![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।
মহাভারত মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র দ্রৌপদী নামক এক রমণীর বস্ত্র হরণ করেছিল দুর্যোধন, দু:শাসন এবং তাদের ভ্রাতাগণ। দ্রৌপদীর আর্ত চিৎকারে সেদিন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। দ্রৌপদীর স্বামী পঞ্চ পাণ্ডবেরা সেদিন নীরবে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ দৃশ্য অবলোকন করেছিল কারণ তারা ছিল পরাজিত ও অক্ষম। দুর্যোধন, দু:শাসনদের বিরুদ্ধে তাদের কিছুই করার কিছুই ছিল না।উল্লাস করেছিল উপস্থিত জনতা। হয়তো হর্ষধ্বনি দিয়েছিল লাখো জনতা। দুর্যোধন, দু:শাসন নামক পুরুষদের বিরত্বই হল রমণীর বস্ত্র হরণে ! রমণীর বস্ত্র হরণেই তাদের পুরুষত্বে প্রতীক, বীরত্বের প্রতীক। এই দুর্যোধন, দু:শাসনেরা শুধু মহাভারত নামক মহাকাব্যের পাতায় নয় এদের উপস্থিতি যুগে যুগে, প্রাগৈতিহাসিক থেকে মধ্যযুগ ও এই আধুনিক যুগেও।মধ্যযুগে তো রাজ রাজা, জমিদারদের স্ত্রী ও রক্ষিতার সংখ্যা দেখেই তাদের পুরুষত্বের পরিমাণ নির্ধারণ করা হত। প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগে এমনকি আধুনিক যুগেও যুদ্ধক্ষেত্র, কোনো খেলার মাঠে, সাংস্কৃতিক কোনো অনুষ্ঠানে এমনকি তীর্থস্থানেও নারীরাই হয় পুরুষের প্রধান শিকার। মধ্যযুগে যুদ্ধক্ষেত্রে জয় পরাজয় যে পক্ষেরই হোক-এর প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী হত নারীরা। ধর্ষিত হত নারীরা, নির্যাতিত হত নারীরা, যৌনসঙ্গী হত নারীরা কারণ তারা গণিমতের মাল! তাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা ভোগ কর-একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অন্যতম স্লোগান এটি। এই স্লোগান বর্তমানে কঠোরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে, আফ্রিকার নাইজেরিয়ায়, সোমালিয়ায়।
ঢাকার টিএসসি এলাকাতেও এদের দেখা মিলেছিল বাঙ্গালীর একমাত্র সার্বজনীন উৎসব বর্ষবরণে। প্রায় ৫০ জনের একটি দল তিন ভাগে ভাগ হয়ে উপস্থিত মেয়েদের বস্ত্র হরণের উল্লাসে মেতে উঠেছিল। সেদিন দ্রৌপদীর আর্ত চিৎকারে কেউ সাড়া দেয়নি তেমনি সেদিনের দ্রৌপদীদেরও আর্ত চিৎকারে সাড়া দিতে এগিয়ে আসেনি তেমন কেউ। মিডিয়া এঘটনাটি প্রচার না করলে হয়তো আমরা কখনই তা জানতেই পারতাম না । যাইহোক, প্রাচীন ও মধ্যযুগের তুলনায় মানুষ অনেকটা সভ্য হয়েছে বটে কিন্তু ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থার দরুণ কারো কারো কাছে নারীর বস্ত্র হরণই যেন এখনও পুরুষত্বে প্রতীক-ঢাকার টিএসসির উক্ত ঘটনাটি একটি উৎকৃষ্ট প্রমান ! বর্তমান সভ্য ভাষায় এদেরকে আমরা বখাটে বলি। এই বখাটেরা একদিনে বা রাতারাতি সৃষ্টি হয় না । এজন্য দায়ী মূলত ভোগবাদী সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থা। দায়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাও। যেহেতু ঘটনাটি টিএসসি এলাকায় সেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর দায় এড়াতে পারে না তেমনি দায় এড়াতে পারে না প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও সংগঠন যাদের ছত্রচ্ছায়ায় এই বখাটেরা লালিত ও পালিত।
নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে রমণীর বস্ত্র হরণই হল ধর্মান্ধ এবং ভোগবাদী পুরুষ সমাজের অন্যতম লক্ষ্য-কখনও তা হয় আধুনিকতার নাম দিয়ে আবার কখনও তা হয় নোংরামি তথা অপসংস্কৃতির নামে। নারীর বস্ত্র হরণ বা বস্ত্র অপসারণ করে মূলত দুটি গো্ষ্ঠী। একটি হল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আর একটি হল ভোগবাদী গোষ্ঠী যাদের কাছে ত্যাগ নয় ভোগই প্রকৃত সুখ ! এই দুই গোষ্ঠীই মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পুরুষের কাম চরিতার্থ ও মনোবাঞ্চনা পুরণ করতেই নারীর সৃষ্টি। ভোগবাদী সমাজে নারীরা যেমন পণ্য হিসাবে উপস্থাপিত হয় তেমনি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নারীকে দেখে শুধু সন্তান উৎপাদনের কারখানা ও ভোগ্য বস্তু হিসাবে।এই দুটিই গোষ্ঠীই নিজের সংস্কৃতিকে বিকিয়ে দিয়ে বিদেশী সংস্কৃতি প্রবর্তন করতে বদ্ধ পরিকর। এই দুটি গোষ্ঠী মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক হলেও উক্ত ঘটনায় কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খুঁজে দেখা দরকার।সংস্কৃতিকে যখন অপসংস্কৃতিতে পরিণত করা যায় তখন স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। কারণ যুবকেরা হয়ে পড়ে নেশাগ্রস্থ, নারীরা হয়ে পড়ে পন্য, ভোগই হয়ে পড়ে সবার চুড়ান্ত লক্ষ্য। তখন সহজেই সেই জাতিটাকে বশ করা যায়। শুধু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলেই হয় না এই দুটিকে একসাথে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন মানসিক উন্নতিও। এ পরিস্থিতি উত্তরণে স্বল্প মেয়াদের পদক্ষেপ হিসাবে বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আবশ্যক তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে উৎপাদনমুখী সমাজ, রাজনৈতিক ও শিক্ষা ব্যবস্থা গঠনে জোর দেওয়া অতি জরুরী।
©somewhere in net ltd.