নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলে গেলে- তবু কিছু থাকবে আমার : আমি রেখে যাবোআমার একলা ছায়া, হারানো চিবুক, চোখ, আমার নিয়তি

মনিরা সুলতানা

সামু র বয় বৃদ্ধার ব্লগ

মনিরা সুলতানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোজন -শিল্পী- বাঙালি

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯


আমাদের বাঙালির রান্নাঘরে পঞ্চ ব্যাঞ্জন আয়োজন নিয়োজন করেন মা দাদী নানীরা কিন্তু কোন মাছের সাথে কোন সবজী যায় ,মাংসের ঝোলে কতটা গাঢ় হবে সেটুকু নির্ধারণ করেন আমাদের বাবা দাদা ভাইরা। সত্যি আমার মনে হয় এই শৌখিন্য টুকু নিশ্চয়ই বংশানুক্রমিক !! নিত্যকার বাজার সদাই থেকে শুরু করে, সকাল দুপুর রাতে কত পদে দস্তরখানা সাজবে সে চর্চা চলে সমস্ত দিন। খুব বেশি দূরে যেতে হবে না , আমার বন্ধু তালিকাতেই এমন ভোজন রসিক মিলবে কুরি বিশ বাইশ। বাদলা হওয়ায়, ঘন কুয়াশায় আর শীতার্ত রাতে' র ফেসবুক স্ট্যাটাস গুলো তা জানান দেয়। আর তীব্র গরমে চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে তাদের সবুজ চুড়ি পরা হাতের বরফকুচি মেশানো পানির কল্পনায় ভাসা! হ্যাঁ আয়েশ করে লেখাই বলে সে তা​​লিকায় তিক্ত কটু অম্ল মধুর লবন কষায়; সকল কিছুর সমন্বয় ঘটবে।


আর এই বসু তো আবার আরেক কাঁঠি সরেস বিক্রমপুরের মালখাঁনগরের বসুঠাকুর। যে জন্য এত কথা বললাম সে হচ্ছে -
পড়া শেষ করলাম নদী - স্বপ্ন কবিতার সেই মেঘনা-পদ্মা-শোন বেড়াতে চাওয়া " আমারে আমারে চেনো না? মোর নাম খোকা, ছোকানু আমার বোন" পরিচয় দেয়া । বুদ্ধদেব বসুর লেখা এক্কেবারে আনকোরা " ভোজন শিল্পী বাঙালী" বইখানি। মাত্র ৪০ পৃষ্ঠার এই বইয়ের পাতায় পাতায় লেখক নিজের সেই " মালখাঁনগরের বসুঠাকুর" সত্ত্বার পরিচয় তুলে এনেছেন। যেমন লিখেছিলেন -

উচ্ছে আর মৌরলা মাছের তেতো চচ্চড়ি, তারপর ডালের সাথে পটল ভাজা আর মুড়মুড়ে কাচকি মাছের ঝুড়ি, তারপর কুচকুচে কালো কৈ মাছ আবির্ভূত হল, টুকটুকে লাল তেলের বিছানায় ফুলকপির বালিশের উপর শোয়ানো। শেষ পর্যন্ত ইলিশ ভাজা, সর্ষেতে ভাপানো, কলাপাতায় পোড়া পোড়া পাতুরি। কচি কুমড়োর সাথে কালোজিরের ঝোল। কোনোদিন রুই মাছের মুড়ো দিয়ে রাঁধা মুগডাল, নারকোল চিংড়ি, চিতলের পেটি। ---- বুদ্ধদেব বসু (গোলাপ কেন কালো)



অল্প ক'পাতার এই বইতে বাঙালির ভোজন বিলাসিতার সাহিত্য সাক্ষ্য থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন লিখেছিলেন " কুমড়ো ফুল নিয়ে কবিতা লেখা যায় না , যেহেতু রান্না ঘর তার জাত মেরেছে। সেই একই রবী বাবু আবার কিভাবে কুমড়ো ফুলের চেয়ে সাধারণ খাদ্য কে কবিতার রাজ্যে তুলে এনেছেন। সেসব কথা লিপিবদ্ধ করেছেন আনায়েসে।

চণ্ডী মঙ্গল কাব্যে যেটুকু পাইঃ

আছয়ে তোমার সই বিমলার মাতা
লইয়া সাজারু ভেট যাহ তুমি তথা।
খুদ কিছু ধার লহ সখীর ভবনে
কাঁচড়া খুদের জাউ রান্ধিও যতনে।
রান্ধিও নালিতা শাক হাঁড়ি দুই তিন
লবণের তরে চারি কড়া কর ঋণ।
সখীর উপরে দেহ তন্ডুলের ভার
তোমার বদলে আমি করিব পসার।
গোধিকা রাখ্যাছি বান্ধি দিয়া জাল-দড়া
ছাল উতারিয়া প্রিয়ে কর শিক-পোড়া।

আহা শিক- পোড়া !! শিক কাবাব !


" ছোকানু, চল রে, চান ক'রে আসি দিয়ে সাত-শোটা ডুব,
ঝাঁপায়ে-দাপায়ে টলটলে জলে নাইতে ফুর্তি খুব।
ইলিশ কিনলে? আঃ, বেশ বে তুমি খুব ভালো, মাঝি
উনুন ধরাও ছোকানু দেখাবে রান্নার কারসাজি "

সত্যি ফেলে দেয়া লাউয়ের খোসা, অযত্নে বেড়ে উঠা বেতের কচি ডগা মায় শুঁটকি মাছ পর্যন্ত রান্নার কারসাজিতে হয়ে উঠে উপাদেয়, লোভনীয়। এই কারসাজি শব্দটায় এই বই তে উঠে আসা আর একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে আসলো। লেখক লিখেছেন - এক হাংগেরীয় ভদ্র মহিলা কোন এক বাঙালি কবিকে বিয়ে করে এ দেশে কিছুদিন কাটাবার পর লেখক কে বলেছিলেনঃ “ আপনাদের রান্নায় বড্ড বেশি মশলার ব্যবহার , ও ভাবে রাঁধলে ছেঁড়া জুতোকেও ভোজ্য করে তোলা যায়” ।
​​​

আমাদের মা খালা ,পিসি ঠাকুমা নানী দাদী হেঁশেলের হাড়ির খবর টুকু এই প্রজন্ম না জানলেও। হুমায়ূন আহমেদ যেমন গরুর গোশত পরোটাকে শৈল্পিক খাবারে পরিণত করেছেন , ইন্দু বালা ভাতের হোটেলের কচুবাটা আর আদর্শ হিন্দু হোটেলের সেই মাটন রান্না র খবর ঠিকঠাক রাখে। বুদ্ধদেব বসুর লেখা সাথে আমি অনেক খানি ই রিলেট করতে পারি বিক্রম্পুইরা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন হিসেবে।
অপেক্ষায় থাকলাম " মালখাঁনগরের বসুঠাকুর" সেই ভোজন শিল্পী- বাঙালী বই থেকে ঠিক কোন ব্যাঞ্জন প্রজন্মের মনে ধরে।


বেশ লম্বা সময় পড় লিখতে বসে এত বকবক করছি যে মূল বই এর চেয়ে আমার বকবকানি না বেশি হয়ে যায়। তাই এবারে এখানেই সমাপ্তি। বেশ দুষ্প্রাপ্য এই বই খানি পড়ার সুযোগ পেয়েছি বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী লেখক ট্রাভেলার , পাখি বিশেষজ্ঞ অণু তারেক এর ফেসবুক পেইজ থেকে।



মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: চন্ডী মঙ্গল কাব্য কী কঠিন মাইরি

পরে আসতেছি আবার

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহা সবই মাথার উপর দিয়ে যায় যদিও, এরপর ও কিছু অনুমান করে নিলাম আর কি।
অনেক ধন্যবাদ ছবিপু !
আপনার চা বিস্কুট বিলাস ও কিন্তু এই ভোজন বিলাসিতার অন্তর্গত।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: বুদ্ধদেব বসু উদ্ধৃতি পড়ে মুখে জল এসে গেলো।

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: মূল বইতে ইলিশ নিয়ে ও এমন অনেক উদ্ধৃতি আছে।
ধন্যবাদ সৈয়দ রহমান।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: চা খাও এখন।

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চা এর রঙ দেখেই তো তৃষা মিটে যায়। দুর্দান্ত !

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: এই কয়েকদিন রান্নার কাজে নিয়োজিত ছিলাম বইন। অনেক দিন রান্না করি না। বদভ্যাস হয়ে গেছে। রান্না করতে গিয়ে দেখি এটা নাই সেটা নাই, জিনিসপত্র নিজের মত সাজানো নাই। খুব বিরক্ত নিয়া কয়দিন রানছি। যদিও রান্নার প্রশংসা পেয়েছি অনেক।

কী দিয়া কী রানমু এই চিন্তায় রাতে ঘুম কম হয়। আমি রান্না করতে গেলে এত দেরী লাগে। কিন্তু দেবরের বউ এত তাড়াতাড়ি রান্নার কাজ শেষ করে ফেলে। বুঝি না তার হাতে যাদু আছে কী না।

ইন্দু বালা , আদর্শ হিন্দু হোটেল এগুলা এই শহরে এখনো আছে নাকি?

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনারা যেহেতু রান্না ঘরে দুজন রান্না করেন একটু অন্য রকম লাগবেই যে যার মোট করে সাজিয়েই রান্না করে। আর কষ্ট করলে তো কেষ্ট মিলবেই, প্রশংসা পাবার যোগ্য যে।

সত্যি রান্নার চাইতে কিসের সাথে এই বেলায় কি রান্না করব সেটা বেশি চিন্তার। ঐ যে অনেকদিন করেন না সে জন্য হুটহাট রান্না করতে গেলে আয়েশ করে সাজিয়ে করতে বসেন , তাতেই সময় লাগে হয়ত।

আদর্শ হিন্দু হোটেল
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী লেখা দুই বই। না এ নামে রেস্তরা নেই।

ধন্যবাদ আবারও।

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

অপু তানভীর বলেছেন: এই কথাটা অবশ্য সত্য বলেছেন। আমাদের আর নানীর বাসা পাশাপাশি । মাঝে মাঝে মা নানীদের বাসায় গিয়ে রান্না করতেন দরকার পরলে। আমাদের বাসায় আমার মায়ের রান্নায় মাংসের ঝোলের গাঢ়ত্ব আর নানীদের বাসায় রান্না করা মাংসের ঝোলের গাঢ়ত্ব এক রকম হত না । আলাদা হত !

৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বড় বড় কই মৎস্য, ঘন ঘন আঞ্জি
জিরা লঙ্গ মাখিয়া তুলি তৈলে ভাজি।

কাতলের কোল ভাজে, মাগুরের চাকি।
চিতলের কোল ভাজে রসবাস মাখি

ইলিশ তলিত করে, বাচা ও ভাঙ্গনা।
শউলের খণ্ড ভাজে আর শউল পোনা।।

৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: আহা বুদ্ধদেব বসুর অম্বলের কথা মনে হলে জিহ্বে জল এসে যায়, আমার মাও ভালো চুকাই শাক রান্না করতো। ১৯৮৩ সালে ভারতের রেপতি দাদার বৌদির হাতের চুকাই শাক খেয়েছিলাম এখন তো চুকাই শাকের গন্ধও খুঁজে পাই না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.