নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মাঝে মিশে থাকতে চাই, তবে কিভাবে শুরু করব তা ভাবতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়। তাই, গান কবিতা এগুলোর আশ্রয় নিয়ে চলি নিজেকে আড়াল করে।

মায়াস্পর্শ

মনের বিপরীতে পার করে এসেছি সহস্রকাল, হঠাৎ এক উদ্ভ্রান্ত অবয়বে বেঁচে থাকি এপার ওপার।

মায়াস্পর্শ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেত্রাঘাত

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০

বলছিলাম ২০০৭ সালের কথা। তখন ক্লাস টেন এ পড়ি । আমরা ফ্রেন্ড ছিলাম সাতজন। জিগরি দোস্ত , একজনের সাথে আর একজনের জোড়া দেওয়া যাকে বলে।
আমাদের পরিচয়টা বলে নেয় আগে। আসল নাম বলছিনা , তবে যে যেই নাম পরিচিত ছিল সেই নামগুলোই বলছি।

আমি তো আমিই (মিচকা শয়তান ) ,
মুরগি (সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করতো ) ,
বিগশো (৬ ফুট ৩ ইঞ্চি ),
পাগলা (কি করতো নিজেও বুঝতোনা আমরাও বুঝতাম না ),
রাজু ভাইয়া (সারাদিন রাজা বেলুন নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতো ),
কুতুবুদ্দিন (সবার ভুল ধরতে উস্তাদ ছিল , কিন্তু তার ভুল ছিল সবচেয়ে বেশি ),
পাঠা (বলবান ছিল অনেক, সারাদিন ফনিক্স সাইকেল নিয়ে ঘুরতো )
আমাদের গল্প গুলো একগল্পে লিখে শেষ করা যাবে না , একদিনের ঘটনা শেয়ার করছি আজ।
বৃহস্পতিবার। হাফস্কুল (অর্ধদিবস)।যে গরম পড়েছিল সেদিন, তা আসলে মেনে নেওয়ার মতো ছিল না। যদিও আমরা তারচেয়েও কম গরম পড়লেই পালিয়ে আমাদের এক গোপন পুকুরে (বুক অবধি পানি )লাফালাফি করতাম। নামতাম দুপুর একটাই , উঠতাম তিনটা তিরিশ এ। আধাঘন্টায় পরনের প্যান্ট শুকিয়ে চারটা তিরিশ এ বাসায় ঢুকতাম।
আমাদের স্কুলেও একটা পুকুর ছিল। অনেক বড় আর গভীর। আমরা পুলিশ লাইন্স স্কুল এ পড়তাম। স্কুলের পুকুরে স্টুডেন্টসদের জন্য নামা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। আমরা কেন জানি নিষিদ্ধের সাথে সখ্যতা করে বেড়াতাম।
তো সেদিন প্ল্যান করলাম , আজ স্কুলের পুকুরেই লাফঝাঁপ হবে। বন্ধুরা হাসিমুখে বরণ করে নিলো আমার প্রস্তাব। কি যে খুশি একেকজন লিখে প্রকাশ করা যাবে না। এদিকে আমার মনের মধ্যে চলে ভয় আর আতঙ্ক। প্রথম ভয়, কেউ সাঁতার পারি না (মুখে মুখে সবাই সাঁতরায়ে আটলান্টিক পারি দিচ্ছিলাম) । দ্বিতীয় ভয় , যদি ধরা পড়ি তবে হেডু ,মানে হেড স্যার যে খাতির যত্ন করবে তা সহ্য করার ক্ষমতা সবার হবে কিনা তা নিয়ে।
এর মধ্যে আর একজনের নাম আর পরিচয় তা না দিলে অপরাধ হয়ে যাবে। আমাদের চির শত্রু আলতাফ কাকা, স্কুলের দফতরি কিন্তু হাবভাব হেড স্যারের চেয়ও ব্যাপক। প্রথম দেখাতে অভিভাবকরা তাকে স্যার বলে ডাকে, আর স্টুডেন্টসরা ভেবে এটাই আমাদের হেডস্যার।
যাই হোক , বারোটায় স্কুল শেষ হলো। আমরা প্ল্যান অনুযায়ী গেলাম পুকুরপারে। চারিদিকে ফাঁকা , কেউ নাই। কয়েকজন পুলিশ এপাশ ওপাশ করে হেটে চলে গেলো। সুযোগ বুঝে সবাই নিজেদের কাপড় চোপড় খুলে শুধু আন্ডারপ্যান্ট পরে সুইইই করে নেমে গেলাম পানিতে।
পরনের কাপড় চোপড় সব যার যার ব্যাগের ভেতর রেখেছিলাম। তারপর শুরু হলো খেলা। কে কাকে কি করতেছে ধুলায় অন্ধকার। প্রায় ২ ঘন্টা পর দেখলাম সবার চোখ লাল। তখন উঠার সময় মনে করলাম। উঠতে উঠতে আরো ৩০ মিনিট পর উঠলাম।
সবাই যেন একেকটা পুরুষ মারমেইড। হঠাৎ রাজু ভাইয়া এসে বললো , পাগলা সবার ব্যাগ লুকায়ে রাখছে। পাগলা শুনে খেপে যেয়ে বললো, আমরা তো কেউ পানি থেকে উঠিই নি। তারপর সবাই যেয়ে দেখি সত্যি তো কারো ব্যাগ নেই। শুধু আন্ডারপ্যান্ট পরে বেশি দূর যাওয়ায় কষ্টকর। আশেপাশে কাওকে দেখিও না। পুলিশদের কোয়ার্টার থেকে কয়েকজন মহিলা চেয়ে চেয়ে আমাদের দেখছে। লজ্জায় হাসতেছিলাম সবাই। কি করবো কিছুই বুঝছিনা।
হঠাৎ আলতাফ কাকার সেই হারামি মার্কা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো কানে। '' আসেন স্যার আসেন , ঐযে শয়তানগুলান সব নেংটা হয়ে দাঁড়ায় আছে , আসেন। ''
ও মাহ,,, দেখি জিল্লুর স্যার মাথার ওপর একটা বেত হেলিকপ্টারের পাখারমতো ঘুরাতে ঘুরাতে আসতেছে। তার মুখে প্রশান্তির একটা হাসি , আর আমাদের ভেজা নগ্ন শরীর। খাপে খাপ একদম। স্যার এসেই শুরু করলেন , সাউন্ড টা এখনো মনে আছে , সপাং সপাং। বললো কানে ধরো সবাই , ধরলাম , মাফ চাইলাম। বললো হেডস্যার মাফ করবে। আমার ক্ষমতা নাই মাফ করার।
লাইন করে কান ধরে আন্ডারপ্যান্ট পড়া সাতজন চললাম হেড স্যারের রুমের উদ্দেশ্যে। সবার আগে আলতাফ কাকা , মাঝখানে আমরা সাতজন , পিছনে জিল্লুর স্যার। মাঝে মাঝে সাউন্ড আসছে ,সপাং সপাং। কোয়ার্টার থেকে মানুষজন আমাদের দেখে হাসছে , আমরাও হাসছি। লাইনের পেছনের জন হাসেনি। স্কুল এর গেট এ ঢুকতেই দেখি চটপটি আর ভুত মেডাম আমাদের দেখে সে কি হাসি। বললো,এদের লজ্জা হবে না। মনে মনে স্বীকার করে নিলাম।
কয়েকটা মেয়ে কি যেন কাজে স্কুলে ছিল, ওরাও আমাদের দেখে হাসতে লাগলো।
হেড স্যারের রুম এ যেয়ে দেখি সবার ব্যাগ গুলো এক কোনে রাখা। বললো, আলতাফ এগুলো না আনলে এদের ধরা মুশকিল হয়ে যেতো। হুজুর স্যার বসে আছে। স্যার কে সুইটি স্যার বলে ডাকতাম। মনে পরে তখনই হাসি পেলো আমার। হেসে দিলাম। স্যার উড়ে এসে আমায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো লজ্জা নাই তোর ? আবার হাসিস। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম । দেখি আমার স্বজাতি বন্ধুরাও কিছু অবাঞ্চিত শব্দ করে করে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। এটা দেখে হেড স্যার আর থাকতে না পেরে উঠে এলেন। চারটা বেত একসাথে নিয়ে সবাইকে বললেন, ওদিক হয়ে এদিক আয় , মানে দেওয়ালের দিকে ঘুরে দাড়া ,হাত দুইটা উপরের দিকে থাকবে সবগুলোর। পজিশন নিয়ে নিলাম কথামতো,নইলে টিসি দেওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। শুরু হইলো পিটান। মনে হলো সাপ হত্যা করতেছে লাঠি দিয়ে। আহা, আজও অনুধাবন করি সেই মাইর গুলো। একজনের একেক আর্তনাদ।
''ও স্যার গো আপনে বাপের মতো''
'ওমাঃ লাগিচ্ছে লাগিচ্চে ,"
''ভুল হয়ে গেছে ভুল হয়ে গেছে ''
''আর কোনোদিনও নামমু না পুকুরত , মাপ করে দেন ''
প্রায় ১০ মিনিট পর হেড স্যার থামলেন।
তাড়াতাড়ি কাপড় পরে স্কুল থেকে বের হয়ে সবাই আবার আমাদের পূর্বের সেই গলা অবধি পানির পুকুরে যেয়ে সেই মাইরের জ্বালা কমিয়েছিলাম। পরে পুকুর থেকে উঠে কার গায়েপাছায় কয়টা বেত্রাঘাতের দাগ হয়েছে সেগুলো গুনেছিলাম।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:০৬

মিরোরডডল বলেছেন:




হটাৎ বানানটা ঠিক করে নিবে, হঠাৎ হবে।

শুধু স্যার মেরেছিলো? বাসায় যাবার পর মা দেয়নি কয়েকটা কঞ্চি দিয়ে? দেয়ারতো কথা।


১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:২৯

মায়াস্পর্শ বলেছেন: সে আরেক ইতিহাস। চেয়ার এর সাথে বেধে পিটাইছিল। তারপর ওটা রেখে চুলার লাকড়ি দিয়ে দিছে।

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৩০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এখন বিষয়টি মজাদার লাগছে কিন্তু ঐ সময়ে যে চূড়ান্ত তিক্ততায় ভরা ছিল সে কথা বলাবাহুল্য।
দুইজন টিচারকে আমার ছাত্র জীবনে শিক্ষক না মনে করে জানোয়ার বলে আজো মনে মনে ধিক্কার দিয়ে যাচ্ছি।এক জন সন্তানহীন এক দিদিমনি।যিনি ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় বাবা সময়ে বই না কিনে দেওয়ার চেয়ারে বসার মতো করে থাকতে বাধ্য করায় ( আধ ঘন্টার মতো শাস্তি ) হেঁটে বাড়ি ফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলি।

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় স্কুল পালানোর জন্য টিআইসি স্যার বেত দিয়ে এতো জোরে মেরেছিল যে হাতের তালু থেকে কব্জির উপরে অনেকটা জায়গা কালসিটে পড়ে গেছিল।বাড়িতে গিয়ে জ্বর চলে আসে।এই দুইজন শিক্ষক/ শিক্ষিকা আমার কাছে জানোয়ারেরো অধম।


১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪২

মায়াস্পর্শ বলেছেন: মানুষ একসময় নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়। শিক্ষকরা বড় মানুষ , তারাও একসময় ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়। এভাবে আর বলেন না। শুনতে খারাপ লাগে। তবে আপনার সাথে যা করেছে তা ঠিক হয় নি। সমবেদনা জানাচ্ছি আপনার সাথে।
নিরন্তর ভালোবাসা জানবেন , সময় নিয়ে পড়েছেন আমার লেখা সেজন্য ধন্যবাদ ।

৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩

মিরোরডডল বলেছেন:



হটাৎ এ রাজু ভাইয়া এসে বললো

শব্দটা দুইবার বানান ভুল ছিলো, একটা এখনো ঠিক করা হয়নি।



২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭

মায়াস্পর্শ বলেছেন: করে নিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬

মিরোরডডল বলেছেন:




আমি দেখছিলাম না বললে 'এ' টা ঠিক করে কিনা, yes you did, good job :)


২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আপনি অনেক বিচক্ষণ B-)

৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দারুণ স্মৃতি চারণ। আগারে ! কি মাইর ই না দিল।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫৫

মায়াস্পর্শ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.