![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সাহসে পথ চলতে চাই, সকল বাধা ডিঙিয়ে ।
জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি
আবদুর রব, আবুল খায়ের ও আবু ইউসুফ—তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন ফায়ার সার্ভিসে। অগ্নিকাণ্ড, লঞ্চডুবি, ভবনধসসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শতসহস্র জীবন বাঁচিয়েছেন তাঁরা। সাভারের উদ্ধারকাজে তাঁদের ভূমিকা নিয়েও গর্বিত ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এই তিনজনেরই বড় আফসোস, তাঁরা শাহীনাকে বাঁচাতে পারেননি। অথচ শাহিনাকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁরা তিনজনই মরতে বসেছিলেন। অজ্ঞান অবস্থায় তাঁদের ভর্তি করা হয়েছিল সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
দুই দিন চিকিৎসার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা হাসপাতাল ছেড়েছেন। সাভারের উদ্ধারকাজ নিয়ে তাঁরা কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। এই তিনজন ছাড়াও শাহীনাকে বাঁচাতে গিয়ে ইজাজউদ্দিন নামে এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁর শরীরের ৫৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
শাহীনাকে উদ্ধার করতে আরও অনেকের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মূল যে তিনজন কাজ করছিলেন, তাঁদের লিডার ছিলেন আবদুর রব (৫২)। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরে। ৩১ বছর ধরে তিনি ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করছেন। ৪৩ বছরের আবুল খায়ের ২৪ বছর আর ৩৪ বছরের আবু ইউসুফ ১৬ বছর ধরে চাকরি করছেন ফায়ারে সার্ভিসে।
আবদুর রব বললেন, ভবনধসের পর প্রথম দিনেই তিনি যোগ দেন উদ্ধারকাজে। একেকটি রুম খুঁড়ে খুঁড়ে আস্তে আস্তে নিচের দিকে আগাচ্ছিলেন। কাজটি ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওই অবস্থায় তাঁরা জানতে চাইছিলেন কোথাও জীবিত মানুষ আছে কি না। প্রথম দিন তিনি পাঁচতলা থেকে প্রথম জীবনের আওয়াজ পান। এরপর সেখান থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করেন। সেখানে একজন ছিলেন মৃত। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই দিন একে একে ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করে আনেন।
আবুল খায়েরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। দেশে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই ডাক পড়ে তাঁর। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। খায়ের জানান, প্রথম দিন থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ও রব প্রথম দিনে ৩৭ জন, এরপর ১৬ জন, এরপর ২৪ জন এবং সর্বশেষ চারজনকে জীবিত উদ্ধার করেন।
আবু ইউসুফের বাড়ি নেত্রকোনায়। দুর্ঘটনার দিন তিনি ছিলেন ময়মনসিংহে। পরে তাঁকে খবর দেওয়া হয়। বুধবার রাতে এসে তিনি উদ্ধারকাজে যোগ দেন। পাঁচতলা থেকে তিনি একাই ৪০ জনকে জীবিত অবস্থায় বের করেছেন।
এরপর এই তিনজনের কাছেই জানতে চাওয়া হয় শাহিনার বিষয়ে। তিনজনেই মনমরা হয়ে যান। আবদুর রব বলেন, ‘শনিবার বিকেলে আমিই প্রথম শাহিনাকে চিহ্নিত করি। এরপর তাঁকে উদ্ধার করতে আমরা আটতলা থেকে ছাদ কেটে কেটে চতুর্থ তলা পর্যন্ত নামতে থাকি। এরপর সেখান থেকে তৃতীয় তলায় যাই। তৃতীয় তলায় এক কোনায় বড় একটি বিমের আড়ালে ছিলেন তিনি।’
আবুল খায়ের বললেন, ‘শাহিনা বারবার বলছিলেন ওকে যেন সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করি। কারণ আহত হলে ওর নাকি চিকিৎসা করার টাকা নেই। শাহিনা বলেন, ‘আমি বড় অভাগা। দেখেন বিয়ের পর স্বামীটা মারা গেল। দেড় বছরের ছেলেটাকে দুধ খাওয়াতে পারছি না।’ এই তিন উদ্ধারকর্মীই এরপর কাঁদতে থাকেন।
তাঁরা জানান, শাহিনার মাথা তাঁরা বের করতে পেরেছিলেন। কিন্তু কাঁধ থেকে আটকে যাচ্ছিল। তাই তাঁরা একটা একটা করে রড কাটছিলেন। শাহিনাও তাঁদের সাহায্য করছিলেন। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক ইজাজ বাববার নিচে নামতে চাইছিলেন। আমরা তাঁকে না করছিলাম। রাত সাড়ে নয়টার পর ইজাজ উপস্থিত সেনাকর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে নিজেই রড কাটতে শুরু করেন। এরপরই আগুন লেগে যায়। শেষ হয়ে যায় সব আশা।
আগুনে ইজাজের পুরো শরীর পুড়ে যায়। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে জ্ঞান হারান আবু ইউসুফ। এমন অবস্থার মধ্যেও দমে যাননি রব ও খায়ের। তাঁরা যেন জেদ ধরেছিলেন শাহিনাকে বের করে আনবেনই। অবশেষে সোমবার বিকেলে তাঁঁরা শাহিনাকে বের করে আনেন। কিন্তু এরপর আর ধকল সইতে পারেননি। শাহিনাকে বের হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে গেলে এই দুজনকে ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
এই তিনজন ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের আরেক উদ্ধারকর্মী সোহেল রানাও আহত অবস্থায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রানা বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমাদের আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম দিন। দেখবেন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্যোগে পড়া সব মানুষকে বাঁচিয়ে আনব।’
সাভারে উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন সাভারের তালবাগ জামে মসজিদের ইমাম আবদুল আহাদ। হাসপাতালে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি উদ্ধারকাজে যোগ দিই। শনিবার বেলা ১১টায় যখন নিচে নামি, চারতলায় পারভীন নামে একটা মেয়ে তখনো জীবিত ছিলেন। আমি আর আমার এক সহকর্মী তাঁকে বের করার চেষ্টা করছিলাম। তখন চরম অক্সিজেন সংকট হয়। আমার মনে হচ্ছিল, আমি মরে যাব। অনেকক্ষণ পর একজন আমাকে অক্সিজেন দেন। এরপর আরেক সহকর্মী মেয়েটাকে বের করে আনেন। আমি ওপরে উঠে অজ্ঞান হয়ে যাই।’
একইভাবে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী কাওছার, আফজাল, রহমান ও রশিদ আহত হয়েছেন। তাঁদেরও সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ২০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জাতি মনে রাখবে কি না, সেটি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন এই উদ্ধারকারীরা। তাঁরা বলছেন, দুর্যোগে পড়া মানুষের পাশে তাঁরা সব সময় থাকবেন।
মতামত : শাহিনার ঘটনা আমি জীবনেও ভুলতে পারবনা। দুই দিন বারবার টেলিভিশন দেখেছি শাহিনার উদ্ধার হওয়ার খবর শোনার জন্য কিন্তু অপেক্ষা শেষ হল তিক্ত বিষাদে। শাহিনার বাচ্চাটির জন্য কিছু করতে মন চাচ্ছে।
মতামত : আমার মাথায় যত চুল, আপনারা তত বছর বাঁচুন। সার্থক আপনাদের মানব জন্ম। সার্থক আপনাদের পিতামাতা।
মতামত : আপনাদেরকে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
মতামত : স্যালুট বস......। আপনাদের জন্যই বাংলাদেশী হয়ে আমরা গর্বিত.। আসলেই গর্বিত.........।
মতামত : সবাইকে আমার স্যালুট। আমরা হয়তো এ কাজ পারতাম না কিন্ত ভাইয়েরা তোমরা করে দেখিয়েছো বাংলার সাধারন মানুষ অসাধারন কিছু করতে পারে। আবার তোমাদেরকে স্যালুট।
মতামত : শুনেছিলাম ধবংস স্তুপের ভেতর দুটি মহিলা বাচ্চা প্রসব করেছিলেন। আমার খুব জানার আগ্রহ ছিল যে- নবাগতদের ভাগ্যে কি জুটেছিল। আমি ইহার সঠিক খবরটা জানিনা তাই খুব আফসোস হচ্ছে।
মতামত : সাভারে উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন সাভারের তালবাগ জামে মসজিদের ইমাম আবদুল আহাদ। হাসপাতালে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি উদ্ধারকাজে যোগ দিই। জামাত , হেফাজতিদের বলছি ইসলামের শিক্কা কি তা এই ইমাম তেকে জেনে নিবেন
মতামত : আপনাদের জন্য আমরা সত্যিই গর্বিত, পুরো জাতী গর্বিত । আপনারা আছেন বলেই যে, দুর্নিতিবাজ রাজনীতিবিধদের দুঃশাষনেও দেশকে নিয়ে কিছুটা হলেও গর্বভোধ করি ।
মতামত : বিনম্র চিত্তে আপনাদের সালাম জানাই । বাঙ্গালী একবার মরে বারবার মরে না , আর যা করে মন দিয়ে করে কারন আমরা মানুষ কে ভালবাসি ।
মতামত : এরাই বাংলাদেশের আসল বীর । আপনাদেরকে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।দেশ যদি আপনাদেরকে কিছুই না দেয় তা হলে হতাস হওয়ার কিছু নাই , মহান আললাহ তায়ালা আপনাদেরকে সেই পুরুসকারে পুরুসকিত করবেন ইনশা আললাহ ।
(প্রথম আলো থেকে নেওয়া)
নিজস্ব : আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছে
©somewhere in net ltd.