নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধের খোঁজে,,,,,
দুপুরের খাওয়াটা হলেও তখনও নাওয়াটা হয়ে ওঠেনি। এমনি সময় দিনের অনেকখানি আগে সন্ধ্যে ঘনায়ে এল। প্রথমে ভেবেছিলাম,
"এই এমনি একটু ক্রন্দসীর মান-অভিমানের খেলা চলবে। এর থেকে একটু বেশি হলে হয়তো দু'এক ফোঁটা গড়িয়ে পড়বে তপ্ত পথের 'পরে।"
কিন্তু ক্রমশ এই নিছক মান-অভিমানের খেলা অনেকটা আকস্মিক ভাবে লঙ্কাকাণ্ডে পরিণত হলো। আশপাশের বাসার জানালার কবাট, ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড়ে, টিনের চালে আছড়ে পড়তে লাগলো। বেশি রাগ ঝাড়লো বাসার সামনের আম-কাঁঠালের ডালে। তারপর সে কী কান্না! একেবারে ঝুম ঝুম!
অনেকদিন এমন 'কান-ছেঁড়া' বৃষ্টিতে ভিজিনি। ক্যাম্পাসে থাকতে মনের এমন আবদার মেটানোর যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন সে সুযোগ বড়ই বাড়ন্ত। তাই আজ যখন এমন একটা সুযোগ পাওয়া গেল তার অপচয় করতে মন সায় দেয়নি। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।
...এক এক ফোঁটায় ভিজছে শরীর আর থেকে থেকে যেন কোথাও "পাড়ার দুষ্ট ছেলের দলে ফুটবলে নিয়ে এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে মেতেছে"-- তারই 'হই হই' শব্দ ভেসে আসছে। হঠাৎ কে যেন শাসনের সুরে বললে,
--"এই বৃষ্টির মধ্যি আবার যদি নামিছিস... আজ তোর পিঠের চামড়া আমি তোলবো!"
শব্দের সূত্রানুসারে চেয়ে দেখি, বছর ছাব্বিশের এক গেরস্ত বৌ কড়াই হাতে হনহন করে রান্না ঘরের দিকে গেল। সুসষমা মণ্ডিত মুখখানি রেগে না থাকলে যে মিষ্টি দেখতে লাগে তা মুহূর্তের চাহনিতেই বুঝতে পারলুম।
পিছু পিছু গেলাম তার চুলা অবধি। কাঠের চুলার কালিতে কালো হয়ে থাকা কড়াইতে খুব সম্ভব কচুর পাতা রান্না করা। ভালো করে দেখার জন্য উঁকি দিয়েছি, ওমনি কানে এল অল্প বয়েসী মেয়ের চিৎকার।
--"মা...! ওই তোমার ছাগল দ্যাখো বিস্টিতে নেমিছে!"
এখান থেকে বারান্দার সিঁড়ি দেখা যায় না। পিছে ফিরে এসে দেখি, হাফপ্যান্ট-ফ্রগ পরা মেয়ে পতুল খেলছে। দৃষ্টি ওর অন্যদিকে। সে অনুসারে তাকিয়ে দেখি, বছর পাঁচ/ছয়ের একটা ছোড়া বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে নিমেষেই উধাও হয়ে গেল আশপাশের ঘরগুলোর আড়ালে!
ছাগল কোথা থেকে বের হল, তাই খেয়ালে খুঁজছিলাম।
--"আজ ফিরুক্...! সবকটা প্যান ভিজে। কী পুরি থাকে তাই দেখপো।" চুলার পাশ থেকে শব্দ এল।
দাঁড়াও দাঁড়াও...ছেলেটা যদি ছাগল ধরতে যায় তাহলে বৌটি রাগলে কেন? আর প্যান্ট ভিজে...!
তখনই মাথায় এল, "ছাগল বলতে ছেলেটিকেই সম্মোধন করা হয়েছে। কথায় বুঝলাম এই মেয়েটি হল তার বোন। দু'জনের মধ্যে সদ্ভাবের যে বড্ড অভাব তা তার সম্মোধনেই বুঝা গেল।"
হঠাৎ তীব্র আলোয় আলোকিত হলো চারপাশ, সাথে প্রচণ্ড শব্দ। খুব কাছে কোথাও বাজ্ পড়লো মনে হয়। তড়িঘড়ি করি ব্যালকনি থেকে পিছিয়ে এলাম। আনমনে ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর স্মৃতি ঘেটে সেই সে বাদল দিনের সন্ধ্যেটা আবার মনে করার চেষ্টা করলাম।
ছেলেটি বারান্দার খুঁটি ধরে কাঁদছে। পরনে সেই ভেজা প্যান্ট নেই। সে সব পাল্টে শুকনো পোশাক পরেছে। বাবা ফিরেছে বাজার থেকে। তখন প্রায় সন্ধ্যে রাত হয়ে গেছে।
শুধু "কী হয়েছে?" জিজ্ঞেস করে ঘরের ভেতরে গেলেন।
মেয়েটি বই নিয়ে বসেছে এরও ঘণ্টা খানেক আগে। সে কিছুই বলল না।
এই "কী হয়েছে" বলাতেই যেন ছেলেটির চোখের জলে নতুন করে পূর্ণিমায় গাঙের জোয়ারের মতো জোয়ার লেগেছে।
"নুরু..! এদিক আয়! দেখি কী হয়েছে...।"
গলা চড়িয়ে নরম করে কর্তা ঘর থেকে ডাকলেন। এ তরফ থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই। "এই! আমার আব্বারে কে মেরেছে রে?" জিজ্ঞাসু সুরে বললেন। তবে তার গলার স্বরে মনে হল, "তিনি ব্যাপারটি যেন জানেন। নয়তো এমন ঘটনার সাথে তিনি অভ্যস্ত।"
এবার একটু ফোঁফানির শব্দ এল বারান্দা থেকে।
--"আমিই মারছি।" বৌটি কড়াই নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললে।
--"কেন?"
বেশ উষ্মা নিয়ে ব্যাখ্যার মতো করে--
--"সারাটা বেলা বিষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরছে। গা-গোসল করায়ে রেখে আমি গেছি হাঁড়ি-কড়াই ধুঁতে। এরি মধ্যি দু'টো লাগাইছে!"
খানিকক্ষণ থেমে বলল, "দিছি গোড়া দুই! সব সময়ে মেয়েটাকে মারবে। সব সময়...।"
--"আয়, আমার সাথে আয়।" অবস্থা বেগতিক দেখে দাদী ছেলেটির হাত ধরে টানে। "হুহ্হ্হ্!" শব্দ করে হাতটা ছিনিয়ে নেয় সে।
পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে ফিসফিসিয়ে বলে, "পরে কিন্তু আরো মারবেনে।"
তারপর চড়া গলায় --"আর ওই ছুড়িডা! সব সময় আগে থেকে খুঁচায়্ ন্যায়। এক হাতে তালি বাজে!"
--"হুম্! তুমি তো শুধু এই দ্যাখো! আমি বসি খেলছিলাম, ও এসি আমার পুতুলে লাথি দেল্ ক্যাঁ?"--মেয়েটি তার নিরাপরাধ হওয়ার যুক্তি দেখায়।
--"তুই যে তখন আমায় ছাগল বললি!" কান্নার মধ্যেই এক্ষণে কথা বলে ছেলেটি। কাঁদতে কাঁদতেই আবার বলে, "যকন তকন খালি আমায় কুত্তা-ছাগল... এসব কবে!"
কর্তা কৃত্রিম গম্ভীর ভাব নিয়ে বললেন,
--"আচ্ছা, এদিক্ আয়। আমি দেখছি। আজ এর বিচার হবে।"
এর কিছুক্ষণ পরে তিনি নিজে গিয়ে যখন হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলেন। তখন তার আদরে কান্নার আরো জোর শব্দ শোনা গেল।
বৌটি বললে, "পড়া না শেষ কল্লে কিন্তু ভাত বন্ধ!"
উপায় নেই দেখে
কর্তার সামনে ছেলেটি তার স্কুলে পড়ানো পড়াগুলো পড়ে গেল হড়হড় করে। বই ছাড়াই। এক্ষণে বৌটির চোখ চিকচিক করে উঠল।
অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্নে।
একটা স্বপ্ন এভাবেই বেড়ে উঠতে লাগলো...
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: শুভ কামনা আপনার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: আর একটু গুছিয়ে লিখুন।