![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিমু পড়েছে ভীষন যন্ত্রনায়। ওর আজকে ভার্সিটিতে কাজ ছিল।ওদের ভার্সিটি এবার রোবটিক্স কম্পিটিশনের আয়োজন করছে। ও আয়োজন কমিটির অন্যতম সদস্য। আজ ওখানে ওর কাজের কোন শেষ নেই। আর ও কিনা যেতে পারছে না। আটকে আছে এই প্যাঁচপ্যাঁচে কাদার মাঝে। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখছে বাইরের অঝোর ধারা। আজকেই কিনা বাবার এখানে আসার ইচ্ছা হল!
ওর বাবা ডাঃ প্রিয়ক হাসান।আসলে নিজের বাবা নয়।নিঃসঙ্গ প্রিয়ক অনাথ হিমুকে দত্তক নিয়েছেন। নামটাও বদলিয়ে রেখেছেন। হিমালয়। শেষে কোন হাসান নেই। শুধু হিমালয় আর ডাকনাম হিমু। সেই দিনের ছোট্ট হিমু আজ বড় হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক্সের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছে।বাবা ওকে পড়াশুনার বাইরেও অনেক কিছু শিখিয়েছে।যুক্তিবাদী মুক্তচিন্তা , ভাবালুতা -সব কিছু। প্রিয়কের শরীরটা অনেকদিন ধরেই ভাল যাচ্ছে না। নানা অসুখ এসে দানা বেঁধেছে। আর দিন দিন তার স্মৃতিকাতরতা বাড়ছে। ইদানিং মৃত্যুকে অনেক বেশি স্মরণ করছেন। আর তাই পুরনো জায়গা গুলতে বারবার ফিরে যেতে চান। হিমু ও যতদূর সম্ভব নিয়ে যায়। এই সপ্তাহে ই ওরা ঢাকা মেডিকেলে গেল। হলের ছেলেদের সাথে বসে বাবার সে কি আড্ডা! তিনি যেসব রুমে ছিলেন সব রুমে গেলেন।ডি এম সির আনাচেকানাচে ঘোরাঘুরির সাথে সাথে হিমুর সাথে চলছিল প্রিয়কের কথাবার্তা । বাবা আসলে হিমুর বন্ধুর মত। কলেজ জীবনের ক্রাশ থেকে শুরু করে মধ্যরাতের পাগলামি সব কিছু শোনা আছে হিমুর। বাবার জীবনটা গল্পএর মত করে জানা। আর তাই নিজের ছোটখাটো গোপন কথাগুলো বলার জন্য ও হিমুর প্রথম পছন্দ বাবা। ভার্সিটিতে সিইসি ডিপার্টমেন্টের নতুন ম্যাডামটাকে যে ওর ভালোলাগে , ওরা যে দুদিন কফি খেতে বাইরে গিয়েছিল-সব কিছুই জানা বাবার।
আজকেও যে ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে সেটাও বাবার জানা। কিন্তু সকালেই কেন জানি খুব পীড়াপীড়ি করছিলেন এখানে আসতে। এই অবস্থায় একা ও বাবাকে ছাড়া যায় না। তাই নিয়েই এলো এই নদীটার ধারে। হিমু একটু অবাক হয়েছিল প্রথমে।এই জায়গাটায় বাবা আগে কখনো আসতে চাননি।হিমু ফ্লাস্ক থেকে গরম পানি ঢালছিল চা বানাতে। এই ব্র্যান্ডের চা বাবার বেশ প্রিয়। বাইরের দৃশ্যটা যেন পরাবাস্তব জগতের। ছোট্ট নদীটা জলে টুইটম্বুর। ওপারে বিস্তীর্ণ ধানের খেত। আকাশে ঘন কালো মেঘ। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। চাএর কাপ বাবার হাতে ধরিয়ে দিতেই বাবা কথা বলা শুরু করল। চা বাবার প্রিয় পানীয়। চা খোর হিসেবে দুর্নাম প্রিয়কের কলেজ জীবন থেকে ।প্রিয়ক বলতে শুরু করল- আমি তখন কলেজে পড়ছি।সেকেন্ড ইয়ারে।দ্যুতির কথা তো তোকে বলেছিই।একদিন ওকে খুলে বললাম মনের কথা। ও যথারীতি না করে দিল। খুব মন খারাপ ছিল। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে এই জায়গাটায় চলে এলাম খেয়াল করি নি। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। জ্বর এসেছিল।কিন্তু এসব তো আর তখন খেয়াল নেই। এখানটায় এসেই প্রথমে মন খারাপ হয়ে গেল। ঠিক আজকের মত পরিবেশ ছিল সেদিন। মেঘে-বিদ্যুতে মাখামাখি অবস্থা। ঘন্টাখানেক বসেছিলাম।তারপর হঠাত এক তীব্র আনন্দবোধ আমাকে গ্রাস করল। এক পরাবাস্তব অনুভূতি। মনে হল, এই জীবনটা আসলে অনেক বিশাল। অনেক কিছু করা যায় একে দিয়ে। একজনের জন্য বেঁচে না থেকে অনেকের জন্যই বেঁচে থাকা যায়। সামনের অই বিস্তীর্ণ খেত, বিশাল আকাশ, ঘনকালো মেঘ এদের চেয়েও বিশাল প্রাপ্তি এই জীবনের। সেদিন আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ,বাকিটা সময় নিজের সর্বোচ্চটা করব। আর স্রষ্টার কাছে চেয়েছিলাম, আমার মৃত্যুর সময়টাতেও এমন তীব্র আনন্দবোধ নিয়ে যাতে আমি মরতে পারি। আমি মহাপুরুষ না। কিন্তু ইচ্ছামৃত্যু ধারনাটা বেশ প্রিয় আমার। আজকের এই পরিবেশে আমি মরতে চাই। কথাগুলো বলতে প্রিয়কের খুব কস্ট হচ্ছিল। হিমু দেখল, একটু পরে প্রিয়কের মাথাটা সিটে এলিয়ে পড়েছে। প্রিয়কের চোখ গুলো খোলা ।নিশ্চল চোখগুলো তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। যেন পরাবাস্তব জগতের কোন পরিবেশে হিমু বশে আছে মৃত বাবাকে নিয়ে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
বিজন রয় বলেছেন: অসাম।
খুব ভাল লাগল।
+++++