![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক,
কংক্রিটের রাস্তা হলেও এবড়োথেবড়ো নয়।রাস্তার পাশ দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে।সামনে একটা সাঁকোর উপর দিয়ে নীল-সাদা স্কুল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
আইল ধরে একটা ছেলে হেঁটে হেঁটে দৌড়াচ্ছে। মিনিট দুয়েক পর যখন স্কুলের মেয়েটি সাঁকো পেরিয়ে মাটির রাস্তায় হাঁটছে ঠিক তখনি পিছন থেকে কারো পদধ্বনি শুনতে পেয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখলো, একটি ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে পিছনে ফিরতে দেখেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে এদিকওদিক উঁকিঝুঁকি মারছিলো।একরাশ আতংক এসে গিরে ধরলো মেয়েটিকে।মেয়েটির মুখটি নিমিষেই কালো হয়ে গেলো।হ্রদস্পন্দন হঠাৎ করেই মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলো।
.
ছেলেটিকে মেয়েটি অনেকবার দেখেছে সাঁকোটার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে।স্কুল ছুটির সময় ক'দিন ধরেই দেখছে ছেলেটা এই সাঁকোটার উপর দাঁড়িয়ে থাকে।কোনোদিন ছেলেটি একা বাইক নিয়ে, আবার কখনো বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু যখনই নীলা তার সামনে সাঁকোটাতে উঠতো ছেলেটা অতিব্যস্ত হয়ে পড়তো। নীলা বুঝতো ছেলেটি তাঁকে ফলো করে। কিন্তু সে সবসময় সাবধান থাকতো। সে প্রায়ই খবরের কাগজে পড়তো, "দু'বছর প্রেম অতঃপর কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরী খুন", "ধর্ষণ করে গলাকেটে হত্যাকরলো প্রেমিক" শিরোনামে ভয়ংকর সব নিউজ। কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে যখন টিভি দেখতে যেতো তখন এ ধরণের অনেক খবর সে দেখেছে।
কিন্তু আজ ছেলেটিকে সাঁকোটাতে না দেখে নীলা অবাক হয়ে গিয়েছিলো।নীলার
কিশোরী মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছিলো ছেলেটাকে দেখতে না পেয়ে। হঠাৎ মনে হলো আজ বৃহস্পতিবার তাই হয়তো ছেলেটি আসেনি।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, না কাউকে দেখা যাচ্ছে না। না থাকারই কথা।গ্রামে এই ভরদুপুরে সাধারণতঃ পথে কেউ থাকে না।
এসব ভাবতে ভাবতে নীলা যখন চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়াচ্ছিলো ঠিক তখনি ছেলেটি পিছন থেকে জোরে বলে উঠলো নীলা তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো একটু সময় হবে?ওর মুখে নিজের নাম শুনে নীলার মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো।হ্রদস্পন্দন হঠাৎ করেই মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলো।দেখলো ছেলেটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। নীলার সামনে আসতেই নীলা আতংকিত কন্ঠে আওয়াজ করে বলে উঠলো,
- আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন? আপনার মতিগতি আমার কাছে ভালো লাগে না, আমি ভাইয়াকে বলে দিবো। আপনি আমাকে ফলো করেন।
নীলার কথা শুনে ছেলেটি প্রথমে ভয়ে চুপসে গিয়েছিলো কিন্তু যখন "আপনি আমাকে ফলো করেন" কথাটি শুনলো তখন একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
- যাক বাবা, তাহলে তুমি বুঝতে পেরোছে যে আমি তোমাকে ফলো করি। আর করবোই নাই বা কেনো? যাকে ভালোবাসি তাকে ফলো করবো না তাহলে আর কাকে করবো তুমিই বলো..আর তোমার ভাইয়াকে বলে দিবা, আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করি। তুমি বলো আমি আজ পর্যন্ত কখনো তোমাকে কিছু বলেছি। আর তোমার ভাইয়া আমাকে কি করবে মারবে এই তো!!তাহলে বলে দিও মাইর খাওয়ার পরেও যদি তোমার ভালোবাসা পাই তাহলেও আমি খুশি। মানুষ ভালোবাসার জন্য কতোকিছু করে আর আমি মাইর খেতে পারবো না!!
নীলা ছেলেটির কথা শুনে হকচকিয়ে গেছে ও ভেবেছিলো ছেলেটি ওর কথা শুনে দৌড়ে পালাবে কই তা না উল্টো আরো বলে তার জন্য মাইর খেতেও রাজি!! নীলা যখন এগুলো ভাবছিলো তখন ছেলেটি আবার বলে উঠলো,
- তুমি বললা আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করি।তুমিই বলো আমি তোমাকে দেখে কখনও শিষ দিয়েছি? কখনোও তোমার পথে এসে দাঁড়িয়েছি? আর হ্যাঁ অনেকে মেয়েদের ইভটিজিং করে ওরা মেয়েদের দেখলে খারাপ মন্তব্য করে শিষ দেয়।পথ আটকে দাঁড়ায়। আমি কখনো এগুলো করেছি? আমাকে দেখতে মনে হয় তোমার আমি ইভটিজার??
নীলা ছেলেটির কথাগুলো শুনে ছেলেটিকে পরখ করে দেখছিলো না, ছেলেটিকে দেখতে ইভটিজার এর মতো লাগছে না।
দেখতে মোটামুটি খারাপ না ভালোই!!
নীলা এবার একটু সরে দাঁড়িয়ে বললো,
- আপনার নামটাই তো বললেন না?আর হ্যাঁ আপনি আমার সম্পর্কে কি কি জানেন শুনি??
ছেলেটি মুখে একটু মুচকি হেসে এনে বললো,
- আমার নাম রাকিব। তুমি ক্লাস টেনে পড়ো। আর সামনে মসজিদের পিছনে তোমাদের বাড়ি। আর হ্যাঁ তুমি আমাকে আপনি নয় তুমি করে বলবা।
- আপনি আমার বড়। আমি আপনাকে তুমি করে বলবো কেনো??
- ভালোবাসার মানুষের মুখে আপনি মানায় না। তুমি মানায় শুনতেও ভালোলাগে।
- বুঝলাম! আমি আপনার ভালোবাসার মানুষ এটা আবার কবে বললাম?আপনার নাম ছাড়া তো আর কিছুই বললেন না?
- বলতে হয় না এটা। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ? চলো সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলি...
- না আর সামনে আপনা...তোমার সাথে যাওয়া যাবে না। কেউ দেখে যাবে।
- না ওই সামনে মোড়ের তালগাছটা পর্যন্ত যাবো এর বেশি নয়...
- ঠিক আছে, চলো। আপনার না মানে তোমার সম্পর্কে তো আর কিছু বললা না...
- হুম চলো..আমি শহরে থাকি। চিটাগাং ভার্সিটি থেকে অনার্স করতেছি।পাশের গ্রামে আমার বাড়ি। কয়েক দিন আগে এদিকে এসেছিলাম কাজে। ফেরার পথে তোমাকে দেখি।তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না প্রথম দেখাতেই তো আমি পুরা ফিদা হয়ে যাই।প্রেমে পড়ে যায় তোমার।
এভাবে কয়েকদিন ধরে নীলা স্কুল ছুটির পর রাকিবের সাথে কথা বলতে বলতে তালগাছটি পর্যন্ত আসে।রাকিবের প্রেমে পড়ে যায় নীলা। খুব বেশি ভালোবেসে ফেলে রাকিবকে।
রুটিন অনুযায়ী সাঁকোটার উপর দাঁড়িয়েছে রাকিব নীলার জন্য। নীলা তাঁর বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে।সাঁকোটার কাছে এসে নীলা বান্ধবীদের বললো,
- আমি তাহলে যাই, তোরা যা...
বান্ধবীদের মাঝ থেকে একজন বলে উঠলো,
- চালিয়ে যাও নীলা.....
রাকিব আর নীলা দু'জন দু'জনের হাত ধরে গ্রামীণ পথ ধরে হাঁটছে। প্রথম যেদিন রাকিব নীলার হাত ধরতে চেয়েছিলো সেদিন নীলা অনুমতি দেয় নি, তবে দু'জনেই মানিয়ে নিয়েছে এখন। রাকিব বলে উঠলো,
- নীলা আমার শহরে চলে যেতে হবে কালকে।ভার্সিটিতে প্রায় একমাস যাই নি।
- কি বলো তুমি!!? আমি তোমার সাথে কিভাবে কথা বলবো রাকিব।তোমার সাথে কথা না বললে আমার দিন যানে কেমনে তুমি বলো।
- কে বলছে তোমার সাথে আমার কথা হবে না। এখন আদিম যুগ নয়।ধর, এটা আমার মোবাইল নাম্বার। তুমি সুযোগ বুঝে আমাকে কল দিয়ো।তোমার অপেক্ষায় থাকবো।
- তুমি কি এখনি চলে যাচ্ছো নাকি?!!
- পাশে তাকিয়ে দেখো, তালগাছ!! শেষ সীমানায় চলে এসেছি নীলা..
রাকিব আর নীলার প্রেম এখন মুঠোফোন এবং ম্যাসেজিং এর মধ্যে চলছে।সুযোগ ফেলেই বাবা-মা, বন্ধু বান্ধবের মোবাইল থেকে রাকিবের সাথে কথা বলে।
আজ প্রায় তিন বছর হলো নীলার সাথে রাকিবের দেখা হয় না। এইচ এস সি পরীক্ষা দিছে নীলা এবার। রাকিব বিদেশ চলে গেছে। এখন ফেসবুক আর মোবাইলে
তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়।
দুই,
.
.
ঝুঁনি বাঁতির আলোয় পুরোবাড়ীর সৌন্দর্য্য শতগুণ বেড়ে গিয়েছে। ছেলে মেয়েরা এদিক ওদিক লুকোচুরি খেলছে। আনন্দে পুরো বাড়ি মেতে উঠেছে। ছেলেদের মধ্যে একজন হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো,
- এই দেখ দেখ দুলার গাড়ি চলে আসছে। হে হে সবার আগে আমি দেখছি, আমি দেখছি।
দুলার গাড়ি আসছে, দুলার গাড়ি আসছে বলে চিৎকার করতে করতে বাড়ির দিকে দৌড় দিছে আরেকজন।
ডিমলাইটের আলো জ্বলছে রুমে। ঘোমটা পড়া একটা মেয়ে বসে আছে। হ্যাঁ, নীলা বসে আছে বৌয়ের সাজে। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে তার। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে নীলা। এক অচেনা অজানা মানুষের সাথে তাকে বিয়ে দিয়েছে তারা বাবা মা।
তিন,
.
.
নীলার জীবনে বিপদের ঘনঘটা বেজে উঠেছে।রাকিবের সাথে তার সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার পর তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিলো।নীলার ভাইয়া তাকে রাকিবের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলো। নীলা সব বলেছিলো। পরে একদিন তার ভাইয়া এসে তাকে বলেছিলো রাকিব একজন চিটার। সে মেয়েদের সাথে চীট করে তাদের ধ্বংস করে দেয়।নীলার বিশ্বাস হয়নি তার ভাইয়ার কথা নীলা ভেবেছিলো তার ভাইয়া সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয়ার জন্যে মিথ্যে বলছে। এরপরে নীলাকে গৃহবন্দি করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।কিছু বলতে পারেনি সে।সে শুধু জানতো এই ছেলে চট্রগ্রামে চাকরী করে আর চিটাগাং ভার্সিটি থেকে পড়া লেখা করেছে। ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিলো। কিন্তু ছেলে আসে নি।তাই ছেলের মুখটাও সে একবার দেখে নি।
চার,
.
.
দরজা খোলার শব্দে নীলার হুশ ফিরলো।দরজার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। এমা এতো বুড়ো নয়।বড়জোর তার থেকে চার পাঁচ বছরের বড় হবে। কিন্তু সে তো ভেবেছিলো কোনো এক বুড়োরাম এর সাথে তার বাবা মা তার বিয়ে ঠিক করেছে।ছেলেটি আস্তে আস্তে এসে নীলার পাশে বসলো। খুক খুক কয়েকবার কেঁশে বলে উঠলো সারাদিন অনেক ধকল গেছে আপনার উপর দিয়ে। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। বলেই ছেলেটি একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।
এহেন আচরণে খুশিও হলেও হতবাক নীলা।
কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো নীলার।
উঠতে না উঠতেই রাগে নিজের বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো।পাশে ফিরে দেখলো সাহেব এখনো ঘুমিয়ে আছেন।ফ্রেশ হয়ে একেবারে সোজা হনহন করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। ঘরের সবাই তো অবাক!
নতুন বৌ এভাবে ড্রয়িং রুমে!! পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,
- ভাবী, কিছু লাগবে নাকি??
- না!
- হঠাৎ এখানে!
- তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি!!?
অপমানে মেয়েটার মুখের অবস্থা তো এগারোটা। শাশুড়ি মায়ের হাত থেকে কাপ পড়ে যাওয়ার শব্দে সবার হুশ ফিরলো।
নীলার আচরণ দেখে সবাই তো বোবাই হয়ে গিয়েছিলো।নিজ পরিবারের উপর রাগ যা ছিলো এখানে আসিয়া তা ঝাড়িতেছে। হনহন করে আবার নিজের রুমে চলে গেলো নীলা।
- ও আফরানের মা কি দেখিলাম??
আরেকজন বলিলো,
-আইজকাইলকের মাইয়া বলে কথা। শাশুড়িরর মুখ তো রাগে অপমানে ফুঁলছে। উনার কথা শেষ না হতেই পিছন থেকে বলিলো,
- আফরিনার মা,ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার।
বৌভাতের দিন নীলা তার পরিবারকে ষোল আনায় ঝাড়িয়া দিলো।বলিলো এটা আমার বাড়ি, এখানে আজ আসিয়াছো মাফ করে দিলাম।আর কখনো যদি দেখি আমার থেকে ভালো মেয়ে আর কেউ হবে না মনে রাইখো!!আফরান মানে নীলার স্বামী সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকতো।পুরো গ্রামে তো কানাঘুষার শেষ নেই।
আজ ছয় মাস নীলা শ্বশুরবাড়িতে।কোনো দিন কিচেন রুম টা কেমন সেটা দেখতেও যায় নি নীলা।একবার আফরান বলার চেষ্টা করেছিলো সবার সাথে একটু বাড়ীতে মিলেমিশে থেকে কাজকর্মে....
বাকীটা শেষ করার সুযোগ দেয়নি আফরান কে একেবারে খাঁটি বাংলায় বলে দিয়েছিলো বিয়ে করার আগে আমাকে বলেছিলেন বাড়ীর বুয়া হয়ে থাকতে হবে!
ইচ্ছে করেছিলো কষে একটা চড় মারতে।কিন্তু পারেনি সে, হাজার হলেও বন্ধুর বোন যে। নীলার পরিবার আসা তো দূরের কথা কোনোদিন কলও দেয় নাই। যে ভাই একশো শর্ত দিয়ে বোন দিয়েছে বন্ধুর কাছে সে ভাই লজ্জায় কলটাও দিতে পারে নি
বন্ধুকে।আর শাশুড়ি মা তো আফরানের রুমে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।ভুলে দু'বার না তিনবার ননদ আফরিনা তার সামনে পড়ে গিয়েছিলো।
পাঁচ,
.
.
গড়ির কাঁটা এখন ছ'টায়।আটটায় রাকিব এসে পৌঁছাবে। আফরান সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে। এমন সময় নীলা বেরিয়ে যাচ্ছিলো একটু দাঁড়িয়ে ভাবলো শেষদিন এঘরে আজ!! অন্তত একটু ভালো ব্যবহার করা যাক। আফরানের দিকে তাকিয়ে বলিলো,
- আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।
আফরান পত্রিকা থেকে মুখ তুলে একবার তাকালো নীলার দিকে আবার পত্রিকায় চোখ দিয়ে বলিলো,
- টাকা লাগবে??
- না।যাচ্ছি....
সি এন জি তে উঠলো নীলা। আজ অনেক খুশি নীলার মন।আজ সে তার রাকিবকে ফিরে পাবে।আজ থেকে সে রাকিবের।ভাবতেই তার শরীর শিহরণ দিয়ে উঠিলো। রাকিবের হাতে হাত গ্রামীণ পথে হেঁটে যাওয়ার কথা ভাবিতেছে নীলা কি এক মুহূর্ত সেটা।হঠাৎ তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো আফরানের ছবি। প্রথম রাত্রিতে আফরানের বলা কথা নীলার কানে বাজিতেছে।হঠাৎ তার মনে হলো সেদিন এর কথা। নীলা মার্কেট থেকে এসেছিলো ঘরের সামনে কথা কাটাকাটির আওয়াজ তার কানে এখন বাজিতেছে।ঝগড়াটার মুলহোতাও তো ছিলো সে। আফরানকে দেয়া এক এক সময়ের কষ্ট তার চোখের সামনে ভেসে উঠিতেছে। তার করা অপমান, কথা আফরান শুধু শুনেই যেতো।
কখনো টু শব্দও করেনি।কিন্তু রাকিবের চেহারা তার চোখের সামনে আসতেই সে সব ভুলে গেলো।কষ্ট করে একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলো নীলা।
রাকিব আর নীলা রেষ্টুরেন্টে বসে আছে।
নীলাই বলে উঠলো,
- রাকিব, আমরা এখান থেকে কই যাবো?
- তুমি কি মনে করো আমি তোমার সাথে সংসার করতে তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
- মা---মানে???
- এই যে দেখো এগুলো.....
নীলা দেখলো ক্লাস পালিয়ে জামক্ষেতে দু'জনের বসে থাকা ছবি রাকিবের মোবাইলে।একটা একটা করে কয়টা দেখানোর পর রাকিব বলে উঠলো...
- চলো আমার সাথে। আমি মোটেল সৈকতে একটা রুম ভাড়া করেছি।
- রাকিব!!!তোমার মাথা খারাপ?? তুমি কি বলছো এসব?? ছিঃ ছিঃ তোমাকে আমি কখনো....এতো নীচ তুমি??
- তুমি যাবে কিনা বলো??এতো কথা শুনতে আসিনি আমি.. না হয় আমি ছবি গুলো এখন....
নীলা দু'হাতে সমস্ত শক্তি এনে একেবারে রাকিবের মুখ বরাবর লাগিয়ে দিলো...
রেস্টুরেন্টের সবাই নীলার দিকে অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে আছে...
নীলা ব্যাগটা নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।হেঁটে হেঁটে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে নীলা।ধমকা হাওয়া এসে চুল গেলো এলোমেলো করে দিচ্ছিলো তার।ফুটপাথ ধরে হাঁটছে নীলা।চোখের এককোণে কিছু পানি টলমল করছে। কোন মুখ সে যাবে আফরানের সামনে?? কতো কিছুই না সহ্য করেছে বেচারা তার জন্য।আর সে কি কিনা.....আর ভাবতে পারছে না নীলা।
সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা ট্রাক খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে।না বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই তার।ট্রাকটা ক্রমশ নিকটে আসছে। নীলা প্রস্তুত ঝাপিয়ে পড়বে সে। আত্নহত্যা মহাপাপ!!
নরক খোদাই করে লিখা রয়েছে তার। পঞ্চ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে গেলো নীলার।পুরো শরীর শিহরণ দিয়ে উঠলো তার। হঠাৎ আফরানের কথা মনে হলো তার। বেচারার কি হবে?? কিইবা আর হবে নতুন একটা বিয়ে করে নিবে তাছাড়া আর কি হবে।
না আফরান অন্য কারো জন্য নয় শুধু নীলার জন্যে। মনে হতেই তার মুখে এক রহস্যে জনক হাসি ফুটে উঠলো।আর আফরান কে কষ্ট দেয়া যাবেনা। ইচ্ছে করছে এখনি আফরানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।
ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে আফরান।রাত দশটা ছুঁই ছুঁই কিন্তু মেয়েটা এখনো আসে নি। কিছু হয়ে যায়নি তো ওর।আবার কল দিলো না বন্ধ!
কলিংবেল বাজছে।ও হ্যাঁ, ঠিকই তো বাজছে কলিংবেল।দৌড় দিলো আফরান একেবারে বাচ্ছা ছেলের মতো!!
নীলা দাঁড়িয়ে আছে।
- এসেছো যাক, আসো...
ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে। আফরান সোফায় শুয়ে শুয়ে গেইম খেলছে বাচ্চা স্বভাব এখনো রয়েই গেছে তার।তার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আফরিনার রুমে গেলো।পড়ছে ও...
মায়ের রুমে গেলো মা ও পড়ছে তবে বই নয় নামাজ।
সোজা কিচেন রুমে ডু মারলো। ড্রাইনিং টেবিলে খাওয়ার সব এনে বসলো।দু'বার খুক খুক করে কেঁশে ডাক দিলো,
- আফরিনা, ও আফরিনা খেতে আসো..খেয়ে ধেয়ে তারপরে বসিও।
- জ্বী মা, আসছি!!!!!!
হাসিটা কন্ট্রোল করে আবার হাঁক ছাড়িলো,
- আম্মা আসেন।নামাজ অনেক পড়ছেন এবার আসেন। আফরান তুমিও আসো ভাত রেডি!!
আফরানের মায়ের রুম থেকে,
- আসছি মা, বিতির টা পড়ে নিই একটু দাঁড়া।
আফরানের রুম থেকে,
- আরে মা, আসছি তো এতো জা জা কেনো করো আস্তে বললে হয় না..
আফরিনা রুম থেকে বেরিয়েছে।টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই তো তার চোখ ছানাবড়া!! ভাবী এখানো কেনো?? চোখটা কচলাতে দেখেই নীলা বলে উঠলো,
- হায়! হায়! ননদের চোখে আবার কি পড়লো!!দেখি দেখি এদিকে আসো দেখি!!
আফরান এসে তো লাফ দিয়ে উঠছে।এমা একি দেখছে সে, আফরিনার চোখে ফুঁক দিচ্ছে নীলা।আফরানকে দেখে,
- "কি হা করে কি দেখছো এসে বসো"
- আম্মা ওই দিকে নয় এদিকে এদিকে..টেবিল এদিকে!!
আফরান রুমে টিভি দেখছিলো।নীলা ঢুকে মাত্র হাত থেকে রিমোট টা নিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিলো। লাইট নিভিয়ে ডিম লাইট টা জ্বালাতেই আফরান উঠে দাঁড়ালো সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়লো। খেলাটা দেখতে আর পারলো না ফাইনাল খেলা আরও মাথাটা তিনশ ষাইট ডিগ্রি গরম হয়ে আছে।এমা ঠান্ডা হয়ে গেলো।কারণ দেখতে মাথায় হাত দিয়ে দেখলো পানি!!পানি কোত্থেকে এলো। ঘুরেই দেখলো পানির মগ নিয়ে নীলা দাঁড়িয়ে আছে।
- আপনি পানি মারলেন কেনো?
- আমি বলি তুমি, তুমি বলো আপনি মানেটা কি?
- মা- ---- মানে???
- মানে বুঝতে হবে না।আসুন খাটে আসুন এখানে কেনো??সোফায় মানুষ ঘুমায় নাকি??
- না আমি এখানেই বেটার ফিল করি..
- ও আচ্ছা তাই, ঠিক আছে তাহলে আরেকটু ওদিক চাপো...
- সোফায় দু'জন মন্দ নয়!!!!
ছয়,
.
.
রেলিং এর উপর বসে আছে একটা ছেলে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মোবাইল স্ক্রিন থেকে একটা একটা ছবি ডিলেট করছে সে।হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠছে সে, নীলা বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোকে । বড্ড বেশি, অনেক বেশি। এ আওয়াজ কেউ শুনেনা। মানুষ ঘুমিয়ে গেছে রাকিব ও হয়তো কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে যাবে। ভোরের পাখি কিচিরমিচির করে রাকিবকে ডাকবে তবে রাকিব ঘুমিয়ে থাকবে।সে আর উঠবেনা নীলাহীন সকালের সূর্য তার জন্য যে আসে নি.........
মাহমুদুল হাসান মিলহান
©somewhere in net ltd.