![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদ কাদরী নাগরিক জীবনবোধের এক বিরলপ্রজ কবি। কেউ কেউ তাকে ক্যারেশমেটিক কবিও বলেন। ১৯৭৮ থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা এই কবির গ্রন্থ সংখ্যা সবে চারটি। উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও কোন ক্রন্দন নেই (১৯৭৮) ও আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)।
এ চারটি কাব্যগ্রন্থের বাইরে তাঁর আর কোনো গ্রন্থ নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁর কোনো নতুন কবিতাও চোখে পড়েনি। তিনি এই চারটি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে আধুনিক মনন, বিশিষ্ট শিল্পবোধ এবং কাব্যভঙ্গির প্রকাশে যে গভীর জীবনবোধ, অন্তর্গত বিষাদ ও বৈরাগ্যেও যোগ ঘটিয়েছেন তা অবশ্যই তাঁকে বাংলা কবিতার ময়দানে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে।
কবি ও কবিতা নিয়ে আলোচনা করার মত যোগ্যতা আমার নাই, সত্যি-সত্যি নাই। কবিতা নিয়ে ধারণা শূন্যের কোটায়। কারণ একে তো বাংলার ছাত্র নই তার উপর এই বিষয়ে জানাশোনা অল্প। তবুও কেন জানি ভাল লাগে বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংস্কৃতি আর এই বাংলা কবি ও কবিতাকে। তাই কবি ও কবিতার প্রতি আমার গাঢ় প্রেম। একজন পাঠকও বটে। কবিতাগ্রস্থ পাঠক। কবিতা পড়তে পড়তে শিহরিত হই। ইচ্ছা করে অনুভূতি গুলো সবার সাথে শেয়ার করি । তারই ধারাবিহকতায় দুকলম লেখার চেষ্টা। শহীদ কাদরী আমার প্রিয় একজন কবি। তাঁর কবিতা আমার কাছে এক নতুন জগতের দ্বার খুলে দিয়েছে। সেই জগতের দরজার কাছে দাড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি।
সাহিত্যের প্রতি একটা আগ্রহ থাকার কারণে কিছু সাহিত্যিক বন্ধুদের সাথে চলাফেরা হয়। এসব সাহিত্য বন্ধুদের মুখ থেকে প্রায়ই একটা কথা শুনি কবিতা আসলে বোঝার কিছু নেই এটা উপলব্ধি করার বিষয়। আমি আসলে কবিতা বুঝতে চেষ্টা করি কিনা জানি না তবে একটা পরম তৃপ্তি খুঁজি। যেখানে আমার কোমল কবি মন কবিতা পড়ে একটু অশান্ত মনকে শান্ত করতে চায় বা অতৃপ্ত মনকে তৃপ্ত করতে চায়। যা আমার কবিতা অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলবে। যার প্রেরণায় আমি চালিত হবো, যেখান থেকে আমি শক্তি সঞ্চয় করবো। কবি শহীদ কাদরীর কবিতা পড়ে তাই আমার অনুভূতি হল- সুখের, আনন্দের এবং একসাথে প্রশান্তির। তবে সব সময় যে এমন হয়েছে তাও পুরোপরি ঠিক নয়। কবিতা ভেদে তা আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক।
কবি শহীদ কাদরীর সচেতন শব্দ ব্যবহার সকল শ্রেণীর পাঠককের বোধগম্য বা নাগালের মধ্যে। এই কবি তার নিপুন দক্ষতায় এক একটি শব্দকে একজন দক্ষ শিল্পীর মত সুচিন্তিতভাবে সাজিয়েছেন। ফলে দেখা যায় কবিতাগুলো এক ধরনের দ্যোত্বনা তৈরি করেছে। এছাড়া কবির অভিমান কবিতাগুলোকে করেছে আরো বেশি হৃদয়গ্রাহী! আর একেকটা কবিতা দিয়ে তৈরি করেছেন একেকটা কালোত্তীর্ন সুস্বজ্জিত ভাস্কর্য বা সৌধ। যার কাছে মানুষ আসবে প্রতিনিয়ত। কখনো বিস্বাদ বা তিক্ত হবে না বরং বারবার তার কাছে নতুন কিছু শক্তি পাবার প্রেরণা নিয়ে ফিরবে।
শহীদ কাদরী নামটি যেন কোন গ্রহ থেকে খসে পড়া এক উজ্জল নক্ষত্রের মত। নিজ গ্রহ থেকে ছিটকে পড়েছেন ঠিকই, কিন্তু উজ্জ্বল আলোয় তিনি ঠিক মিটিমিটি জ্বলছেন আরেক ভুবনে। এই ভুবন নিতান্তই কবিতার। তাই শহীদ কাদরীর জীবন ও তাঁর কাব্য আমাদের নিত্য ভাবায় এবং বিস্ময় সৃষ্টি করে ।
বর্তমান সময়ে কবি মাত্রই আত্মপ্রচারনায় মগ্ন আড্ডাবাজ। কিন্তু শহীদ কাদরী আড্ডা দিতে পছন্দ করলেও লেখালেখি নিয়ে সবসময়ই থাকে নিরব দেখা যায়। এরকম প্রচারবিমুখ কবি আমাদের আশে-পাশে খুঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন। পর্দার আড়ালে নিজেকে গুটিয়ে রাখা এই কবি পঞ্চাশ উত্তর বাংলা কবিতায় রেখেছেন আধুনিক মননের ছাপ । জীবনবোধের সংযোগ ঘটিয়ে কবিতার উৎকর্ষ সাধনের একজন নিমগ্ন নিপুন কারিগর।
তিনি লিখেছেন খুবই কম। মাত্র চারটি কাব্যগ্রন্থ দিয়ে কবি শহীদ কাদরী বাংলা কাব্য আসনে একটি স্থায়ী আসন তৈরি করে নিয়েছেন। তাঁর সমসাময়িক কবিদের মধ্যে শহীদ কাদরী জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
১৯৬৭ সালে ৪০ টি কবিতার সমন্বয়ে প্রকাশিত হয় শহীদ কাদরীর প্রথম গ্রন্থ উত্তরাধিকার। প্রকাশিত হওয়ার পরপরই উত্তরাধিকার বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দেয়। কবি সাহিত্যিক ও কবিতা বোদ্ধাদের কাছে তা বেশ প্রশংসিত হয়। কবিতা পাঠকরা সহজেই গ্রহণ করে এই কবিকে। ফলে দেখা যায় শহীদ কাদরী এক উল্লেখযোগ্য কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারি এই কবি অনায়াসে নিত্য প্রয়োজনীয় সহজবোধ্য শব্দ দিয়ে তাঁর কবিতার সাজ শিল্প যেমন তৈরি করেছেন তেমনি সাত রঙে সাজিয়েছেন কবিতাকে, গড়েছেন এক দক্ষ শিল্পির হাতে। বিষয়ের বৈচিত্রতা আর সাবলীল ভাষা, সকল শ্রেণীর পাঠককে মুগ্ধ করেছে।
শহীদ কাদরীর জীবন কেটেছে শহরে। শহরের নানা জটিলতা সুখ দুখের সাক্ষী এই কবি। তাই তার কবিতায় উঠে এসেছে নাগরিক জীবনের নানা অনুষঙ্গ। নাগরিক জীবনকে অনুধাবন করেছেন সবসময় হৃদয় দিয়ে। ফলে তার কবিতাগুলো পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।
একজন কবিকে যখন এগোতে হয়, তখন নতুন কিছু করতে হয়। গভীর অনুধ্যানী দৃষ্টি শহীদ কাদরীর। রোমান্টিসিজ্ম থেকে তাঁর নিজের সুখ্যাত কবিতা ‘বৃষ্টি! বৃষ্টি!’ সবাই মনে করে এটা নাগরিক বৃষ্টি। নাগরিক বৃষ্টি ওটা না। ওটায় দেখানো হয়েছে শহরটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমন বৃষ্টি যে, শহরটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর নগরে রাজত্ব হচ্ছে কাদের? যারা আজীবন ভিক্ষুক, যারা আজীবন নগ্ন, যারা আজীবন ক্ষুধার্ত। আর যারা রাজস্ব আদায় করে তারা সব পালিয়েছে। এই যে একটা প্রচ- শক্তি তা এই নগরকে, যে নগরকে আমরা ধ্যানজ্ঞান মনে করছি, সে নগরকে একটা বিরাট শক্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো! এটা স্পষ্টতই যে কবির নাগরিক সচেতনতাই তার এই সহজবোধ্য অথচ কি অসাধারণ উচ্চারণ। দ্যাখো হে নাগরিক ঘর ফেরা সন্ধ্যার ভীড়ে তোমার দিকে ছুটে আসছে বিদ্যুতের বল্লম। আরশোলার মতো নিধন করবে মানুষ আর তোমার শহর করবে উজার । কবি অকপটে তাই বলে যান-
সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো। ঘর ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে
যারা ছিলো তন্দ্রালস দিগি¦দিক ছুটলো, চৌদিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার মতো যেনবা মড়কে
শহর উজাড় হবে,Ñ বলে গেল কেউÑশহরের
পরিচিত ঘন্টা নেড়ে নেড়ে খুব ঠা-া এক ভয়াল গলায়
এবং হঠাৎ
সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে
বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম! (বৃষ্টি, বৃষ্টি)
নানান উপমায় শহীদ কাদরী তৈরি করেছেন কবিতার মালা। এই মালায় স্থান পেয়েছে বর্ণীল বিষয়াদি। বাংলা আধুনিক কবিতা তার কাছে পেয়েছে আলাদা মাত্রা। বিচিত্র সব উপমায় কবি তৈরি করেছেন কবিতার শহর।
শর্করার মতো রাশি রাশি নক্ষত্রবিন্দুর স্বাদে
রুচি নাই, ততটাই বিমুখ আমরা বন্ধুদের
উজ্জ্বল সাফল্যে অলৌকিক। কে গেল প্রাসাদে আর
সেই নীল গলির গোলক ধাাঁধাঁ কার চোখে, ঈর্ষায় কাতর (নপুংসক সন্তের উক্তি)
জন্মেই কুঁকড়ে গেছে মাতৃজরায়ন থেকে নেমে-
সোনালি পিচ্ছিল পেট আমাকে উগরে দিলো যেন
দীপহীন ল্যাম্পপোষ্টের নীচে, সন্ত্রস্ত শহরে
নিমজ্জিত সবকিছু, রুদ্ধচক্ষু সেই ব্ল্যাক-আউটে আঁধারে। (উত্তরাধিকার)
শহীদ কাদরী আধুনিক নগর ভাবনার কবি। তার কবিতার শরীর জুড়ে শহরের ব্যাস্ত জীবনের ছাপ সুস্পষ্ট। কবির জন্ম, সোনালি কৈশোর, যৌবনের সমস্ত আয়োজনই ছিল শহর কেন্দ্রিক। আর সে কারনেই হয়তো তার কবিতায় শহর এসেছে স্বতস্ফুর্তভাবে, স্বাভাবিক নিয়মে।
শহুরে জীবনের সুখ, দুঃখ, চিত্র, বৈচিত্র, ইট-কাঠ দালান-কোঠার শক্ত বুননে ঠাসা মানুষের জীবন কবি কাছ থেকে দেখেছেন বলেই তার কবিতায় শহরের শব্দাবলি উঠে এসেছে অত্যান্ত কাব্যিক এবং সংগতভাবেই। আর সে কারনেই নাগরিক পরিভাষা শহীদ কাদরীর কবিতার এক অনন্য অলংকার। মটরের বনেট, পার্ক, সিনেমার কিউ, করাতকল, ল্যাম্পপোষ্ট, কারফিউ রেঁস্তোরা, ট্রাফিক সিগন্যাল, ট্যাক্সি, ফুটপাত ইত্যাদি শব্দগুলোর সাথে কবি একাত্বতা বোধ করেছেন তার নাগরিক বোধ থেকেই। তবে এই নাগরিক বোধের একদিকে যেমন রয়েছে দীপ্র আধুনিকতা আবার এর উল্টোপিঠে তিনি অনেক নিঃসঙ্গ এবং অসহায়। সেখানে শুধু নগর জীবনের রুগ্নতা, হীনতা, নিঃসঙ্গতা, ক্লেদ আর শুন্যতার চিত্র।
”শহরের ভেতরে কোথাও হে রুগ্ন গোলাপদল,
শীতল, কালো, ময়লা সৌরভের প্রিয়তমা (আলোকিত গণিকাবৃন্দ)
কিন্তু এই অন্ধকার থেকে পরিত্রান চান কবি। কবি স্বপ দেখেন সুন্দর সকালের, আলোকিত জোৎস্নাখচিত রাতের আকাশের। যেখানে সমাজ সৃষ্ট পাপ আর পাপ থাকেনা তা অবলিলায় মানবিকতায় উত্তীর্ন হয়ে পূণ্যে রুপ নেয়।
‘সেই স্যাঁতসেতে ঠান্ডা উপাসনালয়ে পেতে দাও
জায়নামায, শুকনো কাঁথা, খাট, স্তুপ, স্তুপ রেশমের স্বাদ।” (আলোকিত গণিকাবৃন্দ)
সময়, সমাজ, স্বদেশ, দূরদেশ, পরিপার্শ্ব, পরিবেশ ইত্যাকার বিষয় কাদরীর লেখায় উঠে আসে নানান ভাবে। দেশপ্রেম, স্বাদেশিকতা, আন্তর্জাতিকতাবাদ ঠাসা কবি শহীদ কাদরীর কবিতায়। রাষ্ট্র জন্মের রক্তাক্ত ইতিহাস, সামরিকবাহিনীর অস্ত্রসজ্জা, যুদ্ধমহড়া এ সবকিছুর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কবির কবিতায় দেদিপ্যমান। তাই হয়তো কবি তাঁর প্রিয়তমা দেশকে অভিবাদন জানাচ্ছেন হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ, চকোলেট, টফি আর অ্যাকর্ডিয়ানের সুরের ভালোবাসা দিয়ে। তীব্র রাজনৈতিক চেতনাবোধ এই স্বাপ্নিক কবি এমন একটি প্রিয়তম স্বদেশ কে দেখতে চান যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের কূটকৌশলের সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে শান্তি অনিবার্য।
তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে দেশ প্রেম। কখনো নাগরিক জীবনের কথা, কখনো শুধুই প্রেম। কখনো বা সাম্যবাদ তাঁর কবিতার উপজীব্য হয়েছে। তাই আজ বাংলা সাহিত্যের গর্বিত দেয়ালে সোনার হরফে লেখা হয়েছে শহীদ কাদরীর নাম।
কিন্তু কবির এই মর্মবাণী কতটুকুই বা পৌঁছতে পারে শোষকের কানে? শোষকের কাজইতো শোষণ করা। অন্যায়ভাবে মানুষের ভালোবাসা আর বিবেকের টুঁটি চেপে ধরা। এই নিদারুণ ব্যর্থতা কবির মন কে আশাহত করে, উদ্বেলিত করে।
শত ব্যর্থতার পরও কবি ভালোবাসায় ভরা স্পপ্নের জাল বুনেন। এই আশাবাদ আছে বলেই জীবনের সুন্দর মসৃণ পথের বাঁকে বাঁকে হাজারো খানাখন্দ পেরিয়ে কবি জীবনের নতুন উজ্জল আলোটাকে ছুঁতে চান। এই হতাশা আর প্রাণের ব্যর্থতার মাঝেও এক ঝলক রুপালি জ্যোৎস্নায় নির্বিঘেœ বিচরণ করেন।
শহীদ কাদরীর কবিতাই শুধু নয়, বরং বাংলা কবিতা থেকে বিশ্বসাহিত্যের অন্ধিসন্ধিরও অনন্য উন্মোচন ঘটে। সুচিন্তিত- কাঠামোগত-গবেষণালব্ধ কোনো পদ্ধতি দিয়ে কবিকে বের করা যায় না। কবি এমনি বেড়ে উঠে। কিন্তু প্রকৃত কবির প্রাণের উত্তাপ পাঠকমনে সঞ্চার করে অনায়াসে। বেশুমার আড্ডাবাজি, দেশত্যাগ, প্রবাসে কবিতার নতুন উদগম শহীদ কাদরীর কবিতায় প্রকাশ নানা ঘটনাপরম্পরার ঢেউ এসে নোঙর গেড়েছে পাঠকের মনে। পাঠক তাই শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে শহীদ কাদরীর ভিন্নমাত্রিক ভাবনাচিন্তনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য সদা অপেক্ষমান।
শহীদ কাদরী কিংবদন্তীর এক নাম। ৫০ দশকের সেরা কবিদের মধ্যে অন্যতম তিনি। এত কম লিখে অধিক সময় ধরে কবিতায় আলোচিত থাকা খুব কম কবির ভাগ্যে জুটেছে। তার কবিতার বই মাত্র চারটি। তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য নাগরিক জীবনবোধ ও রাজনৈতিক সচেতনতা। এই দুয়ের সংমিশ্রণে তিনি কবিতায় এক রোমান্টিক আবহ সৃষ্টি করেছেন। যা তাকে দিয়েছে অনন্য খ্যাতির চূড়া। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবিদের একজন।
২০১১ সালে একুশে পদক প্রাপ্ত কবি শহীদ কাদরী, বাংলা সাহিত্যের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯৪২ সালে অগাস্ট মাসে ১৪ তারিখে কলকাতায় এই কালজয়ি কবির জন্ম । দেশ ভাগের পর সব ঘুটিয়ে চলে এলেন ঢাকাতে। ১৯৭৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই র্দীঘ সময় কবি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে। কেন এই স্বেচ্ছায় নির্বাসন। না, আমরা সে খবর কেউ জানি না, আর তা জানা হয়ত সম্ভবও নয়। হয়ত বুকচাপা কোন অভিমান অথবা বড্ড এলোমেলো পরিতোষন সমাজের গুমোট আলো-হাওয়ায় কবির মনকে বিক্ষিপ্ত করেছিল। অথবা হয়তো কিছুই নয়। শহীদ কাদরীর বাউল মনই তাঁকে দেশ থেকে দেশান্তরিত করেছিল। শহীদ কাদরী নিজেই তার উত্তরাধিকার কাব্যগ্রন্থে এর জবাব দিয়েছেন এইভাবে,
‘না শহীদ সেতো নেই; গোধুলিতে তাকে
কখনও বাসায় কেউ কোনদিন পায় নি, পাবে না।”(অগ্রজের উত্তর)
তাই অভিমানী এই কবির কবিতা অল্প সময়েই জয় করেছে পাঠকের মন। সাহিত্যে হয়ে উঠেছেন এক রহস্যময় প্রবাদ পুরুষ। কখনো কখনো মনে হয় শহীদ কাদরী আমাদের কাছে উপন্যাসের অনেক না বলা কথা নায়কের মতোই রয়ে গেলেন। তাঁর নিত্য পাইপ নিঃসৃত সাদা ধোঁয়া যেন ব্যাকুল আগ্রহে কবি শহীদ কাদরীকেও এক ঐন্দ্রজালিক আবরণে নিত্য আচ্ছন্ন করে রাখতে চায়। কবি শহীদ কাদরী কি সেই মিষ্টিক ধোঁয়া থেকে বের হয়ে কখনই আমাদের সামনে ধরা দিতে চান না। তাই বাংলার কাব্যমোদীরা তাঁর কবিতার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছে।
প্রচন্ড উদাসী শহীদ কাদরী একজন ক্যারেশমেটিক কবি, আমোদে মানুষ। সাহিত্য আর কবিতা ছাড়া তার চলে না। তবে কবিতা কিংবা লেখালাখি নিয়ে কথা বলতে নারাজ। শহীদ কাদরীর কাব্য বিচারের ক্ষমতা আমার নেই। ক্ষুদ্র পরিসরে এত বড় একজন কবিকে নিয়ে আলোচনা করাও কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। আমার অক্ষমতার ধরুন সৃষ্ট ভুল গুলোর জন্য ক্ষমা প্রার্থী।
[২০.৬.১৫]
০৮ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬
মাসুম মুনাওয়ার বলেছেন: উনি আমেরিকায় আছেন।
২| ৩০ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:৩২
কোলড বলেছেন: You said you were not a literature student but you write really well! If I remember correctly, Shahid Kadri or his family was not a native Bengali speaker but he wrote some wonderful poems. I saw him Boston 8 years back and later I he moved to NYC. He was living with an american white woman. Is he still alive?
০৮ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
মাসুম মুনাওয়ার বলেছেন: তিনি জীবিত আছেন। আমেরিকাতে। লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর লেখা। শহীদ কাদরির "তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা" আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা।
কিন্তু শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুন, আবুল হাসান এদের ভিড়ে তিনি হারিয়ে গেছেন আমার পাঠতালিকা থেকে।
একটা কথা আপনি বারবার বলেছেন,- কারণ একে তো বাংলার ছাত্র নই তার উপর এই বিষয়ে জানাশোনা অল্প"
ভাই, বাংলার ছাত্ররাই বোধহয় বাংলা সবচেয়ে কম জানে। কারণ ওরা ইচ্ছা করে বাংলা পড়ে না, কথাও চান্স না পেয়ে পড়ে। তাই ওদের কাছ থেকে সাহিত্য কিংবা সাহিত্য আলোচনা করা বৃথা!
০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০৯
মাসুম মুনাওয়ার বলেছেন: ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার কথা হয়তো ঠিক।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:৪৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনি কোথায় আছেন?