নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছুই হয়নি মর্মে জানা/ \"জানি জানি\"--তবুও চড়াই গলা/ আমি কত বড় তালকানা!

মাস্টারদা

মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধের খোঁজে,,,,,

মাস্টারদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারিয়ে যাওয়া পরশ

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪২





আমাদের একটা আড্ডা ছিল, যখন ম্যানেজারবাবু আমাদের গল্পের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মহারাজা মহাসমারোহে সাজ-সামন্ত সমবিহারে শিকারে যাবার প্রাক্কালে পরপুরুষাসক্ত পুরঃ প্রধানা প্রণয়নীকে যে মন্ত্রীর মন্ত্রবশে রেখে যান, সেই প্রধানমন্ত্রী। মাঝে মধ্যে গল্পে আসতো "ফুঁটো-বাবা কলকে-সাজার-দল।" এমনকি শেষের দিকে তো মাঝে-মধ্যে "ভাবীর পোষা কুকুরটা"ও আসতে লাগল। 'ফুটো-বাবা'র ব্যবসা তখন রমরমা। চার্লিসহ আমরা ক'জন নিত্য তখন বাবার দাওয়ায় কৃপার আশায় বিনা দাওয়াতে দাওয়ার ধূলোয় দাবনা রঙিন করছি। আর ভাবীর কুকুরটা তখন 'হারিয়ে যাওয়া বস্ত্র'র খোঁজে গোয়েন্দা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের সিদ্ধ-অসিদ্ধ পল্লীর পল্লবিত পলিজমা গলি থেকে গুলাশানের আলিশান অ্যালিগুলোতে। এমনি সব ছেলে-ভোলানো গল্পে গল্পে মেসের পঁচা সবজি আর বাজে রান্নার অনেকটাই কখন যে গেলা হয়ে যেতো, টের-ই পেতুম না।
এখন পাই। এখন আটকে যায় হাতে, জিভে, গলায়, পাকস্থলির পলিথিনে।

যাকগে সে কথা, সূর্যসেনের ১৬৩, ১৬৮ আর ১৭২-এ ছিল সেই আড্ডার আখড়া। সেখানে নিয়মিত ৫২ কাগজের আসরের সাথে সাথে জমাট জমে উঠত মুড়ি-পার্টি। মুড়ি-চানাচুরের ক্রেতাস্বত্ব প্রায় সময় থাকত যুবরাজের মানিব্যাগে, মেসের মরিচ-পেয়াজ আনার দায়িত্বে এই হতভাগা। 'মন্টু খলিফা খবর নিয়া' এসে আপন অংশ দখলে নিত। গোধূলিতে ফোটা পলাশ নিজ বৈশিষ্ট্যে গন্ধ বেলাত। মাঝে মধ্যে ডাকসুতেও বসত এই সব কাগজের খেল্। আর ফেরবার পথে কুড়িয়ে নিতাম "গত-হওয়া-ভাইদের" রেখে যাওয়া প্রায় নতুন নতুন সব প্যাকেট!

"আমরাও এমনি করে একদিন রেখে যাব।"--সব ঠিকঠাক আছে কিনা চেক করতে করতে কইতো কুমারখালীর সাদা কুমড়োটা। ...হয়তো সবি কথার কথা। কথার কথার মূল্য কোথা?

হয়তো কথার কথা না।
হয়তো আবেগের কথা। হয়তো অনুভবের কথা, বাস্তবের অনুভব, সত্যের অনুভব। কম্পাসের কেন্দ্র আর পরিক্রমী বিন্দুর অনুভব, যারা অলস ক্ষণে একখানে একসাথে পড়ে থাকতে পারে বটে সৃষ্টির বেলায় আলাদা হয়ে যায়। হতে হয়; নইলে যে সৃষ্টি অসম্ভব। আর সত্যি সত্যই "ফিরে আসব"র যদি সত্যমূল্য থাকে, তবে হয়তো আবার উড়ো-ঝড়ের-মাঝে-পড়ে-জড়ো-হওয়া-ধূলোর মতো করে জমা হবে কোন এক কুকুর ডাকা কুয়াশা ঢাকা শীতের রাতে। হয়তোবা আর হবে-ই না।
কে জানে?

যদিওবা হয়... তবে কি সেদিনের সেই অনুভব আর আসবে ফিরে? সেই দৃষ্টিপটে কি আর দেখা হবে জীবনের একচিলতে বিকেলের সেই রঙে ভরা ছবি?
কিংবা হলের রুমে বেডের 'পরে বসে রাত-গড়িয়ে-অনিকের-ঘুম-তাড়িয়ে খেলার সেই ঘুম জড়ানো অনুভবগুলো কী আর ছুঁয়ে যাবে কখনো? তেমনি করে নির্ভরতার বুকের পরে
হাওয়ার মতো করে?
যাবে না!

১৬৮ আর ১৭২ ছিল ক্যাম্পাসে 'আমাদের(!)' গাছের আম-কাঁঠাল-নারকেল রাখার আড়ত। টিচার্স কোয়ার্টার, রেজিস্টার বিল্ডিং, শ্যাডো থেকে কার্জন, পুষ্টি ভবন, পাবলিক লাইব্রেরি, উদ্যান... সবখানেই ছিল আমাদের সেই গাছগুলো।
আড্ডার আখড়ায় পরের দিকে এক সময় যোগ হয়েছিল ৫০২। সবশেষে যোগ হওয়াটাই সবার আগে হাতছাড়া হয়েছিল। তারপর একে একে হাতফসকে গেল ১৬৮, ১৬৩।

আর চোদ্দশ পঁচিশ -কার্তিক মাস, যেদিন গেল ১৭২ যাওয়ার হাওয়ায় বুকের কাছে বুলবুলিয়ে দোল দুলিয়ে বলে গেল---
যা কিছুই আসলে আসুক না হাওয়ালে,
সবই তো আসে ছাড়া হইবার তালে।
কোনটাই তো চিরটাদিন থাকে না কারো আগলে।
যা কিছুই আপনার হয়েছে এবার
ও সবি হয়েছে নিমিত্ত পর হইবার
কাহিভি কাভিভি ওসবে আর হইবে না আপনার।

খোদার দেয়া আয়ুর দিনগুলো যেভাবে একটা একটা করে হাতছাড়া হচ্ছে; ছিঁড়ে যাওয়া মালার পুঁথির মতো করে। একটার পর একটা পুঁথি গড়িয়ে পড়ে পরেরটার পথ পূর্ণ পূর্ব পবন করে। তেমনি একটা, একটা, একটা করে পুঁথি আলগা হয়েছে আড্ডার। একটা সময় দূরত্ব যেখানে কাঠিসুতোয় মাপতে হতো আজ সেখানকার দূরত্ব বাড়তে, বাড়তে, বাড়তে গিয়ে ঠেকেছে মাইলে। তবে মনের দূরত্ব ছিল জিরো, সেটা এখনো তেমনি আছে। থাকবে ফেরদৌসের সিঁড়িতেও, ইনশা-আল্লাহ। বৃত্ত আঁকা কম্পাসের মতো করে। যেখানে কেন্দ্র আর পরিভ্রমী বিন্দুর ব্যাসার্ধটা যতই বড় হোক না কেন, সংযোগ কিন্তু থাকেই থাকে।
চোখে দেখি কিন্তু কেন্দ্রে থাকা কম্পাসের এক মাথা আর বিন্দু গড়া পেন্সিল লাগান অপর মাথার অন্তরযোগ
হাত দিয়ে ধরে রেখেও বোঝেনা বুক।

কুঁড়ি অবস্থায় পাপড়িরা সব এক জায়গায় দল বেঁধে থাকে। গায়ে গা মিশিয়ে। একটা থেকে আরেকটা খুলতে ছিঁড়ে যায় তবুও খোলা দায় হয়ে যায়। তারপর একটু একটু করে তারা নিজেরা জ্ঞানের পুষ্টি সঞ্চয় করে যতই প্রস্ফুটিত হয় নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব একটু একটু করে ততই বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে এই দূরত্ব একসময় এত বড় হয় যে ভিন গায়ের মৌমাছিরাও দেখতে আসে!

আশ্চার্যের বিস্ময় হচ্ছে-- এই যে দূরত্ব এটা আর এই সূর্যালোকে ঘুচিবে না! এ দূরত্ব ক্রমশঃ বাড়তে থাকবে, বাড়তে থাকবে, বাড়তেই থাকবে। কোন পাপড়ি স্বার্থের বাতাসে উড়ে দূরত্ব রচিবে, কোনটা আবার নতুন প্রজন্ম গড়ার তরে কিংবা এ পৃথিবী আগামীর বাসযোগ্য করার প্রত্যয়ে নিজেরে বিলীন করবে। শুধু মিল রবে মন জেনেটিক্সের ডিনএ গঠনে।

এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী আজ সারদায়, রোদের মধ্যে লেফট-রাইট করে। ৫২ কাগজের খেলা যার বংশ-গৌরবসম সেই ধলা কুমড়োটা বছর ছয় আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিভাগের যে শ্রেণিতে ছিল আজও সে সেইখানেই থমকে আছে। শুধু সে আগে বেঞ্চে বসত আর এখন সে ডায়সে দাঁড়িয়ে কথা বলে, বেঞ্চের মুখগুলো ওর মুখ চেয়ে রয়।

জমিদারের বিশাল বড় বাগানের প্রায় শেষ মাথায় বড়সড় একটা বেগুন পাতার তলে এ-গাছের ডাল ভেঙে, ও-গাছের পাতা চিরে টোনাটুনির সংসার সাজিয়েছে যুবরাজ আর আনারকলি। এখন তো তাদের নাম হয়ে গেছে। সুখেই আছে তারা। সৃষ্টির ত্রিবেণী-ঘাট ভেঙে, খাড়ি হড়িয়ে চর জাগিয়ে, পীণোন্নতের দৃঢ় গাঢ় গাত্রোত্থান শিথিল করে তবেই তো নতুন সৃষ্টি পৃথিবীর মুখ দেখে। সেই ভাঙাতেও সুখ, সৃষ্টিতেও সুখ। এই ভাঙন দেখতেও একদল দাঁড়িয়ে যায় ভাঙন কূলে। পরের সর্বনাশ দেখায় নাকি আজিব সুখ!
এ পাড় ভাঙে ও পাড় ভাঙে, ভাঙন ছেড়ে ভাটির ভাটায় জাগে চর--- এমনি তো ঘটে আসছে অনন্তকাল ধরে বছরের পর বছর। ভাঙনে কেউ কেউ সর্বশান্ত হবে, কেউ কেউ মুনাফা করবে। আবার এই ভাঙনের মালে ভাটিতে কোথাও নতুন চর জাগবে। বৃক্ষ-পল্লবে পূর্ণ রূপবতী হবে! যা দেখেই হয়তো মুগ্ধ হবে ভাঙনে আজকের সর্বশান্তের আগামীর বংশধর। এভাবেই চলছে, এভাবেই চলবে অনন্তের পথে পথে।

নিজেতে কুঁকড়ে-মুঁকড়ে থাকার আলাদা আজিব সুখ।
নিজেই নিজের সারথি, নিজেই নিজের বিরোধী।
নো টেনশন, নো এক্সপেক্টেশন।
নো টানাটানি, নো মনামনি।
বিবাগী আমি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়ে আমি কিছু বুঝতে পারিনি।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩০

মাস্টারদা বলেছেন: দুঃখিত। শুধু শুধু আপনার সময় নষ্ট হল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.