নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশা ব্যবসা ও চাকরি। জ্ঞানভিত্তিক জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। নির্জনে ও নীরবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসি। বই পড়তে, ভ্রমণ করতে, একলা চলতে এবং জটিল চরিত্রের মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। –এম. জেড. ফারুক

এমজেডএফ

কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী

এমজেডএফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিচার: জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে ব্যক্তি, দেশ ও কপ সম্মেলন কী করতে পারে

২৪ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৮

সূত্র: https://www.noaa.gov/education/

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। আর এই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও ইন্টারনেটে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি নানা ধরণের গুঞ্জন এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যও দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ক্ষতির পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বন্ধ করতে হলে সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, সংগঠন, প্রতিষ্টান, সংস্থা, দেশকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।

জাতিসংঘের উদ্যেগে বিশ্বের ধনী-দরিদ্র সব দেশকে একসাথে নিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করছে COP। কপের শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে সে সম্পর্কেও আমাদের সম্যক ধারণা থাকা দরকার। তাছাড়া আমরা ব্যক্তিগতভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে কী অবদান রাখতে পারি সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কিছু বেসিক বিষয়ের সঠিক ধারণা দিয়ে লেখাটি শুরু করছি।

আবহাওয়ার (weather) মূল উপাদান ৬টি: তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বায়ু, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং মেঘাচ্ছন্নতা। আবহাওয়া হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট এলাকার বায়ুমণ্ডলের স্বল্প সময়ের অবস্থা। সব উপাদানের সমষ্টিগত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার স্বল্প সময়ের (১দিন - ১৫দিন) জন্য আবহাওয়াকে বর্ণনা করে থাকে। যেমন: ঢাকার কোনো একদিনের আবহাওয়া - তাপমাত্রা: দিনে 31°, রাতে 21°, আকাশ: আংশিক মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: 1%, আদ্রতা: 62%, বাতাস: 0 m/s।

সূত্র: Click This Link

জলবায়ু (climate) হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময়ের আবহাওয়া অর্থৎ বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, কুয়াশা, বরফ, শিলাবৃষ্টি অন্যান্য উপাদানের গড় অবস্থা। যেমন বাংলাদেশের জলবায়ু: বাংলাদেশ ক্রান্তীয় (Tropical) মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। এদেশের জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র এবং নাতিশীতোষ্ণ। বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) বলতে আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক বিভিন্ন কারণে কোনো দেশের জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে বোঝায়। বৈশ্বিক জলবায়ু বিশ্বের সব দেশের গড় জলবায়ু, সূর্য, পৃথিবী, সমুদ্র, বাতাস, পানি, তুষার, বনভূমি, মরুভূমি, শিল্প-কারখানা, এবং মানুষের কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত। বিশ্বের আভ্যন্তরীন কর্মকাণ্ড, বাহ্যিক প্রভাব এবং প্রাকৃতিক কারণে সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন (Global Climate Change) বলে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা (Global Warming) হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।

সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Climate_change

শিল্প বিপ্লবের (১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল) পর থেকে, বৈশ্বিক বার্ষিক তাপমাত্রা মোট ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা প্রায় ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি প্রতি 10 বছরে গড়ে 0.07 ডিগ্রি সেলসিয়াস (0.13 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। 1981 সাল থেকে বৃদ্ধির হার দ্বিগুণেরও বেশি।

গ্রিনহাউজ এপেক্ট (Greenhouse effect)

সূত্র: https://climatechange.lta.org

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিন হাউজ গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। সূর্য থেকে ভূ-পৃষ্ঠে আসা উচ্চ শক্তির আলোক রশ্মি বাযুমন্ডল ভেদ করে কয়েকটি প্রক্রিয়ায় ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায়। ভু-পৃষ্ঠ দ্বারা শোষিত আলোক রশ্মিও আবার বাযুমন্ডলে প্রতিফলিত হয়। প্রতিফলিত এই বিকিরণ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিন হাউজ গ্যাসসমূহ দ্বারা সৌর মন্ডলে ফেরত যেতে বাঁধা প্রাপ্ত হয় এবং খুব সামান্যই মহাশূণ্যে ফেরত যায়। অবশিষ্ট বিকিরণ সবই উক্ত গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়। শোষিত বিকিরণ তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

বর্তমান সময়ে মনুষ্যজনিত গ্রিনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। যেটি বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। গ্রীনহাউজ গ্যাসগুলি হলো প্রধানতঃ জলীয় বাষ্প , কার্বনডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন ওজোন (O3), ক্লোরোফ্লোরো কার্বন।

আইপিসিসি: ‘আইপিসিসি’ (Intergovernmental Panel on Climate Change) হলো জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তদেশীয় প্যানেল। এই প্যানেল জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত তথ্য ও গবেষণা যাচাই করে।

১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস: প্রাক্‌-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব এড়ানো যাবে বলে মত দেন বিজ্ঞানীরা।

যেসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়

সূত্র: https://climate.ec.europa.eu/

প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। যেমনঃ পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক-পরিবর্তন কিংবা সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ুর যে পরিবর্তন তা অস্বাভাবিক। মূলত মানবকূলই বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালানো শুরু করেছে এবং শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করেছে সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।

কালের প্রবাহে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে দীর্ঘ পরিক্রমায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেছে। ডাইনোসর যুগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাম্প্রতিক কালের তুষার যুগের গড় তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিগত দশ হাজার বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এক ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকেও কম পরিবর্তন হয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মানবজাতির ঠিকে থাকার অনুকূল ও আরামদায়ক। কিন্তু মানুষ পরিবেশের তোয়াক্কা না করে দ্রুতগতিতে সবক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে পৃথিবীর জলবায়ুর যে ক্ষতি করছে তাতে ভবিষ্যতে মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনে পরিণতি যা হতে পারে

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে মানুষের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তীব্র আকারে দেখা দিবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। বিপজ্জনক মাত্রায় কোনো কোনো অঞ্চল গরম হয়ে পড়বে। সমুদ্রের পানি বেড়ে প্লাবিত হবে বহু এলাকা। ফলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে সে সব জায়গা। অতিরিক্ত গরমের কারণে আগের তুলনায় বৃষ্টি কম হবে। আবার যখন হবে তখন খুব ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে প্রচুর মানুষের জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। বিশেষ করে গরীব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের উপর চাপ পড়বে।

সূত্র: Click This Link

পরিবেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে সাগর-মহাসাগরের পানির উচ্চতা। যার ফলে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। সাইবেরিয়ায় মাটিতে জমে থাকা বরফ গলে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস। যার ফলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ আরও বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যপ্রাণীর চিরচেনা আবহাওয়া বদলে যাওয়ায় অনেক প্রাণী তাদের অনুকূলের কোন নতুন জায়গায় চলে যাবে। কিন্তু এতো দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যে অনেক প্রজাতি খাপ খাওয়াতে না পেরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। যেমন, পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এছাড়া সাগরের পানি গরম হয়ে যাওয়ায় আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ যেসব নদীতে ঢুকে ডিম পাড়ে তা বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন। অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।

COP কী?

COP' শব্দটির পূর্ণরুপ 'Conference of the Parties'। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অগ্রগতি মূল্যায়ন করার জন্য UNFCCC-এর কাঠামোতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনগুলোকে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন বা COP বলা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো COP-এ প্রতিনিধিত্ব করে কনভেনশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে এবং এ ধরনের আইনি উপকরণ পর্যালোচনা করে। COP প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাসহ কনভেনশনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়। তাছাড়া কনভেনশনের গ্রহণকৃত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে। প্রতি বছর একবার কপের সম্মেলন হয়। প্রথম COP সন্মেলন জার্মানির বার্লিনে ১৯৯৫ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হয়। COP-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জাতিসংঘের স্বীকৃত পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে: আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম ইউরোপ এবং অন্যান্য। সন্মেলনের স্থান ও প্রধান নির্বাহী উল্লেখিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে চক্রাবৃত্তে নির্বাচন করা হয়।

কপ (COP) সম্মেলনের উদ্দেশ্য

কপ (COP) শীর্ষ সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) নির্গমন কমিয়ে ৪৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করা, কয়লার ব্যবহার কমানো, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনঃ হ্রাস করা এবং এসব উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।
সূত্র: https://www.washingtonpost.com/

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কপ (COP) প্রতিষ্ঠার অনেক আগে স্বাক্ষরিত মন্ট্রিয়ল চুক্তি বা মন্ট্রিয়ল প্রটোকল হচ্ছে ওজোন স্তর রক্ষা করার জন্যে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। ওজোন স্তরকে রক্ষা করার জন্যে ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সাক্ষরিত হয় মন্ট্রিল চুক্তি, এবং ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হয়। এ পর্যন্ত মন্ট্রিয়ল চুক্তি ৯ বার সংশোধন হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এটি সংশোধিত হয়।

১৯৯৫ সাল থেকে নিয়মিত কপ শীর্ষ সম্মেলন হয়ে আসছে। তবে বেশিরভাগ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক কার্যকলাপ ও কিছু নীতি নির্ধারন ছাড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয় নাই। উল্লেখযোগ্য নীতি নির্ধারন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালের কপ ৩ সম্মেলনে যা কিয়োটো প্রোটোকল এবং এরপর ২০১৫ সালের কপ ২১ সম্মেলনে যা প্যারিস প্রোটোকল নামে পরিচিত।

কপ (COP) শীর্ষ সম্মেলনের তালিকা:
1. 1995: COP 1, Berlin, Germany
2. 1996: COP 2, Geneva, Switzerland
3. 1997: COP 3, Kyoto, Japan
4. 1998: COP 4, Buenos Aires, Argentina
5. 1999: COP 5, Bonn, Germany
6. 2000: COP 6, The Hague, Netherlands
7. 2001: COP 6, Bonn, Germany
8. 2001: COP 7, Marrakech, Morocco
9. 2002: COP 8, New Delhi, India
10. 2003: COP 9, Milan, Italy
11. 2004: COP 10, Buenos Aires, Argentina
12. 2005: COP 11/CMP 1, Montreal, Canada
13. 2006: COP 12/CMP 2, Nairobi, Kenya
14. 2007: COP 13/CMP 3, Bali, Indonesia
15. 2008: COP 14/CMP 4, Poznań, Poland
16. 2009: COP 15/CMP 5, Copenhagen, Denmark
17. 2010: COP 16/CMP 6, Cancún, Mexico
18. 2011: COP 17/CMP 7, Durban, South Africa
19. 2012: COP 18/CMP 8, Doha, Qatar
20. 2013: COP 19/CMP 9, Warsaw, Poland
21. 2014: COP 20/CMP 10, Lima, Peru
22. 2015: COP 21/CMP 11, Paris, France
23. 2016: COP 22/CMP 12/CMA 1, Marrakech, Morocco
24. 2017: COP 23/CMP 13/CMA 1–2, Bonn, Germany
25. 2018: COP 24/CMP 14/CMA 1–3, Katowice, Poland
26. 2019: SB50, Bonn, Germany
27. 2019: COP 25/CMP 15/CMA 2, Madrid, Spain
28. 2021: COP 26/CMP 16/CMA 3, Glasgow, United Kingdom
29. 2022: COP 27/CMP 17/CMA 4, Sharm El Sheikh, Egypt
30. 2023: COP 28/CMP 18/CMA 5, Dubai, UAE

কিয়োটো প্রটোকল (1997: COP 3)

সুত্র: http://www.compoundchem.com

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাধ্যতামূলকভাবে হ্রাসকরণের আন্তর্জাতিক চুক্তি হচ্ছে কিয়োটো প্রটোকল। ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করার জন্য ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোতে অনুষ্ঠিত কপ-৩ সম্মেলনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পুরো নাম Kyoto Protocol to the United Nations Framework Convention on Climate Change। চুক্তি স্বাক্ষরের সাত বছর পর ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিল্প কল-কারখানাবিষয়ক কার্যক্রমে পরিবেশদূষণের জন্য মূলত দায়ী উন্নত দেশগুলো। ওই সম্মেলনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ ১৯২টি দেশের মধ্যে কানাডা, দক্ষিণ সুদান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত ১৯১টি দেশ উপস্থিত ছিল। কিয়োটো চুক্তির ভিত্তিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০১২ সালের মধ্যে ৫.২ শতাংশ কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত অনুযায়ী বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের ৫৫ শতাংশ উৎপাদনকারী দেশগুলোর স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজ নিজ দেশে উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চুক্তিভুক্ত দেশগুলো যে ছয়টি গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নেয় সেগুলো হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোফ্লোরোকার্বন, পারফ্লোরোকার্বন ও সালফার। চুক্তিমতে, যুক্তরাষ্ট্র ৭ শতাংশ, ইউরোপীয় দেশগুলো ৮ শতাংশ, জাপান ৬ শতাংশ, কানাডা ৬ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু বাস্তবে খুব বেশি ভূমিকা পালন করেনি। বরং সবচেয়ে বেশি গ্যাস নির্গমনকারী দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া কিয়োটো প্রটোকলের বিরোধিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট ডাব্লিউ বুশ ২০০১ সালে অর্থনৈতিক কারণ দেখিয়ে চুক্তি থেকে সরে আসে। যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার কারণে চীন ও ভারত চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিল। কিয়োটো প্রটোকলের অংশ হিসেবে অনেক উন্নত দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসকরণের জন্য নৈতিকভাবে দুটি পর্যায়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। প্রথম প্রতিশ্রুতির সময় ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রথম দায়বদ্ধতা সময়কালে ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশের নিঃসরণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশসহ অস্ট্রেলিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, লিচেনস্টাইন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, ইউক্রেনসহ ৩৭টি দেশ ২০১৩-২০২০ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রথম কিয়োটো চুক্তিতে জাপান, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দ্বিতীয় মেয়াদের চুক্তিতে তারা অংশগ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ কিয়োটো প্রটোকল চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০১ সালের ২২ অক্টোবর এবং কার্যকর হয় ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে বিগত ৫৪ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। আবার বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আবহাওয়া, পরিবেশে ও জলবায়ুর এই ভারসাম্যহীন আচরণের কারণ হিসেবে উন্নত দেশগুলোর কিয়োটো প্রটোকল চুক্তি ভঙ্গকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে এই চুক্তিকে পরিবর্ধিত করে পেশ করা হয়, যা দোহা সংশোধনী নামে পরিচিত। এই সংশোধনী অনুসারে শুধুমাত্র ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলিকে নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

প্যারিস প্রটোকল (COP 21, Paris, France)

সূত্র: https://assets.weforum.org/

জলবায়ুজনিত বিপর্যয় মোকাবেলায়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ২০১৫ সালে প্যারিস শহরে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে সমবেত হয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সর্বজনীন চুক্তিতে সম্মত হন, যা 'প্যারিস চুক্তি' নামে পরিচিত। এটি জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থাৎ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করা ও জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন, এবং জলবায়ুর বিপর্যয় মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদস্য দেশগুলিকে অর্থায়ন প্রদান ইত্যাদি চুক্তিবদ্ধ বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। প্যারিসে যে বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তিটি হয়েছে তা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্বর দেশগুলোকে একতাবদ্ধ করছে।

১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রটোকলে হাতে গোনা কয়েকটি দেশকে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রটোকল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাকীরাও লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীতে আসন্ন বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে প্যারিস চুক্তিকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।

চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ:
● বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম করা।
● গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
● প্রতি ৫ বছর অন্তর ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধে প্রত্যেকটি দেশের ভূমিকা পর্যালোচনা করা।
● জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে গরিব দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘জলবায়ু তহবিল’ দিয়ে সাহায্য করা।

প্যারিসের দর কষাকষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অর্থের যোগান। উন্নয়নশীল দেশগুলো দাবী তুলছে, জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার বাদ দিয়ে সরাসরি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে যেতে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ এই খাতে বছরে ১শ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে যাতে সন্তুষ্ট নয় অনেক দেশই। চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ২০২০ সালের পরেও বছরে ১শ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা।

কপ-২৬ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (COP 26 - Glasgow, United Kingdom)

সূত্র: https://www.spc.int

বহুল আলোচিত কপ-২৬ সম্মেলন হয়েছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিন। কপ-২৬ সম্মেলনে জাতিসংঘের প্রধান লক্ষ্য ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনা, যা অর্জন করতে হলে কার্বনের নির্গমন ৪৫% কমাতে হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমন আনতে হবে শূন্য শতাংশে। এ সম্মেলনে জাতিসংঘের দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু সংকটে সহায়তা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা অভিযোজন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যয় করতে পারে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাম্প্রতিক দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বৃদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসে ঠেকেছে। এতেই বিশ্বব্যাপী বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। আর জাতিসংঘ বলেছে, বর্তমানে যে হারে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে। তবে তা আবার ২০২৩ সাল পর্যন্ত পেছানো হয়েছে। জাতিসংঘের আইপিসিসি বলেছে, বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর কিছুই হবে না। এখন তাদের ক্ষতি মোকাবেলায় বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলার করে লাগবে। কপ-২৬ সম্মেলনে বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা হ্রাস করার পদ্ধতির ব্যাপারে ঐকমত্য না হওয়ায় শেষাবধি চীন ও ভারতের চাপে চুক্তিতে কয়লার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘ফেজ আউটে’র পরিবর্তে ‘ফেজ ডাউন’, কথাটি সংযোজন করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গ্লাসগো সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না কমলেও বৃদ্ধি রোধ হবে, যা বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণকর। কিন্তু চুক্তি হলেই যে তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই, যার জ্বলন্ত প্রমাণ প্যারিস চুক্তি।

কপ-২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (COP 27, Sharm El Sheikh, Egypt)

সূত্র: https://static.scientificamerican.com

এবছর ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর মিশরের শার্ম আল-শেখ নগরীতে অনুষ্ঠিত হলো ২৭তম জাতিসংঘ জলবাযু সম্মেলন (কপ – ২৭ বা কনফারেন্স অব পার্টিজ)।আসন্ন কপ-২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের লক্ষ্য হলো : ব্যাপক ভিত্তিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস, অভিযোজন বাড়ানো এবং ন্যায়ভিত্তিক পর্যাপ্ত অর্থ জোগানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কাজকে ত্বরান্বিত করা। অভীষ্ট লক্ষ্য হলো পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে গরিব দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে ব্যাপক দেনদরবরার চলছিল। শেষ মুহুর্তে সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে ঐতিহাসিক ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখায় শতকের পর শতক ক্ষতিপূরণ টানতে হতে পারে এই ভয় থেকেই ধনী দেশগুলো গত ৩০ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনায় বাধা দিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর হওয়া এই ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ চুক্তিতে ধনী দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে আর ক্ষতিগ্রস্তরাই বা কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে তার বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।

বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে কপ শীর্ষ সম্মেলনের ভূমিকা

বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন-সংস্থাসমূহের সন্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এক বা একাধিক দেশের উদ্যেগে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে গিয়ে পৃথিবীর জলবায়ুর যে ক্ষতি করেছে তার প্রায়চিত্ত এখন দরিদ্র দেশগুলোকেও দিতে হচ্ছে।

সূত্র: https://cdn.britannica.com/

বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপে অর্থ যোগান দেওয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। কপ শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপের দায়িত্ব ও ব্যয় ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে বন্টন করার সুযোগ পাবে। প্রতিটি রাষ্ট্রকে হীনস্বার্থের ওপরে উঠে বিশ্বের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের করণীয়

১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নদী বিধৌত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রাকৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং এসব প্রাণঘাতী দুর্যোগ ঝুঁকি আরও বাড়ছে। ইউনিসেফ মনে করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বড় ধরনের দুর্যোগে জীবনরক্ষা, উন্নয়ন, অংশগ্রহণ এবং শিশুর সুরক্ষা উন্নততর করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। উল্লেখযোগ্য তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার অনেক বিষয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দেশের সরকার ব্যাপক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচলনা করছে।

ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণ


বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণের পাশাপাশি পুনরায় বৃক্ষ রোপণ করতে পারে, যেটি পরিবেশকে কার্বনমুক্ত করার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করবে। ম্যানগ্রোভ ক্রমবর্ধমান জীববৈচিত্র্য, মাছের আবাসস্থল ও ইকোট্যুরিজম সুবিধাসহ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে।

আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করা এবং আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা
আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে যেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। অনেকে বর্তমান আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করে না, কারণ সেখানে তারা তাদের গবাদিপশু ও অন্যান্য মূল্যবান প্রাণিসম্পদ রাখার ব্যবস্থা করতে পারে না, তাই প্রস্তাবিত কাঠামো মানুষ এবং গবাদিপশু উভয়ের বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে।

নিচু জমির চারপাশে বাঁধ দেওয়া
নিচু জমির চারপাশে বাঁধ দেওয়া, যা বন্যা থেকে কৃষিজমি, বাড়িঘর ও অবকাঠামোকে রক্ষা করবে। তবে এর উপকারিতাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বন্যার ধরনের ওপর নির্ভর করে। বন্যার পানি যদি ৩ মিটারের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়, কিছু এলাকায় যা নিয়মিতভাবে ঘটে থাকে, তাহলে জমির বাঁধগুলোতে প্রায়ই ফাটল ধরে যায় এবং এটি কোনো উপকারেই আসে না।

পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার

কলকারখানায় কালো ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।

বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন বাড়াতে হবে

প্রশিক্ষণ ও সহায়তা
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের জন্য নানা প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।

বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।

যেসব উপায়ে আপনি বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে পারেন

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বিশ্ব সম্মেলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং সরকারের কিছু প্রকল্প দেখে সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে মনে করে আত্মসন্তুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনা করে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি কি ধরণের সাহায্য করতে পারেন? সত্যিকার অর্থে প্রত্যেকের একক প্রচেষ্টা বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বড় ধরণের পদক্ষেপ নিতে নাগরিক এবং ভোক্তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রতিদিনের জীবন থেকে ছয়টি ভূমিকার কথা তুলে ধরা হল, যেগুলো আপনি চাইলে আজ থেকেই পরিবর্তন করতে পারেন।

১. গণপরিবহন ব্যবহার করুন
ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে হাঁটা, সাইক্লিং বা গণপরিবহনের ব্যবহার কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার পাশাপাশি আপনাকে ফিট রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া দূরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাহন ব্যবহার করুন বা ট্রেন যাত্রাকে বেছে নিন। এছাড়া ব্যবসায়ী সফর বাতিল করে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করতে পারেন।

২. শক্তির অপচয় রোধ করুন
♦ ঘরকে ঠাণ্ডা করতে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার এর চাইতে বাড়িয়ে রাখুন। এবং ঘর গরম করতে হিটারের তাপমাত্রা কমিয়ে ব্যবহার করুন।
♦ পরের বার যখন আপনি কোন বৈদ্যুতিক সামগ্রী কিনবেন, তখন এটি নেবেন যে যন্ত্রটি শক্তি সঞ্চয়ে দক্ষ কিনা। (টিপস: যন্ত্রের গায়ে শক্তি সঞ্চয়ের তারকা চিহ্নযুক্ত লেবেল, ইকো ফ্রেন্ডলি অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি অথবা ইনভার্টার যুক্ত আছে কিনা দেখে নিন)।
♦ প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কিছু কাজের জন্য আপনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: পানি গরম করতে সৌরশক্তিতে চালিতে সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহার করতে পারেন।
♦ যেসব বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলো আনপ্লাগ করে সুইচ বন্ধ করে রাখুন।

৩. মাংস খাওয়া কমিয়ে নিরামিষভোজী হয়ে যান
মুরগি মাংস, ফল, শাকসবজি বা শস্যের উৎপাদনের চেয়ে লাল মাংসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটায়। কার্বন নির্গমন কমাতে আপনি তিনটি বিষয় মেনে চলেন:
♦ খাদ্যাভ্যাসে মাংসের পরিবর্তে সবজি এবং ফলের ওপর নির্ভরতা বাড়ান। যদি এটি খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, তাহলে সপ্তাহের অন্তত একদিন মাংস না খেয়ে কাটান।
♦ দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া কমিয়েও আপনি পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন। কেননা এসব খাদ্যের উৎপাদন ও পরিবহণে প্রচুর পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়।
♦ আমদানি করা খাবারের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মৌসুমি খাদ্য বেছে নিন। এবং খাবারের অপচয় এড়িয়ে চলুন।

৪. প্রতিটি জিনিস পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা করুন
কিন্তু কোন বস্তুকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করতে যে উপকরণ লাগে সেটার পরিবহন এবং প্রক্রিয়াকরণে প্রচুর পরিমাণে কার্বনের ব্যবহার হয়। তারপরও এটি নতুন পণ্য তৈরির চেয়ে কম শক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু পণ্যগুলো পুনঃব্যবহারের ফলে আরও নানা ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেতে পারে। পানির ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।

৫. গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচান
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। গাছে গাছে, ফুলে-ফলে ভরে উঠুক আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা। স্কুল প্রতিষ্ঠানে, বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখুন।

৬. নিজে জানুন এবং অন্যদের এসব বিষয়ে জানান
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সবদিকে ছড়িয়ে দিন এবং সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলুন। পরিবেশবান্ধব নতুন নতুন খাদ্য, বস্তু ও যন্তরপাতি উড্ভাধন হচ্ছে। এগুলো সম্পর্কে নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। একটি টেকসই কমিউনিটি জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করুন। একটি অংশীদার-ভিত্তিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। যেন বিভিন্ন সম্পদ ভাগ করে ব্যবহার করা যায়। যেমন: গাড়ি, ঘাস কাটার যন্ত্র বা বাগানের সরঞ্জামাদি।

ফিচার বিভাগ: বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন

তথ্য সূত্র:
United Nations - Causes and Effects of Climate Change
বিবিসি বাংলা
জলবায়ু পরিবর্তন - ইউনিসেফ
উইকিপিডিয়া, সময় নিউজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলো

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০১

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক খাটাখাটনি করে লিখেছেন সেটা পরিস্কার। ভালো লিখেছেন। জলবায়ু নিয়ে ভাবার এখনই সময়। দেরী হলেম শেষে কাঁদতে হবে।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:৩৯

এমজেডএফ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। দেরি হলে বিশ্বের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। "নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায়না।"

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৩

শেরজা তপন বলেছেন: অতীব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপুর্ণ একটা নিবন্ধ!
অনেক কষ্ট করেছেন তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে সন্নিবেশিত করতে! পোস্টে প্লাস

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:৪৫

এমজেডএফ বলেছেন: ধন্যবাদ তপন ভাই, বৈশ্বিক উষ্ণতার ব্যাপারে প্রতিটি মানুষের সঠিক ধারণা থাকা উচিত। তাই এ ব্যাপারে যত বেশি আলোচনা মানুষও তত বেশি সচেতন হবে।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



বাংলাদেশও কি পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেছে তার সঠিক তথ্য আমাদের জানা নেই, সমস্যা হচ্ছে আমরা অকারণ অযথা দেশ দেশ করি কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশ নিয়ে কোনো প্রকার ভাবনা চিন্তা নেই, যদি দেশ নিয়ে সত্যি সত্যি ভাবনা চিন্তা থাকতো তাহলে দেশে এতো এতো পরিবেশ দূষণ হতে পারে না।

আমাদের পরিবেশ এতোটাই দূষণ হয়েছে যে এ বছর বলতে গেলে বৃষ্টি হয়নি এর জন্য দায়ী আমাদের দেশের মানুষ, ভীন দেশের বা ভীন গ্রহের কেউ নয়।

বাংলাদেশে প্রতিটি জেলাতে যদি গড়ে ৩০টি করে ইটের ফ্যাক্টরি ধরি তাহলে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ গাজীপুর বাদে ই দেশে ২,০০০ এর উপর ইটের ফ্যাক্টরি আছে, তারপর আছে শত সহস্র রি রোলিং মিল, ঢেউটিন কারখানা, শত সহস্র প্লাস্টিক রবার কারখানা, শত সহস্র কেমিক্যাল কারখানা, সার কারখানা, শত সহস্র ফিশ ফিড পোল্ট্রি ফিড কারখানা।

আদতে আমাদের দেশ ছোট ও মাঝারি কারখানার দেশে রূপান্তর হয়েছে - যা আগামী দিনের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়ঙ্কর খারাপ হতে পারে।

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান তথ্য পোস্ট দিয়েছেন, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মোগল সম্রাট এর পোস্টে করা আমার মন্তব্য কপি আপনার পোস্টে ও মন্তব্য করা হয়েছে, আমি ঢাকার বাইরে আছি, কীবোর্ড না থাকায় গুগল করে বাংলা লিখে মন্তব্য করতে হয়েছে।


২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৬:১৩

এমজেডএফ বলেছেন: ঠাকুরমাহমুদ ভাই, অনেক কষ্ট করে দীর্ঘ মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। পরিবেশ, কার্বন নিঃসরন, বৈশ্বিক উষ্ণতা -এগুলো নিয়ে আমাদের দেশে কেউ খুব একটা ভাবে না। সবার উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক - 'টাকা চাই, টাকা'। এতে পরিবেশ বিনষ্ট হোক বা দেশ ও বিশ্বের অস্তিত্ব বিপন্ন হোক তাতে কারো কিছু যায় আসে না। প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশে একই অবস্থা।

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এজন্য সব ধরনের মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
ভালো থাকুন।

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:১১

জোবাইর বলেছেন: জলবায়ু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞাগুলো একসাথে দিয়ে ভালো করেছেন। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বুঝতে হলে বেসিক ধারণা থাকা দরকার। সমস্যা হলো, কপ সম্মেলনে অনেক ভালো ভালো সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক ও সরকার পরিবর্তনের কারণে অনেক দেশ সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায়। সময়োপযোগী ফিচারের জন্য ধন্যবাদ।

২৪ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:১৬

এমজেডএফ বলেছেন: ধন্যবাদ।
ব্যক্তি, দল ও দেশের সাময়িক স্বার্থের পরিবর্তে সারা বিশ্বের অস্তিত্ব নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে।

৫| ২২ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

শায়মা বলেছেন: সত্যিই প্রথম হবার মতই একখানা লেখা ভাইয়া।

অনেক অনেক ভালোবাসা........

প্রিয়তে নিয়ে রাখছি। :)

২৪ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৩০

এমজেডএফ বলেছেন: প্রশংশনীয় মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। এই লেখাটি আমি লিখেছিলাম গ্লোবাল ওয়ার্মিং তথা ক্লাইমেট চেঞ্জ সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়ার জন্য। তাই ফিচারটি আকারেও অনেকটা বড় হয়েছে। প্রথম হওয়া দূরে থাক পুরস্কার পাওয়ার মতো কোনো অভিপ্রায় ছিল না। তাই আমি কিছুটা বিব্রত! ব্লগে চমৎকার ফিচার লেখার জন্য আপনাকেও অভিনন্দন।

৬| ২২ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চমৎকার তথ্য বহুল পোস্ট। গ্লোবাল ওয়ার্মিং তথা ক্লাইমেট চেঞ্জ এসময়ের হট কেক। মানুষের সৃষ্ট কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রাকৃতিক ভাবে অতীতে গ্লাসিয়াল ইন্টারগ্লাসিয়াল পিরিয়ড ছিল তখন মানুষ নামের কোন প্রাণী ছিল না। এখন আমরা হয় তো ইন্টার গ্লাসিয়াল পিরিয়ডের সবোর্চ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছতে যাচছি। সংগত কারণেই তাপমাত্রা বেড়ে গেলে জমাট বরফের একটা অংশ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দেবে। ফলে সমুদ্রতীরবর্তী সমভূমি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন বেড়ে গেছে বেড়ে গেছে বন্যা ভূমিধ্বস অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি খরা। মানব সভ্যতা তাই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে উন্নত বিশ্বের অবদান বেশি তাদের শিল্পায়ন বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড কার্বন মনোঅক্সাইড সিএফসি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর ভূক্তভোগি হচ্ছে ধনী দরিদ্র সবাই। তাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মানুষ সৃষ্ট তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কালপ্রিট উন্নত বিশ্ব।
সময়ের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট তথ্য সমৃদ্ধ সময়োপযোগী পোস্ট। আমাদের দেশে শিল্পায়নের নামে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন দেশের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে এদিকে সবার সচেতন হওয়া দরকার। সরকারের দরকার অন্যান্য জ্ঞানের সঙ্গে ভূতাত্ত্বিক প্রকৌশল ও ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ তবেই যদি রক্ষা মেলে। চমৎকার শেয়ারে অশেষ কৃতজ্ঞতা।

২৪ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯

এমজেডএফ বলেছেন: যুক্তিসঙ্গত তথ্য ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর চ্যালেঞ্জ নিয়ে চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকে আমরা যাদেরকে 'উন্নত বিশ্ব' বলি তারা শিল্প বিপ্লবের পর থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন হয়েছে তাই করেছে। মানুষ ও বিশ্বের পরিবেশ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যাথা ছিল না।

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর এখন পারমাণবিক চুল্লি আছে, তাই তারা এখন কয়লা ব্যবহার না করলেও চলবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পারমাণবিক চুল্লি নেই। সুতরাং কল-কারখানা চালু রাখতে হলে কয়লার ব্যাবহার করতেই হবে। অনেক দেশ তো বলেই দিয়েছে, "আমরা কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে আগে উন্নত বিশ্বের সমান হই, তারপরে পরিবেশ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে চিন্তা করবো।"

যাই-হোক, অনেক দেরি হয়ে গেছে - এখন সব তর্ক-বিতর্ক বাদ দিয়ে বিপন্ন পৃথিবীকে বাঁচাতে ব্যক্তি-সমাজ-দেশ সবাইকে পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ নিতেই হবে।

৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৪৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



খুবই তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্ট ।
প্রিয়তে তুলে রাখলাম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.