নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কি অবার বিস্ময়ে বেঁচে থাকি, অবৈধ স্থাপনার মতো উচ্ছেদ হয়ে যাবো কোনো একদিন।

Hasin mahtab

একজন নৈরাশ্যবাদী

Hasin mahtab › বিস্তারিত পোস্টঃ

"সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না"

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:১১

রহস্যময় চরিত্র সুবোধকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেয়ালে লেখালেখির পর সে ঠিক করলো এবার সত্যিই সে পালিয়ে যাবে।

তো সে প্রথমেই ভাবলো পালাতে গেলে কিছু কাজ করতে হবে। কাজের কথা ভাবতে ভাবতে চাঁদনী চকে গেলো ভালো ব্রান্ডের কিছু টি-শার্ট কিনতে। একটা আন্ডারওয়্যারের দাম শুনে তো পুরাই চু*না হয়ে গেলো। অতঃপর মনের দুঃখে গাউসিয়া হকার্স থেকে কিছু এক্সপোর্ট আর সেকেন্ড হ্যান্ড কিনলো, ভেবেছিলো দেশের গার্মেন্টস মার্কেট যেহেতু অনেক ভালো, তাই পোষাকের দাম কিছুটা কম হবে। গালি দিতে দিতে চিপা গলি থেকে বের হয়ে এলো। তারপর মুড ভালো করার জন্য বলাকা সিনেমায় ঢুকলো। সিনেমাটা ভাল লাগলো সুবোধের, ভালোই এগিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে সেখান থেকে মানিব্যাগ টা মারা গেলো।
পরদিন রাতে সেল্যুনে গেলো চুল দাঁড়ি কামিয়ে সভ্য হওয়ার জন্য। কিন্তু তাকে দেখে চিড়িয়াখানা কতৃপক্ষ বনমানুষ ভেবে, রঙচঙ করে খাচায় পুরে দিলো। উফ, সেই কয়দিন কি বিপত্তি! বাংলাদেশের মানুষ তার সাথে যেরকম বিহ্যভ করেছিলো তা অনেকদিন মনে রাখবে।

মনে হচ্ছিলো সে বাদে বাকীসবাই বনমানুষ। চিড়িয়াখানা কতৃপক্ষও যেসব অখাদ্য খেতে দিচ্ছিলো তা খেলে বনমানুষও সভ্য মানুষ হয়ে যেতে চাইবে, তবুও খাবারগুলো থেকে মুক্তি চায়। বমি করতে দেখে চিড়িয়াখানা কতৃপক্ষ ভাবলো সে নিশ্চই গর্ভবতী! এই খবর নিয়ে পুরো চিড়িয়াখানা তথা সমগ্র ঢাকায় তোলপাড়!
বহু কষ্টে খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় এসে অনেক খুঁজে ভোটার আইডি খুঁজে বের করলো। শালা নিজের চেহারা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলো, এরকম বিচ্ছিরি আর ঘোলা ছবি আগে কখনো দেখেনি সে। বাপের নামের বানানটাও ভুল! আইডি কার্ড মেকাররা কমদামী কিংবা ডেট এক্সপায়ার্ড গাঁঞ্জা খায় - সেটা বলতে অপেক্ষা রাখে না। খুব রাগ হচ্ছিলো সবার উপরে...প্রচুর প্রচুর রাগ, প্রচুর মানে অনেক প্রচুর, সেইসাথে নিজের ওপরেও!

পরদিন পাসপোর্টের জন্য গেলো পাসপোর্ট অফিসে, সেখানে একদিন ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো লাভ হলো না। দুইদিন পরের ঘটনা, এমবাসিতে ভিসা এপ্লাই করতে যেয়ে কি হয়রানি! দালালের খপ্পরে পড়ে হাজার খানেক টাকা খসে গেলো। থানায় গেলো মামলা করতে, দারোগা সাহেব চা খাওয়াতে বললেন কিন্তু আশেপাশে কোনো চায়ের দোকান ছিলো না! দারোগা সাহেব আবারো সিগারেট খাওয়াতে বললেন কিন্তু এবারো সিগারেটের দোকান পেলো না! ফিরে এসে দারোগা সাহেবকে একথা জানাতেই প্রচুর পেঁদানি খেতে হলো। সুবোধ পরে জানতে পারছিলো এই চা-সিগারেট মানে হাড়ক্যাশ। বেচারা সুবোধ কোনোমতে হাসপাতালে গেলো কিন্তু ইমার্জেন্সি তে কোনো ডাক্তারই ছিলো না! ঘন্টাখানিক পরে এক নার্স দুইটা প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলো।
সুবোধ এক হাত কাঁধে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে সুন্দরী মেয়ে দেখছে, আবার নীচে তাকাচ্ছে! হঠাৎ করে এক মোটরসাইকেল গুতা মারলো, সুবোধ স্বপ্নেও ভাবেনি ফুটপাত দিয়ে কেউ বাইক চালাবে! কি অকৃতজ্ঞ মাইরি, একবার দুঃখিত ও বললো না বাইক চালক বরং পিক আপ মুড়িয়ে চলে গেলো।

অন্য একদিন বিকালে সুবোধ নীলক্ষেতের কাচ্চি খেতে গেলো! ফেরার পথে মামা হালিমও খেয়েছিলো, আহ কি টেস্ট ছিলো আগে! সেদিন এইসব খাওয়ার পরের তিন দিন বাথরুমেই কাটিয়ে দিয়েছিলো। তবে কিসের রিঅ্যাকট তা জানতে যেয়ে বিপদে পড়তে চায়না সুবোধ। সুবোধের প্রতিবেশী পুঁচকেটা সারাদিন মোবাইল আর পিসি গুতায়, রাত হলে প্রেম করে, বিকাল হলে সেল্ফী তুলে আপলোড দেয়। লেখাপড়ায় অশ্বডিম্ব অবস্থা আর কি! একদিন শুনলো সে নাকি গোল্ডেন পাইছে, সারারাত ভেবেও কোনো দীশা পেলো না যে এই ছেলে কিভাবে প্লাস পায়!!
এতকিছু ভাবতে ভাবতে সুবোধের বোধশক্তি কমে যাওয়ার জোগাড়। দেহের শক্তিও শূণ্যের কোঠায়। এখন মাথা ঘুরে, চোখেও ঝাপ্সা দেখে! বুদ্ধি, দেহের সুগঠন আর আশ্ব ক্ষমতা অর্জনের জন্য কোলকাতা হারবাল ট্রাই করলো। হারাবালের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সুবোধ কে আর লজ্জা না দেই।

এরমধ্যে বেনাপোল দিয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু বিএসএফের গুলির ভয়ে আর এগোনোর সাহস পায়নি। মায়ানমার যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু বর্মিজ আর্মি দেখা মাত্র শ্যুট করে! মারাত্নক ভয় পেয়ে বর্ডার ক্রস করার কথা ঘুনাক্ষরেও আর মাথায় আনবে না ঠিক করলো। এদিকে সেন্ট মার্টিন দিয়েও মালয়েশিয়া চলে যাওয়া যায়, তবে তাতে রিক্স বেশি! আরো কিছু আইডিয়া ভাবলো কিন্তু কোনোটাই কাজে আসলো না। সুতরাং সুবোধের আর পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।

কয়েকদিন পরের কথা, সুবোধ যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই বাঁশ খাচ্ছে। বাঁশ মানে আইক্কা ওয়ালা বড় বড় বাঁশ! পরে মনে করলো আমজনতা বলেছিলো '...এখন সময় পক্ষে না'! তাই সময় পক্ষে আসার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে থাকলো। সপ্তা খানেক বাদে একটা মওকা পেয়েও গেলো, দেশে রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রবেশ করছে, ওদের দলে ঢুকতে পারলে লাভ হবে এই আশায় উখিয়া চলে গেলো। আশানুরূপ লাভ হলো, ফ্রি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, সকাল বিকাল হাল্কা ইয়াবা! মাঝে মাঝে পেপার পত্রিকায় উঠে, নিজের মধ্যে সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি ভাব আসে। অন্যরকম ফিলিংস তার মনে! ;-) সেদিন সংবাদে শুনলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের কিছু অংশ পুণর্বাসনের জন্য ভাবছে! সুবোধের বুকে আশা জমতে লাগলো, দেখা যাক কি হয়! আপাতত ইউরোপ যেতে না পারলেও দেশের মধ্যেই বাবার ব্যবসা করবে, প্রচুর লাভ এতে। তারপর টাকা পয়সা জমিয়ে পাড়ি দেবে স্বপ্নের দেশে!

তবে সুবোধ এখন পরিচয়ে রোহিঙ্গা! এই কয়দিনে যে শিক্ষাটা পেয়েছে তাতে বিবেক বা চেতনার কথা বলতে লজ্জা লাগে ওর। খারাপ সঙ্গে মিশে এখন ও ভালোই আছে, স্বাধীনতা কিংবা পক্ষের সময় নিয়ে ওর কোনো মাথা ব্যাথা নাই। সবকিছুই ওর পক্ষে কিংবা বিপক্ষে নতুবা কোনোটিই দরকার নাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.