![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
আজকে কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে সব কাজেই আলসেমি চলে এসেছে। একটু থামে তো আবার শুরু হয়। অনেক এলাকার রাস্তায় পানি জমে গেছে। সূর্য বিকেলের দিকে একটু উঁকি দেয় আবার সন্ধ্যায় হারিয়ে যায়। মিনিট দশেক হল বৃষ্টি থেমেছে। ভাবছি এই সুযোগে মুহিবের কাছ থেকে ঘুরে আসব। আজকে কয়েকদিন ওর কাছে যাওয়া হয় না। এ মাসে মাত্র ট্রিপল মার্ডারের কেসটা সমাধান করেছে, আর তেমন কোন কেস আসেনি। হাতে কোন কেস না থাকলে দিনের বেশির ভাগ সময়ই চেম্বারে কাটিয়ে দেয় সে। সকালে বাসায় নাস্তা না করে ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। আমি থাকি ফকিরাপুল পানির টাংকির গলিতে, আর মুহিব থাকে আরামবাগে। নটরডেম কলেজে পড়ার সময় এখানের জন্য মায়া জন্মে যায়, যার কারণে সে এখানেই বাসা নিয়ে থাকে।
কলিং বেল চাপতেই মুহিব এসে দরজা খুলে দিল।
-আরে বন্ধু যে, এত দিনে আমার কথা মনে পড়ল। আর কয়েক মিনিট পরে আসলে দেখা হত না। আসছিস যেহেতু, চেম্বারে একটু পরেই যাব।
-কি করব। বৃষ্টিতে বের হই না। তোর কাজ কেমন চলছে। কোন নতুন কেস আসছে নাকি?
- আসলে তো তুই জানতি। রুগী নিয়েই ব্যস্ত আছি, আপাতত আর কোন কাজ নেই। নাস্তা করছিস?
-তোর বাসায় আসলে আমি কি নাস্তা করে আসি। ডিম মামলেট, পরোটা আর ধোয়া উঠা গরম গরম চা কি মিস করব নাকি।
বাহিরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। নাস্তাটা শেষ করে মাত্র চায়ের কাপ হাতে নিলাম, এমন সময় মুহিবের ফোনটা বেজে উঠল।
-হ্যালো, ডা. মুহিব ফয়সাল বলছি। জ্বি,আপনি আসুন, আমি বাসায় আছি।
মুহিব তার বাসার ঠিকানটা দিয়ে ফোন রেখে দিল।
-কিরে, রহস্যের গন্দ পাচ্ছি। কাহিনী কি?
-কাহিনী আমি নিজে ও জানি না। আসলে শুনব।তুই থাক।
-তুই না বললে ও আমি থাকতাম।
মিনিট বিশেক পর কলিং বেল বেজে উঠল। আমি উঠে গিয়ে খুলে দিলাম। লোকটি ভিতরে ঢুকতেই মুহিব কথা বলল
-আসুন
-আপনি তাহলে মুহিব ফয়সাল?
-জ্বি
উত্তর দিয়ে সামনের সোফা দেখিয়ে দিল ওনাকে বসার জন্য।
পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথার পানি গুলো মুছে সামনের সোফায় গিয়ে বসলেন তিনি।
ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের মত হবে। মুখে গোঁফ আছে।মাথায় দু'একটা সাদা চুল আছে। টি-শার্ট পড়েই চলে এসেছেন। মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
মুহিব এবার উনার দিকে ফিরে বসে কথা বলা শুরু করল।
- আপনি রিকশা দিয়ে এসেছেন। রিকশা থেকে নামার সময় আপনার বাম পা কাঁদার মধ্যে পিছলে গিয়েছিল। আর যেন পড়ে না যান সেজন্য ডান হাত দিয়ে দেওয়াল ধরেছিলেন।
-এক্সাকটলি, কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
মুহিব তখন মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাখা করে দিল।
- আপনি হেটে আসলে দু'পায়ে প্যান্টের পিছনে কাঁদা ছিটা থাকত কিন্তু পিছনে কাঁদা নেই। যদি গাড়িতে আসতেন তাহলে শার্টে এক ফোটা পানি ও থাকত না। সচরাচর যেটা হয়, বৃষ্টির সময় রিকশায় উঠলে পায়ের উপর লাল বা নীল রঙের প্লাস্টিকের পলিথিন কাগজ দিয়ে বসে সবাই। আপনি ও তাই করেছেন অর্থাৎ রিকশায় বসে বৃষ্টির জন্য পায়ের উপরে প্লাস্টিকের কাগজ দু'হাতে ধরে বসেছিলেন। সে জন্য আপনার হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত শার্টের অংশে বৃষ্টির পানি পড়েছে। আর শুধু বাম পায়ের প্যান্টে সামনের অংশের নিচের দিকটায় কাঁদা লেগে আছে অর্থাৎ আপনার বাম পা কাঁদায় পড়েছিল। আর পিছলে যেন না পড়েন সে জন্য ডান হাত দিয়ে দেওয়াল ধরেছিলেন। আপনার ডান হাতের তালুতে এখনো সেই পুরাতন দেওয়ালের সবুজ শ্যাওলা লেগে আছে।
আমি অবাক হয়ে রইলাম। আমি তার কিছুই খেয়াল করিনি। মুহিব আবার বলা শুরু করল।
-আপনাকে খুবই চিন্তিত দেখা যাচ্ছে। আপনার সমস্যা বলুন। কোন জায়গায় কিছু গোপন করবেন না, তাহলে সমাধান করতে কষ্ট হয়ে যাবে।
- আমি ডা. ফায়েজউল্লাহ। পাবলিক হেলথে আমার ক্যারিয়ার করেছি। এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে রিসার্চ করছি। আমার বাসা শান্তিনগর। ভাড়া করা ফ্লাটে থাকি। ঘটনাটা বলার আগে আমার বাসার বর্ণনাটা একটু বলা দরকার। আমার বাসায় আমরা মোট ৬ জন থাকি। আমার স্ত্রী, ২ ছেলে, বাজার করার জন্য একটি ছেলে আর আমার ড্রাইভার। বড় ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে শহিদুল্লাহ হলে থাকে। ছোট ছেলে এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। বড় ছেলে কয়েকদিন ধরে আমার কাছে বড় অংকের টাকা চাচ্ছে আইফোন কিনার জন্য। আমি দিচ্ছি না। এ নিয়ে আমার সাথে তার ঝগড়া ও হয়েছে। কাজের ছেলে আর ড্রাইভার দু'জনই বিশ্বস্ত।
এবার আসল কথায় আসি। ২০০১ সালে লন্ডনে পি,এইচ,ডি করার সময় রিসার্চের জন্য ব্রিটিশ সরকার আমাকে একটি কলম উপহার দেয়। যেটা সম্পুর্ন স্বর্ণের পাতে মুড়ানো ছিল, কলমের ক্যাপের মাথায় অনেক ক্ষুদ্র একটা ডায়মন্ডের গোল বল ছিল। আমি সেটাকে আমার আলমারিতে রেখেছিলাম। আজকে সকালে আলমারি খুলতে যাব দেখি আমার চাবি পাচ্ছি না। চাবি সব সময় আমার সাথে রাখি।কিন্তু আজকে পাচ্ছি না। আমার ছোট ছেলের রুমে একটা বিশেষ জায়গায় আমি ডুপ্লিকেট চাবিটা রাখি যা আর কেউ জানে না। দ্রুত সেটা এনে আলমারি খুলে দেখি আমার কলমের বাক্সটাও নেই।
-আপনার বাড়িতে তখন কে কে ছিল?
- আমার ২ ছেলেই ছিল। বড় ছেলে কাল বাসায় ছিল। তবে আমার কাজের ছেলেটা আজকে সকালে চলে গেছে । তার মায়ের গতকাল থেকে নাকি অনেক জ্ব্রর, সে জন্য গ্রামের বাড়ি গেছে।
- এ কলমের কথা আর কেউ জানত?
- আমার ঘনিষ্ঠ সব ফ্রেন্ডরাই জানে।
-আপনার সেই কাজের ছেলেটাকে ফোন দিয়েছিলেন?
-দিয়েছি,কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ।
-আপনার কলমের বাক্সটা কেমন?
-সাধারন একটা চশমার বাক্স। কেউ যেন না বুজতে পারে এ জন্য চশমার বাক্সে রাখি।
-রং কেমন?
-নীল।
-আচ্ছা, আপনি বাসার ঠিকানা দিয়ে যান। ঘন্টাখানেক পরে আমরা আপনার বাসায় যাব।
লোকটি আমাদের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
-কি বুঝলি?
এ কথা বলেই মুহিব আমার দিকে ফিরে বসল। আমি তখন উত্তর দিলাম।
- ব্যাপার সোজা, কাজের ছেলে নিয়ে পালিয়েছে অথবা তার বড় ছেলে বিক্রি করে দিয়েছে আইফোন কিনতে। তোর কি ধারনা?
- ড্রাইভার ও নিতে পারে। তবে ভদ্রলোক কিন্তু একবার ও তার স্ত্রী নিয়ে কিছু বলেননি। ঘটনাস্থলে না গেলে আপাতত কিছু বলতে পারছি না। তুই তাহলে বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে আস। আমি ততক্ষণে জামা কাপড় গুলো লন্ড্রি থেকে নিয়ে আসি।
আমি বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তখন ও পড়ছে।
দুই.
ঘন্টাখানেক পরে আমরা দু'জন শান্তিনগর আসলাম। সপ্তম তলায় থাকেন তিনি। আমরা ড্রয়িংরুমে বসলাম। সামনে টিভি আছে,সোফা সেট গুলো দু'সাড়িতে সাজানো। মাছের আ্যকুরিয়ামের মাছ গুলো নিজের মত করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে ভদ্রলোক এসে তার রুমে নিয়ে গেলেন। রুমের এক পাশে খাট, তার সাথেই ড্রেসিং টেবিল। দক্ষিন পাশে জানালা, আর উত্তর পাশ গেসেই আলমারিটা। খাটের এক পাশে হ্যাঙারে শার্ট প্যান্ট রাখা। দেওয়ালে কয়েকটা বিদেশি পুরোনো স্থাপত্যের ছবি টানানো।
ড্রাইভারকে চা আনতে পাঠিয়ে আমাদের তিনি আলমারির কাছে নিয়ে গেলেন। কোথায় সে কলমটা রাখতেন সেটা দেখালেন। মুহিব খুব ভালমত দেখতে লাগল।
-আপনার চাবিটা কোথায় থাকত?
-আমার পকেটে থাকে সব সময়।
-সব শার্ট প্যান্টের পকেট চেক করেছেন?
-আমার সব কিছু তন্ন তন্ন করে খুজে দেখেছি, কোথাও নেই।
মুহিব ততক্ষণে শার্ট প্যান্ট যেখানে রাখা আছে তার কাছে গিয়ে দাড়াল। হঠাৎ নাক দিয়ে একটি শার্টের মধ্যে গন্ধ শুকতে লাগল তারপর শার্টটা হাতে নিয়ে দেখল।
- আপনার কি বাহিরের কাউকে সন্দেহ হয়?
- না। তবে বাড়িওয়ালার একটা ছেলে আছে, তার স্বভাব খুব একটা ভাল নয়। খুব নেশা করে। নেশার টাকার জন্য সে এর আগে কয়েক বাসায় চুরিতে ধরা খেয়েছিল। সে একবার কলমটা দেখতে চেয়েছিল। আমার ভুল হয়েছিল, তাকে আমি এই রুমে বসিয়ে একবার কলমটা দেখিয়েছিলাম।
- সে কোথায় থাকে?
- এই রুম বরাবর নিচের ফ্লাটটায়। আমার জ্বানালা বরাবর তার জ্বানালা।
- নাম কি ছেলেটার?
- শাকিল
মুহিব এবার জ্বানালার কাছে গিয়ে বাহিরে উঁকি দিল। এই জ্বানাল দিয়ে কার ও প্রবেশ করা সম্ভব না।
- ফায়েজ সাহেব, আপনার কাজের ছেলেটা কোথায় থাকে?
- কিচেনের পাশের রুমেই থাকে।
আমরা উনার পিছু পিছু কিচেনের দিকে গেলাম। রুমে দুইটা খাট পাতা। একটাতে ড্র্বাইবার থাকে অন্যটাতে কাজের ছেলে। খাটের আশে পাশে এবং নিচে উঁকি মেরে দেখল মুহিব। খাটের উপরে কয়েকটা খাতা রাখা।
- এ গুলো কিসের?
- বাড়ির বিভিন্ন হিসেব রাখে সে এটাতে।
মুহিব হাতে নিয়ে খুলে দেখল খাতা গুলো।
আমরা সেখান থেকে ড্রয়িংরুমে আসলাম। ইতিমধ্যে ড্রাইভার চা নিয়ে এসেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মুহিব জিজ্ঞেস করল
- আপনার স্ত্রী আর ছেলেদের দেখলাম না।
- বড় ছেলেকে আমি ইচ্ছামতো বকেছি, সে বলেছে সে নেয়নি। রাগ করে হলে চলে গেছে। ছোট ছেলে কোচিং এ আছে। আর আমার স্ত্রী দু'দিন আগে রাগ করে তাদের বাসায় চলে গেছে।
-কি নিয়ে ঝগড়া আপনাদের?
- আসলে মুহিব সাহেব, আমি এ কথাটা গোপন করেছিলাম। এটা তখনি বলা উচিত ছিল। আসার সময় ভেবেছি বাসায় আসলে বলব। আমার স্ত্রী মাসখানেক ধরে বলতেছিল কলমে যে ডায়মন্ডের বলটা আছে সেটা খুলে তার গলার স্বর্ণের হারে লাগাবে। কিন্তু আমি রাজি হচ্ছিলাম না। এ জিনিসটা নিয়ে প্রায় ঝগড়া হত। ফাইনালি, আমি যখন বাসায় ছিলাম না তখন সে চলে যায় তাদের বাসায়।
- আচ্ছা। উনি কি আপনার ডুপ্লিকেট চাবিটা কোথায় থাকে সেটা জানতেন?
- হ্যা, আমার স্ত্রী, বড় ছেলে জানত। কাজের ছেলেটা একদিন দেখেছিল কিন্তু মনে হয় খেয়াল করেনি।
-আপনি সে জিনিস গুলো বলেননি প্রথমে।
-আসলে আমি উত্তেজিত ছিলাম। কি থেকে কি বলে ফেলেছি তখন।
কাহিনী আর ও জটিল হয়ে গেছে দেখলাম। আমি চুপ করে আছি।
-আপনি আপনার স্ত্রীকে কেমন ভালবাসেন?
-আসলে আজকে দু'দিন ওকে ছাড়া আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
- আপনার বড় ছেলের ফোন নাম্বার দিন।
আমরা বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। মুহিব দেখি লিফটের দিকে না যেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামা শুরু করল। আমি তার পিছনে নামা শুরু করলাম। ডা. ফায়েজের নিচের ফ্লাট অর্থাৎ ছয় তালায় এসে মুহিব কলিং বেল চাপল। একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এসে দরজা খুলল।
- কাকে চাই?
- জ্বি, আমরা শাকিলের বন্ধু। ও কি বাসায় আছে?
- না, ও তো আজকে সকালে কক্সবাজার ঘুরতে গেছে।
- ধন্যবাদ।
আমি আসার সময় মুহিবকে জিজ্ঞেস করলাম,
- আলমারির হাতলে কিন্তু কোন দাগ নেই, চাবি দিয়ে খোলা হয়েছে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। শাকিল নামের ছেলেটা তো জানত না চাবি কোথায়, তাহলে সে কিভাবে নিবে?
- অবশ্যই নিতে পারবে। ফায়েজ সাহেবের চাবিটা ও কিন্তু পকেটে নেই।
- তারমানে এক ফাকে সে রুমে ঢুকে পকেট থেকে চাবি নিয়ে কলম বের করে পালিয়েছে। অথবা কাজের ছেলেকে হাত করে কাজটা করেছে। দেখ মুহিব, দু'জনই কিন্তু বাসায় নেই।
- তোর ধারনাটা অনেকটা যৌক্তিক। তবে এখন একটু ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টি এস সি তে যাব। ফায়েজ সাহেবের ছেলের সাথে কথা বলে আসি।
তিন.
আমরা তিনজন টিএসসি তে বসে আছি। পাশ দিয়ে বাদামওয়ালা ডাকছে বাদাম কিনার জন্য। ছাত্র-ছাত্রীরা একটু সময় পেলেই এখানে চলে আসে আড্ডা দিতে। রাস্তায় রিকশার বিশাল একটা জ্যাম পড়ে গেছে। মুহিব সেদিকে একবার তাকিয়ে ফায়েজ সাহেবের ছেলেকে প্রশ্ন শুরু করল।
- তোমার বাবার কলম চুরির জন্য তোমাকে দায়ী করছি।
- কি বলেন আপনি এসব, মাথা ঠিক আছে গোয়েন্দা সাহেব?
- আমার মাথা ঠিক আছে। তুমি আইফোন কিনতে কলমটা বিক্রি করে দিতে পার। আমার সন্দেহটা কি ঠিক নয়?
- আপনার সন্দেহ ঠিক আছে কিন্তু আমি কলম চুরি করিনি।
- আপনার কাকে সন্দেহ হয়?
- কাজের ছেলে যেহেতু নেই এবং তার ফোন বন্ধ, তাহলে ধরা যায় সেই নিয়ে পালিয়েছে।
- শাকিল নামে বাড়িওয়ালার ছেলেকে আপনার বাবা সন্দেহ করছেন।
- একেবারেই অমুলক নয়। সে এর আগে ও কয়েকটা চুরি করেছে।
- আপনার নানুবাড়ির ঠিকানাটা দিবেন প্লিজ। আমরা এখন আপনার মায়ের কাছে যাব। আর ভবিষ্যৎ এ দরকার হলে আবার ফোন দিব।
সূর্যটা একটু উঁকি দেওয়া শুরু করছে। কয়েকখন্ড মেঘ আবার তাকে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে। ব্যস্তময় জীবনে সবাই ছুটে চলছে, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। আমরা টিএসসি থেকে সোজা মোহাম্মদপুর চলে আসলাম। কলিং বেল চাপতেই একটা দশ বার বছরের ছেলে এসে দরজা খুলে দিল। পিছনে আরেকজন মহিলা এসেছেন। বয়স চল্লিশের উপরে হবে।
- আপনি নিশ্চয় ফায়েজ সাহেবের স্ত্রী?
- জ্বি, কিন্তু আপনারা?
- আমি ডিটেক্টিভ ডক্টর মুহিব ফয়সাল, ও আমার বন্ধু। আপনার ছেলে দেখতে অনেকটাই আপনার মত হয়েছে।
- ভিতরে আসুন। আমার ছেলে কি কিছু করেছে?
- না, অন্য একটা ব্যাপারে এসেছি আমরা।
আমাদেরকে উনি ভিতরে নিয়ে গেলেন। মুহিব উনার দিকে ফিরে বসে কথা বলা শুরু করল।
- আপনার স্বামীর সোনার কলমটা তো আপনার কাছে, সেটা নিতে উনি আমাকে পাঠিয়েছেন।
- কি বলেন ডাক্তার সাহেব। আমি কেন সেটা আনতে যাব?
- আমি যদি বলি আপনার গলার হারে ডায়ামন্ডের সেই ছোট বল লাগাবেন বলে কলমটা নিয়ে এসেছেন, সেটা কি অযৌক্তিক হবে মিসেস ফায়েজ?
- দেখেন, আমি এ নিয়ে ওর সাথে ঝগড়া করে চলে এসেছি। যদি চুরি করে লাগানোর ইচ্ছা থাকত তাহলে অনেক আগেই আমি নিতে পারতাম। আমাকে দয়া করে কি বলবেন, এমন কি ঘটেছে যে এ কাজের জন্য আমার স্বামী গোয়েন্দা নিয়োগ করেছেন?
- আপনার স্বামীর কলমটা চুরি হয়েছে। আপনাদের বাড়ির কাজের ছেলেটি মায়ের অসুখের নাম করে বাড়ি চলে গেছে, তার ফোন বন্ধ।
- কি বলেন? আমার স্বামীতো গতকাল দুপুরে কলমটা নিয়ে এখানে এসেছিল। আমাকে অনেক বুঝাল বাসায় ফিরে যেতে, কলমের ক্যাপে থাকা সেই ডায়মন্ডটি ও আমাকে দিতে রাজি হয়েছিল। আমি রাগ করে নিলাম না, অনেক ঝগড়া করে ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি। তারপর আর ওর সাথে কথা হয়নি।
- যেই জিনিসটার জন্য এত আগ্রহ ছিল আপনার সেটা যখন উনি নিজেই দিতে চেয়েছিলেন, কেন নিলেন না?
- দেখুন, আপনি গোয়েন্দা। আপনার কাছে লুকোনোর কিছু নেই। আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোনদিন ও আমার গায়ে হাত তুলেনি। কিন্তু এই কলমটা নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমার গায়ে হাত তুলে। সে জন্য আমি কোনদিন ও সেটা আর নিব না। তবে হারানো গেছে শুনে খুব খারাপ লাগছে। অনেক মূল্যবান ছিল সেটা।
- মিসেস ফায়েজ, আমরা উঠি তাহলে। তবে একটা পরামর্শ দিব, আপনি বাসায় চলে যান। আপনার স্বামী খুব ভেঙে পড়েছে।
মোহাম্মদপুর থেকে সোজা মুহিবের বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসেই মুহিব ডা. ফায়েজকে ফোন দিল।
- মি. ফায়েজ। আপনি গতকাল আপনার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন, সেটা কেন লুকালেন?
- আমি তো গতকাল কোথাও যাইনি।
- আপনি কলমটা হাতে নিয়ে আপনার স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। সেটা কি সত্যি?
- না না, আমি যাইনি সেখানে।
মুহিব ফোনটা রেখে দিল। রাত প্রায় আটটা বেজে গেছে। আমি বসে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখছিলাম। মুহিব জ্বানালার পাশে চেয়ার নিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে চিন্তা করছে। উঠে এসে আমার সামনে দাঁড়াল।
- ফাহিম, কেসটার আগা মাথা খুজে পাচ্ছি না। উনার ছেলে অস্বীকার করছে, শাকিল নামের ছেলেটি কক্সবাজার চলে গেছে, কাজের ছেলে নেই, উনার স্ত্রী বলতেছেন উনি কলমটা নিয়ে তার কাছে গেছেন, কিন্তু ফায়েজ সাহেব সেটা অস্বীকার করছে।
কথা গুলো বলেই আবার চিন্তা শুরু করল সে। অনেকক্ষণ পর হঠাৎ দাড়িয়ে পড়ল।
- আমি বোকা ফাহিম। হাতের কাছে এত প্রমাণ পেয়েও সেটা খেয়ালই করলাম না। এখনি ফোন করতে হবে ফায়েজ সাহেবকে।
ফোনটা রেখে আমার পাশে এসে বসল মুহিব। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম
- কিছু পেলি?
- সমীকরণ মিলে গেছে। যাই একটু ঘুমাব। কাল সকালে সব শুনিস।
বিদায় নিয়ে আমি আমার বাসায় চলে আসলাম।
চার.
সকাল দশটায় মুহিবের রুমে এসে দেখি তালা দেওয়া। ফোন দিতেই বলল জরুরি কাজে আগেই চলে এসেছে। আমাকে সরাসরি ফায়েজ সাহেবের বাসায় চলে যেতে বলল।
কলিং বেল চাপতেই মিসেস ফায়েজ এসে দরজা খুলে দিলেন। উনি হয়ত কাল বিকেলে চলে এসেছেন। মুহিব দেখি ভিতরে বসে আছে। মি. ফায়েজ ও তার ছেলেরা অন্য পাশে বসা। আমি ঢুকে মুহিবের পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। ওর হাতে কলমের বাক্সটা। আমি নিজে নিয়ে খুলে দেখলাম। অনেক সুন্দর দেখতে। ক্যাপের মাথার ডায়ামন্ড চকচক করছে। মুহিব কথা বলা শুরু করল।
- আপনাদের কৌতূহল হচ্ছে অবশ্যই, কিভাবে এটা পেলাম। আমি একে একে সব ব্যাখা করছি। আমার সন্দেহ সবার উপরে ছিল। কাউকে সন্দেহ থেকে বাদ দিতে পারছিলাম না। তবে মি. ফায়েজ আর মিসেস ফায়েজের কথায় কোন মিল খুজে পাচ্ছিলাম না। মিসেস ফায়েজের কথা অনুযায়ী উনি কলম নিয়ে বের হয়েছিলেন কিন্তু মি. ফায়েজ সেটা অস্বীকার করছেন। তখন হঠাৎ করে খেয়াল হল ফরেনসিক মেডিসিনের একটা শব্দের কথা। শব্দটা খুবই ছোট কিন্তু, এই শব্দটা মাথায় রেখে যখন চিন্তা করছি তখম দেখলাম ব্যাপারটা মিলে যাচ্ছে। মি. ফায়েজ যখন আমার কাছে প্রথম যান, তখন উনার পকেটের রুমাল বের করে বৃষ্টির পানি মুছেছিলেন। সেসময় একটা গন্ধ আমার নাকে এসেছিল কিন্তু এতটা খেয়াল করিনি। আবার এ বাসায় এসে যখন উনার জামা কাপড় দেখি তখন একটা শার্টে সেই গন্ধটা পাই। শার্টের পকেটে রসুনের কয়েকটা খোসা ছিল সেটা আমি অত গুরুত্ব দি নাই। হাতের কাছে এত কিছু পেয়ে ও বোকার মত সারাদিন ঘুরলাম। আর যখন ফোনে উনি বললেন যে মাঝে মাঝে অ্যালকোহলের অভ্যাস আছে তখন আমি পুরো নিশ্চিত হয়ে যাই।
- আচ্ছা, কিন্তু ফরেনসিক মেডিসিনের সেই শব্দটা কি বলবেন?
উনার বড় ছেলে জিজ্ঞেস করল। মুহিব আবার কথা বলা শুরু করল।
- অ্যালকোহলিক ব্লাক আউট। যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের এটা হয়। সেই সময়ের কোন কিছুই তারা মনে করতে পারেন না। মি. ফায়েজের সেটা হয়েছিল। উনি আপনার মায়ের কাছে গিয়েছিলেন সত্যি কিন্তু আপনার মা উনাকে বের করে দেন। রাগে উনি শান্তিনগর একটা ক্লাবে বসে অতিরিক্ত ড্রিংক্স করেন। আসার সময় চাবিসহ কলমটা ভুলে রেখে আসেন। বাড়ি এসে যখন অ্যালকোহলিক ব্লাক আউটের সময় শেষ হয়ে যায় তখন তিনি আর কিছু মনে করতে পারেন নি।
- রসুনের সাথে সম্পর্ক কি? প্রশ্নটা তার ছোট ছেলে করল
- অ্যালকোহলের গন্ধ নিশ্বাসের সাথে পাওয়া যায়, যদি কেউ রসুন খায় তাহলে আর গন্ধটা হয় না। ক্লাবে রসুন রাখা আছে, ড্রিংক্সের পর সবাক অল্প খেয়ে নেয়। আমি যখন বুঝতে পারলাম, তখন সকালে এসেই ফায়েজ সাহেবের কাছ থেকে ক্লাবের ঠিকানা নিয়ে সেখানে যাই। উনার ভাগ্য ভাল। ক্লাবের একটা কাজের ছেলে বাক্সটা নিজের কাছে রেখেছিল। নেহাত চশমার বাক্স বলে এত সন্দেহ করেনি। তাকে গিয়ে বাক্সটার বর্ণনা দিতেই বের করে দিল।
কথা গুলো বলেই মুহিব বাক্স আর চাবিটা ফায়েজ সাহেবকে দিলেন। উনি আমাদের সামনেই ওয়াদা করলেন আর কোনদিন এসব ড্রিংক্স করবেন না। আমরা পারিশ্রমিকের চেকটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪
রিফাত হোসেন বলেছেন: বিকাশ করে যান, সাথে আছি ++