নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"There are only three things to be done with a woman. You can love her, suffer for her, or turn her into literature."
----Henry Miller
।
আজ মেয়েটার এই বাড়িতে শেষ রাত। কাল থেকে সে আর তার নিজের কাপে চা খেতে পারবে না, পারবে না মায়ের সাথে রাগ করে সারা রাত ছাদে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কিংবা পারবে না বাবাকে আর লিপস্টিক কিনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে।
।
মেয়েটার ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে যাবে চিরদিনের মত। তাকে কাল থেকেই তার নামের সাথে আরও একটা নামের অংশ যুক্ত করতে হবে। হয়তোবা সেটা হাসান, উদ্দিন, খালেদ যেকোন কিছু হতে পারে। নামটা কি সে মন থেকে যুক্ত করতে পারবে নাকি চিরজীবন নামটা কাগজে কলমেই থেকে যাবে?
।
ছাদে বসে কথাগুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে চোখের দু'কোন ভিজে গেছে মেয়েটা খেয়ালই করে নি। পূর্বের আকাশও ফিকে হতে শুরু করেছে। নিচে তাকিয়ে দেখল প্যান্ডেলের লোকজন এসে গেছে। বাচ্চারা এখনও ঘুম থেকে ওঠে নি তাই বাড়িটা এখনও নিরব।
।
সুর্যের আলো ফোটার সাথে সাথে কেমন যেন লজ্জা করতে লাগল মেয়েটার। মা, বাবা ভাই বোনের সামনে যেতে কেমন যেন লজ্জা করছে। মাকে খুব ব্যস্তভাবে ছোট কিশোরীর মত ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর মেয়েটাকে তার বান্ধবীরা জোর করে বউ সাজাতে নিচের ঘরে নিয়ে গেল।
।
অনেকক্ষন ধরে মেয়েটা বউ সেজে বসে আছে একা একা। খুব বিরক্ত
লাগছে বসে বসে। মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এতক্ষন কত হইচই হচ্ছিল হঠাৎ কে যেন বর এসেছে বর এসেছে বলে চিৎকার শুরু করল আর সব সেদিকে দৌড় দিল।
।
মেয়েটার কাছ থেকে কবুল শোনার জন্য কাজী সাহেব বসে আছেন। কবুল বলতে হবে চিন্তা করেই মেয়েটার গলা শুকিয়ে গেল। মনে হল কে যেন গলা টিপে ধরেছে। বুকটা খালি হয়ে গেল নিমেশে। চোখ ফেঁটে পানি বের হওয়ার আপ্রান চেষ্টা করতে লাগল। এই একটা শব্দ যে তাকে একটা পরিবার থেকে সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিবে। সে যে তার পরিচিত সব আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।
।
গাড়িতে ওঠার সাথে সাথে তার স্বামী তার হাতে আলতো করে মৃদু চাপ দিল। সে কান্নায় লেপ্টে যাওয়া কাজল কালো চোখে তার স্বামীর দিকে তাকাল। স্বামী মৃদু হাসি দিয়ে বোঝালো এত কান্না কিসের আমি আছি না??
মুহূর্তে মেয়েটার সকল দু:খ দূর হয়ে গেল। তাইতো আমার উনি আছে না?
।
বাসর ঘরে মেয়েটা বধূ সেজে বসে আছে। ননদটা এত দুষ্টু যে বলার কথা নয়। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ হল খুব মৃদুভাবে। দরজা খোলা তারপরেও কে নক করছে চিন্তা করতে করতে দেখল পাগড়ী পড়া অবস্থায় তার স্বামী ঘরে ঢুকছে। একটু লজ্জা পেয়ে মেয়েটা মুখ আরও নিচু করে ফেলল। স্বামী এসেই তাকে সালাম দিল। সে আরও অবাক দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকল। সালামের জবাব দিতেও ভুলে গেল।
।
মেয়েটা সেদিন প্রথম তাহাজ্জুদ নামায পড়ল তার স্বামীর সাথে। মোনাজাতে দু'চোখের অশ্রু ঝড়াল। এরকম স্বামী পাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাল সৃষ্টিকর্তাকে। সেদিন থেকে মেয়েটার সকাল হয় স্বামীর ডাকে ফজরের নামায পড়ার মাধ্যমে। মেয়েটাকে শত ব্যবস্তার মাঝেও প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে স্বামীর ফোন রিসিভ করে বলতে হয় যে তার নামায পড়া হয়েছে।
।
হয়তোবা সৃষ্টিকর্তা মেয়েটাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাঝে ফেলবেন। অনেক কষ্টকর পরীক্ষাও হয়তোবা মেয়েটাকে দিতে হতে পারে। তবুও মেয়েটা বুকে সাহস পাবে পাশে তার স্বামী আছে। পাশে তার সাহস, তার শক্তি তার নিরাপত্তা সব কিছুই আছে আর সেটা হল তার স্বামী।
।
হয়তোবা এরচেয়েও তীব্র ভালবাসার বাধন ছিড়ে সব মেয়েকে শশুর বাড়িতে আসতে হয়। হয়তোবা কোন কোন মেয়েকে এরচেয়েও বেশী ক্ষতবিক্ষত হৃদয় নিয়ে বাপের বাড়ি ছাড়তে হয়।
কিন্তু খুব কষ্ট হয় যখন শুনি নব বধু স্বামীর প্রহারে নিহত, কিংবা যৌতুকের দায়ে নব বধুকে পুড়িয়ে হত্যা। কিংবা স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে নতুন বধুর আত্মহনন।
।
আমার কিছু প্রশ্ন। আপনি কি জানেন আপনার স্ত্রী কতটা কষ্ট বুকে চেপে রেখে আপনার সংসার করছে? আপনি কি জানেন শুধুমাত্র আপনার হাতটা ধরে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই মেয়েটার সব কষ্ট দুর হয়ে যাবে? আপনার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরনের আগে একবার চিন্তা করবেন আপনার বোনকেও পরের বাড়িতে পাঠাতে হবে। ভবিষ্যতে আপনার মেয়েকেও পরের বাড়ি পাঠাতে হবে।
।
যে মেয়েটা শুধু আপনার হাত সারাজীবন তার হাতের সাথে যুক্ত পাবে এই ভরসায় সব সম্পর্ক ছিন্ন করে এক কাপড়ে বেড়িয়ে আসল, যে আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে সকল কষ্ট ভুলার জন্য আপনার হাতটা শক্ত করে ধরল আপনি কি পারেন না তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে এত কান্না কিসের আমি আছি না???
০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১২:২৫
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ সামু পাগলা ০০৭ আপনার মন্তব্যের জন্য।
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৪২
নতুন গেম বলেছেন: সামু পাগলা০০৭ বলেছেন একদম মনের কথা লিখেছেন। সহমত
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩
বিজন রয় বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।
+++
০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১২:২৬
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৫৫
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: একদম মনের কথা লিখেছেন।
আপনার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরনের আগে একবার চিন্তা করবেন আপনার বোনকেও পরের বাড়িতে পাঠাতে হবে।
এটা যে কেন কেউ ভাবেনা আমি বুঝিনা।