নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাট্যবিদ হওয়ার ইচ্ছায় সাইন্স ছেড়ে দেয়া।

মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা উচিত। যে কোন মূল্যে ।

এম.কে.চয়েস

আমি সাহসে পথ চলতে চাই, সকল বাধা ডিঙিয়ে ।

এম.কে.চয়েস › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘আমার যেন নতুন করে জন্ম হচ্ছে...’

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

আমাকে যখন টেনে বের করছিল, তখন মনে হয়েছিল, আমার যেন নতুন করে জন্ম হচ্ছে। পৃথিবীটা যে এত সুন্দর হতে পারে, তা এই প্রথম বুঝতে পারি।’

রানা প্লাজার ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার মুহূর্তের সেই অনুভূতির কথা এভাবে জানান কিউ এ এম সাদিক। ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে ১০০ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয় তাঁকে।

২৯ বছর বয়সী এই তরুণ পাঁচ মাস ধরে রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটম লিমিটেডের মান পরিদর্শক হিসেবে কাজ করছিলেন। এই নারকীয় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর তিনি এখন এতই আতঙ্কিত যে, আর কোনোদিন পোশাক কারখানায় কাজ করবেন না বলে ঠিক করেছেন।

সাভারের রানা প্লাজার ভবনধসের দিন সাদিকের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল আটটায়। সেদিন একটু দেরিতেই পৌঁছান তিনি। যেতে যেতে সোয়া আটটা। আধাঘণ্টা পরই প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো ভবন। ভয়ে তিন তলার দুটি ব্লকের মধ্যে আশ্রয় নেন তিনি। মুহূর্তেই ধসে পড়ে ভবনটি। সবকিছুই যেন ওপর ও নিচ থেকে চেপে ধরে তাঁকে। অনেক চিৎকার করেছেন, কিন্তু সে চিৎকার পৌঁছায়নি কারও কানে।

সাদিককে উদ্ধার করার পর সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর গত ৩০ এপ্রিল বেলা তিনটার দিকে হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তারপর তিনি রানা প্লাজার কাছে ব্যাংক কলোনিতে নিজের বাসায় ফিরে যান। তাঁর শরীরে এখনো জখমের দাগ স্পষ্ট। ডান পায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে সাভার বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ান সাদিক। তিনি বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনেরা সবাই অস্থির হয়ে আছেন। আজ ঢাকা গিয়ে তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলব। নিজেরও কিছু কাজ আছে।’

ভবনধসের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাদিক বলেন, ‘ভবনটি যখন ধসে পড়ে, তখন তৃতীয় তলার এ ও বি ব্লকের পিলারের মাঝখানে আটকা পড়ে যাই। তখন মনে হচ্ছিল, সময় যেন থেমে গেছে। একটু পড়েই প্রচণ্ড ধোঁয়ায় সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। টিউবলাইট ভেঙে কাচগুলো আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে ঢুকে যেতে থাকে। নড়াচড়ার কোনো উপায় ছিল না। হাতে দুটি মোবাইল ফোনসেট, অথচ কোনো নেটওয়ার্ক নেই। এ অবস্থায় দুই দিন কাটাই। প্রচণ্ড পানির পিপাসা লাগে, কিন্তু ওই দুই দিন কোনো পানিও পাইনি। আল্লাহকে শুধু ডাকতাম। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ঝাড়তাম। এ অবস্থায় দুই দিন থাকার পর তিন বোতল পানি হাতে পাই। পরে দেখি, আমার ঠিক পাশেই আরেকজন মেয়ে আটকা পড়েছে। পানির জন্য কাতরাচ্ছে। পরে তাঁকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়।’

আটকা পড়ার প্রথম দিন থেকে গ্রিল কাটার শব্দ পান সাদিক। এতে উদ্ধার হওয়ার খানিকটা আশা জাগে তাঁর। তারপর অনেক চিত্কার-চেঁচামেচি করেছেন। কিন্তু উদ্ধারকর্মীদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি সে শব্দ। দুই দিন পরে উদ্ধারকর্মীরা জানতে পারেন, ওই স্থানে সাদিকসহ আরও কয়েকজন আটকে পড়ে আছেন।

সাদিক বলেন, ‘আমি যে পিলারের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম, এর পাশে বেশ কয়েকজন মানুষকে চিত্কার করতে করতে মরে যেতে দেখেছি। একটি মেয়েকে দেখেছি, পানির জন্য সে তাঁর হাত ইট দিয়ে থেঁতলে রক্ত বের করে সেই রক্ত খাচ্ছে। আরেকজনকে দেখেছি, তাঁর পা আটকা পড়েছে। বাধ্য হয়ে লোকটি ইট দিয়ে পায়ে মারতে মারতে দুই দিনে শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। পরে অবশ্য তিনি আর বাঁচতে পারেননি।’ তিনি বলেন, ঘটনার পর রোববার রাত তিনটার দিকে একজন উদ্ধারকর্মী তাঁর খোঁজ পান। তারপর বেশ কয়েকজন উদ্ধারকর্মী এসে তাঁকে বের করার চেষ্টা করে প্রথমে ব্যর্থ হন। সারা শরীর কাচবিদ্ধ। তখন সাদিক বুঝতে পারেন, তাঁর হয়তো আর বাইরের আলো দেখা হবে না। তাই তিনি কাছে থাকা মুঠোফোন, ছবি আর মানিব্যাগটি উদ্ধারকর্মীদের হাতে দিয়ে তাঁর স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর একটি সুড়ঙ্গ কেটে ১০০ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয় সাদিককে। (প্রথম আলো)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.