![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাঁর “যে গল্পের শেষ নেই” বইয়ে জীবজগতের বিবর্তনকে খুব সরল করে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর রচনা অনুসারে, এই পৃথিবীর সব প্রাণীই এসেছে এককোষী অ্যামিবা থেকে এবং মাছ, ব্যাঙ, সাপ, বানর, মানুষসহ সকল প্রাণীই একে অপরের সাথে বিবর্তন সূত্রে যুক্ত। এই অতি সরলীকরণ উপস্থাপনকে গত শতকের প্রথমার্ধের জ্ঞান দ্বারা সীমিত দোষে দুষ্ট হিসেবে মেনে নিয়ে বইয়ের বাকি আলোচনা বিবেচনা করলে এটা দেখা যায় যে, আলোচ্য বইটি মানব সভ্যতা সৃষ্টি ও তার অগ্রগতির এক চমৎকার উপাখ্যান। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে বের হয়ে নানা পথ পেরিয়ে মানবসমাজ কীভাবে আজকের পুঁজিবাদী, শোষণকেন্দ্রিক সমাজে পরিণত হয়েছে, তা জানার জন্য চমৎকার এক পরিচিতিমূলক বই “যে গল্পের শেষ নেই”- এ কথা বলাই যায়।
আদিমকাল থেকেই মানুষের সমাজে জনতান্ত্রিক প্রথা প্রচলিত। এক সময় সব মানুষ ছিল সমান এবং বেঁচে থাকার তাগিদেই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বাস করত। যতদিন না মানুষের মাঝে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তার উন্মেষ হয়, ততদিন মানুষ এভাবে একে অন্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলেছে। কিন্তু যতই মানুষের জীবনযাপনের ধারায় উন্নতি ঘটেছে, ততই হারিয়ে যেতে শুরু করেছে এই সমতার ধারণা। “জোর যার মুল্লুক তার” এবং “আমিই শ্রেষ্ঠ”- এই ধারণাগুলোই মানুষকে ধীরে ধীরে শিখিয়েছে কীভাবে স্বার্থপর হতে হয়, কীভাবে নিজের লাভের আশায় অন্যকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করতে হয়। ফলে সমাজে শাসন ব্যবস্থার উত্থান ঘটেছে, সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্য নামক ধারণার। যুগের পর যুগ ধরে চলছে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার।এই অসম চিত্র আরো বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়কালে। শিল্পবিপ্লবের হাত ধরেই পুঁজিবাদের উত্থান ঘটেছে। আর এই পুঁজিবাদই সিংহভাগ মানুষকে করেছে আরও বেশি শোষিত, নির্যাতিত। অর্থনৈতিকভাবে উচ্চতর স্তরে বসে থাকা মানুষের অদৃশ্য হাতে নিম্নতর স্তরের মানুষের মার খাওয়া ছাড়াও উঁচু-নিচু সব স্তরের মানুষের জীবনকে ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করছে এই পুঁজিবাদ। ভোগসর্বস্ব এই আদর্শ মানুষকে বিভিন্নভাবে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলছে। মানুষ জড়িয়ে পড়ছে এমন এক চক্রে যেখান থেকে চাইলেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। ফলত হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজে অস্তিত্বশীল একতাবোধ। এই বিচ্ছিন্নতা প্রভাবিত সমাজে তাই সাধারণভাবেই মানুষ বিভিন্ন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। হুট করে বন্ধনী ভেঙে যাওয়ায় যেন ছড়িয়ে পড়ছে সবকিছু।
এই ছড়িয়ে পড়ার বিচ্ছিন্ন অনুভূতি উনিশ ও বিশ শতকের বিভিন্ন মনীষীকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তাদের সৃষ্ট দর্শন ও সাহিত্যকর্মে দেখা দিয়েছিল বিষণ্নতাবোধ, অ্যাবসার্ডিজম, অস্তিত্ববাদসহ বিভিন্ন মানসিক সংকটাপন্ন বিষয়বস্তু। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আলবেয়ার কামু, ফ্রান্জ কাফকা, অ্যালেন গিন্সবার্গ, বোদলেয়ার, ইয়েটস-লারকিন প্রমুখের নাম। কিন্তু কালের গতি আরও পথ পেরিয়ে এসেছে। একবিংশ শতাব্দীতে পুঁজিবাদের উত্থান হয়েছে আরো ব্যাপকভাবে। বিগত দুই শতাব্দীর তুলনায় এই শতাব্দীতে তার অবস্থান আরো বেশি ঘনিষ্ঠভাবে, সাধারণ মানুষের আটপৌরে জীবনেও। তাই সভ্যতা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরো বড় সংকট।
এই সংকটের সমাধানের কথা দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাঁর বইতেই বলেছেন। বলেছেন, মার্কসবাদের কথা। তাঁর মতে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দল এক হলেই হয়তো এই সভ্যতার সংকট নিরসন করা সম্ভব। কিন্তু আজকের দেবীপ্রসাদ-পাঠকের এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, তিনি যখন (১৯৫১) মার্কসবাদকে সমাধান হিসেবে দেখেছেন, তখন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের দাপটের সময়। এর চল্লিশ বছর পরে এই দাপুটে শক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে এবং পুঁজিবাদ আরও গভীরভাবে গ্রোথিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। তাই এখনও এই মার্কসবাদের উপরেই ভরসা রাখা উচিৎ, নাকি মানবকল্যাণকামী গোষ্ঠীর বিকল্প কোনো উপায় ভাবা উচিৎ- সে হিসেবে বসা এখন সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার
০৩ জুলাই, ২০২৫
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
মৌরি হক দোলা বলেছেন: এটাই বাস্তব।
২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: এই বইটা আমার পড়া হয়নি।
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
মৌরি হক দোলা বলেছেন: পড়ে ফেলুন, ভাই। রোজাকেও পড়তে দিতে পারেন।
৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:১৬
এ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার বলেছেন: সুন্দর তো
০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮
মৌরি হক দোলা বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
সোভিয়েতের পতন হয়েছে, কিন্তু সমাজতন্ত্র জীবিত আছে ইউরোপে ও কানাডায়।