![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
মার্কিন রাজনীতির আলোচিত ও বিতর্কিত চরিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় যাকে “বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী নেতা” বলে অভিহিত করেছিলেন, সেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি এখন প্রকাশ্যে হতাশা প্রকাশ করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ চতুর্থ বছরে পড়ার পর ট্রাম্পের কণ্ঠে আগের নরম সুর নেই। বরং তিনি রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য নিয়ে এসেছেন একটি কড়া কৌশলগত পরিকল্পনা পুতিনকে ৫০ দিনের আলটিমেটাম। এই সময়ের মধ্যে যদি রাশিয়া যুদ্ধ না থামায়, তবে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে শতভাগ নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু রাশিয়া নয়, যে সমস্ত দেশ রাশিয়ার সঙ্গে এখনো বাণিজ্য করছে যেমন ভারত, চীন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি। এই অবস্থান স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, ট্রাম্প তার কূটনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছেন এবং এখন তিনি রাশিয়াকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছেন : “যুদ্ধ থামাও, না হলে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হবে।”
ট্রাম্পের এই নতুন কৌশল আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তার সাম্প্রতিক ফোনালাপে। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর মতে, ট্রাম্প সরাসরি জেলেনস্কিকে প্রশ্ন করেন, “তুমি কি মস্কোতে আঘাত হানতে পারবে? সেন্ট পিটার্সবার্গেও কি পারবে?” এই প্রশ্ন কেবল এক দেশের প্রেসিডেন্টের কৌতূহল নয়, বরং এক প্রকার সরাসরি আক্রমণের অনুমতি ও উৎসাহ হিসেবেই বিশ্লেষিত হচ্ছে। জেলেনস্কির জবাবও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ—“অবশ্যই পারব, যদি আপনি আমাদের অস্ত্র দেন।” এই সংলাপ থেকেই বোঝা যায়, ট্রাম্প এবার আর কেবল কূটনীতিক তৎপরতায় সীমাবদ্ধ থাকছেন না—বরং তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে কৌশলগত আঘাত হানার মত পথেও উৎসাহ দিচ্ছেন।
এই অবস্থান ট্রাম্পের পূর্ববর্তী বক্তব্য ও কৌশলের সঙ্গে এক ধরনের দ্বৈততা তৈরি করে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে তিনি ন্যাটোর প্রতি ছিলেন সমালোচনামূলক। এমনকি ন্যাটোকে “অচল” বলেও বর্ণনা করেছিলেন। অথচ এখন, একই ট্রাম্প ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন এবং বলছেন—আমরা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করছি যা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারে ন্যাটোর মাধ্যমে পাঠানো হবে। এই রূপান্তর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এক নতুন ঘরানার সূচনা করছে, যেখানে ট্রাম্প নিজেকে ‘ডিলমেকার’ থেকে ‘কৌশলগত চাপে রাখা রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন।
ট্রাম্পের এই অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ডেকে এনেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “ওয়াশিংটন ও ন্যাটোর সিদ্ধান্ত কিয়েভকে শান্তির পথে নয়, বরং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পথেই উসকানি দেবে।” তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটিকে বিশ্লেষণে রাশিয়ার কিছু সময় লাগবে। অর্থাৎ, রাশিয়ার পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের এই নতুন অবস্থানকে হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না। বরং রাশিয়া এখন আবারও নিজের কৌশল ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের দিকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি পুতিনকে এখনো পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেননি। বিবিসির সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি বলেন, “আমি তার ওপর হতাশ, কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।” তিনি জানান, পুতিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির আলোচনা অতীতে চারবার ভেবেছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই কিছু না কিছু ঘটেছে—যেমন আলোচনার কথা বলার পরপরই কিয়েভে রুশ হামলা। এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, ট্রাম্প এখন পুতিনের কৌশল নিয়ে সন্দিহান এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবস্থানে আছেন।
ট্রাম্পের কৌশল পরিবর্তনের মূল পেছনে রয়েছে পুতিনের অনড়তা এবং ইউক্রেনে সংঘাতের দীর্ঘায়ন। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ একদিনে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু করলেও ট্রাম্প এখন বুঝেছেন যে, রাশিয়ার ওপর ‘বন্ধুত্ব’ দিয়ে নয়, বরং চাপ সৃষ্টি করেই আলোচনা টেবিলে টানা যেতে পারে। আর এই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে দুটি পর্যায়ে একদিকে সরাসরি সামরিক সহায়তা, অন্যদিকে সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের নতুন অবস্থান কেবল একটি মার্কিন কৌশল নয় এটি ইউরোপ ও এশিয়ার ভূরাজনীতির জন্যও এক অশনিসংকেত। রাশিয়া ও পশ্চিমা জোটের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে, যুদ্ধের অবসান এখন আরো দূরে সরে যাচ্ছে। এর ফলে শুধুমাত্র ইউক্রেন নয়, বরং সারা ইউরোপজুড়ে নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে এবং চীন-ভারত সহ অনেক দেশ দ্বিধা ও দোটানায় পড়ে যাবে রাশিয়ার পাশে থাকবে, না পশ্চিমা জোটের নিয়ম মেনে চলবে।
ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্ক এখন আর বন্ধুত্বের জায়গায় নেই। যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার দ্বন্দ্বে নতুন এক পর্ব শুরু হয়েছে। ট্রাম্প হয়তো পুতিনকে সম্পূর্ণভাবে ছাড়ছেন না, কিন্তু চাপ দিয়ে তার জায়গা সংকুচিত করছেন, যাতে আলোচনার টেবিলে টেনে আনা যায়। তবে পুতিন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে এই যুদ্ধ কেবল ময়দানে নয়, কূটনীতিতেও আরও বহুদিন চলবে। এবং তার শিকার হবে শুধু ইউক্রেন নয়—পশ্চিমা জোট, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং সাধারণ জনগণ।
১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:২৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমারো তাই মনে হয় ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৪০
কামাল১৮ বলেছেন: এই দ্বন্দ্ব বহু পুরনো।চলবে আরো বহু দিন।