![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাইকুম, আমি নাসিম ফিরোজ। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে (মুর্শিদাবাদ) জেলায় বসবাস করি বাংলা ভাষায় এহেন উদ্যোগ দেখে আমি একজন বাঙালি মুসলিম হিসাবে গর্ব বোধ করি।
আসসালামু আলাইকুম
সবাইকে রমযান মাস ও ঈদ-উল-ফেতের এর আগাম শুভেচ্ছা। আশাকরি সবাই আল্লাহ্র রহমতে ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ্ এখন রমযান মাসের শেষ সময়। আমরা মুসলিম হলেও যেহেতু আমাদের ইসলাম সমন্ধে জ্ঞান খুবই কম তাই ইসলামের মুল পাঁচটি আরকারন সমন্ধে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ্। আমা তৌফীক ইল্লাহ্ বিল্লাহ্।
আজকের আলোচনার বিষয় ইসলামের প্রথম ও প্রধান আরকান কালেমায়ে শাহাদাতঃ
اشْهَدُ انْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُه وَرَسُولُه
(আশ্হাদু আল-লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু-লা-শারীকালাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আ'বদুহু ওয়া রাসূলুহু।)
অর্থঃ আমি সাহ্ম দিতেছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি এক, অংশ-হীন এবং আরও সাহ্ম্য দিতেছি যে, মুহামাদ (সাঃ) তাঁহার বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ।
শাহাদাত শব্দের অর্থ সাক্ষী । অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবংমুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এই সাক্ষ্য দেওয়া।
এ দু’ সাক্ষ্য ইসলামে প্রবেশ পথ, ও ইসলামের মহান স্তম্ভ। কোনব্যক্তি মুসলিম হতে পারবে না যতক্ষন না সে এ দু’ সাক্ষ্য মুখেউচ্চারণ করবে ও সাক্ষ্যদ্বয়ের দাবী অনুযায়ী আমল করবে।আর এ সাক্ষ্য দানের মাধ্যমেই এক কাফির মুসলিম হয়ে যায়।
আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এই সাক্ষ্য দানের অর্থঃআর তা হলোঃ এর অর্থ জেনে ইহা মুখে উচ্চারণ করা, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে এর দাবী ও চাহিদা অনুযায়ী আমল করা, আর এর অর্থ না জেনে এবং এর দাবী অনুযায়ী আমল নাকরে শুধু মুখে পাঠ করা সকলের ঐক্যমতে কোন উপকারেআসেনা। বরং তার বিরূদ্ধে হুজ্জত হবে।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহএর অর্থঃ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহএর অর্থ হলোঃ একআল্লাহ সুবহানাহু ও তা‘আলা ছাড়া প্রকৃত পক্ষে কোনসত্যমা‘বুদ-উপাস্য নেই।
এ কালেমার দু’টি রুক্ন রয়েছে। অস্বীকৃতি জানানো, স্বীকৃতি জানানো।অর্থাৎ-আল্লাহ ছাড়া সব কিছুর উপাসনা অস্বীকার করা, এবংসে উপাসনা একমাত্র অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা, যারকোন অংশীদার নেই। তাগুতের অস্বীকার করাও এই কালেমারঅন্তর্ভুক্ত।
তাগুত-হলোঃ আল্লাহকে ছেড়ে মানুষ, পাথর, বৃক্ষ ও প্রবৃত্তি ইত্যাদির পূঁজা-উপাসনা করা। আর তাকে (তাগুতকে) ঘণৃা করা ও তা হতে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করাও এ কালেমার অন্তর্ভুক্ত।
অতঃপরঃ যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে অথচ আল্লাহ ছাড়া যে সকল বস্তুর ইবাদাত করা হয় তাদের অস্বীকার করে না সে এই কালেমার দাবী পূরণ করলো না ।
এ প্রসংগে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তোমাদের ইলাহ্ বা উপাস্য হলেন এক ও অদ্বিতীয়, আর সে মহান করুনাময় দয়ালু ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বুদ- উপাস্য নেই। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৬৩] তিনি আরো বলেনঃ দ্বীন সম্পকের্ জোর-জবরদস্তি নাই, সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে সে এমন এক মযবূত হাতল ধরবে যাহা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২৫৬]
ইলাহ্ এর অর্থঃ ইলাহ্ অর্থ সত্য মা‘বুদ-উপাস্য।আর যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করে যে ইলাহ্ উপাস্য হলেন তিনি যিনি সৃষ্টিকর্তার, রিযিকদাতা, বা নতুন কিছু আবিস্কারে ক্ষমতাশীল, এর দ্বারাই ঈমান সৌন্দর্য লাভ করে। কিন্তু যে ব্যক্তি ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর একাত্বতা ঘোষণা করেনা সে ব্যক্তির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই” মুখে উচ্চারণ করে ইসলামে প্রবেশ করা দুনিয়াতে কোন উপকারে আসবে না। আর আখিরাতের শাস্তি হতে এই কালেমা তাকে মুক্তি দিবে না।
কেনোনা মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহ্র উপর বিশ্বাসী ছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “বলঃ কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি কার কর্তৃত্বাধীন ? কে জীবিতকে মৃত হতে নির্গত করে এবং কে মৃত কে জীবিত হতে নির্গত করে এবং কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে ? তখন তারা বলবেঃ আল্লাহ। বলঃ তবুও কি তোমরা সাবধানহবেনা ?”[সূরা ইউনুস-আয়াত-৩১]
তিনি আরো বলেনঃ “যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ। তবুও তারা কোথায় ফিরছে?”। [সূরা আল-যুখ্রুফ-আয়াত-৮৭]
কালেমায়ে তাওহীদ এর শর্তসমূহঃ
(১) ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভাবে অর্থ জানা, যা অজ্ঞতার পরিপন্থী। নেতিবাচক হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদাত সাব্যস্ত না করা। আর ইতিবাচক হলো তা (ইবাদাত) এককভাবে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা। তাঁর কোন অংশীদার নেই তিনিই একমাত্র ইবাদাতের মালিক ও হক্বদার।
(২) এই কালেমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, যা সন্দেহের পরিপন্থী। অর্থাৎ এই কালেমার দাবীর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আন্ত-রিকভাবে নিশ্চিত হয়ে মুখে উচ্চারণ করা।
(৩) এই কালেমাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করা, যা প্রত্যাখ্যাণের পরিপন্থী। আর তা হলো এই কালেমার সকল দাবী-চাহিদা ও তার বক্তব্য গ্রহণ করা। সংবাদ সমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা, আদেশ সমূহ পালন করা। নিষেধ সমূহ হতে বিরত থাকা। কুরআন ও হাদীসের দলীল পরিত্যাগ ও অপব্যাখ্যা না করা।
(৪) অনুগত হওয়া, যা ছেড়ে দেওয়ার পরিপন্থী। আর তা হলো এই কালেমা যে সকল বিধানের নির্দেশ দিয়েছে তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে আনুগত্য করা।
(৫) (এই কালেমাকে) সত্য জানা, যা মিথ্যার পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা এই কালেমাকে সত্য জেনে অন্তর হতে উচ্চারণ করবে। এই কালেমা পাঠ কারীর অন্তর তার কথা মোতাবেক হবে, এবং তার বাহ্যিক অবস্থা আভ্যান্তরীণ অবস্থার মুয়াফিক হবে। অতঃপর যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে আর তার দাবীকে অস্বীকার করেছে নিশ্চয়ই তার এই মুখে উচ্চারণ তার কোন কাজে আসবে না, যেমন মুনাফিকদের অবস্থা ছিল। তারা এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করতো অন্তরে অস্বীকার করতো।
(৬) পূর্ণ একনিষ্টতা থাকা, যা শিরকের পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা আমলকে নেক নিয়াতের দ্বারা শিরকের সকল প্রকারের গ্লানি হতে মুক্ত রাখবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করার। [সূরা আল-বায়্যিনা-আয়াত-৫]
(৭) এই কালেমার সাথে মুহাব্বাত-ভালবাসা রাখা, যা বিদ্বেষের পরিপন্থী। আর ইহা বাস্তবায়িত হবে, এই কালেমাকে, তার দাবীকে, তার নির্দেশিত বিধানকে এবং যারা এই কালেমার শর্ত মোতাবেক চলে তাদেরকে ভাল বাসার মাধ্যমে। আর উলে−খিত কথা গুলোর বিপরীত কথার সাথে বিদ্বেষ রাখার মাধ্যমে।
এর নিদর্শন হলোঃ আল্লাহ্র প্রিয় বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া, যদিওতা প্রবৃত্তির বিরোধ হয়। আর আল্লাহর যা অপছন্দ তা অপছন্দ করা, যদিও তার দিকে প্রবৃত্তি ধাবিত হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের বন্ধুত্ব রয়েছে তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের শত্রুতা রয়েছে তাদের সাথে শত্রুতা রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবতের্ যার ইবাদাত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পকর্ নাই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে শুরু হল শত্র“তা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যতক্ষন না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন”। [সূরা আল-মুম্তাহানা-আয়াত-৪]
তিনি আরো বলেনঃ “তথাপি কেহ কেহ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষ্যরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভাল বাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা দৃঢ়তম” [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৬৫] । আর যে ব্যক্তি ইখলাস ও ইয়াকীনের সাথে লা-ইলাহা ইল্লালাহ্ “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বুদ নেই” একথা বলবে এবং সকল পাপাচার, বিদ‘আত, ছোট শিরক ও বড় শিরক হতে মুক্ত থাকবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হতে হিদায়াত পাবে। আর আখিরাতে শাস্তি হতে নিরাপত্তা পাবে। তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। এই শর্ত গুলো পূর্ণ করা বান্দার উপর আবশ্যক। আর এই শর্ত গুলো পূর্ণ করা অর্থ হলো যে, এই শর্ত গুলো একজন বান্দার জীবনে সমাবেশ ঘটা এবং তা জানা অত্যাবশ্যক হওয়া। তবে মুখস্থ করা জরূরী নয়।
আর এই মহান কালেমা (লা-ইলাহা ইল্লাললাহু) হলো তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ, যা তাওহীদের প্রকার সমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ এক প্রকার তাওহীদ, এ বিষয়েই নাবীগণ ও তাঁদের সম্প্রদায়ের মাঝে মতনৈক্য সংঘটিত হয়েছিল। আর এরই বাস্তবায়নের জন্যে রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমরা তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠাইয়াছি। [সূরা আল-নাহ্ল-আয়াত-৩৬]
তিনি আরো বলেনঃ আমরা তোমার পূবের্ যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এই ওহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২৫]
আর যখন শুধু তাওহীদ বলা হবে, তখন তা হতে মুরাদ-উদ্দেশ্য হবে তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ।
তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ বলতে বোঝায় “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টি জীবের উলূহীয়াত ও উবূদীয়াতের মালিক, তিনি এককভাবে ইবাদাতের মালিক তাঁর কোন শরীক নেই” এই স্বীকৃতি দেওয়া। আমলের দ্বারা আল্লাহর সন্তষ্টি কামনা এবং এবং তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাকে কে বোঝায়।
আল্লাহ এরই বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন এবং কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন আল্লাহ তা‘আলা বলেন “বলঃ আমি তো আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই প্রতি আহ্বান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন”। [সূরা রা‘দ-আয়াত-৩৬]
তিনি আরো বলেনঃ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন এবং মানুষকে এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে”। [সূরা আয-্ যারিয়াত-আয়াত-৫৬]
নাবী (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) মুআয (রাযিআল্লাহু আনহু) কে বলেনঃ
"(হে মুআয রাযিআল্লাহু আনহু) তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো। সর্ব প্রথম তাদেরকে (লা-ইলাহা ইল্লাললাহু) আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই-এই দিকে আহ্বান কর। যদি তারা এই দাও‘আত গ্রহণ করে তোমার আনুগত্য করে, তখন তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা ইহা গ্রহণ করে, তখন তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, ইহা ধনীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে এবং দরিদ্রদেরকে দেওয়া হব"। [বুখারী ও মুসলিম]
এই তাওহীদ যাবতীয় আমল সমূহের মধ্যে অধিকতর উত্তম আমল ও অধিক পাপ মোচন কারী। এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও মুসলিম সাহাবী ইত্বান (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে নাবী (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ
নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামকে হারাম করেছেন যে, ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।
সমস্ত রাসূলগণের এই কালেমার উপর ঐক্যমতঃ
সমস্ত রাসূলগণ তাঁদের সম্প্রদায়কে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দিকে দাও‘আত দানে এবং ইহা হতে বিমুখের ভয় প্রদর্শনের ব্যাপারে একমত ছিলেন। যেমন কুরআন কারীমে অনেক আয়াতে এর বর্ণনা এসেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আমরা তোমার পূবের্ যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এই ওহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর”। [সূরা আল-আম্বিয়া-আয়াত-২৫]
রাসূল (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এই কালেমার দিকে দাও‘আত দানে নাবীদের একমতের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন।তিনি (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন যেঃ
“নাবীগণ এক অপরে বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন। তাঁদের মাভিন্ন ছিল, আর দ্বীন একছিল। সকল নাবীদের মূল দ্বীন ছিল একই তা হলো তাওহীদ, যদিও শরী‘আতের অন্যান্য বিধি-বিধান ভিন্ন ছিল। যেমন কখনো ছেলে- মেয়ে মায়ের দিক হতে ভিন্ন হয়, আর তাদের পিতা এক”।
মুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহর রাসূলএই সাক্ষ্য দানের অর্থঃ
(ক) নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহররাসূল এ সাক্ষ্য দানের অর্থ হলোঃ রাসূলুল্লাহ (সল্লেল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা, যে সব খবর দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা, এবং যেগুলি সম্পকের্ নিষেধ ও সতকর্ করেছেন সেগুলি থেকে বিরত থাকা, আর একমাত্র তিনি যে বিধান দান করেছেন সে মত আল্লাহর ইবাদাত করা।
(খ) মুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহর রাসূল এ সাক্ষ্য বাস্তবায়নঃ
মুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহর রাসূল এ সাক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে ঈমান ও পূর্ণ ইয়াকীন দ্বারা। নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, যাকে সকল মানব ও জ্বিন জাতীর নিকট প্রেরণ করেছেন। তিনি শেষ নাবী ও রাসূল। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর নৈকট্যর্জনকারী বান্দা। তাঁর মাঝে উলূহীয়্যাতের কোন বৈশিষ্ট নেই। তাঁর অনুসরণ করা, তাঁর আদেশ নিষেধের সম্মান করা। কথায়, কাজে ও বিশ্বাসে তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “বলঃ হে মানুষ ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল”। [সূরা আল-আ‘রাফ-আয়াত-১৫৮]
তিনি আরো বলেনঃ “আমরা তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদ্দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছ”। [সূরা সাবা- আয়াত-২৮]
তিনি আরো বলেনঃ মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহে, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নাবী। [সূরা আল-আহ্যাব-আয়াত-৪০]
তিনি আরো বলেনঃ “বলঃ আমার প্রতিপালক পবিত্র ! আমি কেবলমাত্র একজন মানুষ যাকে রাসূল বানানো হয়েছে”। [সূরা আল-ইস্রা-আয়াত-৯৩]
উক্ত সাক্ষ্য নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেঃ
প্রথমতঃ তাঁর (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) রিসালাতের স্বীকৃতি দেওয়া ও অন্তরে তার বিশ্বাস রাখা।
দ্বিতীয়তঃ এর উচ্চারণ করা ও মুখের দ্বারা প্রকাশ্য ভাবে এর স্বীকৃতি দেওয়া।
তৃতীয়তঃ যে সত্য তিনি নিয়ে এসেছেন তা অনুসরণ করা, এবং যে বাতিল বিষয় সমূহ নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা।আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নাবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ কর যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার”। [সূরা আল-আ‘রাফ-আয়াত-১৫৮]
চর্তুতঃ রাসূল (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) যে সব খবর দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা।
পঞ্চমতঃ জান, মাল, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, ও সকল মানুষের ভালবাসার চাইতে তাঁকে (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে) অধিক ভালবাসা। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল, আর তাঁকে ভালবাসাই হলো আল্লাহর ভালবাসার অন্তর্ভুক্ত। আর তাঁর প্রকৃত মুহাব্বাত হল তাঁর আদেশ সমূহের আনুগত্য করে তাঁর নিষেধ সমূহ হতে বিরত থেকে তাঁর অনুসরণ করা। তাঁকে সাহায্য করা, তার সাথে বন্ধুত্ব রাখা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “বলঃ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন”। [সূরা আলি-ইমরান-আয়াত-৩১]
নাবী (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেনঃ তোমাদের কেহ পূর্ণ মু‘মিন হতে পারে না যতক্ষন আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে ও সকল মানুষের চেয়ে অধিকতর প্রিয় না হবো। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম এই হাদীসটি আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন]
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ সুতরাং যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে উহার অনুসরণ করে তাঁরাই সফলকাম। [সূরা আল-আ‘রাফ আয়াত-১৫৭]
**এখানে উল্লেখ্য যে, এখানে ভালবাসা বলতে রাসুল (সাঃ) কে ভালবাসার নামে অতিরিক্ত কোন বাড়াবাড়িকে বোঝানো হয় নি। বরং তিঁনার প্রমাণিত পদ্ধতি আনুসারে আমল করাকে বুঝানো হয়েছে।
ষষ্টতঃ তাঁর সুন্নাতের প্রতি আমল করা। তাঁর কথাকে সকলের কথার উপর প্রাধান্য দেওয়া, নিদ্বির্ধায় তা গ্রহণ করা। তাঁর শরী‘আত মোতাবেক বিধান পরিচালনা করা এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “কিন্ত না, তোমার প্রতিপালকের শপথ ! তারা মু‘মিন হবে না যতক্ষন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিস্মবাদের বিচার ভার তোমার উপর অপর্ণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সমন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে উহা মানিয়া না লয়”। [সূরা আন-নিসা-আয়াত৬৫]
সাক্ষ্য দ্বয়ের ফযিলতঃ
কালেমায়ে তাওহীদ এর অনেক ফযিলত রয়েছে যা কুরআন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, তার কিছু ফযিলত নিম্নে বর্ণিত হলঃ
(ক) ইহা ইসলামের প্রথম স্তম্ভ, দ্বীনের মূল, মিল্লাতের ভিত্তি, এর দ্বারাই বান্দা সর্বপ্রথম ইসলামে প্রবেশ করে। এর বাস্ত-বায়নের জন্যই আসমান জমিনের সৃষ্টি।
(খ) ইহা জান মাল হিফাযতের কারণ, যে ব্যক্তি ইহা উচ্চারণ করবে তার জান মাল হিফাযতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
(গ) সাধারণ ভাবে ইহা সর্ব উত্তম আমল, অধিক পাপ মোচন কারী, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ। যদি আসমান ও জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অপর পাল্লায় রাখা হয় তবে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর পাল্লা ঝুঁকে যাবে বা ভারী প্রমাণিত হবে। তাই ইমাম মুসলিম উবাদাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ
“যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম কে হারাম করে দিবেন।
** এখানে সাক্ষ্য প্রদান বলতে উপরের আলোচনা মোতাবেক তার উপর অটল থেকে এবাদত করে যাওয়া কে বোঝানো হয়েছে।
(ঘ) আর ইহাতে যিকির, দু‘আ ও প্রশংসা সন্নিবেশিত রয়েছে। দু‘আউল ইবাদাহ ও দু‘আউল মাসআলা এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ যিকির অধিক মাত্রায় পাওয়া যায় এবং ইহা অতি সহজে অর্জন করা যায়। ইহা পবিত্র কালেমা, দৃঢ় হাতল, কালেমাতুল ইখলাস, এর বাস্তবায়নের জন্য আসমান জমিনের সৃষ্টি। এর জন্যই সৃষ্টি জীবের সৃষ্টি, রাসূলগণের প্রেরণ, কিতাব সমূহের অবতীর্ণ, এরই পরিপূর্ণতার জন্য ফরয ও সুন্নাত প্রবর্তন হয়েছে। আর এরই জন্য জিহাদের তরবারী উমুক্ত করা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.