![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসুন, "ধর্মান্ধতা পরিহার করে ধর্মিষ্ঠ হই" "বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম" [আল-কোরআন-৯৬. সূরা আল-আলাক] ০১. পাঠ কর (এবং ঘোষনা / প্রচার কর) তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- ০২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। ০৩. পাঠ কর, আর (ঘোষনা / প্রচার কর) তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। ০৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন- ০৫, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।] পবিত্র কোরআনের ৯৬ নম্বর সূরা 'আলাক'-এর প্রথম এই পাঁচটি আয়াত অত্যন্ত মূল্যবান এবং যা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফেরেশতা জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে সর্বশেষ নবী রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত সর্বপ্রথম ওহি অর্থাৎ ঐশীবাণী। মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের নামে শিক্ষা লাভের জন্য পাঠ করা ( Study ) অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় থেকে জ্ঞানার্জন করা এবং জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে কলমের ব্যবহার অর্থাৎ 'লিখন' যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে তা সর্বজনবিদিত। মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে খাঁটি মানুষ রূপে গড়ে তোলার জন্য যে সর্বপ্রথমে এই ধরণের চমৎকার ও কার্যকর ঐশীবাণী প্রদান করে অনুপ্রাণিত করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পার্থিব জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের বিষয়ে জ্ঞান চর্চার তাগিদে সময় বের করে নিতে হয়েছে। যে জ্ঞানের কোন সীমা পরিসীমা নেই, যে জ্ঞানের কথা লিখতে বসলে মহাসাগরের এমনকি আকাশ ও পাতালের সকল জলরাশিকে কালি বানালেও তা ফুরিয়ে যাবে- তার জন্য এই সময়টুকু অতি নগন্য। তথাপি আমার এই ছোট্ট প্রয়াসের জন্য দয়াময় আল্লাহতায়ালা যে আমাকে সুযোগ ও তৌফিক দিয়েছেন সেজন্য আমি অবনত মস্তকে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কাছে প্রতি মূহুর্তে শুকরিয়া আদায় করছি। সত্যের স্বরূপ উদঘাটনে যতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি তার সবটুকুই আল-কোরআনের ঐশীবাণীসমূহের মর্ম সঠিকভাবে অনুধাবনের ফলেই সম্ভব হয়েছে। আর ব্যর্থতার জন্য একজন অতি সাধারন মানুষ হিসেবে আমার অযোগ্যতা ও অজ্ঞতাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। হে বিশ্ববিধাতা করুণাময় মহান আল্লাহ , সর্বপ্রকার অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য সর্বদা অবনত মস্তকে ক্ষমাভিক্ষা চাই। আর সরল ও সত্যের পথ যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি তার উছিলায় একজন হতভাগা পাপী বান্দা হিসেবে তোমার জ্যোতির্ময় আরশের ছায়াতলে চিরকালের জন্য একটুখানি ঠাঁই চাই। আশাকরি ছোটখাট ভুলত্রুটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। চিন্তাশীল সুধীজনদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করা হবে।
আল-কোরআন হলো লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ও মানুষের জন্য প্রেরিত মহান স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনবিধান এবং ইমান ও আকিদা সংক্রান্ত আয়াত অর্থাৎ নিদর্শন বা চিহ্নসমূহের বিস্তারিতভাবে বর্ণিত বা ব্যাখ্যাকৃত গ্রন্থ। এতে এমনও অনেক আয়াত অর্থাৎ নিদর্শন বা চিহ্ন রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা জ্ঞানী ও চিন্তাশীল সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে। ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনের সংকলক মহান স্রষ্টা নিজেই। মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও কিয়ামত এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মধ্যকার সকল গোপন বিষয়ের এবং মানুষের জন্য জানা জরুরী ও জীবন-ঘনিষ্ট খুঁটিনাটি বিষয়ের আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো পৃথক পৃথক পর্যায়ে নাযিল করা হয়েছিল। মহান আল্লাতায়ালার ইংগিত অনুসারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন সেই সুনির্ধারিত ছকেই পরবর্তীতে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীরা বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত কোরে এই ঐশী আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো সংকলিত করার কাজটি সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করেন। যা কিতাব আকারে ছাপানো অবস্থায় "পবিত্র কোরআন শরীফ" হিসেবে আমাদের কাছে বিরাজ করছে।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, পবিত্র কোরআনে কোন বিষয় সম্পর্কে কোন এক স্থানে সহজভাবে বক্তব্য উপস্থাপন কোরে প্রথমত পাঠককে আকৃষ্ট করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেই একই বিষয় সম্পর্কে ভিন্ন সময়ে ও ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ে নুতন নুতন তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এভাবে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পর্যায়ে বিবিধ বিষয় ভিত্তিক খুঁটিনাটি বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র কোরে ভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতির পেক্ষাপটে পর্যায়ক্রমে নব নব তথ্য প্রদান করা হয়েছে। পাঠকের জ্ঞানবৃদ্ধি সহ হক-না-হক পৃথক করার মত অকাট্য সত্য নির্দেশ দিয়ে সঠিকভাবে বোঝানোর মাধ্যমে মূল বক্তব্যকে ধীরে ধীরে অন্তরে ধারণ ও বিশ্বাসকে পোক্ত করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা সত্যিই অতুলনীয়। মহান স্রষ্টা (০৬:১১৪) নং আয়াতে আল-কোরআনের বর্ণনা রীতি সক্রান্ত এই পদ্ধতির কথা আমাদের সামনে অতি সংক্ষেপে ও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনের (০৬:১১৪) নং আয়াতের অনুবাদ করতে গিয়ে কেউ কেউ (مُفَصَّلاً الْكِتَابَ) "আল-কিতাবা মুফাচ্ছালান" এর অর্থ 'বিশদভাবে ব্যাখ্যাকৃত গ্রন্থ' হিসেবে করেছেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, যেহেতু "তাফসীলুন" শব্দের অর্থ 'বিস্তারিত বর্ণনা করা', তাই "আল-কিতাবা মুফাচ্ছালান" এর অর্থ এমনই হবে। এই অযুহাতে অনেকে আবার আল-কোরআনের আয়াতগুলো অর্থাৎ মৌল নিদর্শন বা তথ্য ও উপাত্তগুলো বিভিন্ন অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে বন্টন কোরে বর্ণনা করাকেই বিশদ ব্যাখ্যা হিসেবে ভেবে নিয়ে আর কোন ধরণের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার ব্যাপারে আপত্তি করেন। এমনকি কোন হাদিছকেই তারা গ্রহণ করতে চান না (এখানে দেখুন- 3.Fully Detailed Scripture-১)। এই যুক্তির পক্ষে তারা (৪৫:০৬) নং আয়াতটিও উল্লেখ করেন।
………………………………………………..
[আমরা জানি যে, "তাফসীরুন" শব্দটির অর্থ- খুলে খুলে বর্ণনা করা, তফসীর বা ব্যাখ্যা করা- ১৩৭ পৃষ্ঠা ("কোরআনরে অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)।
আর (تَأْوِيل)- "তা'উইলুন"- শব্দটির অর্থ- সঠিক অর্থ প্রকাশ করা, ব্যাখ্যা করা- (১০৫ পৃষ্ঠা-"কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ) এবং ব্যাখ্যা করা, তফসীর করা, বিকল্প মর্ম উদ্ধার করার চেষ্টা করা- ("আল-কাওসার"-আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স)।
(০৬:১১৪) নং আয়াতে "মুফাসসালুন" শব্দের অর্থ "বর্ণিত"- (৩৩০ পৃষ্ঠা- "কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)।
(১০:২৪) নং আয়াতে (نُفَصِّلُ)- "নুফাচ্ছিলূ" শব্দটির অর্থ- আমরা বর্ণনা করি, খুলে বলি - (৩৬১ পৃষ্ঠা- "কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)।
(১২:১১১) নং আয়াতে (تَفْصِيلَ)- "তাফসীলুন" শব্দের অর্থ- প্রকাশ করা, বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া, অধ্যায়ে বিভক্ত করা, বন্টন করা- ("আল-কাওসার"-আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স)
(১৩:০২) নং আয়াতে (يُفَصِّلُ)-"ইউফাচ্ছিলূ" শব্দটির অর্থ- বর্ণনা করা - (৪১৯ পৃষ্ঠা- "কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)।
"তাফসীলুন", "মুফাসসালুন", "নুফাচ্ছিলূ" এবং "ইউফাচ্ছিলূ" এর মূলশব্দ হলো (فَصَّل) "ফাসলুন" এবং এর অর্থ- "হক-না-হক পৃথক করার মত নির্দেশ, অকাট্য সত্য নির্দেশ, ফয়সালা করা, অধ্যায়ে বিভক্ত করা"- ("আল-কাওসার"-আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স)। আবার (فَصَّل) "ফাসলুন" শব্দের অর্থ- "আলাদা করা, স্বতন্ত্র"- (২৭১ পৃষ্ঠা-"কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)।
যেহেতু "তাফসীরুন" বা "তা'উইলুন" শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি, তাই উপরে উল্লেখিত এই সবগুলো অর্থকে সামনে রেখে (০৬:১১৪) নং আয়াতের অনুবাদের ক্ষেত্রে "আল-কিতাবা মুফাসসালান" এবং (১৬:৮৯) নং আয়াতের অনুবাদের ক্ষেত্রে "আল-কিতাবা তিবইয়ানান" এর অর্থ 'সমস্ত কিছুর বা সকল বিষয়ের বিশদভাবে ব্যাখ্যাকৃত গ্রন্থ' হিসেবে করলে বা ভাবলে তা সঠিক হবে না।
"মুফাসসালুন" শব্দের অর্থ "বর্ণিত"। তাই (০৬:১১৪) নং আয়াতে "আল কিতাবা মুফাসসালান" এর অর্থ- "বর্ণিত কিতাব"। এখানে কোন বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা বুঝতে হলে এর মূলশব্দ "ফাসলুন" এর অর্থ স্মরণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আল-কোরআনকে হক-না-হক পৃথক করার এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দের মাঝে ফয়সালা করার মত অকাট্য সত্য নির্দেশ সম্বলিত আলাদা আলাদা অধ্যায়ে বিভক্ত কোরে "বর্ণিত কিতাব" হিসেবেই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
"তাফসীলুন" শব্দের অর্থ- প্রকাশ করা, বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া, অধ্যায়ে বিভক্ত করা, বন্টন করা। তাই (১২:১১১) নং আয়াতে "তাফসীলা কুল্লা শাইইন" এর অনুবাদ করার সময় মূলশব্দ "ফাসলুন" এর অর্থের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সে অনুসারে এর অর্থ হয় "প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা" এবং এর মাধ্যমে প্রকৃতঅর্থে একজন মুসলিমের ইমান ও আকিদার সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি বিষয়ের মধ্যকার হক-না-হক পৃথক করার মত অকাট্য নির্দেশ ও নিদর্শনগুলো বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত বা বন্টন কোরে তা সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করা সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা দেয়াকেই বোঝানো হয়েছে। যেহেতু "তাফসীরুন" বা "তা'উইলুন"- শব্দটি এখানে ব্যবহৃত হয়নি, তাই উপরে উল্লেখিত এই সবগুলো অর্থকে সামনে রেখে (شَيْءٍ كُلَّ تَفْصِيلَ) "তাফসীলা কুল্লা শাইইন" এর অর্থ "সমস্ত কিছুর বা সকল বিষয়ের বিশদ ব্যাখ্যা অর্থাৎ তফসির" হিসেবে করলে তা যথাযথ হবে না।
(১৬:৮৯) নং আয়াতে 'তিবইয়ানুন' এর অর্থ- স্পষ্ট প্রমাণ প্রকাশ করা - ১০৯ পৃষ্ঠা এবং এর মূলশব্দ 'বায়ানুন' এর অর্থ- ব্যাখ্যা, বর্ণনা, সুস্পষ্ট বক্তব্য- ("আল-কাওসার"-আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স)। তাই (১৬:৮৯) নং আয়াতে (تِبْيَانًا الْكِتَابَ) - "আল-কিতাবা তিবইয়ানান" এর অর্থ "স্পষ্ট প্রমাণ প্রকাশকারী কিতাব বা সুস্পষ্ট বক্তব্য বর্ণনাকৃত/ব্যাখ্যাকৃত কিতাব" হিসেবে করলেই যথাযথ হবে। এই আয়াতের শেষ অংশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, এই কিতাব হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্যে সুসংবাদ-স্বরূপ। সুতরাং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য জানা জরুরী ও জীবন-ঘনিষ্ট খুঁটিনাটি বিষয়ের স্পষ্ট প্রমাণ ও বিস্তারিত বর্ণনা বা ব্যাখ্যা রয়েছে বিধায় আল-কোরআনকে এখানে "আল-কিতাবা তিবইয়ানান" অর্থাৎ "স্পষ্ট প্রমাণ প্রকাশকারী কিতাব বা সুস্পষ্ট বক্তব্য বর্ণনাকৃত/ব্যাখ্যাকৃত কিতাব" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।]
…………………………………………………..
সুতরাং উপরে উল্লেখিত সবগুলো অর্থ অনুসারে (০৬:১১৪, ১১৫), (১২:১১১), (১৬:৮৯), (১০:২৪) ও (১৩:০২) নং আয়াতের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-
সূরা আল- আনআম (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৬:১১৪) অর্থ- (বল) "তবে কি আমি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন শালিস বা বিচারক অনুসন্ধান করব? অথচ তিনিই তো তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন (হক-না-হক পৃথক করার এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দের মাঝে ফয়সালা করার মত অকাট্য সত্য নির্দেশ সম্বলিত আলাদা আলাদা অধ্যায়ে বিভক্ত কোরে) বর্ণিত এ কিতাবটি।" এবং আমি যাদেরকে কিতাব প্রদান করেছি, তারা অবশ্যই জানে যে, এটি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব, তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
(০৬:১১৫) অর্থ- এবং তোমাদের প্রতিপালকের প্রতিটি বাণী সত্য ও ন্যায় বিচারে পরিপূর্ণ; তাঁর বাণী সমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
সূরা ইউসূফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১২:১১১) অর্থ- বস্তুত তাদের কাহিনীতে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। এটা (কোরআন) কোন মনগড়া হাদিছ (কথা বা গল্প) নয়, কিন্তু এটি এর পূর্বেকার (কিতাবের) সমর্থন এবং এতে প্রত্যেক বিষয়ের (মধ্যকার হক-না-হক পৃথক করার মত অকাট্য সত্য নির্দেশ/ ফয়সালার) বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে/ প্রকাশ করা হয়েছে এবং এটি পথনির্দেশ ও রহমত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
সূরা নাহল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৬:৮৯) অর্থ- সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমরা একজন সাক্ষী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে তোমাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমরা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট প্রমাণ প্রকাশকারী কিতাব বা সুস্পষ্ট বক্তব্য বর্ণনাকৃত/ব্যাখ্যাকৃত এই কিতাবটি, যা হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্যে সুসংবাদ-স্বরূপ।
সূরা ইউনুস (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১০:২৪) অর্থ- পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে যমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি যমীন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠলো আর যমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে দিল যেন ইতিপূর্বে এখানে কোন আবাদই ছিল না। এমনিভাবে আমরা (الآيَاتِ نُفَصِّلُ) বর্ণনা করি বা খুলে বলি আয়াত অর্থাৎ নিদর্শণসমূহ চিন্তাশীল মানবগোষ্ঠীর জন্য।
সূরা রা’দ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৩:০২) অর্থ- আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা সেগুলো দেখছ। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন ও (يُفَصِّلُ الآيَاتِ) আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনসমূহ প্রকাশ/ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
সুতরাং (০৬১১৪), (০৬:১১৫)ও (১৬:৮৯) নং আয়াত অনুসারে বিশ্বাসীদের জন্য শালিস বা বিচারক হিসেবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহতায়ালা বিশ্বাসীদের জন্য যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে তাঁর পক্ষ থেকে বিশেষ খুঁটিনাটি তথ্য ও উপাত্তের সন্নিবেশ ঘটেছে এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দের মাঝে পার্থ্ক্যকারী এবং প্রত্যেক বিষয়ের শুদ্ধতা নির্ণায়ক সুস্পষ্ট ও ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই মৌল সিদ্ধান্তের কানরূপ পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর বিরোধী কোন মতবাদ মেনে নিয়ে সংশয়বাদীদের অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার জন্য বিশ্বাসীদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এবার নিচের আয়াতগুলোর প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-
সূরা আল ইমরান (মদীনায় অবতীর্ণ)
[(آيَاتٌ) - আইয়া'তুন- শব্দটির অর্থ- নিদর্শন সমূহ, চিহ্নগুলো - ১৫ পৃষ্ঠা এবং (مُّحْكَمَاتٌ) - "মুহকামাতুন"- শব্দটির অর্থ- পুংখানুপুংখ রূপে পরীক্ষিত, অর্থের দিক থেকে সন্দেহমুক্ত - ৩১০ পৃষ্ঠা- ("কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)
সুতরাং (مُّحْكَمَاتٌ آيَاتٌ) - "আইয়াতুম্মুহকামা'তুন"- এর অর্থ- যে আয়াত অর্থাৎ নিদর্শন সমূহ/ চিহ্নগুলো পুংখানুপুংখ রূপে পরীক্ষিত অর্থাৎ অর্থের দিক দিয়ে সন্দেহমুক্ত।
(مُتَشَابِهَ) - (মুতাশা'বিহুন) - একই রকম, কয়েক দিক থেকে মিলে যাওয়া- পৃষ্ঠা- ৩০৫- ("কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)
(مُتَشَابِهَاتٌ آيَاتٌ) - "আয়াতুম্মুতাশা'বিহাতুন"- এর অর্থ- যে আয়াতগুলোর কয়েক প্রকারের অর্থ হয়- ৩০৬ পৃষ্ঠা- ("কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ)
(تَأْوِيل) - "তা'উইলুন"- শব্দটির অর্থ- সঠিক অর্থ প্রকাশ করা, ব্যাখ্যা করা- (১০৫ পৃষ্ঠা-"কোরআনের অভিধান"- মুনির উদ্দীন আহমদ) এবং ব্যাখ্যা করা, তফসীর করা, বিকল্প মর্ম উদ্ধার করার চেষ্টা করা- ("আল-কাওসার"-আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স)।]
………………………………………
(০৩:০৭) অর্থ- তিনিই তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। এর মধ্যকার যে আয়াতগুলো {(مُّحْكَمَاتٌ آيَاتٌ) (আইয়াতু মুহকামা'তুন)} পুংখানুপুংখ রূপে পরীক্ষিত অর্থাৎ অর্থের দিক থেকে সন্দেহমুক্ত ও সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর {(مُتَشَابِهَاتٌ وَأُخَرُ) (ওয়াউখরু- মুতাশা'বিহাতুন)} অন্যগুলো একই রকম (অর্থাৎ যে আয়াতগুলোর কয়েক প্রকারের অর্থ হয় বা কয়েক দিক থেকে মিলে যায়)। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে তন্মধ্যে {(تَشَابَهَ مَا) (মা তাশা'বিহুন)} যা একই রকম অর্থাৎ কয়েক প্রকারের অর্থ হয়, ফিৎনা বিস্তারে এবং অপব্যাখ্যার অনুসন্ধানে; আর (تَأْوِيلَهُ يَعْلَمُ وَمَا ) (ওয়া মা’ ইয়ালামু তা’উইলাহু) কেউ জানে না এর সঠিক অর্থ/ ব্যাখ্যা/ বিকল্প মর্ম/ তফসীর আল্লাহ এবং সুপরিজ্ঞাত জ্ঞানবানরা ব্যতীত; তারা বলেন, "আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত।" আর সুবোধ প্রাপ্তরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।
সূরা আল ক্বেয়ামাহ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৭৫:১৬) অর্থ- তুমি (ওহী/কোরআন) আবৃত্তি করতে গিয়ে দ্রুত জিহ্বা সঞ্চালন করিও না।
(৭৫:১৭) অর্থ- এর একত্রিত করণ (সংকলন) ও পাঠ আমাদেরই দায়িত্ব।
(৭৫:১৮) অর্থ- অতঃপর যখন আমরা তা পাঠ করি, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর।
[ (بَيَانَ) - "বায়ানুন" - ব্যাখ্যা, বর্ণনা, সুস্পষ্ট বক্তব্য- ("আল-কাওসার"-আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স)]
(৭৫:১৯) অর্থ- তারপর এর ব্যাখ্যা/ বর্ণনা/ সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত সকল তথ্য ও উপাত্তই যে সঠিক ও সত্য তাতে কোনই সন্দেহ নেই। প্রতিটি মুসলিমের জন্য ধীরেসুস্থে মনোযোগের সাথে নিয়মিত ও ধীরেসুস্থে শুদ্ধভাবে আল-কোরআন পাঠ করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহ (আইয়াতুম্মুহকামা'তুন) সহজবোধ্য ও সুস্পষ্ট আয়তগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং জীবনবিধান হিসেবে এগুলোই কিতাবের মূল অংশ। এই আয়াতগুলোর বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে বিধায় মর্ম অনুধাবন করা সহজ এবং ইহকাল ও পরকালে শান্তি ও মুক্তির জন্য এগুলো সঠিকভাবে আমল করাই যথেষ্ট। তাই এই আয়াতগুলোর বক্তব্য সঠিকভাবে জানা ও সেই অনুসারে জীবন পরিচালনার জন্য চেষ্টা-সাধনা করা সকল মুসলিমের জন্যই আবশ্যক। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর আয়াতগুলো (আয়াতুম্মুতাশা'বিহাতুন) সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ যে আয়াতগুলোর কয়েক প্রকার অর্থ হতে পারে। তাই সময়ের প্রেক্ষাপটে সেগুলো এখনও বিশদভাবে ব্যাখ্যার দাবি রাখে। দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার সাথে ততটা সম্পৃক্ত না হলেও মহান স্রষ্টার মহত্ব অনুধাবনের জন্য এই আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করা জরুরী। তাই এ ব্যাপারে জ্ঞানী ও চিন্তাশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। এগুলোর মর্ম নিজে বোঝার সাথে সাথে তা সর্বসাধারণের সামনে প্রকাশ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বিজ্ঞান বিষয়ক এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলোকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জন সাপেক্ষে আমাদের বোধদয় ও কল্যাণের স্বার্থে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ কোরে মর্ম উদ্ধার করার প্রয়োজন রয়েছে। মহান আল্লাহ জ্ঞানী ও চিন্তাশীল সম্প্রদায়কে এই আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য বার বার তাগিদ দিয়েছেন। (০৩:০৭) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহতায়ালা এই আয়াতগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা জানেন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল ও সুপরিজ্ঞাত জ্ঞানবান ব্যক্তিরা চেষ্টা ও গবেষণা করলে এই আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলোর সঠিক অর্থ জানার ও প্রকাশ করার অর্থাৎ তফসীর বা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার যোগ্যাতা রাখেন। তাছাড়া (১২:১১১), (১৬:৮৯) ও (৭৫:১৯) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে যেহেতু মহান আল্লাহ তাঁর যোগ্য বান্দাদের দ্বারা পবিত্র কোরআনের বিশদ ব্যাখ্যা ও তা প্রকাশ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই অকাট্য প্রমাণ ও সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান সাপেক্ষে পবিত্র কোরআনের কোন আয়াতের যথাযথ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যার ব্যাপারে বিরোধ থাকা উচিত নয়, বরং এর সাথে সম্পৃক্ত যোগ্য ব্যক্তিদেরকে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে।
সূরা আল জাসিয়া (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪৫:০৬) অর্থ- এগুলো আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন, যা আমরা আবৃতি করে শুনাই তোমার কাছে সত্যতা সহকারে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াত বা নিদর্শনের পরে কোন্ হাদিছে (কথায় বা গল্পে) তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে?
(৪৫:০৬) নং আয়াতের মাধমে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে হাদিছ কিংবা কোন আয়াতের ব্যাখ্যার সঠিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয়ের শিক্ষা দিয়েছেন। আর এই শর্ত অনুসারে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন হাদিছ বা আয়াতের ব্যাখ্যার মূল বক্তব্য আল-কোরআনে উল্লেখিত মৌল নির্দেশ ও নীতির সাথে বিন্দুমাত্র সাংঘর্ষিক না হয় কিংবা মূল ভাবকে উপেক্ষা কোরে ভিত্তিহীন তথ্য, বক্তব্য বা মুখরোচক কাহিনী সাজিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা না হয়। যদি আল-কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, সেই হাদিছ বা আয়াতের ব্যাখ্যা সঠিক নয়। সেক্ষেত্রে সেই হাদিছের সূত্র যেমনই হোক না কেন এবং উক্ত তফসিরবিদ যত বড় নামকরা ব্যক্তিত্বই হোক না কেন, হাদিছের সেই বক্তব্য বা সাংঘর্ষিক ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করার তো প্রশ্নই আসে না, বরং অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ (০৩:০৭) নং আয়াতে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, কুটিল স্বভাবের মানুষেরা কিতাবের মূল অংশকে বাদ দিয়ে যে আয়াতগুলো সাদৃশ্যপূর্ণ ও বিভিন্ন প্রকার অর্থ প্রকাশ করে, শুধুমাত্র সেগুলোকে পুঁজি কোরে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে থাকে। তাই তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
২৩ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১৫
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ওয়ালাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
same to you & EID mubarak
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪
মুদ্দাকির বলেছেন: আসসালামুয়ালাইকুম, রমজান মুবারাক