![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সাহসে পথ চলতে চাই, সকল বাধা ডিঙিয়ে ।
হংকংয়ের ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ পড়ে ৩.৩ ওভার বাকি থাকতেই মাত্র ১০৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ। নেট রানরেটের হিসাবটা শুরু হয়ে যায় তখনই। ম্যাচে বাংলাদেশ হারলে হংকংয়ের প্রাপ্তি বলতে ‘ইতিহাস গড়া’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। বাংলাদেশ এ ম্যাচে হংকংয়ের কাছে হারায় বাংলাদেশ ও নেপাল দুই দলেরই পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৪ করে। ‘এ’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় পর্বে কারা যাবে, সেটা নির্ধারিত হয়েছে রানরেটে। সেদিক দিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ দল সুবিধাজনক জায়গাতেই ছিল। ওই ১০৮ রান যদি হংকং ১৩.১ ওভারের মধ্যে টপকে যেত, তাহলেই রানরেটে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় পর্বে উঠে যেত নেপাল। আর যদি ১৩.১ ওভারে দুই দলের রান সমান থাকত, তাহলে পরের বলে অবশ্যই ছক্কা মারতে হতো উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যানকে। হংকং রানরেটের এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে কাল হেরেও চূড়ান্ত পর্বে উঠে গেল বাংলাদেশ। তবে উত্তরণটা হলো বড় মলিন মুখে।
১৩.১ ওভারের সময় হংকংয়ের রান ছিল ৫ উইকেটে ৬৮। বাংলাদেশি বোলারদের এই ‘সাফল্যে’ মুখ্য ভূমিকা সাকিব আল হাসানের। ৫০ রানের মধ্যে হংকং যে ৫ উইকেট হারাল, তার তিনটিই এই বাঁহাতি স্পিনারের। ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে যন্ত্রণা দেওয়া ওপেনার ইরফান আহমেদ সাকিবের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন ২৮ বলে ৩৪ রান করে। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে আল আমিন নিজের বলে ক্যাচটা না ছাড়লে ইরফান ফিরে যেতেন শূন্যতেই। রাজ্জাকের বলে ব্যক্তিগত ১২ রানে শর্ট থার্ডম্যানে আরও একবার তাঁর ক্যাচ ফেলেছেন রুবেল। সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা নিতে গিয়ে রুবেল চোট পেয়েছেন হাতেও।
খেলা যত গড়িয়েছে, ততই ম্যাচটা ছুটে গেছে বাংলাদেশের হাত থেকে। ১০৮ রানের হতদরিদ্র সংগ্রহ নিয়ে কতই বা আর লড়াই করা যায়! শেষ চার ওভারে জয়ের জন্য হংকংয়ের দরকার ছিল ২৫ রান। ফরহাদই ১৭তম ওভারে ‘দান’ করেন ১৫ রান! পরের দুই ওভারে রাজ্জাক ও সাব্বির দেন ২ আর ৩ রান। রাজ্জাকের করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলেই জয়সূচক ছক্কাটি মেরে দেন হাসিব আমজাদ। ওই ওভারে জেতার জন্য ৬ রান দরকার ছিল হংকংয়ের।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কি ব্যাটিংটাই ভুলে গেলেন, নাকি হংকংয়ের বোলারদের সামনে স্নায়ুচাপে ভুগলেন, সেটা এক রহস্য হয়ে থাকল। এমন জঘন্য ব্যাটিং এর আগে খুব কমই করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ওপর টেনে আনা চাপ থেকে পুরো ম্যাচেই আর বেরোতে পারেনি তারা। ঘরের মাঠে জন্মদিন উদ্যাপনের দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করে তামিম ইকবাল ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড। একসময় পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলা পেসার তানভির আফজালের বলটা ছিল হালকা ইনসুইং। স্টাম্পের দিকে আসা বলে কেন যে কাট করতে গেলেন, সেটা তামিমই ভালো বলতে পারবেন। ওই ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লু হয়ে সাব্বির রহমানও ফিরে গেলে বাংলাদেশ চলে যায় আরও ব্যাকফুটে।
৩ রানে ২ উইকেট নেই। তার পরও এনামুল-সাকিবের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ভালোই এগোচ্ছিল ইনিংসটা। প্রথম ওভারের বিপর্যয়ের পর তানভিরের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই পুল করে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে মারা এনামুলের ছক্কা গ্যালারির ভারী বাতাসটা কিছুটা হালকা করল। নাদিম আহমেদের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে কাভার, লং অন আর লং অফ দিয়ে বাউন্ডারির হ্যাটট্রিকও করলেন এনামুল। কিন্তু পরের বলেই বোল্ড! এনামুল-সাকিবের ৪৮ রানের তৃতীয় উইকেট জুটির পর মাত্র ৫৭ রানে পড়েছে বাংলাদেশের শেষ ৮ উইকেট। মাঝে চতুর্থ উইকেটে সাকিব-মুশফিকের জুটিটা আশা জুগিয়েছিল খেলায় ফেরার। সে সুযোগটাও নষ্ট! একটাই সান্ত্বনা, তাঁদের ৩৪ রানের জুটি ভিত্তি দেয় দলের রান অন্তত এক শ পেরোনোর। নইলে মাত্র ২৩ রানে শেষ ৭ উইকেটের পতন যে কোথায় নামাত বাংলাদেশকে!
৫১ রানে ৩ উইকেট পড়ার পরও বাংলাদেশের ইনিংসকে ঘুরিয়ে দিতে পারতেন সাকিব-মুশফিক। অথচ পর পর দুই ওভারে দুজনই ড্রেসিংরুমে। ২৭ বলে ৩৪ রান করে ইরফানের বলে ডিপ মিড উইকেটে নিজাকাতের সহজ ক্যাচে পরিণত হলেন সাকিব। জায়ান্ট স্ক্রিনে দুলে উঠল ‘ম্যাসিভ উইকেট’ লেখাটা। ঘাড় ঘুরিয়ে সাকিব নিজেও সে দৃশ্য দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন তাঁর উইকেটের গুরুত্ব। ১ বল পর উইকেটকিপারের হাত থেকে ‘জীবন’ ফিরে পেলেও পরের ওভারেই আউট মুশফিক।
বাংলাদেশের ভালো স্কোর করার আশাটা এর পরও মরে যায়নি। কেউ সঙ্গী হলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা নাসির হয়তো খেলতে পারতেন তাঁর কাছে পাওনা হয়ে যাওয়া ইনিংসটা। কিন্তু সঙ্গী কোথায়! হঠাৎ ভূমিকম্পের পর কীভাবে ঘর সামলাতে হবে, সেটা যেন কারও জানা ছিল না! ইনিংসের ১৪তম ওভারে পর পর দুই বলে আউট হয়ে নিজাকাতকে হ্যাটট্রিকেরও সুযোগ করে দেন ফরহাদ রেজা আর আবদুর রাজ্জাক। নিজাকাত সুযোগটা পারেননি, কিন্তু লেগস্পিনে ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বিপর্যয়ের অন্যতম ‘কারিগর’ তিনি। হংকংয়ের সফলতম বোলার বাঁহাতি স্পিনার নাদিম আহমেদ, ২১ রানে উইকেট নিয়েছেন ৪টি। এ ম্যাচের আগে মুশফিকদের সামান্য উদ্বেগ ছিল হংকংয়ের পেসারদের নিয়ে। কিন্তু দলটার স্পিনাররাই ভয়ংকর হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের সামনে!
©somewhere in net ltd.