![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২ আগস্ট আমার এবং আরো অনেকের জীবনের এক স্মরণীয় দিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই ‘৯০-উত্তর ছাত্রআন্দোলনের ইতিহাসে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জাবি’র ছাত্রসমাজ এই দিনে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছিল ছাত্রলীগের ‘কিলার গ্রুপ’ ও ‘রেপিস্ট গ্রুপ’-এর সন্ত্রাসীদের। জাবি ক্যাম্পাস হয়েছিল সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত। সে যেন এক নতুন, অন্য রকম ক্যাম্পাস!
এটা ১৯৯৯ সালের কথা। জাবি ক্যাম্পাসে এই সময়টাতে ছাত্রলীগের ‘কিলার গ্রুপ’ ও ‘রেপিস্ট গ্রুপ’ পালাক্রমে দখলদারিত্ব চালাচ্ছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের পর ‘রেপিস্ট গ্রুপ’ ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত হয়। এরপর কায়েম হয় ‘কিলার গ্রুপ-এর সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব।এক পর্যায়ে ‘রেপিস্ট গ্রুপ’ ক্যাম্পাস দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই (সম্ভবত) চিহ্নিত ধর্ষকদের নেতৃত্বে ‘রেপিস্ট গ্রুপ’ কামালউদ্দিন হল দখল করে নেয়। ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের জন্য ছাত্রলীগের দুই সন্ত্রাসীবাহিনীর যুদ্ধ তথা দখল, পাল্টা দখলের খেলায় শিক্ষার্থীরা বিপন্ন হয়ে পড়ে।
দিনের পর দিন চলতে থাকা দখলদারিত্ব জাবি’র লড়াকু ছাত্রসমাজ মেনে নেয় নি। ১৯৯৮-এর ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের চেতনার মশাল তখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে। সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ২ আগস্ট ট্রান্সপোর্ট থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর (অধিকাংশই ছাত্রী) এক ঐতিহাসিক মিছিল বের হয়। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ঘুরে মিছিলটি এগিয়ে যায়। কবির স্মরণী পার হয়ে জঙ্গী এই মিছিলটি এগিয়ে যায় কামালউদ্দিন হলের দিকে। হলের গেটে এবং ছাদে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে আছে মিছিলের দিকে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানায় লড়াকু ছাত্রসমাজ। সন্ত্রাসীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মিছিলটি ঢুকে পড়ে হলের মধ্যে। ঘণ্টাখানেক ধরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলে। তাড়া খেয়ে হলের পেছন দিয়ে পালিয়ে যায় ধর্ষক-সন্ত্রাসীরা। একে একে অন্য ছাত্র হলগুলোতে এই দুঃসাহসী মিছিলটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। লড়াকু ছাত্রসমাজের তেজের কাছে পরাজিত হয় সন্ত্রাসীদের মিথ্যা আস্ফালন। রচিত হয় অনন্য এক ইতিহাস। প্রতিষ্ঠিত হয় সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত জাবি ক্যাম্পাস, যা ছাত্র আন্দোলনে ইতিহাসে নতুন মাত্রা যুক্ত করে।
২ আগস্টের সেই লড়াকু মিছিল আজও আলোড়িত করে। সেই মিছিলের সামনে থাকার এবং সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার পর অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেদিনের লড়াইকে স্মরণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ প্রতিবছর ২ আগস্ট ‘খুনী-ধর্ষক প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। সেদিনের লড়াইয়ের সব যোদ্ধাকে বিপ্লবী অভিবাদন। বিপ্লবী অভিবাদন জানাই তাদেরকেও, যারা আজও সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন
©somewhere in net ltd.