নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম, আমি নাসিম ফিরোজ। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে (মুর্শিদাবাদ) জেলায় বসবাস করি বাংলা ভাষায় এহেন উদ্যোগ দেখে আমি একজন বাঙালি মুসলিম হিসাবে গর্বিত।

এন ফিরোজ

আসসালামু আলাইকুম, আমি নাসিম ফিরোজ। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে (মুর্শিদাবাদ) জেলায় বসবাস করি বাংলা ভাষায় এহেন উদ্যোগ দেখে আমি একজন বাঙালি মুসলিম হিসাবে গর্ব বোধ করি।

এন ফিরোজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামের স্তম্ভঃ পর্ব ২ [সালাত অর্থাৎ নামায]

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:২৮

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম





আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআন মাজিদে বলেনঃ “আমি আসমান-জমিন ও এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছু অযথা সৃষ্টি করিনি।” (সুরা স্বাদঃ২৭)

তাহলে মানুষ সৃষ্টির পেছনেও অবশ্যই আল্লাহ্‌র একটি উদ্দেশ্য আছে, সেটা কি ?

এর উত্তরও আল্লাহ-পাক সুরা জারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে বলে দিয়ে দিয়েছেন । তিনি বলেনঃ “আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।”

এখানে ‘ইবাদত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ‘গোলামি করা’ বা চূড়ান্ত বিনয়, আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার। ব্যাপক অর্থে ‘ইবাদত’ বোলতে বুঝায় প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এমন সব কথা ও কাজের সমষ্টি যা আল্লাহ্‌ তায়ালা পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হন। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র নির্দেশিত যে কোন কাজ তা যদি আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে রাসুলের পদ্ধতি মেনে করা হয় তাহলেই তা ‘ইবাদত’। সেই হিসাবে নামায, রোজা , হজ্ব, যাকাত থেকে শুরুকরে পারিবারিক দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনও ইবাদতের মধ্যে পড়ে।

আমরা ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রধানত দু’ধনের আমলের নির্দেশ দিয়াছেন ১)সৃষ্টি জীব হিসাবে স্রষ্টার হক আদায় সমূহ ২)মানুষ হিসাবে মানবতা রক্ষার্থে মানুষ ও অন্য জীবের হক আদায় সমূহ ।



সালাতের গুরুত্বঃ



আল্লাহ্‌র হক তথা দৈহিক ইবাদতগুলির মাঝে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মহান এবাদত হল সালাত(নামায)। সালাত এমন একটি এবাদত যাকে আল্লাহ তার মাঝে এবং তার বান্দার মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম সাব্যস্ত করেছেন। এটা এমন এক এবাদত যা সারা বছর দৈনিক পাঁচ বার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোন অবস্থাতেই সালাত মাফ হয় না এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও সালাত হতে বিরত থাকার কোন বিধান নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় না করে শুধুমাত্র সাপ্তাহিক জুমার সালাত আদায়ের কোন ভিত্তি নেই । এভাবে সালাত আদায় খেয়াল খুশীর অনুসরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর খেয়াল খুশীর অনুসারীরা হল সবচেয়ে পথ ভ্রষ্ট (সুরা আল কশাস -৫০) ।

নবী(সাঃ) নামাযের প্রতি অতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন সেই কারণে ইসলামের পাঁচটি রুকুন আলোচনা প্রসঙ্গে নামাযের কথা কলেমা শাহাদাতের পরেপরেই এনেছেন। এছাড়াও নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো অসংখ্য হাদিস এসেছে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

“সবকিছুর মূল হল ইসলাম, আর ইসলামের খুঁটি সালাত, আর ইসলামের শীর্ষ পীঠ হল জিহাদ”। (তিরমিযি:৩৫৪১

“তোমরা অটুট ও অবিচল থাক, গণনা করো না, আর মনে রাখবে তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল সালাত, একজন মোমিন অবশ্যই সর্বদা ওজুর সংরক্ষণ করতে থাকে”। (ইবনে মাজাহ :২৭৩)

“সাওবান (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে এমন আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, তুমি বেশি করে আল্লাহর জন্য সেজদা-সালাত আদায় করতে থাক, কারণ তোমার প্রতিটি সেজদার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাপ করবেন”। (মুসলিম:৭৩৫ )

“বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা সেজদার অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা কর”। (মুসলিম:৭৪৪)



বেনামাযি কি ধরণের ইমানদার



অনেককে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের দাওয়াত দিলে তারা বলে- আমার ঈমান ঠিক আছে। সালাত আদায় না করেও ঈমান ঠিক আছে বা নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করতে পারে। দেখে নেওয়া যাক কোরআন ও হাদিস এ ব্যাপারে কি ফায়সালা দিয়েছে।

আল্লাহ্‌ পাক কুরানে বলেনঃ “সে সমস্ত লোক যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমার প্রদত্ত রুযী থেকে ব্যয় করে তারাই হল সত্যিকারের ইমানদার”। [আল-আনফাল(৮)/৩-৮]

“যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামায সংরক্ষণ করে”। [সূরা আনামঃ৯২ ]

হাদিসে বিষয়টি আরও স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ্য করা আছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ

بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ “(মুসলিম)ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে ব্যবধান হল নামায ত্যাগ করা”। [মুসলিম:১১৬ ,মিশকাতঃ৫৬৯]

لْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ “আমাদের মাঝে আর তাদের( অমুসলিম বা কাফের দের) মাঝে চুক্তি হল নামাযের, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে যাবে”।[নাশাই,তিরমিজি,ইবনে মাজা, আহমদ:২১৮৫৯,মিশকাতঃ৫৭৪(বাংলাঃ৫৭২)]

সাহাবিদের মধ্য থেকে মুলিমজাহানের দ্বিতীয় খলীফা ওমর বিন খাত্তাব(রাঃ) বলেনঃ لصَّلاَةَ تَرَكَ لِمَنْ لْإِسْلاَمِ فِي اَحَظَّ “যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল তার ইসলামে কম বা বেশি কোন অংশ নেই” । [ মুআত্বা মালিক ]

এ ছাড়া প্রখ্যাত তাবেই আব্দুল্লাহ বিন শাক্কীক আল বোকাইলি (রঃ) বলেন, “নবী (সঃ)এর সাহাবি গণ নামায ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাওকে কাফের মনে করতেন না”। [তিরমিজি, মিশকাতঃ৫৭৯ ]



বেনামাযির পরিণতি



যদি প্রশ্ন করা যায় পরিবার পরিজনদের হক আদায় করতে গিয়ে কি প্রতিনিয়ত নামায(আল্লাহ্‌র হক) ত্যাগ করা যাবে ? তখন কি সেই কাজ আমল হিসাবে মান্যতা পাবে? সকল বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই এক বাক্যে বলে উঠবেন-নাহ্‌। আল্লাহ্‌ তায়ালাও মুমিনদেরকে এবিষয়ে সতর্ক করে বলেছেনঃ “মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত”। [ সূরা মুনাফিকুন(৬৩)/ ৯ ]

একারণেই কেয়ামতের দিন সালাত হীন সমস্ত আমল বরবাদ হবে। এব্যাপারে রাসুল(সঃ) বলেন, “কিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হচ্ছে নামায। যদি নামায গ্রহণীয় হয় তবে সমস্ত আমল গ্রহণীয় হবে। আর নামায যদি প্রত্যাখ্যাত হয় তবে যাবতীয় আমল প্রত্যাখ্যাত হবে”। (হাসান সনদে ত্ববরাণী, সহীহ্ জামে সগীর, সিলসিলা সহিহাঃ১৩৫৮)। এছাড়া সিলসিলা সহিহার ২৫৩৭ নং হাদিসও এই হাদিসটির সমার্থক।

একটু ভাবুন আপনার সমস্ত আমল কি এইভাবে বরবাদ হওয়ার জন্য করছেন? আমরা জানি পথের কাঁটা সরালেও একটা নেকি আছে । সেটাও একটা আমল। কিন্তু কিয়ামতের সঙ্কট কালীন মুহূর্তে তা যদি কাজে না আসে,বিশেষকরে রোযার মতো কষ্টার্জিত আমল যদি আপনার কাজে না আসে তাহলে এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে।

শুধু একানেই শেষ নয় মৃত্যু কালীন অবস্থা থেকে শুরুকরে কবোর ও কেয়ামত পর্যন্ত বেনামাজির শাস্তির কোন শেষ নেই । সংক্ষিপ্তাকারে কিয়ামতের মাঠের কিছু অবস্থা তুলে ধরা হলঃ

বেনামাজিরা কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থাই উপস্থিত হবে: "এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।" [ত্বোয়া-হা(২০)/১২৪]

কাফেরদের সঙ্গে তাদের হাসর হবেঃ “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে নামাজের পাবন্দী করল না, তার জন্য নামাজ নূর হবে না, দলীলও হবে না এবং নাজাতের উসিলাও হবে না। কেয়ামতের দিন তার হাশর হবে ফেরাউন, কারুন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে” । [মিশকাত, পৃ : ৫৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৭৬]

তারা সালাতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে নাঃ রসুল(সঃ) বলেন, “অতঃপর সেদিন মহান আল্লাহ স্বীয় পায়ের পর্দা উন্মোচন করবেন, তখন প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি যারা পৃথিবীতে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহকে সিজদাহ্ করেছিল তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে- তারা আল্লাহর জন্য সিজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যারা মানুষকে দেখানোর জন্য, মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করেছিল তারা সিজদাহ্ করতে পারবে না। তাদের পৃষ্ঠদেশ শক্ত হয়ে যাবে- বাঁকা হবে না। যখনই তারা সিজদাহ্ করার ইচ্ছা করবে তখনই পিছনের দিকে চিৎ হয়ে উল্টে পড়ে যাবে” (বুখারি ও মুসলিম)। এই প্রসঙ্গে কোরানের আয়াতঃ "গোছা পর্যন্ত পা খোলার দিনের কথা স্মরণ কর, সেদিন তাদেরকে সেজদা করতে আহবান জানানো হবে, অতঃপর তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে; তারা লাঞ্ছনা গ্রস্ত হবে, অথচ যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল, তখন তাদেরকে সেজদা করতে আহবান জানানো হত"।[সুরা কলম(৬৮)/৪২-৪৩ ]

সালাত ত্যাগ জাহান্নামে যাবার একটি প্রধান কারণ হবেঃ “বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না,অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম।"[সুরা আল-মুদাসসির(৭৪)/৪২-৪৫] অপরদিকে নামাযীরাই জান্নাতে সম্মান লাভকরবেঃ আল্লাহ্‌ বলেনঃ “এবং যারা তাদের সাক্ষ্যদানে সরল-নিষ্ঠাবান এবং যারা তাদের নামাযে যত্নবান,তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে।[আল-মারিজ(৭০)/৩৩-৩৫]

“এবং যারা তাদের নামাযসমূহের খবর রাখে।তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে জান্নাতুল ফেরদাউসের। তারা তাতে চিরকাল থাকবে”। [মুমিনূন(২৩)/৮-১১]

কেয়ামতের মাঠে বেনামাজিদের ভয়ঙ্কর ব্যক্ত করে আল্লাহতালা বলেনঃ “সে বিশ্বাস করেনি এবং নামায পড়েনি; পরন্তু মিথ্যারোপ করেছে ও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। অতঃপর সে দম্ভভরে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে গিয়েছে। তোমার দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ। অতঃপর, তোমার দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ”। [সূরা আল-কিয়ামাহ(৭৫)/৩১-৩৫]



বেনামাজি দের জন্য দুনিয়াবি বিধান



সালাত আদায়কে আমরা ব্যক্তিগত ব্যাপার মনে করি। কিন্তু সুরা বাকারা

২৫৬ নং আয়াতে ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরাজোরি নেই বলতে অমুসলিমদের জোর করে মুসলিম বানানোর ব্যাপারে বলা হয়েছে ( আয়াতটির তাফসীর দেখুন)।

তাই ইসলামে আসার পর সমস্ত একজন মুসলিম ইসলামের সমস্ত ফরয রুকুন গুলি মানতে বাধ্য। সেই কারণে বিশ্ব বিখ্যাত চারর ইমামের মধ্যে ইমাম মালিক (রহঃ), ইমাম সাফিই (রহঃ) এবং ইমাম ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলেছেন কোন মুসলিম যদি বিনা কারণে এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করলে তাকে তওবা করতে বলতে হবে । যদি সে তওবা করতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে (ইসলামিক রাষ্ট্রে) সরকারী আইন প্রয়োগ করে হত্যা করা যাবে (আলকাবাইরঃ ৪০পৃঃ) । শুধু মাত্র ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) বলেছেন এক্ষেত্রে তাকে জেলে বন্দী করে প্রহর করতে হবে। যতক্ষণ না সে পুনারায় সালাত আদায়ের প্রতিশ্রুতি না দেই (মিরক্বাতঃ ২/১১৩-১৪ পৃঃ)।

আমরা জানি মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই। কিন্তু কোরআন অনুসারে বেনামাজি মুমিনদের ভাই নয়। আল্লাহ্‌ বলেনঃ “অবশ্য তরা যদি তওবা করে নামায আদাই করে , তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই”। [ আত-তওবা(৯)/১১ ]



এছাড়া আরবের ‘লাজনা দায়মা’ ফতোয়া বোর্ডের অন্যতম প্রধান সদস্য সেখ উসাইমিন (রহঃ) তার ‘হুকুমে তারকুস সালাহ’ বা ‘নামায ত্যাগকারীর বিধান’ নামক গ্রন্থে বেনামাজির জন্য মোট ছয়টি বিধান উল্লেখ করেছেনঃ

* ১) বেনামাজি কোন মসুলিম মেয়ের অভিভাবকত্ব করতে পারবে না।

দলিল: ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, সঠিক বুদ্ধি সম্পন্ন ওয়ালী ব্যতীত বিবাহ হবে না । আর সব চেয়ে জঘন্য নির্বুদ্ধিতা হল নামায ত্যাগ করা আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন “ইব্রাহীম নবীর ধর্ম থেকে ঐ ব্যক্তিই বিমুখ হবে যে নিতান্ত বোকা”। [ সূরা আল-বাকারা(২)/১৩০]

* ২) বেনামাজি নিকটাত্মীয়দের মিরাশ থেকে বঞ্চিত হবে।

দলিলঃ لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ

“মুসলিম কাফেরের ওয়ারিশ হবে না এবং কাফের মুসলিমের ওয়ারিশ হবে না”। [ বুখারি ও মুসলিম]

* ৩) বেনামাজি মক্কা তথা মসজিদুল হারাম এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।

দলিলঃ “হে মুমিনগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে”। [ সূরা তাওবাহ ২৮ আয়াত ]

* ৪) বেনামাজির যবেহকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া হারাম।

দলিলঃ খাযিন তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেছেন – قل الخازنفي تفسيره اجمعوا عاى تهريم ذباءح المجوس وساءر اهلالشر من مشركي المرب وعبلة الا صنامومن لاكتاب له “বিদ্বানগণ ঐকমত পোষণ করেছেন যে, অগ্নি পূজারী, শির্কপ্রন্থী, আরবের মুশরিক, প্রতিমা পূজারী ও কিতাব হীনদের জবেহ কৃত পশু হারাম”।



*৫) বেনামাজির জানাযা পড়া, মাগফিরাত ও রহমতের জন্য দুআ করা হারাম।

দলিলঃ “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসুলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফরমানদেরকে পথ দেখান না”। [সূরা তওবা(৯)/৮০]

“আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তার কবোরে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং রসূলের প্রতিও। বস্তুত তারা না ফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে”। [ আত তওবা(৯)/৮৪ ]

“নবী এবং অন্যান্য মুমিনদের জন্য জায়েজ নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে৷ যদিও তারা আত্মীয়ই হোক না কেন, একথা প্রকাশ হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী”। [সূরা তাওবাহ (৯)/ ১১৩ আয়াত ]

*৬) কোন মুসলিম মেয়েকে বেনামাজির সাথে বিবাহ দেয়া হারাম।

দলিলঃ “যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন নারী, তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিও না৷ মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্যে বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যে বৈধ নয়”। [ সূরা মুমতাহিনাহ্ (৬০): ১০]

প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ যোগ্য যে, মুগনি গ্রন্থের ৬ খণ্ডের ২৯৮-৩৪০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে বেশিরভাগ ইমাম ও ওলামাদের মত অনুযায়ী বিবাহের আগে থেকে বা বিবাহের পরে স্বামী বা স্ত্রী কিংবা উভয়েই যদি নামায ত্যাগী হয় তবে বিবাহ বাতিল হবে বলে যুক্তি পেশ করেছেন। অবশ্য এবিষয়ে আলেমদের মধ্য মতানৈক্য রয়েছে ।



নামায ত্যাগের পেছনে কিছু শয়তানী প্ররোচনা ও তার জবাব



এখন প্রশ্ন হতেপারে নামাযের এত গুরুত্ব থাকার সত্যেও কেন মুসলিমরা নামায থেকে দূরে থাকে। এর আসল কারণ হোল অজ্ঞতা। অজ্ঞতা ইসলামের আদর্শ ও হুকুম-আহাকাম বিশেষ করে নামায সম্পর্কে এবং সেই সঙ্গে কিছু শয়তানী প্ররোচনা মুসলিমদের নামায থেকে দূরে রাখে। পূর্বে নামায সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি । এখন শয়তানের অনেক প্ররচনার মধ্যে সাধারণ কয়েকটি আলোচনা করবো।

অনেকে মনে করেন বর্তমানে ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব নয়। মনে রাখবেন এইরূপ ধারণা পোষণ করার অর্থ হল কুফরি করা। কেননা আল্লাহতালা সুরা ‘আহজাবের’ ৪০ নং আয়াতে অনুযায়ী নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) হলেন শেষ নবী। অর্থাৎ নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া বিধান হল কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য চূড়ান্ত বিধান

বিশ্ব ও বিশ্বের যাবতীয় বিষয়ের সৃষ্টিকর্তা। এবং সেই মহাজ্ঞানী আল্লাহই দুনিয়ায় সুষ্ঠভাবে জীবন জাপনের জন্য ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা দান করেছেন যা কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত। কারণ সুরা ‘আহজাবের’ ৪০ নং আয়াতে অনুযায়ী নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) হলেন শেষ নবী। তাছাড়া আমদের ভালো মন্দ তিনিই ভালো যানেন(সুরা বাকারাঃ ২১৬)। “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না”(সুরা বাকারাঃ ২৮৬)। তাই বর্তমানেও ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব এর জন্যে প্রয়োজন ইসলামিক শরিয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং তার উপর দৃঢ় বিশ্বাসের।

আনেকে মনে করেন যে নামাযিকে সমস্ত পাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে হবে, তানাহলে নামায হবে না। তাই তারা মনে করে যে পরে এক সময় সমস্তকিছু ছেড়ে ছুড়ে একবারে নামায ধরবো। মনে রাখবেন এটি একটি শয়তানী ষড়যন্ত্রের বড় অস্ত্র মাত্র । যদি তাই হয় তাহলে তাদের জুমা বা ঈদের নামায হয় কীভাবে ? আসলে সঠিক ভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামায আদায় করলে নামাযই মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখবে(সুরা বাকারার ৪৫ নং আয়াত)। আমরা জানি দুই নামাযের মধ্যেকার সাগিরা গুনহগুলি নামাযের মাধ্যমে ঝরে যায়(আহমদ,সহি আল জামেঃ৫০৭৫)। এমন কি নবী(সঃ) বলেন, তাহাজ্জুদের জন্য রাত্রি জাগরণ চোরকে চুরি থেকে নিবৃত্ত করবে(আহমদঃ৯৭৭৭, মিশকাতঃ১২৩৭)। তাই বলা যেতে পারে যে কেও পাপ থেকে দূরে থাকতে চাই তাহলে তাকে প্রথমে নামায আদায় করা শুরু করতে হবে।

অনেকে আবার মনে করেন যে, পার্থিব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নামায পরিত্যাগে কোন দোষ নেই এবং তারা ব্যস্ততার ওজুহাত পেষকরে। একথা পুরপুরি ঠিক নয়। আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে, পরিবারের হক আদায় করতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত আল্লাহ্‌র হক থেকে বিরত থাকতে পারিনা। আর যেহেতু আল্লাহ্‌ নিষেধ করেছেন এইভাবে উপার্জনও আপনার জন্য বৈধ হবেনা। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে “পরকালই আসল, এ দুনিয়া তো আসলে খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই নয়” (আনকাবুত(২৯)/৬৪, হাদিদ(৫৭)/২০)। তাছাড়া আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত” (সুরা যারিয়াত:৫৮) । ব্যস্ততা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল ইবাদত। কারণ হাদিসে ক্বুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “হে আদমের সন্তান! আমার ইবাদতে মন ঢেলে দাও তবে আমি তোমার বক্ষ সম্পদ দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার দারিদ্র দূর করে দিব। আর যদি তুমি তা না কর তবে তোমার অন্তরকে ব্যস্ততা দ্বারা পরিপূর্ণ কোরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করব না”। (আহমদ, ইবনে মাজা)



উপরের আলোচনা থেকে আমরা অনেকে নিরাশ হতে পারি । তবে নিরাশ হবার কোন কারণ নেই, কেননা তওবার দরজা এখনো আমাদের জন্য খোলা আছে। মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[ ফুরকানঃ ৭০]

তাই এখনি তওবা করে সালাত আদায় করা শুরু করতে হবে, কারণ মৃত্যু কখন আসবে তা আল্লাহ্‌ ছাড়া কেও জানে না এবং আল্লাহ্‌তালা মৃত্যুকালীন তওবা কবুল করেন না। আল্লাহ্‌ কোরআনে বলেনঃ “আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি”।(নিসাঃ ১৮)

এর পরেও যদি আমরা এই আহ্বানে সাড়া না দিই তাহলে আমদের সম্পর্কে আল্লাহ তালা বলেনঃ “আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহব্বান কর,তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ,তারা নির্বোধ। [মায়েদাঃ ৫৮]

আল্লাহ আমাদেরকে নিয়মিত সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমীন।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.