নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুলনা !

১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:১৪


মায়ের উদর থেকে যখন আমি ধরণীতে আসি তখন বেশ মোটাসোটা ছিলাম। নানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই কথা আমাকে প্রায়শই বলতেন। উহার ধারণা ছিলো আমি অনেক বড়ো আলেম হতে পারি। নানী মনে করতেন আমার জীবনে এমন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটবে যা আমাকে ধর্মীয় লাইনে নিয়ে আসবে। নানুর এরকম ভাবনার পিছনে একটা কারণ ছিলো। যখন আমি জন্মাই তখন নাকি মায়ের পেট থেকে " খৎনা" করা অবস্থায় এসেছিলাম ধরণীতে। নার্স আমাকে দেখে নানীকে বলেছিলেন, "আপনার নাতি বড়োই ভাগ্যবান! আল্লাহর অশেষ রহমত আছে তার উপর। সে জীবনে অনেক বড়ো কিছু হবে। "

আমার মায়ের পরিবারে সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। নানা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার করার পরে হোমিওপ্যাথি শিখে ডাক্তারি করতেন। মামা-খালারা সবাই উচ্চশিক্ষিত। কেউ নার্স ও নানীর কথায় তেমন রিয়াকশান দেখালেন না। কিন্তু নানী মাকে সবসময় বলতেন, "কুতুব কে ঝাড়ু দিয়ে পেটাবা না, উহার অমঙ্গল হইতে পারে "। আমার আম্মার ভয়ংকর রাগ ছিলো। তিনি সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসেন। আমি প্রায়শই খেলতে গিয়ে, মারামারি করে কাপড় ছিড়ে আনতাম। এজন্য বাসায় প্রতিদিন ধোলাই অবধারিত ছিলো। স্কুলের শার্ট ও প্যান্ট তিন সেট করে ছিলো। তাও শেষ রক্ষা হতো না। প্রতিটি ড্রেসে রিপু করা থাকবেই। আম্মা প্রায় ঘরের সব জিনিস দিয়ে মেরেছেন, কিন্তু ঝাড়ু ও বই দিয়ে কখনো মারেন নাই। নানীর অমোঘ বাণী অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গিয়েছেন।

নার্স ও নানীর এই 'সুন্নাতে খৎনা'র ব্যাপারে ৮/১০ বছর বয়স থেকে আমি জানার চেষ্টা করতাম। চিটাগাং শহরে আমার চেনা পরিচিত সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কেউ এই ব্যাপারে কিছুই জানতো না। যখন গ্রামের বাড়ী যেতাম তখনও খোজ লাগাতাম। গ্রামে এই 'অলৌকিক খৎনা' কান্ড নিয়ে অনেক ঘটনা চাউর আছে। এক ছেলে মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাকি অলৌকিক ভাবে তার 'খৎনা' হয়ে গিয়েছিলো। আত্নীয়-স্বজন সবাই বাচ্চার চিৎকারে শুনে রুমে ঢুকে দেখে এই কান্ড ! যদিও আমার কেইস ভিন্ন তবুও এই ঘটনা শোনার পর ছেলেটির সাথে সাক্ষাত করার ইচ্ছা হলো। কিন্তু তাকে সে সময় গ্রামে পাওয়া যায় নাই। কোথায় নাকি বেড়াতে গিয়েছিলো ! আমিও চিটাগাং চলে আসলাম।

নানী প্রায় সময় নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কাহিনী বলতেন! তিনি নাকি ডাকাত থেকে আউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। আমার জীবনেও এমন কোনো টারনিং পয়েন্ট আসতে পারে। নানী সবসময় বলতেন, " কারো সাথে বেয়াদবি করবা না, গালি দিবা না,মানুষের মনে কষ্ট দিবা না,"। নানীর কোন কথাই রাখতে পারি নাই আমি। একবার চিটাগাং কোনো এক পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে খুবই প্রস্রাবের বেগ চাপে। আমি একটি বড়ো গাছের গোড়ায় হাল্কা হলাম। হটাৎ দেখি মাথায় কাপড় বাধা এক লোক রেগেমেগে আমার নিকট আসে। সে জানায়, এখানে একজন পীরের মাজার আছে। আমি কাজটা ঠিক করি নাই। বাসায় এসে সবাইকে এই কথা বলার সময় নানী খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি সাথে সাথে আমাদের পারিবারিক হুজুরকে খবর দেন বাসায় আসতে। হুজুর সাহেব বাড়িতে এসে নানীকে আশস্ত করলেন। এর কিছুদিন পর আমরা ঢাকায় চলে আসি। নানীর স্নেহ থেকে দীর্ঘদিনের জন্য বিচ্ছেদ ঘটে।

ঢাকায় এসে 'অলৌকিক খৎনা'র ব্যাপারে জানার চেষ্টা করলে সবাই হেসেই উড়িয়ে দিতো ব্যাপারটা। এক সময় জানার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। পড়াশোনা ও বন্ধুবান্ধবদের হইচইতে সব চাপা পড়ে যায়। আগে থেকেই বই পড়ার অভ্যাস ছিলো ঢাকায় এসে মুভি দেখার নতুন অভ্যাস হয়। বাবাকে বলে একটা ডিভিডি কিনে আনি আমরা। সেখানে প্রায়শই হলিউড ও বাংলা ছবি দেখতাম। আমাদের বাসায় ডিশের কানেকশান ছিলো না। কেবল বিটিভি দেখে পোষাতো না। ঢাকায় যে এলাকায় থাকতাম সেখানে সাইফুল ও জুবায়ের নামে দুইজন ছেলের সাথে আমার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। তারা আমাকে অনেক ছবির ক্যাসেট দিতো দেখার জন্য। বেশিরভাগই হলিউড মুভি ছিলো। জুবায়ের ও সাইফুল অকালপক্ক ছিলো। তারা হলিউডের ১৮+ মুভিও দেখতো। একবার সাইফুলের বাসা থেকে অনেক গুলো ক্যাসেট এনেছিলাম দেখার জন্য: এর মধ্যে একটা ছবির নাম ছিলো 'Desperado '। মুভির ব্যাপারে আগে থেকে জানা না থাকায় আমি দেখতে শুরু করি ।বাসায় কেউ তেমন মুভি দেখতো না। তবে উল্টাপাল্টা কিছু দেখবো এমনটাও আশা করতো না। সবে তখন ক্লাস ফোরে পড়তাম। মুভিটা দেখার সময় ক্যারেন্ট চলে গেলে আমি টিভির রুম থেকে গিয়ে নিজের রুমে ঘুমিয়ে পড়ি।

সকালে উঠে নাস্তার টেবিলে দেখি সবাই খুব চুপচাপ। কেউ কথা বলছে না। বুবুকে জিজ্ঞাসা করলে সে রেগে গিয়ে বলে, " তোমার এখন থেকে মুভি দেখা বন্ধ। সাইফুল ও জুবায়েরের সাথে চলবি না। " আমি ভেবেছিলাম আমার পরিবার বুঝি সাইফুল ও জুবায়েরের বাবা-মা কে অভিযোগ জানাবে। কিন্তু তারা এমন কিছুই করে নাই। সাইফুলের বাবা আদম ব্যাপারীর ব্যবসা করতো এবং জুবাইয়ের বাবার বড়ো মুদি দোকান ছিলো। বাবার সাথে তাদের বাবাদের সম্পর্ক ভালো ছিলো। শুধুমাত্র আমার সাইফুল ও জুবায়েরের সাথে মেশা নিষিদ্ধ ছিলো। বাকি সব সম্পর্ক ঠিকঠাক ! একদিন বাসায় আমি এই বিষয়টা নিয়ে কথা তুললাম। বড়োরা বলেন, সাইফুল ও জুবায়ের বখে গিয়েছে। তাদের পরিবার তাদের কে কন্ট্রোল করতে পারে না। তাদের সাথে মিশলে আমিও খারাপ হয়ে যাবো। তাদের পরিবার এমনিতে ভালো! একজন আদম ব্যাপারী কি রকম ভালো লোক হতে পারে আমার তা বুঝে আসতো না। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম।

গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার পর বড়ো বোনের সরকারি চাকুরি পাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা দেখে বাসার সবাই বিদেশে চলে যেতে বলতো। বুবুর ভালো কোথাও জব হচ্ছিলো না। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে টপ রেজাল্ট করার পরও উহার কেন সরকারি চাকুরি করা লাগবে তা পরিবারের কারো বোধগম্য হতো না। অনেক সাধনার পর উহার সরকারি চাকুরি হয়। বুবুর কষ্ট দেখে আব্বা বলে বিদেশে চলে যাইতে। ভালো কোনো দেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে। আমি রাজি হলাম না। বুবুর দেখানো পথে আমিও হাটা শুরু করলাম। বহুবছর পর একদিন দেখি বাসায় সাইফুল ও জুবায়ের কে নিয়ে আলাপ হচ্ছে। এই দুইজনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিলো না। সাইফুলের নাকি বিবাহ! সে এখন বাবার ব্যবসায় ঢুকে আরো ব্যবসা কে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের দাওয়াত দিয়েছে তার বিয়েতে। সাইফুলের বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে আমাদের পরিবারের চক্ষু চড়কগাছ। অনেক নামী দামী লোকজন এসেছে সাইফুলের বিয়েতে। সাইফুল এখন বেশ সুদর্শন পুরুষ হয়ে গেছে। পুরো ব্যবসা সে নিজে চালায়। এর কিছুদিন পর জুবায়েরের মা ফোন দেয় আমার মাকে। উনার ছেলে নাকি ইন্টার পাশের পর কুয়েতে গিয়েছে চাকুরি করতে। মাসে এক লাখ কামায়!

সাইফুল ও জুবায়েরের এই পরিবর্তন দেখে পরিবার থেকে চাপ বাড়তে থাকে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য । জুবায়ের ও সাইফুল লাইফে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। কবে সরকারি চাকুরি হবে না হবে তার চেয়ে বিদেশে গেলে নাকি ভালো করবো। আমি তখন টিপ্পনী কেটে বলি, " সাইফুল ও জুবায়ের তো বখে গিয়েছে। তাদের সাথে কেন আমার তুলনা করছো ? " :P


মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৩৯

যামিনী সুধা বলেছেন:



আপনি এখন কি করেন?

১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশে চহরী করি!

২| ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৮

মেহবুবা বলেছেন: নিজের সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা করতে নেই, কেবল সন্তান কেন? অন্যের সাথে তুলনা করা ঠিক না কোন মানুষকে।

১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সন্তানকে দিয়ে এই তুলনা সবচেয়ে বেশি করা হয়।

৩| ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:২৫

কামাল১৮ বলেছেন: প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোন আধুনিক শিক্ষা নয়।বিশেষ করে বাংলাদেশের কারিকুলামে।বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে অনেকে জংগী হয়।আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কোন লোক জংগী হতে পারে না।

১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: যারা ছোটকাল থেকে দেশি বিদেশি সব ধরণের লেখকের বই পড়ে তারা উদারপন্থী হয়। আমি ইমাম গাজ্জালী থেকে তসলিমা নাসরীন সবই পড়েছি। এছাড়া অনুবাদ গল্পের বিগ ফ্যান ছিলাম। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইয়ে পোষাতো না। টিফিনের খরচ বাচিয়ে প্রতি সপ্তাহে বই কিনতাম পুরাতন বইয়ের দোকান থেকে। ইদের বকশিশ বাচিয়ে বইমেলায় বই কিনতাম। ইন্টার প্রথম বর্ষে ৫০০০ হাজার টাকার বই কিনেছি বইমেলা থেকে । কিন্তু একটা বইও পড়া হয় নি। ইন্টারে। বহুত কঠিন পড়াশোনা!

৪| ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৪১

যামিনী সুধা বলেছেন:



৩৬শে জুলাই'এর স্বাধীনতা যে, আমেরিকান ক্যু, ইহা আপনি এখন বুঝেছেন, নাকি এখনো সমস্যায় আছেন?

১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি প্রায় সময় এই ব্যাপারে ব্লগে সবার ক্লাশ নেন। ইহা যাই হোক না কেন আমার নিকট অভ্যুত্থান হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক দলের কে মুক্তি পেল, কে নিবন্ধন ফেরত পাবে, কে গোলাম আযমের বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাই নাই স্লোগান দিবে, কে করের টাকা চান্সে মওকুফ করাবে তার জন্য সাধারণ ছাত্র সমাজ আন্দোলনে যুক্ত হয় নি। আসলে পরের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়া বাঙালির স্বভাব।।

৫| ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১:২৩

যামিনী সুধা বলেছেন:



সাধারণ ছাত্ররা না'নামলেও শেখ হাসিনা থাকতে পারতো না, ইহা আমেরিকান ক্যু; ক্ষমতা যেতো মিলটারীর কাছে; দেশে এমন অরাজকতা হতো না ও দেশ জংগীদের দখলে যেতো না।

৬| ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১:২৪

যামিনী সুধা বলেছেন:



দেশ যেখানে গেছে, সাধারণ ছাত্ররা ইহাকে রক্ষা করতে পারবে?

৭| ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১:২৫

যামিনী সুধা বলেছেন:




দেশ যেখানে গেছে, একমাত্র খুবই বিচক্ষণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা ব্যতিত অণ্য কেহ পড়ালেখা করবে?

৮| ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ২:৪৫

কামাল১৮ বলেছেন: সব ধরনের বই পড়লে সবজান্তা হবেন কিন্তু মুক্তমনা হবেন না।প্রগতিশীল লোকদের সংস্পর্শে থাকলে প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকলে,প্রগতিশীল চিন্তা ধারার অধিকারী হবেন।নয়তো সবজান্তা শমসের হবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.