![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে যে মানুষদের আল্লাহ তাআলার দিকে ডাকে এবং সে নিজেও নেক কাজ করে এবং বলে, আমি তো মুসলমানদেরই একজন"
হযরত জাবির (রাঃ)-এর উট -
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় সাহাবীদের অন্যতম হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)। আজ শোনাব তার জীবনের চমৎকার একটা ঘটনা। যা মহৎ হতে শেখাবে সবাইকে। আমরা পার্থিব জীবনে কত হিসাব নিকাষ করি, প্রতিনিয়ত মানুষকে কতভাবে ঠকানোর চিন্তা ভাবনা করি; হয়তো মনে করি একটু ঠকাতে পারলে নিজের লাভ হল; আসলে এসবই তো অসার। বরং নিজে হেরে গিয়ে অন্য ভাইয়ের একটু লাভ করতে পারলে অন্যের মঙ্গল করতে পারলে তা আল্লাহ তায়ালার নিকট বাকী থাক। যা পরকালের পাথেয় হয়।
আমরা সর্বদাই দুনিয়ার হিসাব করেই বসে থাকি; নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকির খাতা শূন্য থাক। আসলে এ বাক্যটি ইসলামরে সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়; বরং ভোগবাদী সমাজের তপ্ত বাক্য এটি। অথচ আমরা সাধারণ মুসলমানেরা হরহামেশা সে কথাটিই দিব্যি বলে বেড়াচ্ছি।
ইসলামের মূল কথাই হল হালাল ও হারামের ফয়সালা। হালালের উপর মানবতার উপর ইসলামের সমাজ প্রতিষ্ঠিত; এর বিকল্প হওয়া মানেই জুলুমকে স্বীকার করে নেয়া; অশান্তি হানাহানির শিকার হওয়া।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-র প্রিয় সাহাবীর কথা বলতে শুরু করছিলাম।
একদা উক্ত সাহাবী পথে চলতে চলতে একবার একটা মুছিতের সম্মুখীন হলেন; সমস্যা হল নিজের বাহন উটটি কেমন যেন অকেজো হয়ে গেল। ঠিকমত তাঁকে বহন করতে পারে না; আবার জোরেও চলতে পারে না। মানে এক কথায় বাতিল মার্কা বাহন আর কী।
অনেক সময় গাড়ি ঘোড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজেও এমনি অহরহ হয়। কোন গাড়ি অচল হলে আমরা ফেলে দেই অথবা বিনামূল্যে দান করে দেই। হযরত জাবির (রাঃ)ও মনে মনে উটটিকে মরু ময়দানে ছেড়ে দেয়ার মনস্থ করলেন। তাঁর মনের যখন এই রকম অবস্থা এমন সময় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সাক্ষাত হলো। হযরত জাবির (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ বিষয় জানালেন এবং বললেন তার উটটির জন্য দোয়া করে দিতে। হযরত জাবির (রাঃ)-এর অনুরোধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দুআ করে উটটিকে একটি আঘাত করলেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরশ পেয়ে এবার উটটি ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে গেল। যেন তাগড়া জোয়ান, চলার সে কি গতি। আনন্দে আনন্দে লম্বালম্বা পা ফেলে এগিয়ে যাচেছ। হযরত জাবির (রাঃ)-এর মনও পুলতিক হয়ে উঠল। হায়! যাকে কিনা পরিত্যক্ত মনে ত্যাগ করতে চেয়েছিলাম তার কিনা এই অবস্থা। এ দেখি বড় উমদা উট!
হযরত জাবির (রাঃ)-এর মনের এত আনন্দ দেখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবার অদ্ভুত একটা প্রস্তাব দিয়ে বসলেন; জাবির মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রস্তাবে হতবাক হয়ে গেলেন! মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জাবির তোমার উটটি আমাকে এক আওকিয়ার বিনিময়ে বিক্রি করে দাও। হযরত জাবির (রাঃ) মনে মনে নিমরাজি। তবুও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই ‘না' বোধকই ভাব প্রকাশ করলনে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার তাকে বললনে, ‘এটা আমার নিকট বিক্রি কর'।
আমার মন প্রথম দিকে না চাইলেও যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাই রাজী হয়ে গেলাম। মূল্য ঐ এক আওকিয়া যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন। তবে একটা র্শত করে নিলাম বাড়ি র্পযন্ত তার উপর আমি চড়ে যাব। চলার গতি এমনিতেই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাড়াতাড়িই বাড়িতে ফিরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে উটটি নিয়ে হাজির হলাম। সাথে সাথে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের মূল্যও আমাকে দিয়ে দিলেন। আমি এক আওকিয়া (এক প্রকার রোপ্য মুদ্রা) নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। ফিরে এসে সাংসারিক কাজে ব্যস্ত এমন সময় আমার ঘরে এক লোক হাজির । সংবাদ দিলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকেছেন। আমি দৌড়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-র দরবারে হাজির হলাম।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা শোনে পৃথিবী সম্পর্কে, দুনিয়া সম্পর্কে এবং পৃথিবীর তাবৎ সম্পদ সম্পর্কে একটা ধারণা পাল্টে গেল। তিনি শান্তভাবে বললেন, জাবির তুমি কি মনে করেছ যে, আমি তোমার উটটি কম মূল্যে নিতে চাচ্ছি? আমার মনের প্রথম দিকের অভিব্যক্তি তেমনই ছিল তাই তো প্রথমবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-র কথায় রাজি হইনি।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই উটটাও তোমার এবং দিরহাম তো আগেই তোমাকে দিয়েছি এসবই তোমার জন্য। আমি আশ্চর্যের পর আর্শ্চয হচ্ছি। আসলে আমাদের হিসাব হবে সম্পদ ব্যবহারের উপর, হাসিলের উপর। এ সকল সম্পদই আল্লাহ তাআলা পয়দা করেছেন মানুষের জন্য। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্টন করে দিচ্ছেন অযুত অজস্রভাবে। অথচ আমরা সেটা ধরে রাখার জন্য কতই না নিরন্তর প্রাণান্তরকর চেষ্টা করে যাচ্ছি; জীবনের প্রথম পার্থক্য এখানেই। সংঘাতের জন্ম এখানেই । তাই তো আমাদের সমাজে এত পংকিলতা এত মানবতার অপমান। অন্যকে অগ্রাধিকার আমরা দিতে রাজি নই।
দুনিয়ার সম্পদের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মোহ নেই, থাকতে পারে না। মানবিক র্দুবলতাও তার মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। হযরত জাবির (রাঃ)-এর ছোট একটা উট দিয়েই আমরা জানতে পারলাম। আমাদের জীবনেও ঐরূপ বাস্তবতার কামনাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছেন অসংখ্য হাদীসে।
২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৫৬
উমর বলেছেন: চমৎকার লেখা। পড়ে ভালো লাগলো।
৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:১৪
শিরোনামহীন.......... বলেছেন: শুকরান...
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৪৮
নাফিস ইমতিয়াজ বলেছেন: khub valo liksen. thanks.