![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাচীন সভ্যতা, পুরাণ, সংখ্যাতত্ত্ব, শব্দের ইতিহাস ভালো লাগা একজন মানুষ
প্রথম পর্ব: Click This Link
ম্লান বিষণ্ণ অপরাহ্ন। মহাকালের পথে চলে যায় বিষাদের দিন। তবু পথ চলা নিরন্তর আমাদের, আনন্দ-আশায়। বাড়ির সামনে বাগানে বসে গল্প করছি আমি, মেয়ে সারাকা, আর আমার বন্ধু পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আবি। লালচে বৃদ্ধটি আসল এমন সময়।
"সময় প্রসারণ ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে আমাদের আলোচনাটুকু এগিয়ে নেয়ার জন্য এসেছি আবার," প্রাণবন্তভাবে বলল বুড়ো।
সান্তার গল্প করেছিলাম আমি পূর্বেই, তাই কেউ অবাক হলো না তেমন। চায়ের একটি কাপ সান্তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে সারাকা বলল, "আপনার সময় প্রসারণের মানসপরীক্ষায় যুক্তির মারাত্মক কিছু লঙ্ঘন খুঁজে পেয়েছি আমি, জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন আমার মনে। এদের যথাযথ উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি গাণিতিক বিভ্রম, হিসেব-নিকেশের মারপ্যাঁচ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।"
"কী বলছ তুমি, সারা," বিস্ময় প্রকাশ করে আবি। "আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রতি সন্দেহ পোষণ করছ তুমি, অথচ স্টিফেন হকিং-এর মতো বিজ্ঞানী তাঁর The Grand Design গ্রন্থের The Theory of Everything অধ্যায়ে কী লিখেছেন, শোন: 'বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে, যে পর্যবেক্ষক কোনো ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির রয়েছে, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে দ্রুততর। অন্যদিকে যে পর্যবেক্ষক ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির নয়, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে ধীরে। আমরা যদি বিমানের লেজ থেকে নাকের দিকে ভ্রমণরত একটি আলোক রশ্মিকে ঘড়ির এক টিকের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে ভূমিতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষকের নিকট মনে হবে বিমানের ঘড়িটি ধীরতর গতিতে চলছে, কারণ পর্যবেক্ষকের নিজের প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলো দীর্ঘতর দূরত্ব অতিক্রম করছে। কিন্তু এ ফলাফল ঘড়ির নির্মাণকৌশলের উপর নির্ভর করে না; সকল ঘড়ির জন্য এটি প্রযোজ্য, এমনকি আমাদের দেহঘড়ির জন্যও। তারপর এ ছবিটির নিচে কী লিখেছেন হকিং, পড়:
'গতিশীল ঘড়ি ধীরে চলে বলে প্রতীয়মান হয়। যেহেতু ব্যাপারটি দেহঘড়ির জন্যও প্রযোজ্য, সেহেতু গতিশীল মানুষের বয়সও বাড়ে তুলনামূলকভাবে ধীরে। কিন্তু খুব বেশি আশাবাদী হয়ো না তোমরা—প্রতিদিনের সচরাচর গতিতে কোনো সাধারণ ঘড়িই পার্থক্যটুকু ধরতে পারবে না।'
তুমি কি, মা, স্টিফেন হকিং-এর চেয়েও বড় বিজ্ঞানী?" শেষের দিকে কিছুটা শ্লেষ ঝরে পড়ে যেন আবির কণ্ঠে।
"অধ্যায়টি পড়লাম, চাচা," মোটেও উদ্বিগ্ন না হয়ে বলল সারাকা। "হকিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আপাতত দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমতঃ, আমার ছোট বোন ফারিন যেরকম নিজেকে প্রশ্ন করে করে যত্নের সঙ্গে হোমওয়ার্ক করে থাকে, হকিং সেরকম যত্ন করে আলোচ্য অনুচ্ছেদগুলো লিখেননি। তাঁর বর্ণনা, ছবি, গতিশীল মানুষের বয়স নিয়ে বক্তব্য, সব মিলিয়ে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের মতোই গৎবাঁধাভাবে সময় প্রসারণ ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন মাত্র, বাজিয়ে গিয়েছেন একই বাদ্য, মেনে নিয়েছেন কোনোরূপ সমালোচনা কিংবা গভীর পর্যলোচনা ছাড়াই। আমার প্রশ্নগুলোর উল্লেখ কিংবা উত্তর নেই তাতে, ফলে পড়ার পরও বিশেষ আপেক্ষিকতার ব্যাপারে আমার প্রশ্ন কমেনি। এ বিষয়ে শীঘ্রই ফিরে আসব আমরা।
দ্বিতীয়তঃ, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব যেহেতু জগৎ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী ও উপলব্ধির মৌলিক পরিবর্তনের দাবী রাখে, আমাদের স্বাভাবিক বিচারবোধ ও যুক্তির বিপরীতে কাজ করে, সেহেতু এমনি এমনি এটি মেনে নিতে ইচ্ছুক নই আমি, খ্যাতনামা বিজ্ঞানী কিংবা বিজ্ঞানলেখকগণ অলস-আনন্দে যা-ই লিখুন না কেন। এ প্রসঙ্গে মধ্যযুগের মহান বিজ্ঞানী ইবনে আল হাতেমের প্রজ্ঞাপূর্ণ ও চির-প্রাসঙ্গিক একটি উক্তি তুলে ধরতে চাই, যা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এ বিষয়ে: 'একজন সত্য-সন্ধানী তিনি নন যিনি প্রাচীন মানুষের লেখা পাঠ করেন, এবং নিজের প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয়ে সেগুলির উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন, বরং তিনিই সত্য-সন্ধানী যিনি সেগুলির উপর নিজের বিশ্বাসকে সন্দেহ করেন এবং সেখান থেকে যা আহরণ করেন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন—তিনি এমন একজন মানুষ যিনি যুক্তি ও নিরীক্ষার আশ্রয় নেন, নিছক আবদ্ধ হন না মানুষের বক্তব্যে যার প্রবৃত্তি ভরপুর নানা অপূর্ণতা ও ত্রুটিবিচ্যুতিতে। অতএব যে ব্যক্তি অধ্যয়ন করেন বিজ্ঞানীদের লেখা, তার দায়িত্ব, যদি সত্য উপলব্ধি করাই অভীষ্ট লক্ষ্য হয় তার, নিজেকে বৈরী করে তোলা সেসবের প্রতি যা তিনি পাঠ করেন এবং বিষয়বস্তুর মূল থেকে প্রান্তভাগে মনোনিবেশ করে তাদের আক্রমণ করা চতুর্দিক থেকে। উক্ত বিষয় নিগূঢ় পর্যবেক্ষণকালে নিজেকেও সন্দেহবিদ্ধ করতে হবে তাকে, যেন পূর্বসংস্কার কিংবা উদারতার ফাঁদে পতিত না হন তিনি নিজেই।' "
আমরা একমত হলাম, সান্তা ক্লজের সঙ্গে যুক্তিতর্কের নিরিখে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমই বিষয়টি স্পষ্টতর হতে পারে। সুতরাং সারাকা তার প্রশ্ন শুরু করল, "আমার প্রথম প্রশ্ন, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মাধ্যমে আপনি সময় প্রসারণের এই যে সমীকরণটি প্রতিপাদন করলেন, এটি কি বাস্তবতা বিবর্জিত নিছক গাণিতিক সমীকরণ, নাকি বাস্তবতাকে প্রকাশ করে পদার্থবিদ্যার এমন তত্ত্ব?"
"বাস্তবতা বিবর্জিত গাণিতিক সমীকরণ বলতে তুমি কি বুঝাচ্ছ?" অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে সান্তা।
"ধরুন, আমাদের পুকুরে রুই মাছের পোনা চাষ করা হচ্ছে। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে নিয়মিত মাছের খাবার দেই আমি। ফাঁকে ফাঁকে আমার চুলেরও যত্ন নেই। লক্ষ করি দিনে দিনে সুন্দর বেড়ে উঠছে মাছগুলো এবং, বিস্ময়কর ভাবে আবিষ্কার করি, চুলের দৈর্ঘ্যও বাড়ছে আমার। নিবিড় পর্যবেক্ষণের দ্বারা হিসেব করে দেখলাম, আমার চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি রুইপোনার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সমানুপাতিক ।
অতএব কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে আমার চুলের দৈর্ঘ্য h এবং রুইপোনার দৈর্ঘ্য r হলে, গাণিতিকভাবে
,
যেখানে k একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক এবং C একটি সমাকলন ধ্রুবক, ব্যবহারিক পরীক্ষণের মাধ্যমে যাদের মান নির্ণয় করা সম্ভব।
আমার চুলের সঙ্গে রুই মাছের দৈর্ঘ্যের এ সম্পর্কটি হচ্ছে বিশুদ্ধ গাণিতিক সমীকরণ, কিন্তু বাস্তবতা বিবর্জিত।"
উদাহরণটি ব্যাপক হাস্যরসের উদ্রেক করল আমাদের মধ্যে। নিরীহ একটি সরল সমীকরণ, যা নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগণও চমৎকার উপলব্ধি করবে, তার প্রতিপাদনে ডিফারেন্সিয়াল ও ইন্টেগ্র্যালের প্রয়োগ কতই না রহস্যমণ্ডিত ও গুরুগম্ভীর এবং প্রায় দুর্বোধ্য করে তুলেছে তাকে! আমার হঠাৎই মনে পড়ল আইনস্টাইনের কথা। শিক্ষক মিনকফস্কি যখন বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে স্থান-কালের দুর্বোধ্য চতুর্মাত্রিক জ্যামিতিতে ক্রমাগত প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন, আইনস্টাইন কৌতুকভরে বলে উঠেছিলেন, "আপেক্ষিকতা তত্ত্বে গণিতবিদগণ হস্তক্ষেপ করার পর, আমি নিজেও একে আর বুঝে উঠতে পারছি না।"
সারাকার সমীকরণটি যত হাস্যকরই হোক, আমাদের স্বীকার করতেই হলো, তার বক্তব্যের সপক্ষে উদাহরণটি যথার্থ। জগতের সব নিয়মকেই হয়তো গণিতের সাহায্যে প্রকাশ করা সম্ভব, তা যত সরল কিংবা দুর্বোধ্যভাবেই হোক, কিন্তু বিপরীতক্রমে সব গাণিতিক সম্পর্কই বস্তু জগতের নিয়মকে প্রকাশ করে না।
হাসি থামলে সান্তা বলল, "তুমি নিশ্চিত থাকতে পার, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব জগতের একটি বাস্তব, ভৌত ঘটনাকে প্রকাশ করে।"
সারাকা বলল, "ধন্যবাদ, সান্তা। তাহলে আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের দিকে যাই। আপনি বলেছেন প্ল্যাটফর্মের সাপেক্ষে গতিশীল ট্রেনে ভ্রমণকালে মেঝে ও ছাদের আয়না দুটোর মধ্যে ফোটনের আপতন-প্রতিফলনের পথটি আপনি দেখবেন ক্রমাগত খাড়া উপরে-নিচে, কিন্তু প্ল্যাটফর্মে স্থির দাঁড়িয়ে বাবা দেখবেন আপতন-প্রতিফলনটি কোনাকুনি সরলরৈখিক পথে হচ্ছে?"
চিত্র: সান্তার যুক্তি অনুসারে, সান্তা ফোটনটিকে দেখবে বাম দিকের ছবির মতো খাড়া উপর-নিচে, কিন্তু আমি দেখব ডানদিকের ছবির মতো কোনাকুনি পথে
"হ্যাঁ," স্মিত হাসিতে জবাব দেয় সান্তা।
"কিন্তু আমরা জানি, আপনি যদি ফোটনের পরিবর্তে একটি টেনিস বল ছুঁড়তেন ট্রেনের মেঝে থেকে ছাদের দিকে, আর বলটি যদি আলতো করে ছাদ স্পর্শ করেই নেমে আসত, তাহলে আপনি ঠিকই দেখতেন বলটি ফোটনের মতোই খাড়া উপরে-নিচে গমন করছে, কিন্তু বাবা দেখতেন কর্ণের মতো সরলরৈখিক পথে নয়, বরং বাঁকানো উপবৃত্তাকার পথে বলটি ভ্রমণ করছে।
কারণ আপনার সাপেক্ষে বলটির শুধু একমাত্রিক গতি রয়েছে—প্রথমে অভিকর্ষের বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখী গতি, তারপর অভিকর্ষের দিকে নিম্নমুখী গতি; অতঃপর আবার অভিকর্ষের বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখী গতি, ...। আপনার সাপেক্ষে বলের সব গতিই একই সরলরেখা বরাবর হচ্ছে।
অন্যদিকে বাবার সাপেক্ষে বলটির উপর একই সঙ্গে ক্রিয়াশীল দুটো গতি বিদ্যমান—একটি ট্রেনের সঙ্গেসঙ্গে ডানদিকে v সমবেগে চলমান গতি, অন্যটি আপনার মতোই অভিকর্ষসম্পর্কিত উপর-নিচ বরাবর পরিবর্তনশীল গতি; এ দুয়ের সম্মিলনে বাবা দেখবেন বলটির গতিপথ ক্রমাগত বেঁকে যাচ্ছে, উপবৃত্তের মতো।
চিত্র: স্বাভাবিক ক্ষেত্রে, ট্রেনের ভেতর সান্তা উপরে একটি বল ছুঁড়ে দিলে, বলের গতিপথটি প্ল্যাটফর্মের ভূমি থেকে আমি দেখব উপবৃত্তাকার, কৌণিক সরল পথে নয় মোটেও (যদিও ট্রেনের ভেতর সান্তা দেখবে খাড়া উপর-নিচে)।
অথচ বিমানের ভেতর বল ছুঁড়ে দেয়ার ছবিতে, ভূমিতে দণ্ডায়মান একজন মানুষের সাপেক্ষে বলের গতিপথটিকে কোনাকুনি সরল পথেই হকিং দেখিয়েছেন বলে প্রতিভাত হয়। আমি বলছি না এটি বড় কোনো ভুল, কিন্তু এ ছবি প্রকৃত ঘটনার অসম্পূর্ণ ধারণা দেয়, যা অনেক পাঠককে বিভ্রান্ত করবে।" এক নাগাড়ে বলে থামল সারাকা।
"সারাকা, তুমি সম্ভবতঃ বলতে চাচ্ছ তোমার বাবা বলটিকে দেখবেন পরাবৃত্তাকার পথে, উপবৃত্তাকার পথে নয়। কারণ প্রক্ষেপের সমীকরণের সাহায্যে আমরা দেখতে পাই, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ব্যক্তির সাপেক্ষে গতিশীল ট্রেনের ভেতর এরূপ নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিপথ হবে পরাবৃত্তাকার। আমি স্বীকার করছি, হকিং আরেকটু সতর্ক হতে পারতেন এবং পূর্বশর্তগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারতেন," আবি বলল।
"না, চাচা। স্বল্প দূরত্বে ব্যবহারিক হিসেবে যথেষ্ট হলেও, পরাবৃত্ত প্রকৃত গতিপথের আসন্ন রূপমাত্র। সত্যিকারভাবে পরাবৃত্ত তখনই হতো যখন ভূপৃষ্ঠ সমতল এবং প্রক্ষিপ্ত পথের প্রতিটি বিন্দুতে প্রক্ষেপকের উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষ বলের পথগুলো পরস্পর সমান্তরাল হতো। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হবার কারণে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষ বলের পথগুলো সমান্তরাল নয়, বরং সেগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে মিলিত হয়। পৃথিবী নিখুঁত গোলক না হওয়ায় উপবৃত্তাকার পথটিও ১০০% সত্য নয়, কিন্তু তা পরাবৃত্ত থেকে সত্যের অধিকতর নিকটে। এখন পরাবৃত্ত বা উপবৃত্ত যা-ই বলি, অভিকর্ষের কারণে বাবার সাপেক্ষে এসব গতিপথ হবে বক্রাকার; ফোটনের পথটি যদি কৌণিক সরলপথে না হয়, তাহলে সান্তার সময় প্রসারণের সমীকরণটি তো আর সঠিক থাকে না।"
চিত্র: প্রক্ষেপের গতিপথ বর্ণনায় উপবৃত্ত অধিকতর যথার্থ। ভূপৃষ্ঠের উপরে প্রক্ষেপের আপাত দৃশ্যমান পরাবৃত্তীয় গতিপথটি আসলে একটি বৃহৎ উপবৃত্তের ক্ষুদ্র অংশ, যদিও প্রক্ষেপটি খানিক দূরে ভূপৃষ্ঠে আঘাত করায় পৃথিবীর অভ্যন্তরের পথটুকু এটি কখনো অতিক্রম করতে পারবে না। তবে আমরা যদি কল্পনা করি, প্রক্ষেপটি কোনোভাবে পৃথিবীর ভেতর দিয়ে কেন্দ্রের দিকে মুক্তভাবে পড়ছে ক্রমাগত, অভিকর্ষের মানও তখন ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকবে, ফলে ছবির উপবৃত্তাকার পথটিও আর সুষম থাকবে না।
মনে মনে আমাকে স্বীকার করতেই হলো, চিন্তা-ভাবনা কিংবা পড়াশোনায় মেয়ে আমার পরিশ্রমী বটে। পদার্থবিদ্যার ক্লাসে আমাদের শিক্ষকগণ কখনো চমকপ্রদ এ বিষয়টি উল্লেখ করেননি যে তথাকথিত পরাবৃত্তটি আসলে কার্তেসীয় সমতলে উপবৃত্তের আসন্নরূপ মাত্র।
"টেনিস বলের ব্যাপারে তোমার যুক্তি সঠিক, সারা," সহাস্যে জবাব দেয় সান্তা। "এমনকি ফোটন ভরশূন্য কণা হলেও, এবং ফলশ্রুতিতে ভরযুক্ত টেনিস বলের সঙ্গে তার মৌলিক পার্থক্য থাকলেও, ফোটনের গতিপথ অভিকর্ষ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। সুতরাং আমি দুঃখিত, বিষয়টি অনেক আগেই পরিষ্কার করে দেয়া উচিত ছিল আমার, সময় প্রসারণকে আমি ব্যাখ্যা করেছি শুধু বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মাধ্যমে, যা কেবলমাত্র এরূপ পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য যেখানে অভিকর্ষ অনুপস্থিত। যেখানে অভিকর্ষ ও বেগ দুটোই বিদ্যমান, সেখানে বেগসংক্রান্ত সময় প্রসারণ ছাড়াও অভিকর্ষীয় সময় প্রসারণ নামে আরেক ধরণের ঘটনা ঘটে। এ দুটো মিলিয়ে আমরা মোট সময় প্রসারণ পেয়ে থাকি। তবে আমাদের বর্তমান আলোচনা আমরা কেবল বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে সীমাবদ্ধ রাখতে পারি।"
"ঠিক আছে। তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, বিশেষ এ পরস্থিতিতে, অর্থাৎ অভিকর্ষের অনুপস্থিতিতে, বাবা ফোটনের গতিপথটিকে কোনাকুনি সরলরৈখিক দেখবেন, তাই তো?" সারাকা বলল।
"হ্যাঁ," সায় দেয় সান্তা।"
"আচ্ছা, এবার তাহলে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের দ্বিতীয় স্বীকার্যটি একটু বলুন আমাদের," অনুরোধ করে সারাকা।
"যেকোনো প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে আলো শূন্য মাধ্যমে সর্বদা V গতিতে গমন করে, এবং উক্ত গতি উৎসের গতির উপর নির্ভরশীল নয়। ১৯০৫ সালে এভাবেই আইনস্টাইন স্বীকার্যটি প্রকাশ করেন। আলোর গতি নির্দেশ করতে V-এর পরিবর্তে বর্তমানে অবশ্য আমরা c প্রতীকটি ব্যবহার করি। এছাড়া পরবর্তীতে স্বীকার্যটিকে আরেকটু পরিবর্ধিত করা হয় এ বলে যে, শুধু উৎসই নয়, পর্যবেক্ষকের গতির উপরও আলোর গতি নির্ভর করে না।"
"আলোর গতি উৎসের গতির উপর নির্ভর করে না, বিষয়টি দয়া করে ব্যাখ্যা করুন," সারাকা বলল।
"মনে কর, প্ল্যাটফর্মে স্থির দাঁড়িয়ে আছেন তোমার বাবা, তার সাপেক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ২০ মিটার গতিবেগে চলমান একটি ট্রেনে বসে আছি আমি। হঠাৎ ট্রেনের ভেতর পিস্তল থেকে একটি গুলি ছুঁড়লাম আমি সামনের দিকে, ট্রেনটি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে। চলন্ত কিংবা স্থির ট্রেনে গোলাগুলি ভয়ঙ্কর ব্যাপার, তবে বিজ্ঞানের খাতিরে বিষয়টি আমরা কল্পনা করছি মাত্র। এখন আমার সাপেক্ষে বুলেটটির গতি যদি সেকেন্ডে ৫০০ মিটার হয়, তোমার বাবার সাপেক্ষে সেটির গতি কত?" প্রশ্ন রাখে সান্তা।
"বাবার সাপেক্ষে গতি প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ মিটার থেকে অবশ্যই বেশি হবে, যেহেতু ট্রেনের গতি বুলেটের গতির উপর প্রভাব রাখবে।"
"ঠিক বলেছ," একমত হয় সান্তা। "এবার মনে কর, বুলেটের পরিবর্তে টর্চ থেকে আলো ফেললাম সামনের দিকে। আমার সাপেক্ষে আলোর গতি যদি প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার হয়, তোমার বাবার সাপেক্ষে আলোর গতি কত?" রহস্যময়ভাবে প্রশ্ন করল সান্তা।
"কেন, প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটারই?" নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল সারাকা, মুচকি হাসি তার ঠোঁটের কোণে। "যদিও সাধারণভাবে আলোর ধ্রুব গতি বলতে কী বুঝায়, এবং বিশেষভাবে তার মান ঠিক ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ড কীভাবে পরিমাপ করা হয়েছে, সে বিষয়েও আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে; যথাসময়ে সেগুলো উত্থাপন করব।"
সান্তা ও আবি দুজনেই সম্ভবতঃ আশা করছিল উত্তরটি ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটারের চেয়ে বেশি বলবে সারাকা, আর সঙ্গেসঙ্গে তার ভুলটি ধরে দিয়ে চমকে দিবে তারা। অনেক বিজ্ঞান লেখকের ভেতর এ প্রবণতাটি দেখেছি আমি। তারা প্রথমে এরূপ বুলেট বা গোলার উদাহরণের মাধ্যমে আপেক্ষিক গতিটি ব্যাখ্যা করেন। তারপর হঠাৎ আলোর উদাহরণ টেনে নিয়ে আসেন, চমকে দেয়ার চেষ্টা করেন পাঠককে যে বুলেট বা গোলার মতো উৎসের গতির উপর আলোর আপেক্ষিক গতি নির্ভর করে না। আলোর গতিপ্রকৃতিতে নিঃসন্দেহে চমক্প্রদ কিছু বিদ্যমান, তবে তা উৎসের গতি থেকে স্বাধীন, এ কারণে নয়।
কিছুটা যেন হতাশ হয়ে প্রশ্ন করল আবি, "কিন্তু বুলেটের ক্ষেত্রে তো ৫০০ মিটারের চেয়ে বেশি বলেছিলে, মা? এবার কেন সমান বললে?"
"আলো তো তরঙ্গ চাচা, আর তরঙ্গের গতি তার উৎসের গতির উপর নির্ভর করে না। যেমন, আপনি স্থির দাঁড়িয়ে কথা বলেন আর জোরে দৌঁড়ে দৌঁড়েই কথা বলেন, আপনার শব্দ শ্রোতার কানে একই গতিতে গমন করবে—অর্থাৎ বাতাস যে গতিতে শব্দ পরিবহন করে নিয়ে যাবে, সে গতিতে। সুপারসনিক বিমান থেকে যে আওয়াজ উৎপন্ন হয়, সে আওয়াজ তো বরং বিমানের পেছনেই পড়ে থাকে, কারণ এক্ষেত্রে শব্দের গতির চেয়েও উৎস বিমানের গতি বেশি।" সারাকা ব্যাখ্যা করে।
"কিন্তু, সারা, ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ড গতিটি তো শূন্য মাধ্যমে আলোর গতি। অর্থাৎ আলোকে পরিবহন করার জন্য এখানে কোনো মাধ্যমই নেই। তারপরও যে বিজ্ঞানীগণ বলেন, তোমার বাবা এবং আমার দুজনের কাছেই আলোর এ গতিটিই হবে!" সান্তা বলল।
"সেক্ষেত্রে আলোর ব্যাপারটি চমকপ্রদ স্বীকার করতেই হবে। কারণ বুলেটও বাতাস কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে, সুষম সুন্দরভাবেই চলে বরং, কিন্তু বুলেটের গতি তার উৎসের গতি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। অন্যদিকে, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বানুসারে, আলোর গতি উৎসের গতি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় না; এটিও অস্বাভাবিক নয় যদি আলো পরিবহনের জন্য সর্বদা একটি বাস্তব মাধ্যম থাকে, এবং আলোর গতি তখন শুধু তার মাধ্যমের উপর নির্ভর করবে। কিন্তু মাধ্যমও নেই, আবার উৎসের গতিও প্রভাবান্বিত করে না, এ নিঃসন্দেহে অত্যাশ্চার্য ঘটনা!" সারাকা বলে।
"যথার্থ বলেছ," সারাকার বিস্ময়টুকু উপভোগ করে যেন সান্তা ও আবি।
"তার মানে অভিকর্ষহীনতা ছাড়াও আরেকটি পূর্বশর্ত ধরে নিতে হচ্ছে আমাদের মানসপরীক্ষায়—ট্রেনের ভেতরটি পুরোপুরি ফাঁকা, বাতাস কিংবা অন্য কোনো গ্যাসীয় পদার্থ নেই তাতে। নচেৎ আলোর গতি আর c থাকে না। এছাড়া মাধ্যমের ভেতর আলোর প্রতিসরণও তার গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।" সারাকা বলল।
"ঠিক বলেছ," সায় দেয় সান্তা।
"এইমাত্র আমার মনে উঁকি দিল আরেকটি প্রশ্ন ও সন্দেহ, পরে তুলে ধরব তা। আপনার মানস পরীক্ষাটিতে ফিরে যাই আবার," সারাকা বলল। তারপর আচমকা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, "আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন, ট্রেনের ভেতর আলোর গতিপথটি আপনি ঠিক খাড়া উপর-নিচ বরাবরই দেখবেন?"
হঠাৎ এ প্রশ্নটি খানিকটে চমকে দেয় যেন সান্তা আর আবিকে।
খানিকটে নিরব থেকে সান্তা বলে, "কেন, নিচ থেকে উপরের দিকে আলো ফেলছি আমি। আলো সোজা গিয়ে আপতিত হচ্ছে উপরের আয়নায়, সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে আবার খাড়া নিচে আপতিত হচ্ছে নিচের আয়নায়— সহজ ব্যাপার।"
"কিন্তু আপনি তো বললেন উৎসের গতি দ্বারা ফোটনের গতি প্রভাবান্বিত হয় না।"
"আমি এখনও তা বলছি," উদ্বিগ্ন হয়ে সান্তা বলে।
"কিন্তু ফোটনটি নিচের আয়না থেকে যাত্রা শুরু করে উপরের আয়নায় যাবার অন্তবর্তীকালীন সময়ে, তা সময়টুকু যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, আয়না, ট্রেন, আপনি সবই তো কিছুটা ডানদিকে সরে গিয়েছিল। তারপরও ফোটন খাড়া উপরে, আয়নার ঠিক মাঝখানে কীভাবে প্রথম টিক দিল? ফোটনটি কি জানত যে উপরের আয়নাটি ক্রমাগত ডানে সরে যাচ্ছে, এবং উপরের আয়নার নাগাল তাকে পেতেই হবে, সুতরাং শুধু খাড়া উপরে গেলেই হবে না, ক্রমাগত ডানেও সরতে হবে? এমনকি ট্রেনের গতি যদি প্রচণ্ড রকমের বেশি হয়, উচ্চতা যদি সুবিশাল হয়, তারপরও ফোটন উপরের আয়নার মাঝখানেই টিক দিবে! ফোটনের এমন বিশেষ কী দুর্বলতা উপরের আয়নার প্রতি যে, উপরের আয়না যত উঁচুতেই থাকুক, ডানদিকে যত গতিতেই সরুক, সেও রহস্যময়ভাবে ডানদিকে একই বেগে প্রাপ্ত হয়ে প্রতিবার আয়নার ঠিক মাঝখানে গিয়ে পড়বে?" একনাগাড়ে আবেগদীপ্তভাবে বলে থামল সারাকা। দম নিয়ে আবার বলতে লাগল, " বরং ফোটনটি যদি আপনার পেছনে পড়ে থাকত, ট্রেনসহ আপনি যদি ক্রমাগত ফোটন থেকে দূরে সরে যেতেন, তা-ই হতো স্বাভাবিক। অন্যদিকে, ফোটন যদি সত্যি সত্যি ট্রেনের সঙ্গে ডানে অগ্রসর হতেই থাকে, তাহলে তো বরং আমরা আরও সহজভাবে বলতে পারি, উৎসের গতিজড়তার দরুন ফোটনের গতি প্রভাবান্বিত হচ্ছে এবং বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সাধারণ যুক্তির নিরিখে অন্তর্গতভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং ভুল।।"
"এ মানসপরীক্ষায় আরেকটি শর্ত রয়েছে, সারা, আলোর গতিপথ উৎসের গতিবেগ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় বটে, কিন্তু উক্ত গতিপথে আলোর গতির মান, অর্থাৎ c-এর মান ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ডেই অপরিবর্তিত থাকে।"
"বড় অদ্ভুত শর্ত! তার মানে ট্রেনের গতির উপর নির্ভর করে একেক সময় আলোর একেক কৌণিক গতিপথ দেখবেন বাবা, যদিও গতির মান পাবেন সব সময় ধ্রুব।" সারাকা বলল।
"ঠিক তাই," সান্তা জবাব দেয়। "বিজ্ঞানীরা পরীক্ষণের মাধ্যমে এরূপ ফলাফলই পেয়েছেন বলে আমরা জানি।"
"কিছু প্রজাতির গিরগিটি যেমন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিজের বর্ণ পরিবর্তন করে ফেলে, আলোও সেরকম উৎসের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে নেয়, অথচ মানে ঠিক থাকে"! দার্শনিকভাবে বিড়বিড় করে সারাকা। "যদিও উপরের আয়নার প্রতি ফোটনের বিশেষ দুর্বলতার যৌক্তিক কারণটি বোঝা গেল না এতে। এবং আশা করি বিশেষ আপেক্ষিকতার দ্বিতীয় স্বীকার্যটিকে গোঁজামিল দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন না বিজ্ঞানীগণ। যাহোক, এটিও মেনে নিচ্ছি। এবার মানস পরীক্ষাটি বিপরীত দিক থেকে সম্পন্ন করা যাক, সান্তা:
ধরুন, ফোটন ঘড়ির পরীক্ষাটি প্ল্যাটফর্মে স্থির দাঁড়িয়ে বাবা সম্পন্ন করছেন, আর আপনি তা ট্রেন থেকে দেখছেন, তাহলে সময় প্রসারণ সমীকরণের কী হবে? আগের পুরো ঘটনাটি তো এবার উল্টে যাচ্ছে, বাবা দেখবেন আলো উপর-নিচে গমন করছে, কিন্তু আপনি দেখবেন আলো কৌণিকপথে ট্রেনের বিপরীত দিকে গমন করছে। সমীকরণ তো উল্টে গেল, পরস্পর সমতুল্য ঘটনায় এবার
আপনার পরিমাপকৃত সময় = γ.বাবার পরিমাপকৃত সময়,
কারণ আপনার প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলো এবার দীর্ঘতর পথ পাড়ি দিচ্ছে। সুতরাং যে ঘটনা বাবার ক্ষেত্রে হয়তো ১ মিনিটে, আপনার ক্ষেত্রে তা ঘটবে ১ ঘন্টা, ১ দিন, কিংবা ১ বছরে!"
সারাকা এবার আবির দিকে ফিরে বলে, "স্টিফেন হকিং ও অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানী এখানে নীরব থাকেন, চাচা। তারা যখন বলেন, 'যে পর্যবেক্ষক কোনো ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির রয়েছে, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে দ্রুততর। অন্যদিকে যে পর্যবেক্ষক ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির নয়, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে ধীরে।'—আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী এ সঠিক। কিন্তু এর মানে হচ্ছে, বাবা দেখবেন সান্তার ঘড়ি ধীরে চলছে, সান্তা দেখবে বাবার ঘড়ি ধীরে চলছে। সুতরাং হকিং যখন বলেন, 'ভূমিতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষকের নিকট মনে হবে বিমানের ঘড়িটি ধীরতর গতিতে চলছে' তা অর্ধসত্য, ভুলের নামান্তর, কারণ পাঠকরা এতে ধরে নেবেন, ভূমির সাপেক্ষে গতিশীল ঘড়িটিই কেবল ধীরে চলবে। এমনকি হকিং উপরে প্রথম ছবির নিচেও বললেন, গতিশীল মানুষের বয়স বাড়ে ধীরে, অথচ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে গতিশীলতার কোনো অর্থ নেই, যতক্ষণ না বলা হচ্ছে কার সাপেক্ষে এ গতি!"
____________
দ্বিতীয় পর্ব
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২৩
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা, কুনো। খুব ভালো লাগল দেখে, মন্তব্যে। প্রিয়তের সম্মাননায় অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পরবর্তী পাঠ আনন্দময় হোক।
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২১
আমি তুমি আমরা বলেছেন: বাপরে, ব্যাপক অবস্থা।কলেজে থাকতে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব পড়েছি বটে, কিন্তু সারাকার মত এত গভীরভাবে ভাবিনি। সুতরাং মনেও এত প্রশ্ন আসে নি।
বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কথা জানতাম না। শর্তগুলাও সেরকমঃ অভিকর্ষ বল থাকতে পারবে না, মাধ্যম শূন্য হতে হবে, নাহয় আলোর বেগ স্থির থাকবে না। এই ধরনের শর্ত থাকলে সেটা বাস্থব জাগতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিভাবে?
অনেকগুলো বিষয় ক্লিয়ার হয় নাই।
১. বুলেটের বেগ উৎসের ওপর নির্ভর করলে আলোর বেগ কেন করবে না?
২. পরাবৃত্ত আর উপবৃত্ত নিয়ে কন্সেপ্ট ক্লিয়ার হল না। পরাবৃত্ত অপেক্ষা উপবৃত্ত সত্যের কাছাকাছি- বুঝি নাই ব্যাপারটা।
৩. ফোটনের ক্ষেত্রে যদি ভর না থাকে তাহলে অভিকর্ষ ক্রিয়া করবে কিভাবে? W=mg । তাই না?
৪.শেষ প্যারার বক্তব্য একেবারেই ধরতে পারি নাই।
আর সবশেষে, ভাইয়া, আরেকটু সহজ টার্ম ইউজ করুন। প্রসংগ কাঠামো, প্রক্ষেপ- ইত্যাদি টার্ম যারা বিজ্ঞান পড়ে নাই তাদের পক্ষে হজম করা কঠিন হবে।
শুভ রাত্রি
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:০৭
ম্যাভেরিক বলেছেন: মন্তব্যে, প্রশ্নে অনেক ধন্যবাদ।
হ্যাঁ, শর্তগুলো অদ্ভুত বটে। তারপরও অনেক বিজ্ঞানী বলেন, অভিকর্ষ, মাধ্যম, এবং আরও দুয়েকটি বিষয়ের প্রভাব বাদ দিলেই নাকি বিশেষ আপেক্ষিকতার প্রভাবটি বাকি থাকবে শুধু। আর গণিতে বোধহয় অসম্ভব কিছু নেই! তবে গণিতে কোনোকিছু প্রমাণ হলেই তা বস্তুজাগতিক নাও হতে পারে।
১। আলো যদি তরঙ্গ বিবেচনা করি, তাহলে উৎসের বেগের উপর এর বেগ নির্ভর করা জরুরি নয়। যেমন, অ্যাম্বুলেন্স থেমে থাকুক আর দ্রুত চলতে থাকুক, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ একই গতিতে ছড়াবে চারদিকে। তরঙ্গের গতি নির্ভর করে তাকে বহনকারী মাধ্যমের গতি-প্রকৃতির উপর, উৎসের গতির উপর নয়। আলো শূন্য মাধ্যমে (!) চলতে পারার কারণেই যত জটিলতা।
২। আমরা প্রক্ষেপের যে সব সমীকরণ নিরূপণ করি, সেখানে x-অক্ষ সাধারণভাবে ভূপৃষ্ঠকে নির্দেশ করে। x-অক্ষ যেহেতু সরল রেখা, এর মানে হচ্ছে ভূপৃষ্ঠকে আমরা সমতল ধরে নিচ্ছি, যা পুরোপুরি সঠিক নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সমীকরণে আমরা ধরে নেই প্রক্ষেপকের বিভিন্ন বিন্দুতে অভিকর্ষীয় ত্বরণ, g-এর দিকগুলো সমান্তরাল। বাস্তবে অভিকর্ষ বলের রেখাগুলো সমান্তরাল নয় যেহেতু সবগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে মিলিত হয়। এ দুটি আসন্নীকরণের ফলে সমীকরণে আমরা পরাবৃত্ত পাই। কিন্তু আসলে উপবৃত্ত অধিকতর সঠিক। উপবৃত্তের আসন্নরূপে আমরা পরাবৃত্ত পাই।
৩। ভর না থাকলেও অভিকর্ষ ক্রিয়া করবে, যদি আমরা বিষয়টি General Relativity-এর আলোকে ব্যাখ্যা করি। এ তত্ত্বানুসারে বস্তুর উপস্থিতিতে তার চারপাশে স্থান-কাল বেঁকে যায়। সেই বক্রপথে আলোর গমন মানে আলো বস্তুটির অভিকর্ষ দ্বারা প্রভাবান্বিত হচ্ছে। বিষয়টি নিউটনিয়ান মেকানিক্সে ব্যাখ্যা করাও অসম্ভব নয়, তবে সেক্ষেত্রে সমীকরণের দুপাশকে ০ দিয়ে ভাগ দিতে হবে, যাকে তখন বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
৪। শেষ প্যারা আরও বিস্তৃত হবে পরের পর্বে। সাধারণভাবে বলতে গেল, গতিশীলতার আলাদা কোনো গুরুত্ব বা অর্থ নেই বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে। আপনি ট্রেন ভ্রমণ করছেন, এর মানে স্টেশনের সাপেক্ষে আপনি/ট্রেন গতিশীল। অন্যদিকে আপনার/ট্রেনের সাপেক্ষে স্টেশনটি উল্টোদিকে গতিশীল। সুতরাং গতির কারণে যদি সময় প্রসারিতই হয়, তা দুদিক থেকেই হতে হবে; অর্থাৎ স্টেশনে দণ্ডায়মান কোনো মানুষের হিসেবে আপনার ঘড়ি ধীর, এমনিভাবে আপনার হিসেবে স্টেশনে দণ্ডায়মান মানুষটির ঘড়িও ধীর। বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত নেই, একটি গতি আরেকটি গতির চেয়ে অধিকতর সত্য কিংবা অগ্রাধিকারযোগ্য।
সহজ টার্ম ব্যবহারের ইচ্ছে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু টার্ম ব্যবহার না করে পারা যায় না। সেগুলোর জন্য নিচে আলাদা সংজ্ঞা দিয়ে দেব।
ভালো কাটুক সময়।
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৩৭
আমি তুমি আমরা বলেছেন: চুলের সঙ্গে রুই মাছের দৈর্ঘ্যের এ সম্পর্কটি হচ্ছে বিশুদ্ধ গাণিতিক সমীকরণ, কিন্তু বাস্তবতা বিবর্জিত - বাস্তবতা বিবর্জিত কেন?
সমীকরনটা খুব সন্দরভাবেই রুই মাছ আর চুলের দৈর্ঘের সম্পর্কটা দেখাচ্ছে। সময়ের সাথে দুটোর দৈর্ঘ্যই বাড়ছে। ধ্রুবকগুলোর মান বের করে নিলেই সময়ের সাথে দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনটা খুব সহজেই বোঝা যাবে।
তাই না?
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:২৬
ম্যাভেরিক বলেছেন: বাস্তবতা হচ্ছে রুই মাছের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে চুলের দৈর্ঘ্যের কোনো কার্য-কারণ (cause-effect) বিশিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান নয়। একটির কারণে আরেকটি বাড়েও না কমে না। সুতরাং এটি অবৈজ্ঞানিক সমীকরণ, কারণ একটি ছাড়াই অন্যটি স্বাধীনভাবে নিরূপণ করা যাচ্ছে।
৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:১০
আমি তুমি আমরা বলেছেন: আচ্ছা, কিন্তু আমরাতো জানি আলোর দ্বৈত ধর্ম আছে। আলো একই সাথে তরংগ এবং কনা হিসেবে থাকে। তাহলে আলোকে কেবল তরংগ হিসেবে ধরে নিয়ে এর বেগ স্থির বলা হচ্ছে কেন? সেটা কি কেবলি ব্যাখ্যার সুবিধার জন্য?
০১ লা মে, ২০১৩ ভোর ৪:০৭
ম্যাভেরিক বলেছেন: হ্যাঁ, বর্তমানে আমরা জানি আলোর দুটি ধর্মই আছে। পরীক্ষণের উপর নির্ভর করে আলোকে আমরা কখনো পাই কণা হিসেবে, অন্য সময় পাই তরঙ্গ হিসেবে।
আলোর গতি যে সুনির্দিষ্ট, তা পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির মাধ্যমে প্রথমে প্রমাণ করেন বিজ্ঞানী ওলাফ রোমার। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ফিজো এবং ফুকো গতিটির সাংখ্যিক মান নির্ণয়ে বেশ সফলতা অর্জন করেন। প্রায় সমসাময়িককালে ম্যাক্সওয়েল তাঁর গবেষণায় তাত্ত্বিকভাবে (এবং ওয়েবার ও কোলরাউশের পরীক্ষণের উপাত্তের সাহায্যে) দেখতে পান যে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ শূন্যস্থানে এমন গতিতে চলে যার সঙ্গে ফিজো-ফুকোর আলোর গতির মানের বেশ মিল। তখন তিনি সঠিকভাবে ধারণা করলেন আলোও এক ধরণের তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ। এমনিতে আলো যে তরঙ্গ, তা ইয়ং-এর দ্বিচিড় পরীক্ষায় জোরালোভাবে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। সুতরাং আলো তরঙ্গরূপ, তার গতি সুনির্দিষ্ট এবং তা উৎসের উপর নির্ভর করে না, এ বিষয়গুলো মিলে ঐতিহাসিকভাবে আলোকে তরঙ্গ হিসেবে ব্যাখ্যা করাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য ছিল ঊনবিংশ শতাব্দিতে, বিশেষ করে হাইগেনসের তরঙ্গ তত্ত্বের বিপরীতে নিউটনের কণাতত্ত্বের প্রভাব ম্লান হয়ে গিয়েছিল যখন।
বিংশ শতাব্দিতে কণাতত্ত্ব আবার পুনরুজ্জীবিত হলো, ফোটনের মধ্য দিয়ে, তবে আলোর স্থির গতির ধারণায় এটি নতুন সমস্যা সৃষ্টি করল না, কারণ তাত্ত্বিকভাবে ফোটনের (নিজের প্রসঙ্গ কাঠামোয়) ভর শূন্য। সুতরাং আপনার ধারণায় সত্যতা আছে, ব্যাখ্যার সুবিধা, বিজ্ঞানের ইতিহাস, ফোটনের ভর, সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি আজকে এ পর্যায়ে।
তবে আলোর চূড়ান্ত রহস্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্ত থেকে আমরা এখনও অনেক অনেক দূরে।
৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:৩৯
আমি তুমি আমরা বলেছেন: চুল আর রুই মাছের ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। ধন্যবাদ
০১ লা মে, ২০১৩ ভোর ৪:৪৭
ম্যাভেরিক বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনাকেও, প্রাণবন্ত আলোচনার জন্য।
ভালো কাটুক সময়।
৬| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:২০
কলাবাগান১ বলেছেন: Theory of Einstein's Proved Right—Again
Click This Link
০১ লা মে, ২০১৩ দুপুর ১:০৯
ম্যাভেরিক বলেছেন: ভাই, দুঃখিত, আপনার মন্তব্যটি আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। আপনি পোস্ট না পড়ে অথবা অপ্রাসঙ্গিকভাবে কিংবা ফান করে লিঙ্ক দিয়েছেন।
ভালো থাকুন।
৭| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬
রমিত বলেছেন: বরাবরের মতই দুর্দান্ত!!!
০১ লা মে, ২০১৩ দুপুর ১:২১
ম্যাভেরিক বলেছেন: আপনার প্রেরণাদায়ক মন্তব্য লেখার শ্রমে সর্বদাই সম্মাননা।
৮| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: প্লাস ও প্রিয়তে! একসময় আপেক্ষিক তত্ত্ব সহ এই জগতের খুব ভক্ত ছিলাম! এখন সমীকরণে আর আগের মত মজা পাচ্ছিনা!
তবে রুই মাছের সাথে চুলের দৈর্ঘের সমীকরনের উদাহরণটা দুর্দান্ত হইসে! ধ্রুবকের একটা মান পাওয়া যাবে, পর্যবেক্ষনের জন্য পরীক্ষা করা যাবে, গাণিতিকভাবে শুদ্ধ, কিন্তু বাস্তবতায় ঠিক নাই! স্বীকার্যেই গলদ!
শুভকামনা!
০১ লা মে, ২০১৩ দুপুর ১:৫১
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা। মূল্যায়ন ও প্রিয়তের সম্মাননায় অনেক ধন্যবাদ।
আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে আপনার অনুভূতি বুঝতে পারছি। প্রথমে বিস্ময়কর মজার, পরে বাস্তব কঠিন।
হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। গণিতের সুবিশাল শক্তি থাকলেও, যৌক্তিক স্বীকার্য দিয়ে একে সুনিয়ন্ত্রণ করতে হবে আগে।
ভালো কাটুক সময়, সতত।
৯| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:১৩
ভারসাম্য বলেছেন: অর্ধেক সত্য তার অর্ধেক বিশ্বাস। কিছুই মিথ্যে নয় তবে বিশ্বাসে ভুলও হয়।
শুণ্য(!) মাধ্যমে আলোক কণার ভ্রমণ নাকি অজানা মাধ্যমের জ্ঞাত প্রতিক্রিয়া ক্ষেত্রের একেকটি বিন্দু(!)কে আলোক কণা হিসেবে চিন্তণ!
বাকী অর্ধেক সত্য বিজ্ঞান কখনোই প্রমাণ করতে পারবেনা এটা আমার ধারণা। ধারণা শুধু ভুলই নয়, কখনো কখনো মিথ্যেও হয়। শুধু ধর্মের বা রাজনীতির না্মেই নয়, বিজ্ঞানের নামেও মিথ্যে ধারণা ফেরী হয়। তাই আবার অনেকে পরম বিশ্বাসে গ্রহণও করে ফেলে।
এবারের লেখাটি আগের পর্বের চেয়েও বেশি উপভোগ্য মনে হয়েছে আমার কাছে। আসলে যতই ভাবি বুঝেছি কিন্তু বিপরীত বোধণের খঁচখঁচানি রয়েই যায়। সারাকার কথায় সেসবের কিছুটা উপশম থাকায়ই হয়তো উপভোগ্য লেগেছে বেশি।
৩ নং কমেন্টের উত্তরে বলা অংশটুকু অর্থাৎ কার্য-কারণ সম্পর্কের বিষয়টা লেখার মধ্যেই দিয়ে দেয়া যেতে পারে।
আগামী পর্ব কবে পাচ্ছি? আসলে বোঝানোর স্বার্থে প্রয়োজনীয় কিছু চিত্রের জন্যই দেরী হয় বেশি। তবে সেসব ছাড়া সাধারণ পাঠকগণের জন্য বিজ্ঞানকে সহজে বোধগম্য করে তোলা সহজ না। আমি নিজেও সাধারণ পাঠক হিসেবেই পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই একটু দেরী হলেও আপনার লেখার মান আমাদের মত সাধারণ পাঠকের বোধগম্যতা ও উপভোগ্যতার মাপে অনেক উঁচুতে অক্ষুন্ন থ্যাকুক এই প্রত্যাশা করি। শুভকামনা।
০১ লা মে, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭
ম্যাভেরিক বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ভারসাম্য, পোস্টের অলঙ্কার হিসেবে পেলাম।
আলোর ক্ষেত্রে আপনার ভাবনাটি গভীর অর্থময় ও যৌক্তিক।
বিজ্ঞানের নামে অবশ্যই মিথ্যা, অপবিজ্ঞান, কুসংস্কার ফেরী হয়, ইদানিং বেশিই হচ্ছে। অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানীলেখকও বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসিকে এক করে ফেলছেন। ফ্যান্টাসিতে সমস্যা নেই, তবে বিজ্ঞানের সঙ্গে তার পার্থক্য স্পষ্ট করে দেয়ার নৈতিক দায়িত্ব সেসব লেখকেরই, কারণ অনেক পাঠক পরম বিশ্বাসে সেগুলোকে বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করে ফেলে।
পোস্ট পরবর্তীতে পরিবর্ধিত করার সময় কার্যকারণ বিশিষ্ট সম্পর্কটি নিয়ে আরেকটু লিখব। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
শীঘ্রই পরের পোস্টের চেষ্টা থাকবে। আমার লেখায় আপনার সুন্দর আলোচনা ও অনুভব সমুন্নত থাকবে, নিজের কাছে এ-ই প্রত্যাশা।
১০| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০৩
না পারভীন বলেছেন: জটিল বিষয় ।
০১ লা মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬
ম্যাভেরিক বলেছেন: জটিল বিষয়ের হলেও পাঠ আনন্দময় হোক, এ-ই প্রত্যাশা।
১১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৮
কল্পবিলাসী স্বপ্ন বলেছেন: অসাধারণ ৭ম ভালো লাগা ।
আর আপনাকে ধন্যবাদ এই কারনে যে আপনি ২০১৩ এর মধ্যেই ২য় পর্বটি লিখেছেন
০১ লা মে, ২০১৩ রাত ৯:৩২
ম্যাভেরিক বলেছেন: আপনার উপস্থিতি ও মন্তব্য বরাবরের মতোই প্রেরণার। অনেক ধন্যবাদ, সঙ্গে থাকায়, মন্তব্যে মূল্যায়নে।
১২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:০৭
বৃষ্টি ভেজা সকাল ১১ বলেছেন: এসব পড়লে আমি পাগল হয়ে যামু
০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১২:০১
ম্যাভেরিক বলেছেন: তবু পাগল হন, কিছু পাগল মঙ্গলময়।
১৩| ০২ রা মে, ২০১৩ সকাল ১০:২৮
যান্ত্রিক বলেছেন: বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, এইচ এস সি-তে পড়ার সময় আলোর গতিবেগ ধ্রুব-এই কথাটি আমাকে অনেক ভুগিয়েছে। কিছুতেই এর বাস্তবতা পাচ্ছিলাম না।
যাই হোক, অনেক পরে এসে বুঝতে পেরেছি এটি কেবলই স্বীকার্য।
৩য় পর্বের অপেক্ষায় আছি।
দারুণ লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অঃটঃ একটা আবদার ছিলো। আপনার কাছে জিওসেন্ট্রিসিটি ও হেলিওসেন্ট্রিসিটি নিয়ে একটি লেখা চাই।
০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১:৩৪
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা। মন্তব্যে মূল্যায়নে অনেক ধন্যবাদ।
আলোর স্বীকার্যটি এমনকি অনেক বিজ্ঞানীকেও ভুগাচ্ছে বটে। আর আপনার দ্বিধা সঠিক: বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উপর অনেক কাজ হলেও, এ তত্ত্ব যে বাস্তবতাকে প্রকাশ করে (উদাহরণস্বরূপ আলোর বেগের সঙ্গে মানুষের বয়সের বাড়া/কমার কী সম্পর্ক), তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয় না।
আপনার আবদার রাখার ঐকান্তিক চেষ্টা থাকবে। ভালো থাকবেন।
১৪| ০২ রা মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩১
নস্টালজিক বলেছেন: পড়া শুরু করলাম! কিছু ব্যপার বোধের অগম্য কিন্তু পড়তে খুব ইন্টেরেস্টিং লাগছে! আর ম্যাভেরিক এর লেখনশৈলী নিয়ে তো কিছু বলার নাই!
শুভেচ্ছা, ম্যাভ!
ভালো থাকুন নিরন্তর!
০৩ রা মে, ২০১৩ ভোর ৪:৪৪
ম্যাভেরিক বলেছেন: পাঠে আনন্দই বড় কথা, আর তা লেখকের জন্যও প্রেরণার সম্মানের। ভালো লাগল আপনাকে দেখে।
১৫| ০৯ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:১১
রেজোওয়ানা বলেছেন: যদিও অনেক কিছুই বুঝতে অক্ষম হয়েছে আমার নিরেট মাথা, তারপরও পড়তে ভাল লেগেছে! নতুন কিছু জানতে শেখার আনন্দ অপরিসীম, আমার জন্য এখানে অনেক কিছুই নতুন নতুন ছিল....
আর আপনার এবং আমি তুমি আমরা' ভাইয়ের আলোচনাটাও উপভোগ্য ছিল, ফেইসবুকে শেয়ার দিলাম।
ভাল থাকুন 'স্যার!'
১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:০৮
ম্যাভেরিক বলেছেন: আপনার মূল্যায়ন লেখার প্রচেষ্টায় সর্বদা বড় সম্মাননা। ফেইসবুকে শেয়ার দেয়ার জন্যও অনেক ধন্যবাদ।
যেহেতু খসড়া ধরণের পোস্ট, বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা আরও স্পষ্ট হওয়ার অবকাশ থাকতে পারে। পর্বগুলো নিয়ে পরবর্তীতে বড় পরিকল্পনা আছে আমার,তাই যে অংশগুলো কঠিন মনে হয়েছে সেগুলো দয়া করে চিহ্নিত করে দিলে (কেবল যখন আপনার হাতে সময় থাকবে) কৃতজ্ঞ থাকব এবং চেষ্টা করব বর্ণনা পরিমার্জিত করতে।
ভালো কাটুক সময়।
১৬| ১০ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর। ভাল লাগলো ।
১১ ই মে, ২০১৩ রাত ২:০২
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা। মন্তব্যে অনুভবে অনেক ধন্যবাদ। আমার ব্লগে আনন্দময় হোক আপনার ভ্রমণ।
১৭| ১১ ই মে, ২০১৩ রাত ২:২১
বোকামন বলেছেন:
সম্মানিত ম্যাভেরিক,
আপনার পোস্ট মনসংযোগ ঘটালো আমার তত্ত্ব জগতে !!
দুর্বোধ্য বিষয়গুলোর প্রান্জল উপস্থাপন, কিন্তু মাঝে মাঝে আমার জ্ঞানের গতির সাথে পোস্টে তাল মিলাতে পারছিলুম না .....
সাধারন পাঠকের ভালোলাগা রেখে গেলুম
অপেক্ষায় থাকবো পরবর্তী পর্বের জন্য ......
১১ ই মে, ২০১৩ ভোর ৪:৪৫
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা। আপনার সহজ সুন্দর মন্তব্য, মূল্যায়ন পোস্টের জন্য বড় সম্মাননা।
কথা হবে আবারও। সতত সুন্দর কাটুক সময় আপনার।
১৮| ১২ ই মে, ২০১৩ ভোর ৪:৪৬
যাযাবরমন বলেছেন: অনেক দিন পর াপনার ২টি লেখা একসাথে পড়লাম। যথারিতি অনবদ্য। তবে সিরিজ শেষ করার পরে একসাথে সব পড়লে মনাহয় আরও ভাল করতাম
১৩ ই মে, ২০১৩ রাত ২:৫২
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা। ভালো লাগল দেখে।
সিরিজ শেষ করার পূর্বেই পড়ার জন্য অবশ্য ধন্যবাদ প্রদান ও ঋণ স্বীকার করছি।
১৯| ১৩ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯
যাযাবরমন বলেছেন: আপনার সবগুলো লেখাই আমার পড়া আছে, তার অনেকগুলোই কয়েকবার করে পড়েছি। কারন আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে।
১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১:০৪
ম্যাভেরিক বলেছেন: আপনাদের মূল্যায়নে, অনুভবে অর্থময় হয়ে উঠুক লেখার প্রচেষ্টা আমার।
২০| ১৩ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:৩০
সোহাগ সকাল বলেছেন: গেয়ানী পুস্ট!
১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৪৬
ম্যাভেরিক বলেছেন: কমেনতও!
ভালো কাটুক সময়।
২১| ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১:২৫
স্বপনবাজ বলেছেন: পরিপূর্ণ পোস্ট!
আপেক্ষিকতা তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাতীত হয়ে উঠেছে আজকাল!
পরের পর্বের অপেক্ষায় ...
১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ২:৩৩
ম্যাভেরিক বলেছেন: শুভেচ্ছা। মন্তব্যে অনুভবে অনেক ধন্যবাদ। আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে যেরকম ব্যাখ্যা করতে পারেননি বিশেষ আপেক্ষিকতাকে, একশ বছরেরও অধিককাল সময়ে একই ব্যাখ্যাতীত রয়ে গেছে বিষয়টি। আইনস্টাইনের মূল গবেষণাপত্রটি পড়লেই বিভ্রান্তির ক্রমবিকাশটি স্পষ্ট হয়, কিন্তু খুব কম মানুষই সেটি পড়ে দেখে।
২২| ১৬ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫
গোলাম দস্তগীর লিসানি বলেছেন: ভাই কৃতজ্ঞতা কীভাবে জানাবো, এমন একটা বিষয় এমনভাবে জানালেন... এইজন্যই গণিতবিদ, সেরা।
১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ২:৪৩
ম্যাভেরিক বলেছেন: আপনার মন্তব্য মূল্যায়ন সর্বদা বড় প্রেরণা ও সম্মাননা। আপনার প্রতিও অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ২:৪৫
ম্যাভেরিক বলেছেন: আপনার প্রথম মন্তব্যটির উত্তর দিতে গিয়ে ভুল ক্লিকে মন্তব্য উত্তর দুটোই মুছে ফেলেছি। দুঃখিত ও লজ্জিত, ভাই। অবশ্য মন্তব্যটি মনে রেখেছি।
২৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৫৫
আলফা-কণা বলেছেন: inshallah, pore porum,,,, cmntt maira rakhlam.,,,
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:২৭
ম্যাভেরিক বলেছেন: ধন্যবাদ, মন্তব্যে,পরে পড়ার প্রত্যাশায়।
ভালো কাটুক সময়।
২৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৯
শান্তির দেবদূত বলেছেন: "আপেক্ষিকতা তত্ত্বে গণিতবিদগণ হস্তক্ষেপ করার পর, আমি নিজেও একে আর বুঝে উঠতে পারছি না।" - হা হা হা, আইন্সটাইনই যদি এ কথা বলে তো আমার আর কি দোষ ?
এই পর্বটা একটু না বেশ কঠিন লাগল, আগের পর্বে যেটা বুঝেছিলাম সেটাই এবার তালগোল পাকিয়ে গেল
যে পর্যবেক্ষক কোনো ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির রয়েছে, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে দ্রুততর। অন্যদিকে যে পর্যবেক্ষক ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির নয়, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে ধীরে।' -- এটা তো ঠিকই আছে!
কিন্তু এর মানে হচ্ছে, বাবা দেখবেন সান্তার ঘড়ি ধীরে চলছে, সান্তা দেখবে বাবার ঘড়ি ধীরে চলছে। -- এটা কেন হবে? এটা তো ডিপেন্ড করবে কার সাপেক্ষে কে গতিশীল।
হকিং এর মন্তুব্য কেন অর্ধসত্য সেটা বুঝি নাই! উফ্, এ পর্বটা বড়ই গোলমেলে করে দিয়েছে মাথাটা!
২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৩৪
ম্যাভেরিক বলেছেন: তালগোলে সমস্যা নেই, বিশেষ আপেক্ষিকতা পুরো ব্যাপারটিই আসলে তালগোল, একশ বছরেও জট খোলেনি।
বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে, গতিশীলতার ক্ষেত্রে কোনো বস্তুর আলাদা বিশেষত্ব কিংবা বিশেষ মর্যাদা নেই। অর্থাৎ ম্যাভেরিক যদি প্ল্যাটফর্মের সাপেক্ষে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে আর শান্তির দেবদূত যদি ম্যাভেরিকের সাপেক্ষে ট্রেনে করে ২০ মিটার/সেকেন্ড বেগে উত্তর দিকে গতিশীল হন, তাহলে
(১) ম্যাভেরিক বলবে, "আমি স্থির, কিন্তু দেবদূতের গতি ২০ মিটার/সেকেন্ড, উত্তর দিকে।"
(২) দেবদূত বলবেন, "না, আমি স্থির, ম্যাভেরিকের গতি বরং ২০ মিটার/সেকেন্ড, দক্ষিণ দিকে।"
যেহেতু প্রত্যেকে অপরজনের সাপেক্ষে গতিশীল, সুতরাং ম্যাভেরিকের সাপেক্ষে দেবদূতের ঘড়ি ধীর, আর দেবদূতের সাপেক্ষে ম্যাভেরিকের ঘড়ি ধীর, ঠিক একই হারে, কারণ চিহ্ন ছাড়া বেগে আর কোনো পার্থক্য নেই, এবং সময় প্রসারণের সূত্রে আছে v^2। সুতরাং বিশেষ আপেক্ষিকতা যদি সত্য হয়, তাহলে সময় প্রসারণ ব্যাপারটি একটি বিভ্রমমাত্র, বাস্তব নয়।
২৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০০
শান্তির দেবদূত বলেছেন: ওয়াও! পুরাই বোকা বলে গেলাম!
একে অপরের সাপেক্ষে গতিশীল, তাই সময় প্রসারণ বিষয়টিই বিভ্রম! কিন্তু একটা ডকুমেন্টারী দেখেছিলাম কিছুদিন আগে, যে সময় প্রসারণ বিষয়টি প্রমানিত। কয়েকটি এটমিক ঘড়ি বিভিন্নমুখি প্লেনে তুলে এই পরীক্ষা করা হয়েছে। তারপর ভুমিতে থাকা ঘড়ির সাথে খুবই সুক্ষ্ণ পার্থক্য দেখতে পেয়েছে বিজ্ঞানীরা!
আচ্ছা, গতির এই বিষয়টা তিনটি অবজেক্টের মাধ্যমে হিসাব করলে কেমন হয়?
যেমন X, Y ও Z বস্তুগুলোর মধ্যে X ও Y স্থির কিন্তু Z গতিশীল, সেক্ষেত্রে X এর সাপেক্ষে Z গতিশীল এবং ভাইসভার্সা Z এর সাপেক্ষে X গতিশীল। কিন্তু Y কে রেফারেন্স হিসাবে ধরলে,
Y এর সাপেক্ষে Z গতিশীল, কিন্তু
Y এর সাপেক্ষে X স্থির। এই ক্ষেত্রে তো সময় প্রসারণ আর বিভ্রম হবে না।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:৩৬
ম্যাভেরিক বলেছেন: ডকুমেন্টারিটি পেলে একটু চেক করে দেখবেন, ১৯৭১-৭২ সালে হাফেলা-কিটিং-এর পরীক্ষাটি কি না? এটমিক ঘড়ি নিয়ে বিভিন্নমুখি প্লেনের পরীক্ষায় এটিই সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত। সে সময় পরীক্ষাটি পৃথিবী জুড়ে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল সময় প্রসারণের প্রমাণ হিসেবে। তবে তাদের অসংশোধিত উপাত্ত, যা অনেক পরে প্রকাশ করা হয়, নিরীক্ষা করলে দেখা যায়, ঐটি আসলে বোগাস প্রমাণ ছিল। আমি নিজে তাদের উপাত্ত চেক করে দেখেছি, যা শুধু প্রমাণ করে তাদের ঘড়িগুলো নির্ভরযোগ্য ছিল না, উল্টোপাল্টা আচরণ করেছে। অথচ এখনও বিভিন্ন বইয়ে, গবেষণাপত্রে নিয়মিত এর ঢাকঢোল পেটানো হয়।
পরবর্তীতে এরূপ আরও কিছু পরীক্ষা হয়েছে যেগুলো দাবি করে বিশেষ আপেক্ষিকতা প্রস্তাবিত সময় প্রসারণ অকাট্য। প্রথমত, পৃথিবী কিংবা প্লেন যেহেতু কোনো inertial reference frame নয়, এখানে হিসেবনিকেশ তুলনামূলকভাবে জটিল, যেখানে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। এছাড়া এ ধরণের পরীক্ষায় রহস্যজনকভাবে ভূপৃষ্ঠের (নিরক্ষরেখায়) ঘড়ির তুলনায় পূর্বদিকগামী ঘড়ির সময় ধীরতর হয়, পশ্চিমদিকগামী ঘড়ির সময় দ্রুততর হয়। ব্যাখ্যা দেয়া হয় এ বলে যে, হিসেবনিকেশগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রগামী হাইপোথেটিক্যাল Earth-centered inertial reference frame-এর সাপেক্ষে করা হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, Earth-centered inertial reference frame-এ কোনো ঘড়ি রাখা হয় না যার সঙ্গে বাকি ঘড়িগুলোর তুলনা করা যেতে পারে। এছাড়া ফ্রেমটি যেহেতু হাইপোথেটিক্যাল এবং ঘড়ি রাখতে হয় না, আপনি এর পরিবর্তে সূর্য কিংবা দূরবর্তী কোনো নক্ষত্রের মেরুবিন্দুও কল্পনা করতে পারবেন। সূর্যের সাপেক্ষে তখন সবগুলো ঘড়ির বেগ তো বেড়ে যাবে শত শত গুণ। কিন্তু আপনার সময়প্রসারণের সূত্র তো রয়ে গেল আগেরগুলোই! গোঁজামিলের শেষ নেই।
তবে সময় প্রসারণ নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত সমস্যাটি গণিতেরও ঊর্ধ্বে, আরও জটিল। বিভিন্ন গতিবেগের জন্য একই ঘড়ি/ঘড়ির কাঁটা যদি ধীরে বা দ্রুত চলে, এতে কি সময় প্রসারিত হয় নাকি ঘড়ির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে? প্রশ্নটিতে দার্শনিকতা আছে দেবদূত ভাই, আছে ভাবনার অবকাশ। সময় আসলে কী!
Y-এর সাপেক্ষে X স্থির → X ও Y-এর ঘড়ি একই গতিতে চলে
Y এর সাপেক্ষে Z গতিশীল → Z-এর ঘড়ি Y (ও X)-এর চেয়ে ধীর
যেহেতু পরম স্থির, পরম গতিশীল বলে কিছু নেই,
Z এর সাপেক্ষে Y গতিশীল → Y-এর ঘড়ি Z-এর চেয়ে ধীর
২৬| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৮
মালিহা মোস্তফা বলেছেন:
কিন্তু এর মানে হচ্ছে, বাবা দেখবেন সান্তার ঘড়ি ধীরে চলছে, সান্তা দেখবে বাবার ঘড়ি ধীরে চলছে।এখানে একজনের সাথে আরেকজন এর ঘড়ি ধীরে মনে হচ্ছে তাহলে মনে হওয়াটা কি শুধুমাত্র মনে হয় নাকি আসলেই এরকম যে সময় ধীরে যাচ্ছে এর ফলে তার বয়স আস্তে আস্তে বাড়ছে এরকম কি জিনিস গুলা অনেক গোলমেলে
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:১৮
*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: অর্ধেক পড়লাম। বুঝলাম সর্বাগ্রে প্রিয়তে রাখতে হবে। শীঘ্রই সম্পুর্ণ পড়া শেষ করব ইনশাল্লাহ।
২য় ভালোলাগা।