![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার জন্ম ফরিদপুরের সালতা গ্রামে। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আমার বাবা একজন কৃষক। বাবার সাথে বহুদিন অন্যের জমিতে কাজ করেছি।
ছবিঃ গুগল
এবার দেশে ফিরলে আমি খুব দূরের কোনো গ্রামে যাবো। একদম অজপাড়া গা যাকে বলে। মাটির রাস্তা, বাঁশের সাঁকো, মাটির রাস্তায় দুই পাশে থাকবে সারি সারি নানান রকম গাছ, প্রতিটা বাড়িতে পুকুর থাকবে, পুরো গ্রামে একটা বড় দীঘি থাকবে। গ্রামের শেষ মাথায় থাকবে কোনো সুন্দর নদী। যে গ্রামে যেতে সময় লাগবে ১৮ থেকে ২২ ঘন্টা। শহর থেকে বাসে উঠবো, বাসে করে দুটা ফেরি পার হতে হবে, বাস থেকে নেমে ইঞ্জিন চালিত নৌকায়, নৌকা থেকে নেমে প্যাঁককাঁদায় হাঁটা পথ। এক ঘন্টা হাঁটার পর রিকশা। রিকশা থেকে নেমে আবার হাঁটা পথ। বাংলাদেশে এত দূরের কোনো গ্রাম কি আছে? নিশ্চয় আছে।
আমার নিজের গ্রাম ঢাকার কাছেই। যেতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। আমাদের গ্রাম আসল গ্রাম না। শহরের মতো। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে, ফাস্ট ফুডের দোকান আছে, বিউটি পার্লার আছে, কমিউনিটি সেন্টার আছে, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আছে। কোনো মাটির রাস্তা নেই, বড় কোনো দীঘি নেই, পুকুর নেই- এমন কি কোনো নদীও নেই। এটা কোনো গ্রাম হলো? বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রামই বদলে গেছে। এটা উন্নয়ন না অধপতন তা আমি সঠিক জানি না। সত্যিকারের গ্রামের স্বাদ আমি পেতে চাই। নদীতে আর পুকুরে লাফালাফি করে আমি গোছল করতে চাই মন ভরে। শহরে আরাম আছে কিন্তু শান্তি নাই।
আমি এবার এমন একটা গ্রামে যাবো সে গ্রামে বিদ্যুৎ থাকবে না। সন্ধ্যার পর থেকে হারিকেন বা কুপি ভরসা। সারারাত ঝি ঝি পোকা সমানে ডেকে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে লুঙ্গি পরে পুকুরে নেমে গোছল করবো। গোছল শেষে গামছা দিয়ে শরীর মুছবো। গোছল করার আগে রঙ চা আর দুই মুঠ মুড়ি খাবো। গোছল করে এসে নানান রকম ভর্তা দিয়ে খুদের চালের বোয়া খাবো। দুপুরে মাটির উঠানে বসে ভাত খাবো নানান রকম দেশী মাছ দিয়ে। রান্না হবে অবশ্যই মাটির চুলায়। শুনেছি মাটির চুলায় রান্না স্বাদ ভালো হয়। বিকেলে স্কুল মাঠে গিয়ে ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলবো।
প্রতিটা ঋতুতে গ্রামের আলাদা আলাদা সুন্দর দেখায়। বর্ষাকালের গ্রাম সবচেয়ে সুন্দর। গ্রামের রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। নৌকা ছাড়া গতি নাই। মাটির পথ গুলো পিছলা হয়ে থাকে তাই খুব সাবধানে হাটতে হয়। প্রতিটা গ্রামে সপ্তাহে একদিন হাট বসে। হাট থেকে কেনাকাটা করার মজাই আলাদা। গ্রামের মেলা গুলো হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেলা। আমি এক বিদেশীকে বিয়ে করেছি। সে কোনো দিন গ্রামের মেলা দেখেনি, হাট দেখেনি। তাকে এবার করোনা কমলে, আমাদের বাংলাদেশ দেখাতে নিয়ে আসবো। লিন্ডা আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের গল্প শুনে শুনে, বাংলাদেশ দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
আমি আমেরিকার যে শহরে থাকি সেই শহরের নাম ফিলাডেলফিয়া। ছবির মতো সুন্দর শহর। বড় বড় বিল্ডিং নার শপিংমল এর অভাব নেই। অনেক বছর ধরে এখানে আছি। কিন্তু আমার মন পড়ে আছে আমার আমার দেশের কোনো অজপাড়া গায়ে। মাটির রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটবো। খাল, বিল অথবা পুকুর বা নদীতে মাছ ধরবো। বিকেলে বাজারে গিয়ে খাটি গরুর দুধ দিয়ে চা খাবো। মাইলের পড় মাইল থাকবে সবুজ ধানক্ষেত। রাখাল গরু নিয়ে যাবে মাঠে। লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে কৃষক হেঁটে যাবে। জমিতে কাজ করবে কৃষক। দুপুর বেলা কৃষকের স্ত্রী খাবার নিয়ে যাবে জমিতে। গ্রাম মানেই সুন্দর সুন্দর দৃশ্যের সমাহার।
শহরের মানুষের মতো গ্রামের মানুষদের এখনও ততটা কুটিলতা জটিলতা স্পর্শ করেনি। গ্রামে এখনও কিছু সরলতা আছে, ভালোত্ব আছে, মহত্ব আছে। গ্রামের মানুষ এই জন্যই শহরে এলে অস্থিরবোধ করে। দ্রুত গ্রামে ফিরে যাবার জন্য অস্থির বোধ করে। আমি আমেরিকা বেশি দিন থাকব না। প্রচুর টাকা পয়সা নিয়ে শ্রীঘই নিজের দেশের কোনো গ্রামে ফিরে যাবো। বাকি জীবটা গ্রামে পার করে দিবো। জমি কিনব। নিজের জমি নিজেই চাষ করবো। নানান রকম গাছ লাগাবো। গ্রামের বাচ্চাদের পড়াবো। জীবনে অনেক পরিশ্রম করেছি। আমার ধারনা আমার শেষ জীবনটা খুব আনন্দে কাটবে।
২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৩:৫৬
কুশন বলেছেন: আদর্শ গ্রাম আছে। অনেক গুলো আছে।
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৬
ইসিয়াক বলেছেন: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এতগুলো বছর বাদে এই বয়সে এসে গ্রামের মানুষজন ও পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে আপনার সমস্যা হবে।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৫
কুশন বলেছেন: আমি গ্রামের ছেলে। গ্রাম আমার রক্তের সাথে মীশে আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৩
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চমৎকার উপলব্ধি।একটিও আদর্শ গ্রাম পাওয়া যাবে কিনা বলা যাচ্ছে না । নগরীকরণের নামে আমরা সব কিছু দূষিত ফেলছি ।