নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথ ও প্রাসাদ : আভিজাত্য, আদর্শ, আত্নমর্যাদা আর আদুরে এক ছেলের গল্প

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৮



সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায়, উৎপল দত্ত, অনুপ কুমারদের মতো মাস্টারক্লাস সব অভিনেতা থাকা সত্ত্বেও, আপনাকে মুগ্ধ করবে আট-নয় বছর বয়সী এক পুঁচকের অভিনয়। তাঁর কথা বলা, তাঁর সংলাপ, তাঁর অঙ্গভঙ্গী... সবকিছুই দুর্দান্ত। গল্পটাও এগিয়েছে সেই পুঁচকেকে ঘিরেই।

পিচ্চির দাদু বিশাল জমিদার, রায় বাহাদুর আদিত্য শেখর(উৎপল দত্ত)। তাঁর ছেলে, মানে পিচ্চির বাবা হিমাদ্রী শেখর। আর আমাদের দুর্দান্ত শিশু অভিনেতা হলেন নীলাদ্রী শেখর। আদিত্য শেখরের ধন-সম্পদ, অর্থ-বিত্তের পরিমাণ, মোটামুটি অপরিমেয় অবস্থায়। কিন্তু তাঁর ছেলে হিমাদ্রী, বিয়ে করে ফেলেন পিতাকে না জানিয়েই। ফলে ছেলের সাথে সম্পর্ক তো চুকিয়েছেনই, বৌমা আর নাতির মুখও দেখেননি তিনি। হিমাদ্রী শেখর তাঁর ছোট ছেলে, মারা গেছেন তিনি। তাঁর বড় ছেলেও মারা গেলে, শেষ বয়সে বৃদ্ধ বড় নিঃসঙ্গ অবস্থায় পড়ে যান। তাই তিনি তাঁর একমাত্র উত্তরাধিকার নীলাদ্রি শেখরকে নিজের কাছে রেখে মানুষের মতো মানুষ করতে চান।
সেজন্য সব ঠিকঠাক করে, উকিল বাবুকে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) পাঠান, ছেলের বৌয়ের (সন্ধ্যা রায়) কাছে। যেন নাতিকে তিনি নিজের কাছে নিতে পারেন।
এভাবেই গল্পের শুরু। তারপর বৃদ্ধের আভিজাত্যে, বৌমার আদর্শ আর আত্নমর্যাদা নিয়ে এগোতে থাকে সিনেমার কাহিনী।
সন্ধ্যা রায় কি অসাধারণ অভিনয় যে করেছেন! সৌমিত্র, উৎপল দত্তদের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না, নিশ্চয়।

ছবির কয়েকটি সংলাপ এত্ত ভালো লেগেছে। উল্লেখ না করে পারছি না।
"এই হচ্ছে গরীব আর বড়লোকে তফাৎ। এক দল কম খেয়েই জম্ম কাবার করে দেবে। আর আরেক দল সেই কম খাওয়া মানুষদের রক্ত শুষে, ভূঁড়ি বাড়াবে। ঢাউস হবে। চিরকাল।" এটা ছিল অনুপ কুমারের সংলাপ। সংলাপ ডেলিভারী আর অভিনয় দক্ষতা। আহ, সে দেখার মতো জিনিস বটে!
"যাদের হাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে ওই সুন্দর গড় প্রাসাদ। আলোর নীচে অন্ধকারে তাঁরা যখন তিল তিল করে ভোগে, ধুঁকে, না খেতে পেয়ে মরে যায়। আর তাদের সে কান্না কারও কাছে পৌছায় না। তখন শুধু এ বংশ নয়, আমার স্বামী ও সন্তানের কথা ভেবে, তাদের পা ছুঁইয়ে প্রায়শ্চিত্ত করা আমি আমার পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করি। যাতে ওদের অভিশাপ একদিন আগুন হয়ে জ্বলে উঠে সবকিছু ছারখার করে না দেয়, শেষ করে না দেয় আমার স্বামীর প্রিয় মানুষটার সম্মান, যাকে উনি বাবা বলে ডাকতেন।" বোঝা-ই যাচ্ছে, এই সংলাপটি ছিল বৌমার চরিত্র রুপদানকারী, সন্ধ্যা রায়ের। শ্বশুর আদিত্য শেখরের সাথে বৌমার মুখোমুখি এই সংলাপটা, এই ছবির অন্যতম সেরা চিত্র বলে মনে হয় আমার। ড্রাইভারকে তাক করে দুজনের কথা চালাচালি, কন্ঠস্বরের উঠানামা... এককথায় অনবদ্য!

এতদূর পর্যন্ত আপনার মনে হতে পারে, আদর্শের বুলি কপচানো এক বিরক্তিকর মুভি। কিন্তু আদতে তা নয়। দারুণ সব রসাত্নক সংলাপও আছে।
"জামা কাপড়ে কি আছে? ও দিয়ে মানুষ চেনা যায় না। পাজী লোকদের পয়সা বেশী তো, তাই ওরা ভালো জামা কাপড় পড়ে।" এই সংলাপটি দিয়েছেন রায় বাহাদুর আদিত্য শেখরের নাতি, তাঁরই সম্মুখে।
এই পিচ্চির অভিনয় যে কি, না দেখলে বলা যাবে না। গুগলে অনেক খুঁজেও ছেলেটার বড় বেলার কিছু জানতে পারলাম না।
মায়ের সাথে তাঁর এক কথোপকথন আছে।
"আচ্ছা মালিক কি মামণি?"
-মালিক সবকিছুর মনিব আর কি। জিনিস সব তোর। বাড়ি ঘর তোর। টাকা পয়সা তোর।
-সে তো খুব দুষ্টু লোক।
-কে বললে?
-হরি দা। সবসময়ই তো বলে, মালিকদের খতম করতে হবে। মালিকদের খতম না করলে গরীবদের দুঃখ কিছুতেই ঘুচবে না।
এমনিতে পড়তে গিয়ে ভারী ঠেকতে পারে। কিন্তু বাচ্চাটার মুখে সংলাপগুলো দারুণ লাগে।

আর গানগুলো সব অসাধারণ। আপনার শোনা গান, কিন্তু এই ছবির প্রেক্ষাপটে এত মানিয়ে গেছে যে, দুর্দান্ত লাগে।
সব মিলিয়ে চমৎকার, উপভোগ্য একটা ছবি। কিছু ছবি আছে না, মনে হয় না দেখলে মিস। বলতে পারেন এ-ও অনেকটা তা-ই।
আইএমডিবি রেটিং ৮/১০। আমার কাছে দশের কাছাকাছিই মনে হয়েছে।

(আর হ্যাঁ, বরাবরের মতো বলছি, প্রচলিত মুভি রিভিউ নয় এটা। আমার ভালোলাগাটাই আপনাদের জানালাম শুধু।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.