নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ: সম্ভাবনার পথ নাকি অস্থিরতার চোরাবালি?

২৮ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:১৭


আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে একটি স্পষ্ট চিত্র ফুটে ওঠে: রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দুর্বলতা এবং এর ফলস্বরূপ জনগণের জীবনে নেমে আসা অসহনীয়তা। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নয়, বরং সামাজিক অবক্ষয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং এক অদ্ভুত নীরবতার সম্মিলিত ফল। ড. ইউনূসের গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণার পাশাপাশি, দেশের বিদ্যমান উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা, বিশেষত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাসের পর মাস বন্ধ থাকা, আমাদেরকে এক গুরুতর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়: আমরা কোন পথে এগোচ্ছি?

ড. ইউনুস গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় খুলছেন, খবরটা দেখে কেউ কেউ উৎসাহিত। কিন্তু আমরা যারা দেশের ভেতরের বাস্তবতা দেখি, তারা কুয়েটের দিকে তাকিয়ে থাকি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পাঁচ মাস ধরে বন্ধ। শিক্ষা নেই, সমাধান নেই, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউ চিন্তিত না। উগান্ডার মতো দেশেও বিশ্ববিদ্যালয় অকারণে বন্ধ থাকে না, অথচ আমরা নিজেদের আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করলেও এই সহজ সত্যটি মানতে পারছি না। প্রশ্ন জাগে, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় কি এই একই ভাগ্য বরণ করবে ? এই অস্থিরতার মূল কারণ হিসেবে দেখা যায় দলীয় ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতির গভীর শিকড়। এটিই আমাদের উচ্চশিক্ষাকে গ্রাস করে রেখেছে। বিগত সরকারের সময় থেকে ছাত্র রাজনীতি যাতে বন্ধ হয় তা নিয়ে লেখালেখি হয়েছে । অথচ যারা একসময় এর সমর্থক ছিলেন, আজ তারাই ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যস্ত কী এক পরিহাস!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী, যা বিশ্বের অনেক দেশের মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যার চেয়েও বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা কী? যদি এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে উৎপাদনশীল কাজে ব্যস্ত রাখা না যায়, তাহলে প্রতি পাঁচ-সাত বছর পর পর আন্দোলন-সংগ্রাম অবশ্যম্ভাবী। ২০ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র দুই লক্ষ ছেলে-মেয়েই আন্দোলন সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। এভাবে চলতে থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাময়িক লাভ হলেও রাষ্ট্রের কী লাভ হবে? দীর্ঘমেয়াদে এটি শুধু অস্থিতিশীলতা এবং বিপর্যয়ই ডেকে আনবে।

সবচেয়ে ভয়াবহ এবং উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে রংপুরের ঘটনা। গঙ্গাচড়ায় একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হিন্দু কিশোরের কিছু ফেসবুক পোস্ট/কমেন্টের কারণে তথাকথিত প্রতিবাদ হয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং, এর প্রতিক্রিয়ায় দুই দিনে মোট তিন দফা হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ওই কিশোরের বাড়িসহ আরও ১৪টি হিন্দু বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে, এবং টাকা ও সোনাদানা লুটপাট করা হয়েছে। এই হামলার ভয়াবহতা এতটাই বেশি যে, একটি প্রাইমারি এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির অভাবে এখনো বন্ধ হয়ে আছে, কারণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হিন্দু। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এই ঘটনার পর ওই এলাকার আতঙ্কিত স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

এই ঘটনাটি ঘটেছে 'ইশকে রাসুল'-এর নামে, অথচ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে যে কিশোরটি ধর্ম অবমাননা করেনি, বরং কেউ একটি ভুয়া আইডি খুলে ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু বাতাসে ভেসে বেড়ানো এই সংবাদ কাউকে রক্ষা করে না। এই পরিবারগুলো বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব, ক্ষমতাহীন ও নিঃস্ব ধরনের মানুষ। তাদের জীবন খুব নিরামিষ ও নির্মম। আমাদের সভ্য দুনিয়ার মতাদর্শিক তর্কের অনেক বাইরে, দূর প্রান্তরে, যেখানে পেটে খেলে পিঠে সয়, সেই দুনিয়ায় তাদের বসবাস। তাদের উপর উত্তেজিত জনতা নামে এই যে বে-আইনি রংবাজি যদি আগাম ধরেও নিই এটা ষড়যন্ত্র, কোনো দলের লোকেরা করেছে এই মাস্তানি ও সন্ত্রাস তা নিয়ে তথাকথিত দক্ষিণপন্থী মহল থেকে সামান্যতম কোনো তৎপরতা কি আছে? সামান্য একটু প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ ? নিদেনপক্ষে ফেসবুক প্রচারণা ? বিবৃতি ? না, নেই।

রাসুলের (সা.) সাথে এই রংবাজ ও সন্ত্রাসীদের যে দূরতম সম্পর্কও নেই, তা তো স্পষ্ট। তবুও কেন কোনো প্রতিরোধ নেই এই প্রশ্ন করাটাও ইভেন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আজ কেউ বলে না, ফেক আইডি দিয়ে কাউকে ফাঁসানো হলে রাষ্ট্র কেন তদন্ত করবে না ? কারণ এতে ধর্মবিরোধী তকমা জুটে যেতে পারে। কেউ বলছে না, কেন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না ? দেশে যে কোনো উগ্র দক্ষিণপন্থা নেই, এই বাণী প্রচারে লোকের অভাব নেই। এমনকি যারা এই ধরনের সন্ত্রাসের ডাইহার্ট ফ্যান, তারাও সর্বশক্তি দিয়ে এই জিনিস প্রচার করে চলছেন।

ধর্ম ও ইসলামের নামে এই যে একটি সামাজিক সন্ত্রাসপন্থা নীরবে নিভৃতে গড়ে উঠতে দেওয়া হচ্ছে, এবং এসব ঘটনায় কেউ টু শব্দটা করছেন না, কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়ছেন না, আইনের শাসনের কোনো বালাই মানছেন না এটারই বৈশ্বিক অনুবাদ হচ্ছে 'দক্ষিণপন্থার উত্থান'। এই 'উত্থান' বা 'উত্থান-প্রচারণা' ঠেকাতে আমাদের কোনো চিন্তা বা কর্মসূচি আছে কী? এমনকি নিদেনপক্ষে সামান্য ইচ্ছা ? নেই। দেখা যাচ্ছে না আরকি।

আইন বলছে, ধর্ম অবমাননায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাস্তবতা দেখাচ্ছে তদন্তের আগেই বিচার হবে, উত্তেজিত জনতা করে দেবে। রাষ্ট্র এই জনতাকে থামায় না। পুলিশ শুধু কিশোরকে ধরে নিয়ে যায়। রংপুরে যখন আগুনে পুড়ছে সংখ্যালঘু পরিবার, তখন রাষ্ট্র চোখ বন্ধ করে রাখে। কারণ, তাদের ভোট কম, তাদের জোর কম, তাদের প্রতিবাদ নেই।

ধর্মের নামে এসব সামাজিক সন্ত্রাসের ব্যাপারে আমাদের এই সম্মিলিত নীরবতার নামই হলো দক্ষিণপন্থা এবং এটারে নেই প্রমাণের একমাত্র উপায় হলো: এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। নইলে আমাদের এই নীরবতাই একদিন আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের বিজয়ের বিরুদ্ধে, আমাদের অর্জনের বিরুদ্ধে, সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়াবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৩৫

ইপিআর সৈনিক বলেছেন:



ইউনুস লোভী ও সুক্ষ্ম প্রতারক; তার দায়িত্ব ক্যউ'এর পর দেশের স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সুটিগুলোকে সঠিকভাবে চালু করা; সে নিজের মালিকানায় নতুন ব্যবসা খুলছে। এই হলো "৩৬শে জুলাইর স্বাধীনতা"।

আপনাকে নতুন স্বাধীনতার অভিনন্দন জানাবো নাকি?

২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৪৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সনাতনিরা শেখ হাসিনার পতনে সামনের সারিতে ছিলো । কেউ আগে থেকে জানে এভাবে দেশ চলবে ? ১/১১ তে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খেয়েছে। শুরতে ভেবেছিলাম পলিটিকাল দলগুলোর দোষ এখন দেখি সরকারের মাঝেই ঝামেলা । হোম এডভাইজার সুপার গুলু দিয়ে চেয়ারের সাথে লেগেছেন তাই আর ছুটতে পারছেন না।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১:১৪

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: অথচ যারা একসময় এর সমর্থক ছিলেন, আজ তারাই ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যস্ত কী এক পরিহাস!


ভেবেছিলাম বৈষম্য বিরোধী সংগঠনের প্রথম দাবি হবে শিক্ষাঙ্গন, ইউনিভার্সিটিগুলো কে রাজনৈতিক বিষবাস্প থেকে নিষিদ্ধ করা। এরা ডিউ কেন্দ্রিক কিছুদিন প্রোগাম করে পড়ে এনসিপি প্রতিষ্ঠা করে। বড় দলগুলো অনুসরন শিক্ষাঙ্গন শ্রমিক সবখানে অংগ-সংগঠন খুলে। সন্দীপের হান্নানের উপাধি নাকি বন্দর বন্ধু, শ্রমিকদের আপোষহীন নেতা। পুরাতন প্যাকেজে নতুন দিনের বন্দোবস্ত।

২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১:১৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আজকে নাসিরুদদিন পাটোয়ারি ভাষণে বলছে এনসিপি পাওয়ারে গিয়ে ৬৪ জেলায় চাকুরি সৃষ্টি করবে । এদিকে সোশাল মিডিয়ায় জনগণ বলছে তোমরা নিজেরাই বেকার চাদাবাজি করে চলো কিভাবে আমাদের চাকুরি দিবে ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.