নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যেকটা সকাল অন্যান্য সকালের মতই শুরু হয়। কড়া রোদ এসে জানালার সামনে দাঁড়ায়। বন্ধ বা ছুটি বলে কোন কথা নেই। উঠতে না চাইলেও উঠতে হয় পেটের তাগিদে। দুই একদিন ঘুমকে জিততে দিলে যে খাবার খরচ জোগানো টিউসনিটাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে।প্রতিদিন আড়মোড়া ভেঙে আস্তে ধীরে বিছানা ছাড়ার কথা চিন্তা করতে গেলে বাথরুমের সিরিয়ালটা হাত ছাড়া হয়ে যায়। এই এক জীবন, মেসে থাকার জীবন। চপ্পলটার ফিতাও ছিঁড়ে গেছে কয়েকদিন হল কিন্তু উপায় কই নতুন চপ্পল কিনার? নতুন চপ্পলের টাকায় যে দশ দিন সকালের নাস্তা খরচ চলে যায়??
.
কোনরকম গায়ে কাপড় চাপিয়ে শুরু হয় দিন চলা। সকালের নাস্তাটা কি??
মামার দোকানের পাঁচ টাকার একটা চা সাথে একটা পাঁচ টাকার পাউরুটি। চায়ে পাউরুটি ভিজিয়ে ভিজিয়ে খেয়েই ক্ষুধা নিবারনের বৃথা চেষ্টা। মাঝে মাঝে চায়ের পরিবর্তে পানি হয় পাউরুটির সঙ্গী। দুই তিন গ্লাস পানি পেটে চালান করতে না পারলে তো আবার দুপুর পর্যন্ত পেটের দানবটাকে আটকে রাখা যায় না। শরীর কেন যে এত খায় খায় করে?
.
খাওয়ার পিছনে কি সময় নষ্ট করার সময় থাকে। শুরু হয় দৌড়। দৌড়ে যেতে হয় টিউসনিতে, আগে তো ভাতের জোগাড় ঠিক করা? সেই দৌড় শেষ হয় ক্লাসে এসে। দৌড়ে না আসলে যদি এটেনডেন্সটা মিস হয় তাহলে তো আবার জরিমানা। যেখানে সেমিস্টার ফি দেওয়াটাই জীবন মরন সেখানে বিলাশিতা করে জরিমানা দেওয়ার উপায় কই??
.
পরীক্ষাটাও চলে আসে নাকের ডগায়। লেকচার ফটোকপি, বই কেনা এতো অনেক খরচ। আর এমনই কপাল, যে মাসে টাকার খুব বেশী টানাটানি সেই মাসেই পরীক্ষাটা হতে হয়। বিধাতা যেন কপালটার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দেন। সামনে পরীক্ষা কিন্তু টিউসনি করে রাতে এসে পড়ালেখা করার এনার্জিও থাকে না। এদিকে সেমিস্টার ফি দেওয়ার জন্য অনেকগুলো টাকা দরকার। টাকাগুলো আসবে কোথা থেকে সেই দু:শ্চিন্তায় বেশ কয়েকদিন থেকে ঘুম হয় না। রেজাল্ট ভাল না হলে যে চাকরীর বাজারও মুখ ফিরিয়ে নেয়। ভাল ইঞ্জিনিয়ার যে হতেই হবে। অনেকগুলো মুখ যে এই একটা চাকরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
.
কালকেই বাবা টাকা পাঠিয়েছে সেমিস্টার ফি দেওয়ার জন্য। কিভাবে পাঠিয়েছে উপর ওয়ালাই জানেন। হয়তো গরুটা কিংবা বাবার শখের রেডিওটা বিক্রি করে দিয়েছে। শখ মরেছে তাতে কি ছেলেকে যে ইঞ্জিনিয়ার বানাতেই হবে। এই দিব্যি নিয়ে জীবন পার করছে যে বাবা। এতে বাড়ি বিক্রি করতে হলে, করতে হবে। কিন্তু ছেলেকে যে মানুষ করতেই হবে। দরকার হলে আরও বেশী জমি ইজারা নিতে হবে, শরীরটার উপর দিয়ে হয়তোবা ধকল আরও বেশী যাবে। তাতে কি ছেলেকে যে মানুষ করতেই হবে।
.
দুই প্রান্তের দুটো মানুষ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। একজন তার ছেলেকে মানুষ করার জন্য সংগ্রাম করছে আরেকজন তার পরিবারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়ে বাবাকে অবসরে পাঠানোর জন্য সংগ্রাম করছে। বাবার একটাই লক্ষ্য ছেলেকে যে মানুষ করতেই হবে। ছেলেরও একটাই লক্ষ্য তাকে যে মানুষ হতেই হবে।
২৬ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৪২
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:৩৭
মহা সমন্বয় বলেছেন: লেখাটা দারুণ।