![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
টরোন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বের হয়ে এল নাফিস। পুরো নাম তার চৌধুরী নাফিস শরাফত। বাংলাদেশের জাঁদরেল ব্যাংকার। হাতে একটা ছোট্ট ট্রাভেল ব্যাগ।
'কানাডার সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম বিমান বন্দর এটা অথচ কত সুন্দর ব্যবস্থাপনা' - মনে মনে ভাবে নাফিস। সে যতটুকু জানে কানাডার চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী লিস্টার বি. পিয়ারসনের নামে নামকরণ করা হয়েছে এই বিমন বন্দটির। এখানকার সবকিছু দেখে নাফিস মুগ্ধ। এর সাথে নিজের দেশের বিমান বন্দরের তুলনা করলে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়।
'আমরা হয়তো টাকার জন্য অনেক কিছুই করতে পারি না। কিন্তু অব্যবস্থাপনাগুলো মেনে নেয়া যায় না'- মনে মনে ভাবে নাফিস। সে বেশ কিছু দেশে গেছে। নিজের দেশের সাথে তুলনাটা এসেই যায় মনে। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের আষাঢ়-শ্রাবন মাসের মত মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে ট্যক্সিস্ট্যান্ডে চলে এলো নাফিস। এখানে লিমুজিনসহ ভাল ট্যাক্সি সার্ভিস আছে। কিন্তু তার হোটেলটা অনেক কাছে হওয়াতে একটা ছোট কাল ক্যাবই নিয়ে নিল নাফিস। নাফিস আগেই একটা হোটেলে বুকিং দিয়ে রেখেছিল। টরোন্টোর মিসিসগা এলাকার কারোগা ড্রাইভে হোটেলটির অবস্থান। নাম হিলটন গার্ডেন ইন।
ক্যাব ড্রাইভার বেশ চটপটে লোক আর চমৎকার ঝকঝকে ইংরেজীতে কথা বলল তার সাথে। দেখে মনে হচ্ছে 'অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ান হব'। 'কে জানে বাঙালীও হতে পারে - ভাবে নাফিস।'
ক্যাবে উঠে বসল নাফিস। হোটেলটা এখান থেকে দুই তিন কিলোমিটার হবে বলেছে তার বন্ধু টুলু । নাফিসের অনেক কাছের বন্ধু বাংলাদেশী শিল্পী আশিকুজ্জামান টুলু টরন্টোতে অতি পরিচিত নাম। তার মাধ্যমেই এই হোটেলটা বুকিং দিয়েছে নাফিস।
এয়ারপোর্ট রোড ধরে এগোতে শুরু করল ক্যাব। ড্রাইভার বাঙালী কিনা এই সন্দেহ দূর করার জন্য নাফিস বাংলায় বলল, 'গান লাগানতো ড্রাইভার ভাই।'
ড্রাইভার পরিষ্কার বাংলায় বলল, 'রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাব?'
'আপনি বাঙালী?'
'হুম।'
'তাহলে এতক্ষণ যে ইংরেজীতে কথা বললেন।'
'আমি কীভাবে নিশ্চিত হব যে আপনি বাঙালী!' বলে হাসল ড্রাইভার। তারপর রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজিয়ে দিল-
"আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী
তুমি থাকো সিন্ধুপারে, ওগো বিদেশিনী ।।
তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে, ওগো বিদেশিনী ..................."
ক্যাবটা এয়ারপোর্ট রোড থেকে বামে মোড় নিয়ে ব্রেসলার ড্রাইভে উঠল। ব্রেসলার ড্রাইভ পার হয়ে ক্যাম্পাস রোডে উঠে বামে মোড় নিল। বেশ প্রশস্ত রাস্তা। রাস্তার দুই পাশেই আধুনিক হাইরাইজ বিল্ডিং আছে তবে বেশ ফাঁকা ফাঁকা। একতলা স্থাপনাও প্রচুর। প্রচুর ফাঁকা জায়গা আর সবুজের সমারোহ চোখে পড়ার মত। রাস্তায় নানা রকম গাড়ি চলছে। সি. স্মিথ বাস লাইনের কয়েকটা বাস ছাড়া আর কোনো বাস কিংবা ট্রাক চোখে পড়েনি অবশ্য রাস্তায়। বিমানে কম্বলটা গায়ে দিয়ে একটানা ঘুমিয়েছে নাফিস। তাই এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে।
চলতে চলেতই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এত ঘন বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় পানির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্যাক্সিটি। ভেতরে চলছে সেই গান:
"আমি আকাশে পাতিয়া কান, শুনেছি শুনেছি তোমারি গান,
আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ, ওগো বিদেশিনী ।
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে, আমি এসেছি নূতন দেশে,
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে, ওগো বিদেশিনী ।। "
প্রশস্ত ক্যাম্পাস রোড ধরে কিছুটা এগোনোর পর ডানে মোড় নিয়ে কারোগা ড্রাইভে উঠল ক্যাব।কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেল হোটেলে।
হোটেলের রুমটা বেশ পছন্দ হয়েছে নাফিসের। রুম সার্ভিসে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল কর্ণফ্লেকস উইথ কোল্ড মিল্ক আর কফি দেয়া যাবে কিনা। নাস্তা করা দরকার কিন্তু অন্য কিছু খেতেও ইচ্ছে করছিল না। রুম সার্ভিস থেকে জানানো হয়েছিল যে দেওয়া যাবে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমে পৌঁছে দেওয়া হয় তার অর্ডার।
কফিটা শেষ করে সে তার সেই কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি ডায়াল করল। যার সাথে দেখা করতে নাফিস ছুটে এসেছে এখানে, সুদূর ঢাকা থেকে কানাডার টরোন্টোতে। প্রায় সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করল শুভ্রা -
'হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো........ হু দ্যা হেল ইজ দেয়ার ইন সলেম সাইলেন্স .......হ্যালো ..........।'
ফোর ধরে হ্যালো করতে থাকল শুভ্রা। কিন্তু হঠাৎ নাফিসের কী হয়ে গেল। এই সময়েই নাফিসের ভেতরের দ্বিধাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সবকিছু কেমন জানি লাগছে। নাফিস বুঝতে পারছে না কাজটা ঠিক হবে কিনা। মনে পড়ছে তার নিজের সুখি সংসার আর সহজ সরল স্ত্রীর কথা। নিষ্পাপ সন্তানের মুখ ভেসে উঠল চোখের সামনে। না, তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল - দেখা করবে না সে শুভ্রার সাথে। তারপর রিসিভারটা নামিয়ে রাখল ক্রেডলে।
মানুষের মন কখন যে কী ভাবে বুঝা মুশকিল! যার জন্য এতটা পথ পাড়ি দিল সে ফোন ধরার পরও কথাটা পর্যন্ত না বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল নাফিস!
দুই.
"করেছিলাম চাউনি চয়ন হ'তে তোর,
ভেবেছিলুম গাঁথব মালা - পাইনে খুঁজে ডোর!
সেই চাহনি নীল-কমল
ভ'রল আমার মানস-জল
কমল-কাঁটার ঘা লেগেছে মর্ম-মূলে মোর
বক্ষে আমার দুলে আঁখির সাতনরী-হার লোর!
আসার সময় কবি নজরুলের 'ছায়ানট' কাব্য গ্রন্থটি সাথে করে নিয়ে এসেছিল নাফিস। পড়তে গিয়ে দাঁত ভাঙ্গার অবস্থা। 'এতো কঠিন কবিতা এখন পড়া যাবে না। টুলুকে ফোন করা দরকার। দুইটা দিন আচ্ছা মত ঘুরতে হবে' - মনে মনে ভাবে নাফিস। তারপর টুলু অর্থাৎ তার বন্ধু শিল্পী আশিকুজ্জামান টুলুর সেল নাম্বারে ডায়াল করে নাফিস। রিং হচ্ছে। জানালার কাছে এসে দাঁড়ায় নাফিস। পর্দাটা সরিয়ে বাইরে তাকায়। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে- ক্যাটস এন্ড ডগস রেইন।
২৪ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ আবু হেনা ভাই। আলোতে পড়েছেন............
২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬
হানিফ রাশেদীন বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।
২৪ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪
হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে...................
৩| ২৪ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৯
কালীদাস বলেছেন: ঝরঝরে লেখা...
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩২
হামিদ আহসান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ .........................
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চ্যাম্পিয়নের মতোই লেখা। হাঃ হাঃ হাঃ। গল্পটি কী আগে পড়েছি?
ধন্যবাদ, হামিদ ভাই।