![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দু,টি নদীর মিলন স্থল। বন্ধনে বেধে রাখতে পছন্দ করি। আর কিছু বলার নেই আমার।
রাত গভীর। নিস্তব্দ হয়ে আছে পুরো শহর। আকাশ অন্ধকার। তারা গুলোকেও দেখা যাচ্ছে না। গভীর অন্ধকারে ঢাকা এই শহরটা। এই শহরে আমি ছাড়া হয়তো আর কেউ জেগে নেই। অন্ধকার এই শহরে আলো জ্বালিয়ে রাখছে রাস্তায় জ্বলে থাকা সেডিয়ামের বাতি গুলো। রাস্তার কুকুর গুলো পর্যন্ত জেগে নেই। লম্বা লম্বা হয়ে শুয়ে আছে একেকটা। মোড়ের কাছে দেখলাম, একি সাথে পাচটা কুকুর পাশাপাশি শুয়ে আছে। কুকুরদের মধ্যে ভাত্রত্ব্য বোধ আছে বলে আমার জানা ছিল না। এদের দেখে সে ধারনা পেলাম।
এই শহরে আমার সাথে জেগে আছে জোনাকি পোকা গুলো আর বাতি গুলোর আলোর কাছে উড়তে থাকা পোকাড়া। সেডিয়ামের বাতি গুলোর হলুদ আলোয় রুপকথার শহরের মত হয়ে উঠেছে এই শহরটা। মৃদু বাতাস বইছে। নিশি রাত্রির বাতাস। বাতাসের মৃদু ছোয়া শরীরটাকে পুলকিত করে তুলছে। নিশি রাত্রির বাতাসে নাকি ভুত-প্রেতরা ভেসে বেড়ায়। কে বলেছিল যেন? মনে পড়েছে, আমার দাদু বলেছিলেন। দাদু বলতেন, নিশি রাত হল ভুত-প্রেতদের রাত। এই সময় চলাফেরা করে ভুত-প্রেতরা। তার মধ্যে সব চাইতে শক্তিশালি হল ঘোড়াখাঙ। দাদুর কাছ থেকে ধারনা নিয়েছিলাম ঘোড়াখাঙের আকৃতি সম্পর্কে। এর গলা থেকে পেছনটা হুবহু ঘোড়ার মত। শুধু মুখটা রুপবতি তরুনির মত। এই শহরে কোনো ঘোড়াখাঙ আসবে নাতো? আসলে আসুক, ভয় পাইনা। দেখতে চাই সেই রুপবতি নারী মুখো ঘোড়াখাঙটাকে।
কিছু দূর যেতেই চোখ পড়ল বটতলার বস্তিটার দিকে। মুহাম্মদ পুর রোডের উত্তর পাশেই টিনে ঘেরা বস্তি। মনটা কেমন মোছড় দিয়ে উঠল। আহ! গত কাল এখানেই ঘটে গিয়েছিল ভয়ংকর ঘটনা। রিক্সা চালক সমির শিকদার তার মেয়ে আর স্ত্রী কে একি সাথে জবাই করে হত্যা করেছিল। কেমন আছে সমির শিকদার? সে কি জেগে আছে আমার মত? তার চোখে কি এসে উঠছে না স্ত্রী বা মেয়ের মুখ? কি করে সে এত নির্মম কাজ করতে পারল। কি কারনে হত্যা করেছিল তা ঠিক জানা যায়নি। লোখ মুখে ভিবিন্ন কথা শোনা যায়। যে কারনেই হউক, মানুষ তু এত নিষ্টুর আচরন করতে পারে না।
সমির শিকদারের মেয়েটা ছিল অসম্ভব রুপবতি কন্যাদের একজন। কি রুপটাই না নিয়ে এসেছিল মেয়েটা। কত বয়স হবে? তের বা চৌদ্দ হবে নিশ্চই। আমতলা হাই স্কুলে পড়ত। মাঝে মাঝে বাসার সামনে দিয়ে হেটে স্কুলে যেতে দেখতাম । চোখ আটকে যেত তার উপর। এত সুন্দর মেয়ে হয়! এই নিস্পাপ মেয়েটাকে কেমন করে হত্যা করল শিকদার? বোক কি একটি বার কেপে উঠল না? কত পাষন্ড হলে মানুষ এমন নিষ্টুরতা দেখাতে পারে? নিশ্চই মেয়েটি মৃত্যুর আগে বাবার কাছে বেচে থাকার প্রার্থনা করেছিল। তার নিষ্টুর বাবা তাকে বেচে থাকার সুযোগটা দেয়নি।
দূর থেকে দু'টা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসছে। কোথায় থেকে ভেসে আসছে আওয়াজটা? পশ্চিম দিক থেকে নিশ্চই। আমি তু হাটছি পশ্চিম দিকেই। খিল পাড়া থেকে মনে হয়। কুকুর গুলো এত রাতে ডাকছে কেন? তবে কি ঐ এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে? কি করব, একটু জোরে হাটব? দেখে আসব কি হয়েছে? কুকুরেরা তু নিশিরাত্রে মানুষ দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে। তারা নিশ্চই কোনো মানুষ দেখেছে। কে হবে সেই মানুষ? আমার মত রাত জেগে থাকা উদ্ভ্রান্ত পথিক? সেও কি উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটছে আমার মত?
আচ্ছা, আমি যাচ্ছি কোথায়? কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য কি আছে আমার? নাহ, মনে পড়ছে না। আজকের দিনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ বলতে আমি করিনি। অফিস থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে এক প্যাকেট সিগারেট কিনব বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। সিগারেট এক প্যাকেট কিনেছিলাম জব্বারের দোকান থেকে। সাথে সাথে কবির ভাইয়ে সঙে দেখা। আমার বন্ধু মানুষ। একি ফ্লাটে থাকি আমরা। দু' জন কথা বলতে বলতে এসে ছিলাম কোনাবাড়ি মোড় পর্যন্ত। রাত তখন দশটা বাজে। সে চলে গিয়েছিল তার ফুফাত বোন বিজলির বাসায়। তার পর থেকেই আমার একা একা পথ চলা। কত দূর হেটেছি? পাচ কিলো হবে নিশ্চই। কোনাবাড়ি থেকে খিল পাড়া পর্যন্ত পাচ কিলোই হবার কথা। রাত কয়টা হবে? মোবাইলটা সাথে আনা হয়নি। ঘড়িটা পড়ে আছে ড্রেসিং টেবিলের উপর। মোবাইলটা নিয়ে আসিনি কেন? গুরুত্বপুর্ন কোনো ফোন কি আসবে না আমার ফোনে? নাহ, গভীর রাত্রে খোজ করার মত কেউ নেই আমার।
আহ! মনে পড়ে যাচ্ছে বিনুর কথা। কি পাগলিই না ছিল মেয়েটা। ঠিক মত খেতে হবে, সময় মত ঘুমোতে হবে, কত নির্দেশই না সে অামাকে দিত। আচ্ছা, আমি কি কখনো রাত জেগে ছিলাম? বাসর রাতটা ছাড়া মনে হয় কখনো এত রাত জাগিনি। অহ! কি লজ্জাই না আমি সেদিন পেয়েছিলাম। বিনুই আমার লজ্জা ভেঙে দিয়েছিল। আমার হাতটা টেনে নিয়ে তার উরুর উপর রেখে ঘোমটা খোলে আমার সামনে বসেছিল। সে রাতে কত গল্পই না করেছিল মেয়েটা। ছোট বেলা ভুত সেজে বাবাকে ভয় দেখানোর কথা, রাত জেগে আম কুড়ানোর কথা, খিল খিল হেসে সারা রাত্র পার করে দিয়েছিল। আচ্ছা, গভির রাত্রে মেয়েদের হাসি কেন এত অদ্ভুদ লাগে? কি যে ভাল লেগেছিল সে রাত্রটা। মনে হয়েছিল জিবনের সবচেয়ে সুখের একটি রাত।
বিনুর সাথে আমার বিয়ের আয়োজনটা ছিল খুবি সাদামাটা। বিয়ের তিন মাস আগে আমাদের প্রথম দেখা। আকাশ ফোটো করে বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন। অফিস থেকে সবে মাত্র বের হচ্ছি। দেখি, গাঢ় নীল শাড়ি পরনে এক রুপবতী বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাটছে। যৌবনের প্রথম ধাক্কা লেগেছিল সেদিন। নিজেকে সামলে নিতে না পেরে ছাতা হাতে পেছন হাটতে শুরু করলাম। এক সময় হাতের ছাতা তুলে দেই ওর মাথার উপর। মেয়েটি তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। তার মৃদু হাসি ঝম ঝম করে ভিজিয়ে দিয়েছিল আমার যৌবন। তারপর থেকে চোখে চোখ রাখা, হাতে হাত রাখা, পলকহীন তাকিয়ে থাকা, ভালবাসার কথা গুলো আমরা না বলেই বুঝে নিতাম।
একদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় বিনু বাসায় এসে হাজির। পরনে ঝাঁজালো বিয়ের শাড়ি। সোজা প্রশ্ন, বিয়ে করবে আমাকে। হতম্ভব হয়ে গিয়েছিলাম আমি। উত্তরে কিছু বলতে সাহস পাইনি। সেই নিয়ে গিয়েছিল কাজী অফিসে। বাইশে জুন মঙল বার আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।
বিনুর পাগলামিটা বেশিদিন ঠিকেনি। তার ভালবাসার জ্বালা অস্থির করে তুলত আমাকে। বাহিরের খাবার খাওয়া যাবে না, পেঠ খারাফ করবে বলে এক বক্স খাবার তুলে দিত আমার হাতে। কখনো যদি আমি বিরক্তি প্রকাশ করতাম নিতে, সে নিজেই নিয়ে অফিসে হাজির হত। তার এই অতিরুক্ত ভালবাসায় মাঝে মাঝে আমি ক্ষ্যেপে যেতাম। তবে কখনো প্রকাশ করিনি। বরং একটা মৃদু হেসে তার উজ্জ্বল মুখটাকে আরো উজ্জ্বল করে দিতাম।
বিনু মারা গিয়েছিল গত বছরের অক্টবরের আঠাশ তারিখে। অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি। সে বলল, আজ যেতে হবে না অফিসে। বেস, আমি যাইনি। বলল, আজ তোমার প্রিয় খাবার পাস্তা রান্না করব। পাস্তা আমার প্রিয় খাবারের একটি। খেতে ইচ্ছে করছিল না তারপরো বললাম রান্না করার জন্য। সেদিন পাস্তা আর খাওয়া হয়নি আমার। এগারোটার দিকের ঘটনা, রান্না ঘর থেকে ধড়াম করে একটা আওয়াজ আসে। দৌড়ে যাই সেখানে। দেখি, বিনু পড়ে আছে ফ্লোরে। মুখটা হা করা, চোখ দু'টো স্থির তাকিয়ে আছে। তার নিথর দেহে কোনো শক্তি ছিল না। কোনো কথা বলেনি আমার সাথে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু দেয়নি।
আমি কি বিনুকে ভালবাসতাম? জানিনা ভালবাসতাম কিনা। খুব মনে পড়ে ওর কথা। কখনো রাগ করে থাকতে পারতাম না ওর সাথে। তার সব জ্বালাতন আমি মেনে নিতাম শুধু হাসি মুখটা দেখার জন্য। কখনো ঝগড়া হয়নি তার সাথে। আমাদের বিয়ের দুই বছরের পথ চলায় কখনো অভিমান করে থাকতে পারিনি তার উপর।
মোবাইলটা সাথে না নিয়ে এসে ভাল হয়েছে। বৃষ্টি পড়ছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ভিজতে ভাল লাগছে। পকেটের সিগারেটের প্যাকেটটা মনে হয় ভিজে যাবে। ভিজে গেলে ভিজে যাক। থামা চলবে না। একটা সিগারেট ধরালে কেমন হয়? বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সিগারেট খাওয়ার মজাই তু আন্যরকম।
আশ্চর্য, কুকুর গুলো কোথায়? কিছু আগে এখান থেকেই না তাদের আওয়াজ শুনেছিলাম। অহ! এই তো। এই দু 'টো ভিজে ভিজে কি করছে? রাতের আধারে কুকুর দেখলে বেশ ভয় লাগে। ঘোড়াখাঙ না তো? নাহ, ভয় পাওয়ার কিছু নাই। বৃষ্টির রাতে ঘোড়াখাঙ আসবে না। আসলে আসুক। হাতে আগুন আছে, সিগারেটের আগুন। ঘোড়াখঙের সাথে কিছুটা মোকাবেলা করা যাবে।
ঐ খানটায় কে দাঁড়িয়ে আছে? কে, বিনু নাকি? চুল গুলো তু বিনুর চুলের মত কোমর অবধি নেমে এসেছে। পরনের শাড়িটি তো বিনুরই শাড়ি। তাহলে কি বিনু? নাহ, বিনু তো হতে পারে না। অনেক আগেই তাকে আমি অন্ধকারে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখে এসেছি। তাহলে কে এই মেয়েটা? এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে কেন? বৃষ্টিতে ভিজে তার কি জ্বর বাধবে না? মুখ দেখা যাচ্ছে না মেয়েটার। কেমন তার মুখটা? বিনুর মত? ঘোড়াখাঙ হবে নাতো? ডাক দিব তাকে? বলব, কে তুমি?
২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২৩
নদীর মোহনা বলেছেন: ঘুরে গেলেন দেখে খুশি হলাম। শুভেচ্ছা নিবেন।
২| ২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৮
আরজু পনি বলেছেন:
আপনার লেখার হাত বেশ ভালো।
বানানে একটু সতর্কতা প্রয়োজন কেবল।
শুভ ব্লগিং।
২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২৫
নদীর মোহনা বলেছেন: হুম, সত্য আপনার কথা। ভরসা দিবেন, আশা করি ঠিক হয়ে যাবে একদিন।
ভাল থাকবেন।
৩| ২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৩১
নাগরিক কবি বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। গল্প ভাল। বেশ
২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৩৯
নদীর মোহনা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাকে কাছে পেয়ে খুশি হলাম। ভাল থাকবেন কবি।
৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪৯
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: শুভ ব্লগিং ভাই। আমরা আরেকজন গল্পকার পেয়ে গেছি মনে হচ্ছে। অনেক সুন্দর লোখেন ভাই।
গল্পে ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।
শুভকামনা আপনার জন্য সবসময়।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৩
নদীর মোহনা বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন আপনি। আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করবে। পাশে আছেন দেখে খুশি হলাম।ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৫
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
শুভকামনা রইল।
শুভব্লগিং।