![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
https://mamunrashid.com
কন্যা বললো, কাল্পনিক সংখ্যা কী, বাবা?
আমি বললাম, বাস্তব নয় যেসব সংখ্যা। তুমি এবার বলো, বাস্তব সংখ্যা কী?
— 1, 0, −7, 8.62, 4/5, √2-এর মতো সংখ্যা হচ্ছে বাস্তব সংখ্যা, কারণ এদের সাহায্যে আমরা বিভিন্ন বাস্তব জিনিসের পরিমাণ নির্দেশ করতে পরি।
— ব্যাখ্যা করো।
— উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলতে পারি, গোয়ালে 1টি গরু, পকেটে 0 টাকা (অর্থাৎ কোনো টাকা নেই), ব্যাংক হিসেবে নীট −7 টাকা (অর্থাৎ ব্যাংকের নিকট 7 টাকা দেনা), 8.62 মিটার চওড়া রাস্তা, একটি রুটির 5 ভাগের 4 ভাগ, 1 মিটার বাহুবিশিষ্ট বর্গক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ্য √2 মিটার ইত্যাদি।
— চমৎকার বর্ণনা করেছ।
— তাহলে কাল্পনিক সংখ্যা কি কাল্পনিক জিনিস নির্দেশ করার জন্য?
— দেখা যাক ব্যাপারটি। (+3)-এর বর্গ কত?
— (+3)^2 = (+3) × (+3) = +9
— (−3)-এর বর্গ কত?
— (−3)^2 = (−3) × (−3) = +9
— (০)-এর বর্গ কত?
— (০)^2 = (০) × (০) = ০
— তার মানে, বাস্তব সংখ্যার উপর গাণিতিক প্রক্রিয়ার নিয়মাবলি থেকে আমরা দেখি, যেকোনো বাস্তব সংখ্যাকে তার নিজের সঙ্গে গুণ করলে, অর্থাৎ সংখ্যাটিকে বর্গ করলে, ফলাফল কখনও ঋণাত্মক হয় না, তাই নয় কি?
— জ্বি।
— স্বাভাবিকভাবে এমন কোনো সংখ্যা পাওয়া যাবে কি যাকে বর্গ করলে ফলাফল ঋণাত্মক হতে পারে?
— না, এ অসম্ভব!
— মনে করো, আমার কাছে কিছু-সংখ্যক আম আছে যে সংখ্যাটিকে তার নিজের সঙ্গে গুণ করে 4 যোগ করলে ফলাফল হয় 3। আমার কাছে তাহলে কয়টি আম আছে?
— মনে করি, আমের সংখ্যা x। তাহলে x-এর জন্য নিচের সমীকরণটি পাওয়া গেল x^2 + 4 = 3। সমীকরণটির সমাধান হবে
x^2 = 3 − 4
⇒ x^2 = −1
এরকম আম তো অসম্ভব, বাবা!
— প্রথম দিককার গণিতবিদদের নিকটও এই ধরণের সমীকরণ ছিল অবাস্তব, কারণ তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না, এমন কোন সংখ্যা আছে যাকে বর্গ করলে ফল ঋণাত্মক হতে পারে। ফলে তাঁরা সমীকরণের সহগ রাশির উপর কিছু শর্ত প্রয়োগ করে দিতেন যাতে গ্রন্থ রচনায় কিংবা আলোচনায় এরকম সমীকরণ সৃষ্টি না হয়। ঘটনাক্রমে যদি এসেই পড়ত, তাহলে অবাস্তব অসম্ভব উদ্ভট প্রভৃতি বলে এদের তাঁরা এড়িয়ে যেতেন।
— তারপর কী হলো?
— মধ্যযুগে ইতালির কিছু গণিতবিদ, হিয়েরোনিমো কারদানো ও রাফায়েল বম্বেললি তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বিষয়টি নিয়ে আরেকটু ভাবতে লাগলেন।
x^2 = −1
⇒ x = √−1
তাঁরাও বুঝতে পারছিলেন না √−1 আসলে কীরকম সংখ্যা, কিন্তু তাঁরা দেখলেন যে, উচ্চঘাতী সমীকরণ সমাধান প্রক্রিয়ায় মধ্যবর্তী ধাপে √−1 জাতীয় সংখ্যা প্রায়ই আসছে এবং উদ্ভট হলেও এদের উপেক্ষা না করে কাজ চালিয়ে গেলে চূড়ান্ত পর্যায়ে সমীকরণের সঠিক এবং বাস্তব সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য বানানো সমীকরণের সমাধান ছাড়া বাস্তব জগতে এদের প্রয়োগ কী হবে, এ ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন না। তখনকার পরিচিত বাস্তব সংখ্যার বিপরীতে এরা অসম্ভব ও গোলমেলে দেখে গণিতবিদ রেনে ডেকার্ত অবজ্ঞার্থে এদের নাম দিলেন কাল্পনিক সংখ্যা, ফলে আজও এদের এই নামে আমরা অভিহিত করি।
— তাহলে, বাবা, কাল্পনিক সংখ্যা হচ্ছে নিছক সমীকরণের সহগ বিভ্রাটের বলে সৃষ্ট সংখ্যা?
—ব্যাপারটি শুধু এরকম হলে সত্যিই কাল্পনিক বলে এদের উড়িয়ে দেয়া যেত। কিন্তু আজকে আমরা জানি, তথাকথিত কাল্পনিক এই সংখ্যারাও বাস্তব জগতের অনেক রাশিকে সফল ও সহজভাবে প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বৈদ্যুতিক বর্তনীর ভেতর যে এসি তড়িৎ প্রবাহিত হয়, কাল্পনিক সংখ্যার সাহায্যে এদের খুব সহজে নির্দেশ করা যায়, হিসেবনিকেশ করা যায় বিভিন্ন বর্তনী থেকে জড়ো হওয়া বা ছড়িয়ে পড়া তড়িতের উপর। অর্থাৎ 0, 1, √2 প্রভৃতির মতো √−1, √−2 এসব সংখ্যাও জগতের বাস্তবতা নির্দেশ করতে পারে, নামে অবাস্তব বা কাল্পনিক হলেও।
— তাহলে কাল্পনিক সংখ্যা ঠিক কাল্পনিক নয়!
— ঠিক ধরেছ। কাল্পনিক সংখ্যারা প্রায়োগিক দিক থেকে 1, 0, −7, 8.62, 4/5, √2 থেকে ভিন্ন তো নয়ই, বরং বাস্তব জগতকে প্রকাশে এদের ক্ষমতা আরও অনেক বেশি। অথচ বাস্তবতাকে নির্দেশ করতে পারলেও √−2 কাল্পনিক! কেন? 2টি মেষ আর সংখ্যা 2-এর মধ্যে কী পার্থক্য? আরেক দিন আমরা বিশদ আলোচনা করব গণিতের নিগূঢ় এই বিষয়গুলো: গণিতশাস্ত্র কি মানুষের উদ্ভাবন না আবিষ্কার, গণিতের মূল স্বরূপ কী, গণিতের দর্শন কী।
লেখকের প্রকাশিতব্য গণিত গল্প-নাটক গ্রন্থ "ভয়ংকর সারাসিন জাদু"-এর পাতা থেকে, কিছুটা পরিবর্তিত
২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: পড়া ও মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ। মূল বইয়ে কাল্পনিক সংখ্যার ইতিহাস ৪৪ পৃষ্ঠার একটি নাটিকা ও তৎসংক্রান্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে। ব্লগে অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ পরিবর্তিত করে দেয়া হয়ছে।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
আপনার এ সিরিজটা আমি বেশ উপভোগ করছি; গণিত নিয়েও চমৎকার কথোপকথন, গল্প করা যায় তা জানা ছিল না; নতুন অভিজ্ঞতা হলো। আশা করি, এ পর্বগুলো আরো দীর্ঘ করবেন। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:১১
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: সিরিজ ভালো লাগছে শুনে আনন্দিত হলাম। মূল গল্প ও নাটকগুলো বেশ দীর্ঘ এবং সেগুলোতে মনোলগ, ডায়ালগ, ধারাভাষ্য প্রভৃতি বিভিন্ন বর্ণনারীতি অবলম্বন করে তুলে ধরা হয়েছে ইতিহাস, পুরাণ, দর্শন, বিজ্ঞান ও সর্বোপরি গণিত, যা আশা করি সকল পাঠকের ভালো লাগবে। ব্লগে ক্ষুদ্র অংশবিশেষ পরিবর্তিত করে উপস্থাপন করছি। পর্বগুলো চলমান রাখার ইচ্ছে আছে।
ভালো থাকুন।
৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২০
রাজীব নুর বলেছেন: অংকে আমি খুব কাঁচা।
২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: গণিত মানুষের চিন্তাশক্তি বিস্তৃত করে, মানুষকে করে যুক্তিবাদী। জ্ঞানের সকল শাখায় গণিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই গণিত অনন্য এবং গণিতে দক্ষতা মানবজীবনে সবিশেষ উপকারী। তবে জ্ঞানের কোনো শাখায় কাঁচা হওয়া একেবারে দোষের বা লজ্জার কিছু নয়। লজ্জার ও ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, কাঁচা হওয়ার পরও কিছু কিছু মানুষ গর্ব করে অন্যদের যেন বলতে চায়, "দেখো, দেখো, আমি অনন্য, আমি বিশেষ একজন, কারণ জ্ঞানের এ শাখাটিতে আমি তেমন কিছুই জানি না।" যারা অজ্ঞানতা নিয়ে গর্ব করে, তাদের কাছ থেকে আমি দূরে থাকি, অন্যদেরও পরামর্শ দেই দূরে থাকতে।
তবে আমাদের আস্থা আছে, আমাদের ব্লগের রাজীব নুর এরকম গর্বকারী কেউ নন।
৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৭
কিশোর মাইনু বলেছেন: আমি ও ব্লগে ২/১টি গণিতের পোষ্ট দেয়ার চেষ্টা করেছি। সময় পেলে ঘুরে আসবেন একবার।
২৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আপনার ব্লগ ঘুরে এলাম। পরে সময় নিয়ে বিস্তারিত পড়ে আলোচনায় অংশ নেব। ভালো কাটুক দিনটি আপনার।
৫| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১০
হাঙ্গামা বলেছেন: প্রায় সারা জীবনই অঙ্কে ফেল কইরা আসছি....গড়ে সব ক্লাসে ৩৫-৪৫ পাইয়া পরের ক্লাসে প্রমোশন পাইছি।
এখন এই পোষ্ট পড়ার পরে আমার বুক ধড়ফড় করতেছে।
২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: লবণের আগায় দা খেয়ে নিন প্রথমে। তারপর অঙ্কের আতঙ্ক থেকে নিঃশঙ্ক হওয়ার জন্য পড়তে থাকুন মজার সব গ্রন্থ।
৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪৭
করুণাধারা বলেছেন: পিতা-কন্যার কথোপকথনের মধ্য দিয়ে কাল্পনিক সংখ্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেল।
আপনার এই বইটা কোন বয়সীদের জন্য? কত পৃষ্ঠার বই? কবে প্রকাশিত হবে?
২০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫৬
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: শুভেচ্ছা, করুণাধারা, পড়া ও মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ।
কাল্পনিক সংখ্যার প্রকৃতি ও ইতিহাস আসলে এত ছোট সংলাপে ভালোভাবে তুলে আনা অসম্ভব, তাই বইয়ে মূল গল্পটি (আসলে একটি নাটিকা ও গল্প) বেশ বড়, ৪৪ পৃষ্ঠার, এবং ঠিক পিতা-কন্যার কথোপথনের মতো নয় সেটি।
গ্রন্থটির গণিত অংশসহ পুরোটা বুঝতে ন্যূনতম পর্যায় ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণী, তবে শুধু কাহিনি বুঝতে পারবে আরেকটু ছোট বয়সীগণও। এবং গল্পগুলো শিশুতোষ ভাষায় লেখা নয়, বিষয়বস্তুও যথেষ্ট পরিপক্ব, কাজেই প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদেরও সমানভাবে আকর্ষণ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
গ্রন্থের মূল টেকস্ট ২০০ পৃষ্ঠার মতো, সব মিলিয়ে ২১৫ পৃষ্ঠার মতো হবে। কাজ প্রায় শেষ, চূড়ান্ত সম্পাদনা শেষে ছাপিয়ে ফেলব আশা করি এবছরই, বা সর্বোচ্চ দেরি হলে ২০১৯ বইমেলা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
কিশোর মাইনু বলেছেন: আরেকটু ব্যাখ্যা করে আরো সহজভাবে উপস্থাপনা করা যেত বলে মনে হচ্ছে আমার থেকে।
BTW,ধন্যবাদ মজার টপিক নিয়ে লেখার জন্য।