নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উড়ো মনের খেরোখাতা

মাসুম মুনাওয়ার

কবি ছড়াকার সম্পাদক চিরকুট (দ্রোহ ও ভালোবাসার পত্র)

মাসুম মুনাওয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাবিতে বর্ষা উযযাপন

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭



আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে

জানি নে জানি নে,

কিছুতে কেন যে মন লাগে না…

ঝম ঝম বৃষ্টির ঝংকারে কোনো বৃষ্টি বিলাসী মানুষেরই ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না। অপূর্ব সুন্দর মায়াময় পরিবেশের আবেষ্টনী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তো নয়ই। তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যা অকল্পনীয় ও স্বপ্নাতীত তাই ঘটে জাবিতে। বর্ষার রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে জমজমাট আড্ডায় চলে বর্ষা যাপন।

গাছপালার সমারোহ বেশি হওয়ায় এবং ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। বর্ষাকালে এখানকার লেকগুলোতে থৈ থৈ পানির সৌন্দর্য সত্যিই নজরকাড়া। শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলি উপভোগ করতে যেমন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে এ ক্যাম্পাসে তেমনি বর্ষার অপূর্ব শোভা দেখতেও অনেকেই আসে এখানে। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয় মনমাতানো আড্ডার মাধ্যমেও চলে বর্ষা উপভোগ।

যখন দিনের বেলা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে ছাত্রী হলের মাঠে শোনা যায় চঞ্চলমতি মেয়েদের আনন্দভরা কণ্ঠস্বর। স্বচ্ছ বৃষ্টির পানিতে স্নান করে তারা যে অসাধারণ আনন্দ লাভ করে তাদের মুখের উচ্ছল হাসিতেই তার প্রমাণ মেলে। কেউ বা একা কেউ বা সখীদের সাথে নিয়ে ভিজতে ভিজতে মেতে ওঠে বৃষ্টি বিলাসে। আর ছেলেদের তো কথাই নেই। সেন্ট্রাল মাঠে, স্কুল কলেজের মাঠে জমে ওঠে খেলার আসর। দুরন্ত ছেলেদের পায়ে পায়ে ফুটবলের তীব্র গতি খেলায় আনন্দ সঞ্চার করে। মনে হয়, মাঠভরা থৈ থৈ পানিতে দল বেঁধে ফুটবল খেলতে, ঝাঁপাঝাঁপি দাপাদাপি করতে আর পিছলে পড়তে তারা যেন কত ভালোবাসে। তাদের কোলাহল, রিমঝিম বৃষ্টি, সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব আবহ। গ্রাম-বাংলায় এই দৃশ্য সচরাচর দৃষ্টিগোচর হলেও শহর অঞ্চলে এ রকম দৃশ্য একেবারেই বিরল। জাবির ছাত্ররা তাই এই মূল্যবান সুযোগটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করে না।

পিচঢালা চকচকে ভেজা রাস্তায় দুইপাশে গাছের সারি রেখে রিমঝিম বৃষ্টিতে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এক ছাতার নিচে কপোত-কপোতির আড্ডা দেওয়ার দৃশ্যও এখানে বিরল নয়। এই ক্যাম্পাসে বর্ষা যাপনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো আড্ডা। বৃষ্টি হলেই শুধু দিনের বেলায় নয় রাতভর চলে জমজমাট আড্ডা। কখনো তা শুরু হয় সন্ধ্যার পর কখনো বা রাত একটু বাড়লে। সেখানে জমা হয় আড্ডাপ্রিয় বন্ধু-বান্ধবীরা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পড়াশোনা, খেলাধুলা, আলোচনা, সমালোচনা থেকে শুরু করে এমন কোনো বিষয় নেই- যা এই আড্ডায় স্থান পায় না। চলে হাসাহাসি, খুনসুটি, বিতর্ক মাঝে মাঝে ঝগড়াও তা ছাড়া একে অপরকে ক্ষ্যাপানো তো আছেই। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি আর আড্ডা চলছে চায়ের দোকানে। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আড্ডায় বসেই কেউ বৃষ্টি দেখছে, কেউ প্রিয়জনের কথা ভেবে উদাস হচ্ছে, কেউ আবার শুধু বকবক করেই চলেছে। রাত যত গভীর হতে থাকে বৃষ্টি যাপনের আড্ডা ততই জমে ওঠে। বটতলার বিভিন্ন দোকানেই এই আড্ডার আয়োজন বেশি দেখা যায়। উঁচু বটে বেলালের দোকান, ইব্রাহীম, সায়েম ও রবিউলের দোকান; নিচু বটে শামসু ও জহিরের দোকান, কামালউদ্দিন হলের সামনে মামুনের দোকান, এস এস বি হলের সামনে গাজীর দোকান, এম এইচ হলের সামনে হাসু ও সাহেবের দোকান, ট্রান্সপোর্টে খালার দোকান ইত্যাদি স্থানে জমে ওঠে এসব আড্ডার আসর। কখনো গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। পেটে ক্ষুধা মোচর দিলেও ক্ষতি নেই বটতলায় সারারাত পাওয়া যায় গরম গরম জিলাপি আর সিঙ্গাড়া। তাই আড্ডা ছেড়ে ওঠার কথা কারো মনেই আসে না। ঠাণ্ডা বৃষ্টির ছাঁট, সাথে গরম চায়ের কাপ, সেই সঙ্গে রসিক বন্ধুর সঙ্গ, ভাবতেই অদ্ভুত ভালো লাগে। জাবিতে এ ধরনের আড্ডায় শামিল হননি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। আর যারা একবার এই বৃষ্টির আড্ডা উপভোগ করেছেন ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার পরও তারা তা ভুলতে পারেননি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল লেখাপড়ার আধার নয়, তা মনোবিকাশের, বিনোদনের, বন্ধুত্বের, স্মৃতি মধুরতার আকরও বটে। জাবি ক্যাম্পাসের পরিবেশ তাই শুধু লেখাপড়ার জন্যই নয় বর্ষা যাপনের জন্যও উপযুক্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.