নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মস্তিস্কের তাড়নায় ভাসানির ভাবনায়

এম এস আই জুেয়ল

সরল গল্প

এম এস আই জুেয়ল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অখন্ড ভারত : বাংলা ও বাংলাদেশের অবদান

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৬

।।বার ।।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ধাক্কার পরের বছর ১৮৫৮ সালে ভারতে কোম্পানি-শাসনের অবসান ঘটে,ভারত প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটেনের রানির শাসনের অধীনে আসে।কোম্পানি-শাসনের পরিবর্তে শুরু হয় ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ শাসন।নীতিতে আসে আমূল পরিবর্তন,কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা।সিপাহী বিদ্রোহে কেবল হিন্দু-মুসলমান সিপাহী সেনাই নয়, দুই ধর্মীয় রাজন্যবর্গের অনেকেও ইংরেজের বিরুদ্ধে এ বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। দুই সম্প্রদায়ের এই ঐক্যে ফাটল ধরাতে ইংরেজরা একের পর এক পরিকল্পনা আঁকতে থাকে।উদ্দেশ্য হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে দুই ভিন্ন পথ ধরে চলতে বাধ্য করা। রাজনীতির ক্ষেত্রে একসঙ্গে চলার ফলে যে সম্প্রদায়গত সৌহার্দ্য তৈরি হচ্ছিল তা নস্যাৎ করা।এ উদ্দেশ্যে ১৯০৯ সালে মর্ল্যেমিন্টো সংস্কারে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক কাউন্সিলগুলোতে ধর্মীয় ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা ও মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থা করা হয়।এভাবেই সম্প্রদায়গত বিচ্ছিন্নতার পথে ছক তৈরি হয়ে যায়।ঐ একই নীতিতে একের পর এক আসতে থাকে ১৯১৯ সালের ‘মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার ও ১৯২৯ সালের সাইমন কমিশন সংস্কার।১৯০৯ থেকে ১৯১৯ হয়ে ১৯২৯ অবধি সময় বিভাজন-রাজনীতির নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ।ভারত-শাসক ও ব্রিটিশরাজের প্রণীত এসব সংস্কারনীতিতে ওই বিভাজনের ধারাই প্রবর্তিত হতে থাকে।তবে একথাও ঠিক যে, একমাত্র ব্রিটিশ রাজ হিন্দু-মুসলমান বিভেদের জন্য পুরোপুরি দায়ী নয়। ঐতিহাসিক, অনৈতিহাসিক পারস্পরিক নানা কারণ হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর শাসক ইংরেজ নানা সূত্রে সে বিভেদের সুযোগ নিয়েছে, কখনো সংঘাত উসকে দিয়েছে, কখনোবা আইনশৃক্সখলা রক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছে(দেশ বিভাগ : পেছন ফিরে দেখা -আহমদ রফিক)।



সিপাহী বিদ্রোহের কথা বারবার বলতে হয়।কারণ সিপাহী বিদ্রোহ হলো ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন,এর মাধ্যমে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়।সিপাহী বিদ্রোহ হলো দীর্ঘ একশত বছর পর অনন্তকাল সমুদ্রের বুকে একটা সাইক্লোন! Your English tyrants are few in number, murder them! ধ্বংস কর অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গদের। বজ্রগর্ভ এই সঙ্কেত পৌছে গেল জনে জনে, নগরে নগরে, গ্রামে গ্রামে।



হঠাৎ দেশে উঠল আওয়াজ- "হো-হো, হো-হো, হো-হো"

চমকে সবাই তাকিয়ে দেখে- সিপাহী বিদ্রোহ!

আগুন হয়ে সারাটা দেশ ফেটে পড়ল রাগে,

ছেলে বুড়ো জেগে উঠল নব্বই সন আগেঃ

একশো বছর গোলামিতে সবাই তখন ক্ষিপ্ত,

বিদেশীদের রক্ত পেলে তবেই হবে তৃপ্ত!

নানাসাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মী-

সবার হাতে অস্ত্র, নাচে বনের পশু-পক্ষী।

কেবল ধনী, জমিদার, আর আগের রাজার ভক্ত

যোগ দিল, তা নয়কো, দিল গরীবেরাও রক্ত!

সবাই জীবন তুচ্ছ করে, মুসলমান ও হিন্দু,

সবাই দিতে রাজি তাদের প্রতি রক্তবিন্দু;

ইতিহাসের পাতায় তোমরা পড় কেবল মিথ্যে,

বিদেশীরা ভুল বোঝাতে চায় তোমাদের চিত্তে।

অত্যাচারী নয়কো তারা, অত্যাচারীর মুণ্ডু

চেয়েছিল ফেলতে ছিঁড়ে জ্বালিয়ে অগ্নিকুণ্ডু।

নানা জাতের নানান সেপাই গরীব এবং মূর্খঃ

সবাই তারা বুঝেছিল অধীনতার দুঃখ;

তাইতো তারা স্বাধীনতার প্রথম লড়াই লড়তে

এগিয়েছিল, এগিয়েছিল মরণ বরণ করতে!



আজকে যখন স্বাধীন হবার শেষ লড়াইয়ের ডঙ্কা

উঠেছে বেজে, কোনোদিকেই নেইকো কোনো শঙ্কা;

জব্বলপুরে সেপাইদেরও উঠছে বেজে বাদ্য

নতুন ক'রে বিদ্রোহ আজ, কেউ নয়কো বাধ্য,

তখন এঁদের স্মরণ করো, স্মরণ করো নিত্য-

এঁদের নামে, এঁদের পণে শানিয়ে তোলো চিত্ত।

নানাসাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মী,

এঁদের নামে, দৃপ্ত কিশোর, খুলবে তোমার চোখ কি? -সুকান্ত ভট্টাচার্য





সিপাহী বিদ্রোহ সফল হয়নি।ইংরেজ সরকার এই বিদ্রোহকে কঠোর হস্তে দমন করলেও এর মাধ্যমে ভারতের সর্বস্তরে একটা জনবিস্ফোরণ ঘটে যায়।ইংরেজরা সিপাহী বিদ্রোহকে পলাশীর প্রতিশোধ বলেও মনে করে।ভারতের সর্বস্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত বিদ্রোহ সিপাহী বিদ্রোহ।অথচ কেবল বাংলা ও বাঙ্গালীদের উপরেই এ বিদ্রোহের সন্দেহের তীরটা ঘুরেফিরে বিদ্ধ হয়।



১৯০৯ সালের বিভাজন নীতি গোটা ভারত মাড়িয়ে বাংলায় এসে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আদেশে ১ম বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গণআন্দোলন ও বিস্তর রাজনৈতিক কূটকচালীর ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে বঙ্গ আবার একত্রিত হয়। ইংরেজরা বাংলাকে তখনকার মত শরীরে আলাদা করলেন না বটে , কিন্তু ২য়বার বঙ্গভঙ্গ ঘটালেন অন্যদিক দিয়ে। বাংলার মাজা ভেঙে দিলেন, ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর অখন্ড ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে উঠিয়ে নিয়ে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে। বাঙালি যা একরোখা জাতি, এখানে বসে রাজত্ব চালানো আর নিরাপদ নয়। অথচ এই বাংলা দিয়েই ইংরেজদের ভারতযাত্রা আনুষ্ঠানিক হয়েছিল।বাংলার স্নেহছিন্ন হয়ে ইংরেজরা ভারতে বেশিদিন থাকতে পারেনি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাঙালি জাতি সম্পর্কে গোপালকৃষ্ণ গোখলের বিখ্যাত উক্তি ছিল,



“ বাঙালি আজ যা ভাবে, ভারত ভাবে আগামীকাল।

(What Bengal thinks today, India thinks tomorrow.) ”

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.