![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রূপকথার মত একটা বাড়ি আমাদের ও ছিল। বাগানঘেরা টিনের ঘর, বৈঠকখানা, পুকুর ,ফুলের বাগান ,উঠান। দাদুভাই রাতেরবেলা পাকঘরের চৌকিতে বসে খাইয়ে দিতে দিতে গল্প শোনাতেন, অই যে জানালা দিয়ে পরী এসে আমাদের পরীদের দেশে নিয়ে যাবে। ফুপিরা হারমোনিয়ামের রিডে সা, রে , গা,মা লিখে বাজাতে শেখাত। দাদীর আঁচল ধরে চেরাগ হাতে সন্ধ্যার পরে এবাড়ি থেকে ওবাড়ি যেতাম।একচাচ্চু সাইকেলের পেছনে নোনাইলিশের টিন নিয়ে বাড়ি আসতো। চাচ্চুর কপালে টিপের মত বিরাট এক টিউমার।একদিন স্কুল থেকে এসে শুনি চাচ্চু মারা গেছেন। আমার দেখা প্রথম মৃত্যু।
দাদুভাই প্রতিদিন সকালে বেরুবার আগে প্রিয়ক কে দেখে যেত।একদিন জ্বর ছিল। দাদুভাই আর ডাকেননি। ঘুম থেকে উঠে শুনি আমাদের যেতে হবে ।উনি অসুস্থ। যেতে যেতে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল।ড্রয়ারে আমার জন্য আনা তালমিছরির কৌটাটা রয়ে গিয়েছিল। প্রথম কারো মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। মৃত্যুটা কি তা একটু একটু বুঝতে শিখেছিলাম। সবার সাথে মটরের বিচি গুনে গুনে তাহলিল পড়তে বসেছিলাম।
বড়আব্বু রোজ বিকেলে রুটি খেতেন। ওনাদের বাড়ি গেলেই ওনার কাছে বসিয়ে রাখতেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।একদিন উনি ও অসুস্থ হয়ে পড়লেন ।আমার খুব কাছে থেকে দেখা প্রথম মৃত্যু। কিভাবে চামচে করে কালেমা পড়তে পড়তে মুখে ঢেলে দেয়া পানি মুখের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নিকটজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ে , না দেখলে বোঝা যায় না।
বাড়ীটা এখনো আছে। টিনে জং ধরেছে। বছরে -দুই বছরে একবার যাই। ফুলের গাছগুলো হয়ত নেই। চাঁদের আলোয় উঠানে বসে এখনো কোন ফুপি “আমার সকল দুখের প্রদীপ......” গায় কিনা জানি না। সেই গল্পের আসর বসে না। পাকঘরে এখনো রান্না হয়। কিন্তু খাবার মানুষ হয়ত নেই আগের মত । বাগানে আর ফল কুড়ানো হয় না। গাছের ডালের গাড়ি আর কেউ বানায় না।
বাড়িটা একদিন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। জীবনের টানে শহুরে আমি-আমরা ও একদিন বিলীন হয়ে হয়ে যাবো। মেডিকেল কলেজের দুইভাই মারা গেলেন কয়েকদিন আগে।একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর রে মন আমার ............
©somewhere in net ltd.