![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন নৈরাশ্যবাদী
মাশরাফী, শুধু একটি নাম নয়। একটি গোটা জাতির আবেগ মাখা শব্দ। এই নামটি ১৭ কোটি মানুষকে কাঁদাতে পারে, হাসাতেও পারে। বোধ করি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যে সকল শ্রেণীর মানুষের সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছে, ম্যাশ কে ঘৃণা করে এমন মানুষ আছে শুনলে যে কেউই একটু নড়েচড়ে বসবে, অবাক হয়ে পুণঃরায় জিজ্ঞাস করবে, 'হেটার্স?' - হ্যা, এই ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক ছিলো, গতকাল পর্যন্ত সবকিছু এমনই ছিলো। কিন্তু আজ?
.
আমি নড়াইলবাসী, আমি নড়াইল -২ এর বাসিন্দা! আমি নিজে প্রমাণ, অনেকে যখন নড়াইল চেনে না তখন মাশরাফীর নাম বলে এলাকা চিনিয়েছি। আমরা মুসলিমরা দেবতা মানি না, কিন্তু মাশরাফী আমাদের কাছে মহামানব, দেবতুল্য। জেলার এমন কোনো গ্রাম পাওয়া যাবে না যে প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে মাশরাফী সেবা পৌঁছায় নি৷ মাশরাফী মানুষকে শুধুমাত্র রক্তে মাংসে গড়া মানুষ হিসেবে দেখে, বাকীসব তুচ্ছ! গ্রামে এসে খালি গায়ে লুঙ্গি পরে ১০০ টাকার বার্মিজ পরে বাসার সামনের চায়ের দোকান থেকে বাকীতে চা খেতে একমাত্র মাশরাফীই পারে, ছোটোবেলার মুচি বন্ধুটার সাথে মাটিতে বসে আড্ডা দিতে মাশরাফীই পারে, দামী গাড়ি থাকা সত্ত্বেও ডিসকোভার ১৩৫ চালিয়ে ঘুরে বেড়াতে মাশরাফীই পারে, গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় বন্ধুদের নিয়ে হাইস্পিডে বাইক চালায় ম্যাশ! ক্লাবের ক্ষুদে ক্রিকেটারদের সাথে মাঠে গোল হয়ে বসে জাতীয় দলের ভেতরের গল্প বলে অনুপ্রেরণা দিতে মাশরাফীই পারে, গল্পের শেষ হবে না! ঘটনাগুলো খুব পুরোনো নয়, আমি নিজে দেখেছি, প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুনেছি -আপনাদের মনে সত্যতা নিয়ে সন্দিহান না থাকাই শ্রেয়! এক সেকেন্ড আগের মূহুর্তও অতিত, সুতরাং এসব গল্পও অতিত, কিন্তু আজ? এখন? আগামী?
.
সোজাসাপ্টা কথা আমরা সিংহভাগ মানুষই চাই নি মাশরাফী রাজনীতিতে আসুক। এই মানুষগুলোর আনুমানিক শতকরার হিসাব ৭০% হতে পারে। আমরা কেন চাইনি ম্যাশ রাজনীতি তে আসুক? সবার একটাই কথা রাজনীতি নোংরা, রাজনীতি মাশরাফীর জন্য নয়। মাশরাফি আমাদের নড়াইলের, মাশরাফী বাংলাদেশের। মাশরাফীকে আমরা এভাবেই গ্রহণ করেছি, মাশরাফী কোনো দলের নিজস্ব হতে পারে না। ম্যাশকে একদল মানুষ ভালোবাসবে, আরেকদল মানুষ ঘৃণা করবে একথা নড়াইবাসী কেন পুরা বাংলাদেশের মানুষ ভাবে নি কখনো। গালি দিচ্ছে মাশরাফী কে, দেখতে চান? স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছি কিছু! নড়াইলের মানুষও এই দলে আছে। মাশরাফি পারতো ক্রিকেট জীবনের সুন্দর সমাপ্তি ঘটিয়ে ক্রিকেটের মাঝেই থেকে যেতে, কোচ হতে পারতো, টিম ম্যানেজার হতে পারতো কিংবা প্রেসিডেন্ট হতে পারতো! ম্যাশ পারতো নড়াইল থেকে আরো একটা জুনিয়র মাশরাফী বের করতে। আমরা এই স্বপ্নই দেখতাম, আমরা এমনটাই আশা করতাম। আজকের পর থেকে মাশরাফি হয়ে গেলো আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি, তার সমর্থকের ভেতরে ভাগ হয়ে যাবে, অন্যান্য দলের সমর্থকরা মাশরাফীকে প্রতিপক্ষ ভাববে, কমেন্ট বক্সে এখন ভালোবাসার চিঠির পরিবর্তে গালির ফুলঝুরি ছুটবে, বিপক্ষেরা মাশরাফীর বিরুদ্ধে মিছিল বের হবে, গুপ্ত পরিকল্পনা হবে -এই ভাবনা টা খুব কষ্টের!
.
ক্রিকেটের ২২ গজ রাজনীতি নয়, রাজনীতি ৫৬,০০০ বর্গ মাইল। আর রাজনীতিতে কোনো আবেগের জায়গা নাই। হয় লড়ো নয়তো সরে যাও। না সরলে সরিয়ে দিবো। প্রতিহিংসার আরেক নাম রাজনীতি বললে কি ভুল হবে?
.
আগেও বলেছি মাশরাফী একজন সমাজসেবক, নিজের টাকায় 'নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন' নামে সংগঠন চালায়। নিজে অনুদান যোগাড় করে, দেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করছে! অনেক বড় ফান্ডিং, টাকার অভাব ছিলো না আক্ষরিকভাবে। সমাজসেবক হিসেবে যথেষ্ট উন্নতি করেছে আর করে যাচ্ছিলো। স্থানীয় একদলের কথা, 'সে আরো বেশী উন্নতি করতে পারবে।' আরেকদল মানুষের কথা, 'উন্নতি করতে হলে এমপি হওয়া লাগবে কেন? সে যদি উন্নতি করতেই চায় তাহলে সহজেই শেখ হাসিনার কাছে যেকোনো অনুরোধ করতে পারে বা এমপি সাহেবের সাথে উন্নয়নের আলাপ আলোচনা করতে পারে।' - এক্স্যাক্টলি, এই কথাটা কিন্তু ফেলে দেয়ার মতো নয় কোনোভাবে।
.
আমাদের জেলাটা ছোটো, অনেক অবহেলিত। মাত্র ৯৯৫ বর্গ কিলোমিটার! পাশে যশোর আর সামনে গোপালগঞ্জ না থাকলে অজপাড়াগায়ের মতোই অবস্থা হতো একথা বলার অবকাশ রাখে না। পার্শ্ববর্তী দুই জেলার স্পর্শে নড়াইলও বেশ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। রেল লাইন হচ্ছে, এশিয়ার প্রথম ছয় লেনের সেতু হচ্ছে যেটার একপাশ নড়াইলে, চার লেনের মহাসড়ক হচ্ছে যেটা পদ্মাসেতু হয়ে দক্ষিনাঞ্চলের সাথে পুরো দেশের সংযোগ করবে এরপর ভারত চলে যাবে। এই উন্নতি টা কিন্তু কোনো এমপি বা মন্ত্রীর ক্ষমতায় হয়নি বরং সরকারের উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার ফসল বলা যেতে পারে। সি গ্রেডের একটি জেলার এমপি বাস্তবে কতটুকু করতে পারে? সংসদে কথা বলার সুযোগ পায় কতটুকু? কত টাকা বাৎসরিক বাজেট পায় নড়াইল জেলা? মাশরাফি এমপি হয়ে ৫ বছরে নড়াইলকে নিউ ইয়র্ক বানাইতে পারবে না।
.
আমি নিউজ ফিডে অনেক রকম কথা দেখতে পাচ্ছি। কেউ বলছে একজন সৎ লোকের রাজনীতি তে আসা উচিত, সে হবে রোল মডেল। দেশের রাজনীতিকে ৩৬০° ঘুরিয়ে সুদিন নিয়ে আসতে পারবে সে। আমি বলি কি দেখুন ভাই এক বালতি পানির ভেতর ১চামচ চিনি কখনোই পুরো পানিকে মিষ্টি করতে পারবে না৷ আমরা নিজে থেকে যতদিন না চেইঞ্জ হবো, ততদিন হাজার সৎ মানুষ আসলেও কিচ্ছু করতে পারবো না। ৩০০ জনের ভেতর ১ জন। অনেকে বলবে সংসদে ভালো মানুষের সংখ্যা এরচেয়ে বেশী, আচ্ছা ধরলাম ৩০০ জনের ১০০ জন ভালো মানুষ, তবুও কি সম্ভব বাংলাদেশের রাজনীতির সংগা পাল্টে দেয়া? কোন আশায় সেই স্বপ্ন দেখছেন? কল্পনা আর বাস্তবতা একসাথে চলতে পারে না, একটু ভেবে দেখুন!
.
মাশরাফি রাজনীতিতে নতুন। এটা ১১ জনের ক্রিকেট ম্যাচ নয়। রাজনীতির প্ল্যানিং আর ২০-৫০ বা ৫ দিনের প্ল্যানিং এক জিনিস নয়, টিকে থাকতে পারবে তো? রাজনীতির খেলা এমন যেন 'ভাই বুকে আসেন বলেই কোলাকুলি করা অবস্থায় পেছন দিয়ে ছুরি মেরে দেয়া!' না, মাশরাফীর সাথে এমন হবে না। আসলে আমাদের দেশের রাজনীতিও এতটা ভয়ংকর নয় কিন্তু কতটা ভয়ংকর হতে পারে তার উপমা দিলাম। যাই হোক, আদতে আমাদের এত জল্পনা কল্পনা কতটুকু সত্যি হবে বা মাশরাফীর নিজের চিন্তায় কি আছে তা কেউই জানি না। আশায় বাঁচে চাষা, আমরাও আশা নিয়েই থাকি যা হবে ভালো কিছুই হবে। সব মতবিরোধ শেষে আমরা চাই, আওয়ামীলীগ আর মাশরাফীর হাত ধরে হোক নড়াইলের ইতিহাস সেরা উন্নয়ন। মাশরাফী প্রমাণ করুক সব সমালোচনা মিথ্যা, মাশরাফী শুধু মাশরাফীই!
.
আক্ষরিকভাবে মাশরাফী ব্যক্তিগতভাবে যেটা ভালো মনে করেছে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের কারো কথাতেই কিছু আসবে যাবে না। কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে আমাদের পাগলা কে এখন আর পাগলা বলতে পারবো না, ম্যাশ বলতে পারবো না। একটু কেঁশে সম্মান আর ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে হবে মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মাশরাফী বিন মোর্ত্তুজা, নড়াইল -২।
.
শুভকামনা ছিলো, শুভকামনা রইলো আগামীতে।
©somewhere in net ltd.