নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৃণাবৃত মৃত্তিকা(Emran)

আল-ইমরান(মানিক)

Lecturer

আল-ইমরান(মানিক) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কামনা, আমি আর আমাদের বসবাস

২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:৪২

গ্রীষ্মের ছুটিতে আনেক দিন পরে সেই চিরচেনা শহরে এসে পৌঁছেছে ছেলেটি । যেখানে রয়েছে তার কৈশর ও এর পরবর্তী এক যুগের দুরন্তপনা কিংবা ভাল-মন্দের হিসাব না কষা আনেক স্মৃতি। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনেকটা ক্লান্ত শরীর নিয়ে ছেলেটি তার প্রানের শহরে এসে সুখনিদ্রায় একটা রাত কাটালো। পরদিন মধ্যরাতে সে যখন আড্ডায় ব্যাস্ত ঠিক তখনই তার মনোযোগ ফিরিয়ে নিলো টেবিলে রাখা সেল ফোনটি। প্রথমবার ফোনটি রিসিভ না করেই তার মনোযোগ রইলো আড্ডা, গল্প আর কথায়। একটু পরে আবার ফোনটি বেজে উঠলো…………।

- হ্যালো কে?

-জী, আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না?

- নাতো, আপনার পরিচয় দিন?

- ওহ, হাঁ ভাইয়া আমি লাবণ্য বলছি। আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না, মনে হয় ভুল করে ফোন দিয়েছি।

- আচ্ছা, ঠিক আছে

- ভাইয়া, আপনি কোথা থেকে বলছেন? কি নাম আপনার?

- যেহেতু রং নাম্বারে ফোন করেছেন…… রাখলাম।



ছেলেটি একটু দেরি করে সকালে ঘুম থেকে উঠে সেল ফোনটা চালু করতেই একটা এসএমএস পেয়ে দেখল রাতের সেই রং নাম্বার তাকে দশ-বারো বার ফোন করার চেষ্টা করেছে। কিছু বুঝে উঠার আগে ফোনটি বেজে উঠলো, আবারও সেই নাম্বার………

- হ্যালো…

- হ্যাঁ ভাইয়া, আসলে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আপনি খুব সুন্দর কথা বলতে পারেন………

- দেখুন আমি আপনাকে চিনি না, কেন আমি আপনার সাথে কথা বলবো? আর হ্যাঁ, আপনি কি আমার পরিচিত?

- না ভাইয়া, সত্যি বলছি আমি আপনাকে চিনি না।

- তাহলে আমার নাম্বার আপনি কোথায় পেলেন?

- আল্লাহর কসম ভুল করে আপনার কাছে আমি ফোন করেছিলাম।

- আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু আমি এখন ব্যাস্ত……রাখলাম।



ছেলেটি এরকম অপরিচিত একটা মেয়ের ফোন পেয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন এবং একই সাথে কৌতূহলী হয়ে উঠলো। দুপুরে খাবার পর যখন সে বিছনায় শরীরটাকে আরাম দিতে শুয়ে আছে ঠিক তখনই একটা মিস কল আসলো তার সেল ফোনে। হ্যালো……, হ্যাঁ…………, জী………………, না…………… ইত্যাদি। ফোনালাপ চলতে থাকল প্রায় ঘণ্টা খানেক।



মেয়েটির নাম আগেই বলেছি “লাবণ্য”। আর ছেলেটির নাম যেহেতু বলা হয়নি তাই তার নাম দিলাম “স্বাধীন”। এই নামটি তার চরিত্রের সাথে যায়, অন্য কোন নাম তার চরিত্রের সাথে বেমানান। কারন সে খুব স্বাধীনচেতা, ছোটবেলা থেকে স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠেছে, নিজের সকল সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শিখেছে। কারও অধীনে কিংবা বাঁধনে থাকতে সে খুব ভালবাসে না। যাই হোক, স্বাধীন সন্দেহ ও কৌতূহল বশতঃ তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকলো কয়েকদিন। যতই তাদের মধ্যে ব্যাক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে ফোনালাপ হতে থাকলো স্বাধীনের ততোই আজানা সন্দেহ বেড়ে চলল। সে মনে, মনে ভাবতে থাকলো এর রহস্য উদ্ঘাটন করা যায় কিভাবে? কারন মেয়েটি প্রদত্ত তথ্যে অনেক অসঙ্গতি ছিল, যদিও লাবণ্যকে তার খুব চালাক কিংবা ধূর্ত মনে হয়েছিলো। স্বাধীন তার বন্ধুদের নিকট ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করে এবং সজাগ ও চতুরতার সাথে কথা বলে।

সময় যত বাড়তে থাকে স্বাধীনের মনে সন্দেহর জাল বিস্তৃত হতে থাকে। সে এবার মরিয়া হয়ে উঠে লাবণ্যর পরিচয় বের করতে। তার কাছে মনে হতো হয়তো লাবণ্য তার পরিচয় আড়াল করছে। আজকাল একটা যুবকের কাছে মেয়েদের ফোন আসাটা খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মেয়েদের মোটেও অসম্মান করার জন্য না। এখন মেয়েরা চার দেয়ালের বাইরে বের হয়ে এসেছে। খুব ভাল লাগে যে, নারী সমাজে সমান অধিকার ভোগ করছে। তাহলে শুধু ছেলে কেন? নারীও আন্দরে-বাহিরে, গোপনে-প্রকাশ্য মন, প্রেম নিবেদন করতেই পারে। ছুড়ে ফেলতে শিখেছে সেই আদিখ্যেতা “বুক ফোটে তো মুখ ফুটে না”। আসলে দিন বদল হয়েছে না?



থাক সে কথা, স্বাধীনের মাথায় একটা বুদ্ধি উদয় হল। লাবণ্য এইচএসসি পাশ করেছে, তার রোল নাম্বার পেলেই অন-লাইনে তার ফলাফল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে, যা কিছুটা হলেও তার পরিচয় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। সে লাবণ্যর কাছে তার রোল নাম্বার চাইলো, কিন্তু লাবণ্য দিতে রাজি না। অনেকটা জোর করেই স্বাধীন তা পেতে চাইলো, এমনকি তাকে হুমকি দেওয়া হল যে, রোল নাম্বার না দিলে কথা বলবে না। কিন্তু কোন কাজ হল না, ব্যাপারটা এমন যে লাবণ্য তাকে দেহ দিবে তবুও রোল নাম্বার দিবে না। বিষণ্ণ মন আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে স্বাধীন অন্য উপায় খুঁজতে শুরু করলো তবে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করলো না, কারন তার পরিচয় তাকে বের করতেই হবে। অবশেষে প্রযুক্তির আশ্রয় নেয়ার চিন্তা এলো তার মাথায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রযুক্তির কল্যাণে তার স্থান সনাক্ত করে ফেললো স্বাধীন। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা মেয়েটি তাকে এতো বড় মিথ্যা কথা বলবে যদিও সন্ধেহ থেকেই তার এতো কিছু করা। তাই বলে এতো বড় মিথ্যা.........। এই বয়সী একটা মেয়ে মিথ্যাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে? সে স্থির হয়ে তার মনকে বোঝাতে সক্ষম হল, হ্যাঁ পারে, কেননা দিন বদল হয়েছে না? নারী সমাজে ঘরে- বাইরে, মঞ্ছে-কর্মক্ষেত্রে, বাস্তবে-অভিনয়ে অনেক এগিয়ে।

স্বাধীন মেয়েটির ব্যাপারে নিশ্চিত হল যে, তার অবস্থান সম্পর্কে সে মিথ্যা বলেছে, তবুও বুঝে না বুঝার ভান করে লাবণ্যকে তা বুঝতে না দিয়ে আগের চেয়ে আরও ভাল সম্পর্ক বজায় রাখলো। সে দৃঢ়তার সাথে পণ করলো শুধু লাবণ্যর অবস্থান নয়, পরিচয় বের করতে হবে।



আজ লাবণ্যর মন খারাপ, তার মা তাকে খুব করে বকেছে কারন পড়াশুনা বাদ দিয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলা অনুচিত, তাছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আর সহকারি শিক্ষিকা বাবা-মার এক মাত্র মেয়ে কোথাকার কোন এক ছেলের সাথে কথা বলে।

লাবণ্যের সাথে স্বাধীন দেখা করতে চায়। লাবণ্যও দেখা করতে প্রস্তুত। স্থান, সময় নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু মেয়েটি দেখা করবে স্বাধীনের এক ভাইয়ের(দূত) সাথে কিন্তু স্বাধীন সেখানে যেতে পারবে না। দুজনের দেখা হবে বিয়ের দিন, তার আগে না। ছেলেটি যেখানে থাকে সেখান থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে আর লাবণ্যর (কথিত বাড়ি) বাড়ির কাছেই একটা জায়গায় দেখা হবে। স্বাধীনের ভাইয়া যথাস্থানে হাজির হয়ে স্বাধীনকে ফোন করে এবং স্বাধীন ও তার বন্ধুরা একটু দূরে, আড়ালে তাকে দেখতে প্রস্তুত। এবার দেখা করার পালা। সবকিছুই ঠিক আছে, মেয়েটি এসে সেই ভাইয়ার সাথে কথা বলছে আর তারা দূর হতে লাবণ্যকে দেখছে। লাবণ্যকে দেখার পাশাপাশি স্বাধীন ও তার বন্ধুদের দৃষ্টি এদিকে-ওদিকে ছড়ানো কেননা লাবণ্যও তো এসেছে বিশ কিলোমিটার দূর হতে ঠিক স্বাধীনের বাসার কাছাকাছি জায়গা থেকে তাই তার সাথে কেও আসতে পারে। লাবণ্যর বাড়ির অবস্থান তো আগেই জেনেছিল স্বাধীন, শুধু তার পরিচয়টা জানার জন্যই তো এই আয়োজন। উৎসুক দৃষ্টি খুঁজে পেলো মেয়েটির পরিচয়, কিন্তু একি? স্বাধীন যেন আকাশ থেকে পড়লো, নিজের গায়ে চিমটি দিয়ে দেখল সে স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব? মেয়েটা তো চেনা মনে হয় কিন্তু দূরে দাড়িয়ে থাকা লোকটি এখানে কেন? লোকটি সাথে করে লাবণ্যকে নিয়ে এসেছে স্বাধীন নিশ্চিত। দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি দূর হতে স্বাধীনকে দেখে আরও দূরে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে কেন? সে আর অন্য কেও না, সে স্বাধীনের সহকর্মী, একই সাথে চাকরি করে দুজন, আর মেয়েটি তো সেই সহকর্মীর মেয়ে।

স্বাধীন হতবাক, লাবণ্য তার বাবা-মা, বাড়ি সবকিছুই মিথ্যা বলেছে। তার কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না, কিন্তু সে এখন কিভাবে তার বন্ধুদের ব্যাপারটি জানাবে? স্বাধীনের খুব লজ্জা লাগছে এটা ভেবে যে, যদি তার বন্ধুদের সে বলে, দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তার সহকর্মী এবং লাবণ্য তার মেয়ে তবে তারা কি বলবে? নিশ্চয় তারা বলবে ছিঃ ছিঃ এমন জায়গায় চাকরি করিস? এমন তোর সহকর্মী, যে কিনা বাবা হয়ে লেলিয়ে দেয় নিজ মেয়েকে? তাও আবার সহকর্মীর সাথে? স্বাধীন এবার নিজেকে ধিক্কার দেয়, ছিঃ ছিঃ আমরা কোন সমাজের মানুষ? বিড়বিড় করে বলে উঠে মানুষ, কে মানুষ? আমরা কোন সমাজের পোকামাকড়? আমরা কোন সমাজের পশু? এমন হাজারও প্রশ্ন তার মনে কিন্তু উত্তর একটাই ......... “কিট-পতঙ্গ”।

[ চলবে... (সংক্ষিপ্ত)]

written by M.A. Emran

Copyright @ Punorbhaba media

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:০৮

বাংলার হাসান বলেছেন: ভাল লাগল।

পরের পর্বের অপেক্ষায়।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২১

আল-ইমরান(মানিক) বলেছেন: ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য

২| ২৭ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৯

মাক্স বলেছেন: চলুক!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২২

আল-ইমরান(মানিক) বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.