![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদিতে তিনি ছিলেন দিদিমণি। কালে কালে তিনি দিদি, কোথাও কোথাও সংক্ষেপে দি। বঙ্গ শিক্ষিকারা ইঙ্গতে এসে হলেন ম্যাডাম, কালে কালে সংক্ষেপে ম্যাম। আরও সংক্ষেপ করলে পাছে ‘ম্যা’ হয়ে যায় তাই ছাগবৎসদের কল্যাণের কথা ভেবেই তিনি হলেন ‘মিস্’। ‘মিস্’-রা তো আর চিরকাল মিস্ থাকেন না, সুযোগ পেলেই ‘মিসেস’ হয়ে যান। সুতরাং জনপ্রিয় সম্বোধন হল আন্টি। কল-কাকলি পূর্ণ টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টারদের ইঙ্গ-মাধ্যম স্কুলগুলি তাই এখন আক্ষরিক অর্থেই আন্টিনিকেতন।
স্কুলের ভিতরে যদি ছয়জন আন্টি, স্কুলের বাইরে তবে ছেচল্লিশ। এঁরা লিটিলস্টারদের গর্বিত জননী। সাতসকালে প্রসাধন পর্ব দ্রুত হাতে সমাধা করে এঁরা স্কুলের বাইরে বসিয়েছেন জমজমাট মহিলামহল। ‘আমার ওনার তো জানেন মোটেও টাইম নেই, আইটি সেক্টরের কাজ তো বোঝেন ভাই, স্যালারি ভালই কিন্তু খাটিয়ে খাটিয়ে ক্যালরি শেষ করে দেয়। অগত্যা আমাকে দেখতে হয়। ভাগ্যিস স্পোকেন ইংলিশটা করা ছিল, কী দুর্দশাই হত না হলে’!
আন্টিনিকেতন থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসা লিটিল স্টার লাফাতে লাফাতে হাঁটে। পিছু পিছু গর্বিত জননী। ‘আঃ বনি! ঠিক করে হাঁটো। কোনও ম্যানার্স নেই তোমার? নটি’!
হাঁটতে হাঁটতেই খাতা খোলেন জননী। ‘এ কী! এই স্পেলিংটা কাল এত করে শেখালাম, এটাই ভুল করলে? বাড়ি চলো, তোমার হচ্ছে। পাপার আদরে একদম স্পয়েল হয়ে যাচ্ছ’। এরা পদাতিক ছাত্র। যারা দূর-দূরান্ত থেকে আগত, তাদের জননীদের জটলা আবার বাসস্ট্যান্ডে। বারোটায় বাস আসবে যুদ্ধ ফেরত ক্ষুদে সৈন্য নিয়ে। জননীদের ব্যাকুল অপেক্ষা। ঘন ঘন ঘড়ি দেখা। ‘ব্যাপার কী বলুন তো? আজ এত দেরি করছে যে’! একপাশে একা এক ভদ্রলোক সিগারেট ফুঁকছেন আর ঘড়ি দেখছেন। কপালে বিরক্তি আর অস্বস্তির কুঞ্চন। এনার গিন্নির আজ শরীর খারাপ। কত্তাকেই আসতে হয়েছে প্রক্সি দিতে। আন্টি সম্মেলনে তিনি বহিরাগত। দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই।
অবশেষে বাস আসে। ভিতর থেকে আন্টির কণ্ঠ শ্রুত হয়। ঐন্দ্রিলা- তিয়াশা- স্পন্দন- তুর্কি। এক একটা নাম ডাকা হয় আর দরজার সামনে তার অভিভাবক এসে দাঁড়ান। ক্ষুদেগুলো লাফ দিয়ে নামে। পিঠে বইয়ের ব্যাগ পাহাড়প্রমাণ। গলায় ওয়াটার বটল যেন বায়নাকুলার। শিকার থেকে ফিরছে জিম করবেট। শিকারই তো। শিক্ষা বধ পর্ব। ‘জিওগ্রাফিটা মেরে এনেছে প্রায়, ম্যাথটাই যা একটু ঝামেলা করছে। একটা টিচার এক্সট্রা না রাখলেই নয়’।
বাসবাহিত ক্ষুদে সৈন্যরা এখন নানা পন্থায় বাড়ির পথে। অটোতে, রিকশাতে, পদব্রজে। সঙ্গে জননী। তিনি আবার অন্য বাচ্চাদের আন্টি। আন্টিনিকেতনের সৈন্যদের সারা বছর কারও না কারও বার্থ ডে। সেও এক বায়নাক্কা। গিফট কিনতে কিনতে পকেট গড়ের মাঠ। সব বাড়িতে ইনভাইটে অ্যাটেন্ড করা ক্ষুদেটিরও তো বার্থ ডে একটা আছে। সেটাও মানাতে হয় প্রেস্টিজের খাতিরে। স্কুলের ফি, বই-খাতার দাম বাড়ছে দাবার ঘোড়ার মতো আড়াই চালে। আড়াই ফুট কাঁকুড়ের আড়াইশো ফুট বিচি। এইসব সিড থেকে বৃক্ষ বেরোবে একদিন। আন্টিনিকেতনের পাঠ চুকিয়ে এরা ছুটবে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি। সেখান থেকে অজানা গহ্বরে। আরও বড় আন্টিনিকেতনের দরজায় বেল বাজবে- ‘টিং টং’। জীবনের আন্টিনিকেতন। সানাই-ফুলসজ্জা-লেবার রুম হয়ে আবার সেই আন্টিনিকেতনে ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলবে নতুন সৈন্যবাহিনী। এদের কাকা-জ্যাঠা-মাসি-মেসো-দাদা-বোন-দাদু-দিদা নেই। এদের আছে একচিলতে ফ্ল্যাট। খেলার জন্য একটুখানি গ্যারেজ আর তার বাইরে আছে আন্টি আর ঝকঝকে আন্টিনিকেতন। ভবিষ্যতের নাগরিক বানানোর হাতুড়ি-নেহাই শোভিত বিশাল এক কামারশালা।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১১
আল-ইমরান(মানিক) বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৪৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: বাস্তব। লেখার ধরণটাও সুন্দর। নেট খরচ আর সময় দুটোই উসুল।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১২
আল-ইমরান(মানিক) বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৪৫
নিষ্কর্মা বলেছেন: ভাল লাগল অনেক।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১২
আল-ইমরান(মানিক) বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৭
বাহলুল বলেছেন: দারুন, দারুন।