।


মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২৮

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: ইদানিং এধরনের ভাল ভাল সত্য ঘটনা সামুতে আসছে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫২

কলম চোর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, সাথে থাকুন।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

সাহসী সন্তান বলেছেন: উনার নাম শুনেছি। তবে এতটা বিস্তারিত জানা ছিল না। ধন্যবাদ চমৎকার পোস্টের জন্য!

শুভ কামনা জানবেন!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩

কলম চোর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, আপনার শুভ কামনা পেয়ে অনুপ্রেরিত হলাম। সাথে থাকুন।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সম্মখ যুদ্ধের ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। আফসোস মুক্তিযুদ্ধ আজ মুরগী সাপ্লায়ারদের হাতে বন্দী...

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

কলম চোর বলেছেন: সহমত

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:২৭

মাহমুদ ইউসুফী বলেছেন: সত্য ধামা চাপা দিয়ে রাখা যায়না। সত্য ইতিহাস তুলে ধরবার জন্য ধন্যবাদ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

কলম চোর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। সাথে থাকুন

৫| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম লেখা ব্লগে আরও বেশি দরকার।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

কলম চোর বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। সাথে থাকুন

৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪২

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: উনার নামে স্কুল ও কলেজের সাথে পরিচিত কিন্তু বিস্তারিত এত কিছু জানা ছিলোনা।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানা হলো।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

কলম চোর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। সাথে থাকুন

৭| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৯

অলিউর রহমান খান বলেছেন: গর্বে বুকটা ভরে গেল। আল্লাহ্ যেন সকল শহীদদের জান্নাত দান করেন।
গল্পটি জানা ছিলে না আগে, এক দিকে যেমন ভালো লেগেছে অন্যদিকে
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধারর জন্য।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৯

কলম চোর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি নিজেও শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আল্লাহ শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন।

৮| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬

গরল বলেছেন: যতবার স্কুলটার সামনে দিয়ে গিয়েছি ততবার মনে প্রশ্ন এসেছে কে এই শহীদ আনোয়ার, আজকে জান। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে একটা কথা বলতে চাচ্ছি যে রণাঙ্গনে যুদ্ধ ছাড়াও একটা দেশ সৃষ্টিতে আরো অনেক কাজ ছিল যেমন যোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র ও রসদ সংগ্রহ এবং সাপ্লাই, আন্তর্জার্তিক অঙ্গনে দেশের জন্য সমর্থন যোগান ও জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব করা এমনকি ছোট আকারে হলেও সরকার পরিচালনা করা ও রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করাও একটা বড় কাজ ছিল। আমেরিকার একজন সৈন্য রণাঙ্গনে থাকলে তার সাপোর্ট হিসাবে পেছনে ১৫ জনের মত লোকের কাজ করতে হয়। আমদের মুক্তিযুদ্ধেও যোদ্ধাদের ট্রেনিং, রসদ গোলাবারুদ ও ম্যানেজমেন্টের জন্যও কিছু লোক কাজ করেছে। তারাও খুব স্বল্প রিসোর্স ও এমনকি কোন রিসোর্স ছাড়াই এত বড় একটা যুদ্ধের পরিচালনা করেছে। তাই তাদেরকে হেয় করাটা আসলে যুক্তিযুক্ত না।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০১

কলম চোর বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলার জন্য। আসলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধের ময়দানে লড়াকু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া অন্য কাহারো অবদান ইতিহাসের পাতায় তেমন করে লেখা হয় নাই। এটা আমাদের ব্যার্থতা যে আমরা তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করতে পারি নাই। কিন্তু আল্লাহ সবই জানেন, সবই দেখেন। হাশরের ময়দানে নিশ্চই তারা তাদের ভাল কাজের পুরষ্কার পাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.