![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্রমজীবি মানুষের চোখের এক ফোঁটা জল মুছে দেয়া আমার নিরন্তর প্রয়াস....
‘না’ এবং ‘না’ এই ধ্বনি উচ্চারণের মাধ্যমে বাঙালীর রাজনীতি শুরুই হয়েছিল । ১৯৪৮ সালে কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জিন্নাহর ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্রদের ‘না’ উচ্চারণ ছিল পাকিস্তানী শাসক শ্রেনীর বিরুদ্ধে প্রথম নঞর্থক সূচনা। ১৯৫৬ সালে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর ইতিহাসখ্যাত উচ্চারণ ‘ওয়া আলাইকুমু আস্সালাম’ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির কাছ থেকে বাঙালীর স্বাধিকার অর্জনের সবচেয়ে দৃপ্ত বাণী - যা পাকিস্তানী রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতি বড় একটি নঞর্থক উচ্চারণ। বলা যায়, পরাধীন কাঠামোয় বাঙালীর রাজনীতি বিকশিত হয়েছিল বিরুদ্ধবাদের ওপর ভিত্তি করে। প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করে, প্রতিবাদ আর ‘না’ সূচক ধ্বনিকে সঙ্গী করে। পাকিস্তানের ২৪ বছরে বাঙালী ‘না’ বলাতে জয়ী হয়েছে, যার একটি পর্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।
পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে এটি ছিল ঐ রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া, স্বাধিকার অর্জনে ও সামগ্রিক মুক্তির লক্ষ্যে, যেখানে রাজনীতি ও জনগন সমার্থক হয়ে উঠবে, আর ‘না’ ধ্বনি উচ্চারণ করবে না, ‘হ্যাঁ’ বলবে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে। কিন্তু পাকিস্তানী ধারায়, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম বিকশিত করতে বাঙালী প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গার যে সামর্থ্য অর্জন করে, স্বাধীন দেশে তাদের নির্বাচিত শাসকরা তার বিপরীতে রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান গঠনের সামর্থ্যটি অর্জন করতে পারেনি। সেখানেও ঐ নঞর্থক ধ্বনির প্রধান্য পেয়েছে- ৪৩ বছরে রাষ্ট্রের অর্জন সকলের ভালভাবে জানা রয়েছে। এই রাজনীতি শুরু থেকে ‘না’ নামক নেতিবাচক ধারায় বেড়ে উঠেছে, বিকশিত হয়েছে। যা ছিল পাকিস্তানী কাঠামোয় ইতিবাচক এবং স্বাধীন দেশে আত্মবিধ্বংসী। এখনও এখানে যে যত বেশি ‘না’ বলতে পারছে, হাঁক-ডাক দিতে পারছে, তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারছে - তার পক্ষেই সমর্থন সৃষ্টি হচ্ছে। এই সমর্থনও নেতিবাচক। কারণ যুক্তিপ্রবণ এবং উদার রাজনীতির বিকাশ ঘটেনি, যতটা ঘটেছে বিরুদ্ধবাদীতার রাজনীতি।
নানান ফর্মে ও বর্মে বিদ্বেষপ্রবণ এই রাজনীতি টেনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনও গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতন্ত্র অথবা সামরিক মোড়কে বহুদলীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে গত ৪৩ বছর ধরে। আদর্শহীন, অনুদার এবং দর্শনবিহীন রাজনীতি দেশের নিয়তি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে শক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভিতের ওপর দাঁড়ানো যায়নি। রাজনীতিতে নেতিবাচক ও আত্মবিধ্বংসী চর্চা একুশ শতকের শুরুতেই জাতিকে নিক্ষিপ্ত করেছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াল অনিশ্চয়তায়। আর এই যাত্রায় রাজনীতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে উন্নয়ন শব্দটি। বলা হচ্ছে, গণতন্ত্র না উন্নয়ন? ক্ষমতাসীনরা জানাচ্ছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। এজন্য ‘ভিশন ২০২১’ বা ‘ভিশন ২০৪১’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, দিনবদলের অঙ্গীকার’। কখনও মালয়েশিয়া মডেল, কখনও দক্ষিণ কোরিয়া এবং ২২ বিলিয়ন রিজার্ভের আত্মপ্রসাদ! কিন্তু এই উন্নয়ন ছবক বা মাতমে রয়েছে মস্ত বড় ফাঁক।
রাজনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও সমাজতত্ত্ববিদরা জানাচ্ছেন, সমষ্টির উন্নতি হচ্ছে রাষ্ট্রের উন্নতি। রাষ্ট্র কতোটা গণতান্ত্রিক, কতোটা বৈষম্যহীন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি কতটা শক্তিশালী এবং রাজনীতি কতোটা সুস্থিত-উন্নয়নকামী বা কল্যাণকামী, রাষ্ট্রের পরিমাপক হচ্ছে সেইগুলি। সেই রাষ্ট্রই অধিকসংখ্যক নাগরিকের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করে। সুতরাং যে ফাঁকটির কথা বলা হয়েছিল উন্নয়ন মাতমে, সেটি হচ্ছে এই রাষ্ট্রে উন্নয়ন ঘটছে কতিপয়ের। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কতিপয় মানুষকে এবং এই উন্নয়ন সৃষ্টি করছে কতিপয়তন্ত্রের। ফলে এই উন্নয়ন যত চোখধাঁধানো হোক না কেন, তা ফারাক সৃষ্টি করে দিচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে। জন্ম নিচ্ছে আরও বৈষম্য। সম্পদের পাহাড় গড়ে শীর্ষে অবস্থান নিচ্ছে কতিপয়ের দল, নিচে পড়ে থাকছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন। এই জনগনকে ঠেকিয়ে রাখতে দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্রহীনতা প্রয়োজন, রাজনৈতিক সুস্থিতির বদলে অস্থিতি প্রয়োজন। সেজন্য কতৃর্ত্ববাদী শাসন কায়েম করা ছিল জরুরী। এই শাসনে চোখ ধাঁধানো অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটতে পারে, পারে না সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনকে সুবিধা দিতে। উন্নয়ন তাত্ত্বিকরা সেজন্যই বলেন, Political Development along democratic development is as important as economic development.
©somewhere in net ltd.