নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরব্য উপন্যাসের সেই মরুচারী যে সত্যান্বেষণে জীবন উৎসর্গ করে। সেই উপন্যাসের চরিত্র নিজের ভিতরে লালন পালন ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই পথচলা।

মামুন রেজওয়ান

মামুন রেজওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"গল্প কিন্তু বাস্তব/ ক্ষনিকের ডায়েরী-১০"

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩০

(আলহামদুলিল্লাহ একে একে ১০ম পর্বে আমার ক্ষনিকের ডায়েরী। তো হয়ে যাক আজকের পর্ব)
.
শামীম! চিনেন তো এই ছেলেটাকে? আমার ক্ষনিকের ডায়েরীর মূল চরিত্র। তো বেশ কয়েকদিন আগে আমার সাথে শামীমের দেখা হল । শামীম তখন একটা পত্রিকায় 'মুসলিম শিশুর অতীত স্মৃতি' নামক শিরোনামে প্রবন্ধ লেখছে। তো কথা প্রসঙ্গে আমরা আমাদের অতীত নিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম। আমি আমার অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সুখ, দু:খের কথা বলতে লাগলাম। শামীমও তার অতীতের অনেক কথা শেয়ার করা শুরু করল। এক পর্যায়ে তাকে বিষন্ন হয়ে যেতে দেখলাম। কারন কি জিজ্ঞাস করতে নিজের জীবনের অদ্ভুত এক গল্প শোনাল আমাকে।
'জানিস মামুন আমার অনেক পাপ জমেছে এই জীবনে। আমি কখনও বোধহয় এই পাপ থেকে মুক্তি পাব না । শামীম আমাকে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বলা শুরু করল, “ তখন মাত্র ইন্টার পরীক্ষা শেষ হয়েছে আমার। বাবাকে বললাম বাবা আমি ঢাকা যাব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে। তুমি ব্যবস্থা কর। আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তাই বাবা আমার কোন আবদার অপূর্ণ রাখেন না। বাবা রাজি হয়ে গেলেন আমার কথায় এবং সব ব্যবস্থা করে দিলেন ঢাকায় থাকার। যেদিন বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিব সেদিন বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন যেখানেই থাকিস না কেন সলাত কিন্তু ছাড়বি না। মনে থাকবে তো? আমার পরিবারটা ছিল কনজারভেটিভ তাই ধর্ম পালনে কোন গাফিলতি আমার বাবা সহ্য করতেন না।
কিছুদিন পরেই চলে আসলাম রঙের শহর ঢাকায়। প্রথম প্রথম বাসার জন্য মন খারাপ লাগত। প্রতিদিন দীর্ঘক্ষণ কথা বলতাম মা, বাবার সাথে। এভাবেই একসময় মানিয়ে নিলাম সব কিছুর সাথে। প্রথম যেদিন কোচিং এ গেলাম দেখা হল সাকির নামের একটা ছেলের সাথে। ছেলেটা ছিল ঢাকার স্থানীয়। আমাকে দেখে বলে উঠল Hey!!!!! Buddy. What’s up? কিছুক্ষন থ হয়ে থাকলাম এরকম সম্বোধন শুনে। এভাবে কাউকে কথা বলতে আমি ইংলিশ সংলাপেই দেখেছি। উত্তর দেওয়ার পর কথায় কথায় তার সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমি সব সময় তার মত স্মার্টলি ইংলিশ বলতে চাইতাম। এমনকি তার হাঁটা চলা, পোশাক সবই আমি অনুকরন করতে শুরু করলাম। তার টি-সার্ট পরার স্টাইল, টাঁখনুর নিচে জিন্স পরার স্টাইল সবই আমাকে মুগ্ধ করত। সাকিরকে অত্যন্ত সভ্য আর আধুনিক মনে হত। আর নিজেকে ওর সাথে তুলনা করে ভাবতাম ইস!! আমি কত খ্যাঁত। এখনও পুরাতন ধ্যান ধারনা নিয়ে বসে আছি। সেই সেঁকেলে পদ্ধতিতে টাঁখনুর উপরে ভাজ করে প্যান্ট পড়ি , নিয়মিত সলাত আদায় করি , কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। নিজেকে বুঝাতে লাগলাম সাকিরের মত স্মার্ট না হতে পারলে কি জীবনে উন্নতি করা যাবে? আমাকেও সাকিরের মত হতে হবে।
বান্দা যা চায় আল্লাহ্ তাকে তাই দেন। আমার বেলায়ও কথাটা ফলে গেল। আমিও সাকিরের মত তথাকথিত স্মার্ট হয়ে গেলাম। সলাত পড়া ছেঁড়ে দিলাম। টাঁখনুর নিচে প্যান্ট পড়া শুরু করলাম। দুই তিনজন গার্লফ্রেন্ড জুটে গেল। এমনকি নিয়মিত মাদক গ্রহণ করা শুরু করলাম। আমার দিন শুরু হত বেলা বারটায় ঘুম থেকে উঠে। আর দিন শেষ হত ফোনের অপর প্রান্তে বসে থাকা আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বলতে। আমার হাত খরচ বারতে লাগল প্রতিনিয়ত। বই কেনা লাগবে , কাপড় কেনা লাগবে, কোচিং এ টাকা দেওয়া লাগবে এরকম মিথ্যা বলে বলে বাসা থেকে টাকা নিতে লাগলাম। আমার বাবার পরিশ্রমের টাকা এভাবে গার্লফ্রেন্ড , মাদক, সিনেমা, বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়ার মাধ্যমে শেষ করতে লাগলাম।
বাবা মায়ের সাথে কথা বলা কমিয়ে দিলাম। শুধুমাত্র টাকার প্রয়োজন হলেই ফোন দিতাম বাসায়।
এভাবেই জীবনটা পার হয়ে যেতে লাগল। কোন নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল না এই জীবনে। বাবা কথায় কথায় একদিন জিজ্ঞাস করলেন কি হয়েছে? এড়িয়ে গেলাম বিরক্তির সাথে। এভাবেই চলছিল সময়।
কিছুদিন পরে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙল। ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখি ১১টা ২৮ বাজে। দরজা খুলতেই সালামের আওয়াজ পেলাম। ভাল করে চোখ মুছে দেখি ক্যাবলা কান্তির মত ছেলে একটা দাঁড়িয়ে আছে। প্যান্ট নিচ থেকে উপরের দিকে দুই ইঞ্চি ভাজ করে পড়া। চোখে মোটা চশমা, পিঠে বড় ব্যাগ আর হাতে সম্ভবত গিলাফে বাঁধা কোর'আন মাজীদ। কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই ছেলেটা বলা শুরু করল 'ভাই আমি আরমান। নিচে বিজ্ঞাপন দেখে সিট ভাড়া নিতে আসলাম। এটাই কি রুম?' ও বলা হয় নি। ইদানিং বাসা থেকে কম টাকা পাঠাচ্ছে হয়ত কিছু সন্দেহ করেছে। তাই চিন্তা করলাম যদি আমার রুমটায় আমার সাথে কাউকে থাকার জন্য ভাড়া দিয়ে দেই তাহলে সেই টাকায় অন্তত সিগারেটটা ঠিকমতো চালাতে পারব। ছেলেটার মধ্যে নিজের অতীতের কিছু ছাপ দেখতে পেলাম।প্রতিদিন তার সলাত পড়া, কোর'আন পড়া দেখতে দেখতে নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী মনে হতে লাগল। কি এক শুন্যতা ঘুরে বেড়াতে লাগল মনের আনাচে কানাচে।
একদিন রাত দুইটায় ঘুম ভেঙে গেল কান্নার শব্দে। পেছন দিক থেকে আরমানের পিঠের অবয়ব দেখতে পেলাম আবছা আলোয়। দেখলাম আরমান মাথা ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে কি পড়ছে আর হু হু করে কাঁদছে। ভালমত কান পাততে শুনতে পেলাম সুললিত কন্ঠের তিলাওয়াত সূরা আর রহমান। কিছুক্ষণ কান পেতে থাকার পর আরমান ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে যেই তের নম্বর আয়াত 'ফাবি'আয়্যি আলা'ই রব্বিকুমা তুকাজ্জিবান' ( So which of the favors of your Lord would you deny? ) পড়ল কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভয়ের একটা শিহরণ বয়ে গেল মেরুদণ্ড বেয়ে। চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে গেল পানিতে। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল তাইতো আমি আল্লাহর কোন নিয়া'মতকে অস্বীকার করব? কি না দিয়েছেন আল্লাহ আমায়? আমি কি করছি? এত এত এত নিয়া'মতের প্রতিদানে আমি কি করছি? শুধুমাত্র নিমোকহারামের মত নাফরমানী করে গেলাম। সেই করুনাময়ের ঈবাদত বন্দেগী বাদ দিয়ে শয়তানের পদাঙ্ক আঁকড়ে ধরলাম।
একটু ধাতস্ত হয়ে সাথে সাথে ওযু করতে দৌঁড়ালাম। ওযু করে জায়নামাজে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে অনেকক্ষন কাঁদলাম। শেষে আরমান আমাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় নিয়ে বসাল। আর বুঝাল আল্লাহ করুনাময়, ক্ষমাশীল। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন।
বিশ্বাস করবি না মামুন সেদিন ফযরের সলাত আদায় করার পর মনে হয়েছিল আমি বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। দুনিয়াতে যে এত শান্তি আছে সেদিন প্রথম অনুভব করলাম মনের ভিতর। এক নতুন আমিকে চিনলাম, আল্লাহর একনিষ্ঠ গোলাম হিসাবে। সেই ব্যাকডেটেড আমি, সেই সলাত আদায়কারী আমি'র ভিতরেই খুঁজে পেলাম পরম প্রশান্তি। ''

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৯

উচ্ছল বলেছেন: দিন শেষে মানুষ একা। অতএব সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার মাঝেই প্রশান্তি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.