![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
১১ বছর বয়সী এক গৃহকর্মীর আত্মহত্যায় মনটা বিষাদে ভরে গেল। একটি মেয়ে, যার জীবন সবেমাত্র শুরু হয়েছিল, সে কেন এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল? তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সে নিজের শৈশবকে বিসর্জন দিয়েছিল। তাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল কাজের জন্য, বিনিময়ে তার বাবাকে দেওয়া হয়েছিল একটি অটোরিকশা কেনার টাকা। অদ্ভুত কাকতালীয়ভাবে, তার নানীও নাকি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে একই বাড়িতে কাজ করেন। এটি কি শুধুই কাকতাল? নাকি দারিদ্র্যের এমন এক ভয়াবহ চক্র, যেখানে একই অভিশাপ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে চলেছে?
আমরা প্রায়ই শিশুদের মানসিক জটিলতা নিয়ে কথা বলি। বলি, এখনকার শিশুরা বড় বেশি অভিমানী আর আবেগপ্রবণ। সামান্য কারণেই তারা নিজেদের ক্ষতি করে ফেলে। কিন্তু এই যুক্তি কি একজন গরিব ঘরের শিশুর জন্য প্রযোজ্য? যারা ছোটবেলা থেকেই জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে, তাদের পক্ষে কি এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়া সম্ভব?
এই আত্মহত্যার ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের তীর বাড়ির মালিক-মালকিনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এটি কোনো আত্মহত্যা নয়, বরং তাকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও শোনা যাচ্ছে, চার লাখ টাকায় পুরো বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা চলছে। এখানেই আমাদের সমাজের সবচেয়ে নিষ্ঠুর বাস্তবতা প্রকাশ পায়; দারিদ্র্য মানুষকে বাধ্য করে তার সন্তানের মৃত্যুকেও একটি আর্থিক সুযোগ হিসেবে দেখতে।
একটি রিকশাওয়ালার পরিবারের কাছে এক সাথে চার লাখ টাকা নিঃসন্দেহে এক বিশাল অঙ্ক। এই টাকা সুদে লাগিয়ে মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করা যায়, ঘরবাড়ি সংস্কার করা যায়, পরিবারের অন্য সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। এই হিসাবের নিষ্ঠুরতা এখানেই যে, একটি শিশুর জীবনের চেয়ে এই আর্থিক সুবিধা পরিবারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। গরিব পরিবারগুলো প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, যেখানে তাদের সন্তানদের যথাযথ লালনপালন করার সামর্থ্য থাকে না। ফলে পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যু যদি আর্থিক উন্নতির পথ খুলে দেয়, তাহলে শোকের স্থায়িত্ব খুব বেশি থাকে না।
২০১১ সালের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। আমাদের নিজেদের টিনশেড বাসা ভাড়া দিয়ে যে ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকতাম, সেখানে আগুন লেগে দারোয়ান আক্কাছ মিয়া আর ড্রাইভার জয়নাল মারা গিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালা এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আক্কাছ মিয়ার পরিবারকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে ফেললেন। ভাবা যায়! একজন মানুষের জীবনের মূল্য মাত্র ৫০ হাজার টাকা! অন্যদিকে জয়নালের ছেলেকে কম টাকায় রাজি করানো যাচ্ছিল না। সে বাড়িওয়ালার গায়ে হাত দেয়। অবশেষে তাকে তানজানিয়া পাঠানোর অফার দেওয়া হয়। বিদেশ যাওয়ার লোভে সে রাজি হয়ে যায়। আজ সে দেশে ফিরে এসে ভালো ব্যবসা করছে। তার ছেলে মিরপুরে মনিপুর ইশকুলে পড়াশোনা করছে।
রংপুরে মবের শিকার হয়ে নিহত মুচি রুপলালের পরিবারের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সকল স্বপ্ন-আশা ধ্বংস হয়ে গেছে। বড় মেয়ের বিয়ে বন্ধ, ছেলের পড়াশোনা বন্ধ। এখন সেই ছেলেকে পড়াশোনা ছেড়ে জুতা সেলাইয়ের কাজে নামতে হয়েছে। প্রতিদিন তার আয় মাত্র ২৫০-৩০০ টাকা। এই অল্প আয়ে কীভাবে সে বোনের বিয়ে দেবে, পরিবারের অবস্থা ভালো করবে ? পুলিশ বলেছে ৭০০ জন মিলে রুপলালকে হত্যা করেছে। এই অন্যায়ের বিচার কি কখনো হবে? রুপলালের পরিবারের কি সেই বিচারের অপেক্ষা করার সামর্থ্য আছে?
এখানেই আমাদের সমাজের সবচেয়ে করুণ বাস্তবতা: ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষের কাছে ন্যায়বিচারের চেয়ে খাবারের মূল্য বেশি। তাদের কাছে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের চেয়ে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা বেশি প্রয়োজন। ন্যায়বিচার পেলেও যদি পেটে অন্ন না জোটে, তাহলে সেই বিচারের গুরুত্ব তাদের কাছে থাকে না। দারিদ্র্য মানুষের বিবেককে ভোঁতা করে দেয়। যখন পেটে ক্ষুধা থাকে, তখন ন্যায় আর অন্যায়ের ফারাক করা কঠিন হয়ে যায়।
বাংলা ধানমন্ডিতে ১১ বছরের শিশু গৃহকর্মীর ‘আত্মহত্যা’ নিয়ে প্রশ্ন -বাংলা ট্রিবিউন
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৩৩
কামাল১৮ বলেছেন: সম্পদের সু-সমবন্টন ছাড়া ধনী- দরিদ্রের এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব না।