নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্য মানে যদি অসহায়ত্ব হয় আমি তবে অসহায় এক নিরবচ্ছিন্ন পথিক
- আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, রিশাদ। কিছু তো কর!
ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সড়িয়ে নিয়ে চশমা টা ঠিক করে মুচকি হেসে রিশাদ বলল-" কি করতে হবে? ব্যান্ড ভাড়া নাকি ডেকোরেটর? ফটোগ্রাফি নিয়ে ভাবিস না। যে ক্যামেরাটা আছে তা দিয়ে দিব্যি তোদের ফাংশন টা কভার দেয়া যাবে।"
- আর কিছু?
- অবশ্যই, খাবার মেন্যু টা বলে রাখবি আগেই; ভাল না হলে আমি কিন্তু যাব না। শেষে তোদের স্মৃতিগুলো ফ্রেমে বন্দী করার মানুষ পাবি না বলে দিলাম।
- তুই থামবি?
হালকা হেসে মুখ সরিয়ে নেয় রিশাদ। এ হাসির অর্থটা অপ্সরার জানা। ছোটবেলায় যখন খুব বেশি অভিমান করত রিশাদ, ঠিক এভাবেই হাসত সে। তখন সে রিশাদের প্রিয় গানটা শিষ বাজাতো। কিছুক্ষ্ণ পর রিশাদের অভিমান ভেঙ্গে যেত। সেটা বোঝার ও উপায় জানত অপ্সরা। মাঝের দিকে এসে শিষের সাথে তাল দেয়ার মানে হচ্ছে রিশাদের অভিমান ভেঙ্গে গেছে। আজ সে এমনই কিছু করতে যাচ্ছিল। শিষ দিয়ে রিশাদের প্রিয় গান টা ধরতেই, রিশাদও ধরল অপ্সরার সাথে। অপ্সরা থেমে গেল। কারণ সে আগে কখনোই এভাবে দেখে নি রিশাদ কে শুরুতেই তাল দিতে। অপ্সরা রিশাদ কে চিনছে না কদিন ধরে। কেমন যেন হয়ে গেছে রিশাদ! কথা বলে না ঠিকভাবে; সারাক্ষণ যে ডায়েরী নিয়ে পড়ে থাকত সে এখন ফোন নিয়ে পড়ে থাকে। কিছু বললে বলে যে-"আমি ফোনে নোট করি এখন। হাতে লিখতে ভাল লাগে না আর।" কিন্তু সেদিন অপ্সরা রিশাদের ফোন চেক করেও কিছু খুঁজে পায়নি। শুধু পেয়েছে কয়েকটা লাইন; তাও আবার একেকটা একেকদিনে লেখা। রিশাদ আর কেন জানি সিগারেটও খায় না তার সামনে। আগে সিগারেট খেলেই মুখ থেকে টেনে নিত সে। একবার তো কি হল; রিশাদ কেবলই একটা সিগারেট ধরিয়েছে। অপ্সরা সেটা টেনে নিয়ে মুখে ধরে টান দিব দিব বলতেই সত্যি সত্যি টান দিয়ে দিল। তারপর কি যে এক অবস্থা! কাশতে কাশতে মেয়েটার মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। আর শাস্তিস্বরূপ রিশাদের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। রিশাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। তার পুরো পরিস্থিতিটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছিল। থাপ্পড় খাওয়ার পরেও যেন ভয় পেয়ে যায় রিশাদ। এই ঘটনার পর এক সপ্তাহ সে সিগারেট খায়নি অপ্সরার সামনে। কিন্তু এটা তো অনেক পুরোনো ঘটনা। তারপর কতবার সে সিগারেট খেয়েছে অপ্সরার সামনে! আর এখন; ভুলেও অপ্সরার সামনে সে সিগারেট ধরায় না। অপ্সরা ভাবতে থাকে মানুষ কতই না অদ্ভুত। আগে তার সামনে সিগারেট ধরানোর জন্য সে গালাগালি করতো আর এখন ধরায় না বলে সে মন খারাপ করছে।
রিশাদের কাঁধে অনেকদিন গিটারও দেখে না অপ্সরা। আগে ওর ভাঙ্গা গলায় জোর করে ধরে যখন ওর লেখা আর সুর করা উলটাপালটা গান শুনাতো সে, তখন কি যে বিরক্ত লাগতো অপ্সরার! মাঝেমাঝে উঠে চলে আসতে নিত। কিন্তু রিশাদ উঠতে দিত না। হাত চেপে ধরে আবার বসিয়ে দিত। আর এখন গিটারের তারে ধুলো পড়ে যাচ্ছে, স্ট্রিং গুলো জঙ করে কালো হয়ে যাচ্ছে; রিশাদ আর গিটার বাজায় না।
-রিশাদ! তুই ফোনটা রাখবি?
- এক মিনিট, রাখছি।
রিশাদ কখনোই এমন করে নি আগে। ফোন রাখ বলার সাথে সাথে ফোন পকেটে রেখে দিত সে। আর এখন মুখের উপর না বলে দিল! যার উপর অধিকার খাটানো যায় তাকে আর যাই হোক ঘৃণা করা যায়
না। এজন্যই হয়ত এখনও অপ্সরা রিশাদকে চায়; সবসময়।
মনে মনে অপ্সরা ভাবতে থাকে তাকে সব ভুলে যতে হবে, ফেলে আসা দিনগুলো, আবেগে ঢাকা স্বপ্নগুলো, আদরে গড়া খুনসুটিগুলো; সবকিছু।
ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে উঠে যাচ্ছে অপ্সরা। ভেবেছিল রিশাদ আটকাবে; কিন্তু আটকালো না। সে ফোনের দিকে তাকিয়েই আছে আর কিছুক্ষণ পর পর হাসছে। কার সাথে এত কথা রিশাদের! কেন সে অপ্সরা না! কেন অন্যকেও!
অপ্সরা পিছে ফিরে হাঁটা শুরু করলো। প্রতিদিন এভাবে সে পিছে ফিরে হাঁটে। ঠিক যেভাবে পিছে ফিরে হাঁটত রিশাদ। কিন্তু কখনোই কোনো বাস এসে চাপা দিয়ে যায় না তাকে। তাহলে কেন রিশাদকে
দিল! ছোটবেলা থেকে তো কোনকিছুতে তাদের কেও আলাদা করে নি; তাহলে কেন সেদিন শুধু রিশাদের সাথে এমন হল!
অপ্সরার নিজেকে খুব বেশি দোষী মনে করে। যে কারণগুলোর জন্য রিশাদ এভাবে উঠে উঠে চলে যে সেসব তার নাটক ছিল। সে চাইতো কখনো রিশাদ ফোনটা কেড়ে নিয়ে দেখুক; কখনো রিশাদ একটু
শাসন করুক; কিন্তু সে করে নি।
আজ হয়ত তার শেষ আসা পার্কে। আর হয়ত বাসা থেকে বের হতে দিবে না তাকে। কাল বাদে পরশু বিয়ে। ছেলে বাইরে থাকে, বিয়ের পর তাকেও বাইরে নিয়ে যাবে। সে জানে রিশাদের সাথে তার আর দেখা হবে না। সে আবার পিছে তাকায়; রিশাদ মিশে যাচ্ছে। হাত নেড়ে শেষবারের মত বিদায় দিয়ে দিল রিশাদ। এটা দেখে অপ্সরা খুশি হয়েছিল ক্ষণিকের জন্য; সে ভেবেছিল সে আজ মারা যাবে। ঠিক যেভাবে রিশাদ মারা গিয়েছিল সেদিন। কারণ এভাবে হাত নেড়ে বিদায় কখনোই দেয় নি রিশাদ।
কিন্তু অনেক ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও মানুষ চাইলেই স্বাভাবিকভাবে মারা যায় না। হয় তাকে পথ বেছে নিতে হয়, নয়ত পথের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সে মনে মনে ভাবে- রিশাদ ত পথ বেছে নেয় নি; তাহলে
আমি কেন! তাই তার সামনে দিয়ে বাস চলে গেলেও পা বাড়ায় না অপ্সরা।
"জীবনটা রিশাদের লেখা; ছন্দটা না হয় আমিই দেই.........." এটা ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে যায় অপ্সরা। হয়ত কোন এক বিকেলে অপ্সরা এসেছিল আবার, বসেছিল পার্কের ধার ঘেষে শ্যাওলা পড়া সেই ভাঙ্গা বেঞ্চে। কিন্তু রিশাদ আসে নি। অপ্সরা ফিরে যায়। আর কখনো আসে নি সে; এমনকি দেশে ফিরেও
না।।।।।
০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২১
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: পরেরবার চেষ্টা করব। আপনাকেও শুভেচ্ছা ভাই ❤
২| ০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: বেশ অগোছালো লাগলো।
০৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: পরবর্তীতে গুছানোর চেষ্টা করা হবে
৩| ০৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:৫৫
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: অনেক বেশি লিখুন
০৮ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:৫৯
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: অবশ্যই লিখব
৪| ০৭ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:২৩
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আপনি যাকে ভালোবাসেন একদিন আপনি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
০৮ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:৫৯
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: সবসময়ই কি!
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০৯
মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: আরেকটু আবেগ দরকার ছিলো কথামালায় ভাই,ধন্যবাদ ও রমযানের শুভেচ্ছা রইলো।