![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই ভাল, সেইসাথে চরম ভদ্র এবং গোছালো একটা ছেলে।\nকি বিশ্বাস হইল বিশ্বাস না হইলে ঠিকই ধরছেন, আমি পুরাই\nউল্টা!!!\nনিজের সম্পর্কে কিছু কথা যদি বলতেই হয় তাহলে প্রথমেই\nযে কথাটি বলব তা হলো- আমি নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের\nএকটি ছেলে। ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর-আল্হাদে বড়\nহয়েছি এবং এখনও হচ্ছি।বাবা-মা আমার কাছ থেকে অনেক\nকিছু আশা করে।যদিও তাদের আশা আমি পূরন করতে পারব\nকিনা জানিনা।
খেলাধুলার সুবাদে অনেক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কিছুদিন আগেও কলেজে না গিয়ে এক ভাইয়ার অনুরোধে একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে যাই। নাম সাকিব। পড়াশুনার দিক থেকে আমার সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তাকে নাম ধরেই ডাকি। কয়েকদিন পর হঠাৎ আমার মুঠোফোনে সাকিবের কল; ভাবলাম, আজও কলেজে যাওয়া অনিশ্চিত। কলেজের ক্লাস করার ভাগ্যরেখা হয়তো আমার প্রতিকূলে। কিন্তু কল ধরতেই সাকিব বললোঃ
" বিকেলে ফ্রি আছিস? তোর না একটা টিউশনি প্রয়োজন? আজ ইন্টারভিউতে যেতে পারবি? আমার ছাত্রী, শুধু একটা ক্লাস করাবি। ভালো করতে পারলে টিউশনিটা পেয়ে যাবি। "
সাকিবের সব প্রশ্নের দিলাম এভাবেঃ
" কোন ক্লাসে পড়ে এবং কি পড়াতে হবে?"
সাকিব হেসে বললোঃ
"সামনের বছর এস এস সি দিবে। পদার্থবিজ্ঞান পড়াবি। ধর আজ নাহয় মহাকর্ষ অধ্যায়টা পড়াবি।"
আমি রাজি হলাম এবং ঠিকানাটা নিয়ে নিলাম। সেদিন বিকেলে.....
দোআ দরূদ পড়ে ধীর পায়ে এগোচ্ছি, আর মহাকর্ষ অধ্যায়ের সূত্রাদি মনে মনে ঝালিয়ে নিচ্ছি। জীবনে প্রথম টিউশনি বলে কথা। যদিওবা বন্ধুর অবর্তমানে এসেছি কিন্তু ভূলভাল কিছু শেখালে অথবা কোথাও আটকে গেলে, টিউটর হিসেবে বন্ধুর এ যাবৎ অর্জিত সব সুনাম ক্ষুন্ন হবে। তাছাড়া ভালো করলে একটা টিউশনিতো জুটছেই।। শিক্ষক পরিচয়ে জীবনের প্রথম পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উতরাতে সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে প্রাচীরঘেরা বিশাল বাড়ীটার সামনে দাঁড়ালাম। শার্টের গোটানো হাতা ছাড়িয়ে বোতাম এঁটে শেষ বারের মতো নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম। সাকিবের তথ্য মতো বাসার নাম্বার মিলিয়ে যথাসম্ভব শিক্ষকসুলভ গাম্ভীর্য বজায় রেখে অন্দরে প্রবেশ করলাম। দোর ঘন্টির টিয় পাখির মিষ্টি ডাক সাড়া দিয়ে দরজা খুললো যে মেয়েটি; তাকে কেবল সুন্দর বিশেষণে প্রকাশ করা যাবেনা। বরং বলা যায়, সে "ভয়ংকর সুন্দর"। এক পলক দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। এমন সুদর্শনা একটি মেয়েকে পড়ানোর ঝুঁকি সাকিব করে যে নিল...!!!
আমার বয়সের যে কোনো ছেলেই একবার দেখেই তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। হ্রদয়ের প্রথম ধাক্কা সামলে নিজেকে গুছিয়ে নিলাম।
মহুয়াকে দেখে যতটা অবাক হয়েছি, তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছি ওর কথা বলার ধরনে। অপরিচিত আমাকে দেখেও একেবারে স্বাভাবিক, সুস্থির।
" আমি আপনাকে চিনি, আপনি সাজ্জাদ, সাকিব ভাইয়ার খুউব ভালো বন্ধু।" - মহুয়া বললো।
আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম। জানতে চাইলামঃ
" তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে?"
মহুয়া উত্তর দেওয়ার আগেই গেরুয়া রংয়ের পানজাবী আর আকাশি সাদা লুঙ্গি পড়া আনোয়ার সাহেব পত্রিকা হাতে এগিয়ে এলেন। এলোমেলো চুল আর সাদাকালো গোঁফে মহুয়ার বাবাকে অনেকটা আইনস্টাইনের মতো দেখাচ্ছিল। বাবার মতোই শান্ত হয়েছে মহুয়া। সাকিবের কাছে শুনেছি স্ত্রীর মৃত্যুর পর আনোয়ার সাহেব তার বিশাল সম্পত্তির অধিকাংশই দান করেছেন স্কুল- ইয়াতীম খানা নির্মাণের কাজে। এমন মহৎ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। মেয়ের মতো এক দর্শনে আমাকে না চিনলেও বেশ আন্তরিক ভাবেই কথা বললেন তিনি। মহুয়ার পড়ালেখার কোথায় কি সমস্যা সে সম্পর্কে তিনি যে যথেষ্ট ওয়াকিফহাল তাঁর কথায় তা স্পষ্ট হল।
মহুয়ার পড়ার ঘর খোলামেলা, ডাইনিং এর সাথে লাগোয়া দরজা, দক্ষিণ দিকের প্রশস্ত জানালা দিয়ে অনবরত ফুরফুরে বাতাস আসছে। বই পুস্তকের আধিক্য নেই। দেয়ালে দামি চিত্রকর্মে ঝুলছে। মেঝেতে নতুন কার্পেট। বিশেষ যত্ন আর পরিকল্পনা নিয়ে ঘরটা সাজানো হয়েছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। পদার্থবিজ্ঞান বই, সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর আর একটা খাতা হাতে "মহুয়া " ঢুকলো। একটা ইজি চেয়ারে আমি মেরুদন্ড সোজা করে বসলাম। আর ঠিক মুখোমুখি একটা চেয়ারে ও বসলো। ভালো ছাত্রীর মতো সমস্ত মনোযোগ বইয়ের পাতায় নিবন্ধ করে অধ্যায়টায় ও'র দুর্বলতা আমাকে বুঝিয়ে বলছে। পড়ানোর মজা যে শিক্ষার্থীর একাগ্রতায় তা এতোদিনে বুঝলাম। একটা বিষয় একবার বললে বাকিটা অনুধাবন করে ফেলে ও। অঙ্ক করে অনেক দ্রুত ও নির্ভুলভাবে। আমার মনঃসংযোগের পুরোটাই যখন মহুয়ার অঙ্কে, তখন হুট করে সংকোচহীন ভঙ্গিতে ও বললোঃ
" এই ফোন, এস এম এস এর যুগে কেউ যে এতো গুছিয়ে চিঠি লিখতে পারে আপনাকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আর আপনার দেওয়া মেঘবতী নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সাকিব ভাইয়াকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। তাই কিছু জানাইনি।"
মহুয়ার কথায় আমার মাথা চরকীর মতো ঘুরে উঠলো, যেন মহাকাশ থেকে আলোর বেগে মাটিতে পড়লাম আমি। ( " বলে কি এই মেয়ে...?! চেনা নেই, জানা নেই; আমি কেনো ওকে চিঠি লিখতে যাবো? আর সাকিব তো আমাকে কিছুই বলেনি। মহাকর্ষের সূত্র মিললেও চিঠির হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না।)
ঘটনা খোলাসা করতে একটু চালাকির আশ্রয় নিলাম, বললামঃ
" তোমাকে না দেখেই কিনা কি লিখেছি, তুমি কল্পনা থেকেও বাস্তবে অনেক বেশি সুন্দর। তুমি বরং চিঠিটা আমাকে ফিরিয়ে দাও, নতুন করে আর একটা চিঠি তোমার জন্যে লিখবো।"
মহুয়া নির্দ্বিধায় তার ঘর থেকে চিঠিটা এনে আমাকে দিলো। আর এ.......!!!
ও তো ঠিকই বলছে। এ তো আমারই লেখা। নীচে নাম ও তারিখও দেওয়া আছে। তবে এটা মহুয়াকে উদ্দশ্য করে নয়। কিছুদিন আগে পত্রিকায় পাঠানোর জন্য লিখেছিলাম, যেটা খেলতে গিয়ে হারিয়ে গেছে। মহুয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সাকিবকে একটা ফোন করলাম। আমাকে বোকা বানিয়ে, আমার লেখা চুরি করে ছাত্রীকে দিয়ে, আবার সেখানেই আমাকে টিউটর বানিয়ে পাঠানো...!!!
বাড়াবাড়ির তো একটা সীমা থাকা দরকার। কোনো ভাবে মহুয়ার বাবা যদি জানতে পারতেন নির্ঘাত আমাকে অপদস্ত হতে হতো।। আমার উত্তেজিত ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ফোনের ওপাশ থেকে সাকিব বললোঃ
" বন্ধু, তোমার জীবন সুখের হউক। আমি তোকে একটা চমক দিতে চেয়েছিলাম। আমি তোকে যতদূর জানি তা থেকে মনে হলো মহুয়ার জন্য তুই ই উপযুক্ত। ও তোকে দেখে নয়, তোর চিন্তা জগৎ অর্থাৎ তোর লেখা দেখে তোকে ভালবেসেছে। এ ভালোবেসেছে। এ ভালোলাগা শতভাগ বিশুদ্ধ। আর রোজ রোজ তোর একটা প্রেম করতে না পারার হতাশা শুনে ভাবলাম...... আমি চাই মহুয়া যেন সারাজীবন সুখে থাকে। জানি ওর মতো একটা লক্ষী মেয়েকে তুই কখনোই কষ্ট দিককে পারবিনা। "
সাকিবের কথা আজ অবধি অক্ষুন্ন রয়েছে আমার মনে। ভুল চিঠি থেকে সম্পর্ক হলেও, মহুয়াকে কষ্ট দেওয়ার মতো অন্যায় আমি ভূল করেও করতে পারিনা।।
২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫
সাজ্জাদ মণি বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ..।। পাশে থেকে অণুপ্রাণিত করবেন আশা করছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ চমৎকার গল্পের মতন লেখা
খুব ভাল লেগেছে ।।
শুভ কামনা