নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছুই হয়নি মর্মে জানা/ \"জানি জানি\"--তবুও চড়াই গলা/ আমি কত বড় তালকানা!

মাস্টারদা

মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধের খোঁজে,,,,,

মাস্টারদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্ধ‍্যে বেলার শৈশবে : গল্প ১

১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:০০




'মেনে নেওয়া'র পেছনে দুটো নিয়ামক কাজ করে।
এক. হিম্মত।
দুই. বাধ্য হয়ে।
বাঙালির মধ্যে প্রথমটির দেখা পাওয়া দুষ্কর। আমরা দ্বিতীয়টিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু তার পরিবর্তে কী যে হারাই সেটা দেখার চোখ আমাদের অনেক আগেই অন্ধ হয়ে আছে!

সবাই যার যার জায়গা থেকে কোনো ঘটনাকে বিচার করে; --স্বাভাবিক। মানুষ এমন করেই বিচার করে থাকে; --করা উচিৎ। কেননা আমি আমার স্থানটিকে অন‍্য সবার চেয়ে ভালো করে জানি। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে দেখে বিচার করা সাধারণের কাজ হলেও জ্ঞানীর কাজ হতে পারে না।

ছোটবেলায় মায়ের মুখে একটা গল্প শুনেছিলাম।

বনের ধারে এক মহিলা বাস করত। একদিন মহিলাটির তাঁর শিশু পুত্রটিকে রেখে বনে যাওয়ার দরকার পড়ল। সংসারে তাঁর আপন বলতে আর কেউ ছিল না যে তার কাছে শিশুটির দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যাবে। তাই সে তার পোষা বেজির খাঁচার কাছে শিশুটিকে ঘুম পড়িয়ে রেখে গিয়েছিল এই ভেবে যে, নকুলটির ভয়ে ক্ষতিকর কোন প্রাণী হয়তো কাছে আসবে না। বিশেষ করে বিষাক্ত সাপ।

কিন্তু মহিলাটি চলে যাবার পরে সত্যি সত্যি এক কেউটে বেরিয়ে এল বনের দিক থেকে। বেজিটি সাপ দেখেই খাঁচা থেকে বের হওয়ার জন্য ছটফটানি শুরু করল। কিন্তু লোহার খাঁচায় তাঁর ছটফটানি কোন কাজেই এল না। সাপটি খানিক এদিক সেদিক ঘুরে শিশুটির দিকে অগ্রসর হল।
এদিকে অনেক ছটফটানি-চেষ্টার পরেও কোনো উপায় না দেখে নকুলটি দাঁত দিয়ে লোহার শিক্ কাটতে শুরু করলো। একটা সময় সে খাঁচা থেকে বের হতে সক্ষম হল বটে কিন্তু ততক্ষণে ভুজঙ্গটি শিশুটিকে মেরে চলে গেছে।
বেজিটি আশীবিষে নিথর মনিব-পুত্রের পানে ক্ষণিক চেয়ে রইল। তারপর চারপাশে দেখে নিয়ে এক দৌড়ে বনের মধ্যে মিলিয়ে গেল।

এর কিছুক্ষণ পরে মহিলাটি বাড়িতে ফিরে দেখল, বিছানায় ছেলেটি নিথর পড়ে আছে। বিছানায় ও চারপাশ রক্তে মাখামাখি। ভগ্ন খাঁচা দেখে তার নিশ্চিত ধারণা হল, সুযোগ বুঝে বেজিটি শুধু খাঁচা ভেঙেই পালায় নি, সাথে করে নিয়ে গেছে তার জীবনের সমস্ত আশা-ভরসা-রঙ; সব কিছু। যাকে সে এত যত্ন করে খাইয়েছে, সে-ই তার ছেলেটিকে মেরে পালাল!
পুত্র শোকের পাশাপাশি বিশ্বাস ভঙ্গের বেদনায় মুষড়ে পড়ল সে।

দুপুর গড়িয়ে যায় যায়-- এমন সময় বেজিটি বনের দিক্ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এল। আবার মিলিয়ে গেল বনে। মিনিট পাঁচেক পর আবার দেখা দিল উঠান কোণে। মুখে লেগে আছে রক্ত! নেউলের রক্তমাখা মুখ দেখে তার 'পূর্ব ধারণা', 'দৃঢ় বিশ্বাসে' রূপ নিল।

"পুত্র হন্তারক!
ছেলেটিকে খেয়েছিস! আর এখন খাবার সময় হয়েছে তাই আবার এসেছিস আমার কাছে?"
তার অশ্রু সিক্ত নয়নে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল। "দাঁড়া! আজ তোকে জনমের মতো খাওয়াব।"

বনে যাওয়ার অবলম্বন শক্ত-পোক্ত লাঠিটা পড়েছিল পাশেই। ওটা সে হাতে তুলে নিল। বেজিটি যখন আঙিনা দিয়ে দৌড়ে তার নিকটবর্তী হল তখন সেই লাঠি দিয়ে সে 'অন্তর জ্বালা-জুড়ানো' মোক্ষম এক আঘাতই করল। সেই অনাকাঙিক্ষত এক আঘাতেই লুটিয়ে পড়ল বেজিটা। একেবারে নিস্তেজ হবার আগে সে শুধু মহিলার পায়ের কাছে একটা চক্বর কাটতে পারলো। বার কয়েক চার পা ছোড়াছুড়ির পর একেবারেই নিথর হয়ে গেল। প্রতিশোধ-প্রতিঘাতের আলাদা এক তৃপ্তিতে চিকচিক করে উঠল মহিলা চোখ জোড়া।

কিন্তু নকুলের মুখটি এমন ভাবে খুলে রইল যেন "সর্বশক্তি দিয়ে মুখের ভেতরের কিছু একটা দেখাতে চাচ্ছে।"
মহিলাটি এগিয়ে গিয়ে দেখল, বেজির মুখের মধ্যে একটা সাপের কর্তিত মাথা। চকিতে সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল মৃত ছেলেটির দিকে। আশীবিষের বিষক্রিয়া পুত্রের চেহারায় নীল রঙে ততক্ষণে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এক পুত্রের শোকে বিচলিত হয়ে ক্ষণিকের "ভুল ধারণা"য় সে তার আরেক পুত্রকে হত্যা করে ফেলল!

তখন কাঁদে আঁখি জলে দুটি নয়ন ভরে
তোমায় কেন বুঝিনি আমি তোমার মতো করে?



☆☆☆আমার দৃষ্টিতে যেটা ভুল সেটা অন্যের দৃষ্টিতে যেমন সঠিক হতে পারে। তেমনই আমার দৃষ্টিতে যেটা ঠিক সেটা ভুল হতেও পারে। জ্ঞানের তো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। তাই আজকের ভুল-সঠিক আগামী দিনে সত্য-বেঠিক প্রমাণিত হতেও পারে। দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটু প্রসারতা দরকার। একটা ভুল সিদ্ধান্ত যেন সারা জীবনের আফসোস হয়ে না থাকে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১১

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: গল্পটা আমিও শুনেছি, তবে আমার শুনা গল্পে মৃত ভেজির মুখে কেউটের মাথা নয়, বনের কোনোএক গাছের শিকড় ছিলো। যাইহোক, সবদিক দেখেবুঝে বিচারবিবেচনা না করলে ভুল হয়; এটা ঠিক।
এমন ভুলের মাসুল আমাকে দিতে হয়েছে দুএকবার।

১৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

মাস্টারদা বলেছেন: "জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: গল্পটা আমিও শুনেছি, তবে আমার শুনা গল্পে মৃত ভেজির মুখে কেউটের মাথা নয়, বনের কোনোএক গাছের শিকড় ছিলো। যাইহোক, সবদিক দেখেবুঝে বিচারবিবেচনা না করলে ভুল হয়; এটা ঠিক।
এমন ভুলের মাসুল আমাকে দিতে হয়েছে দুএকবার।"

শেকড় হলেও হতে পারে...আসলে জেনে বুঝে বিচার বিবেচনায় কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার মায়ের মুখে শোনা গল্পটা দারুন।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গল্পটা আগে শুনেছি বলে মনে পড়লো না, তবে, জুনায়েদ ভাইয়ের সাথে আমিও একমত, বেজির মুখে সাপের কর্তিত মাথার বদলে গাছের শেকড় থাকাই যুক্তিযুক্ত, যা দিয়ে বিষ বের করা হয়।

গল্প যাই হোক, মূল ভাব চমৎকার। জিনিসটা ভাল্লাগছে :)

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:০৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.