নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হামিদের ব্লগ

হামিদ আহসান

ভবের এই খেলাঘরে খেলে সব পুতুল খেলা জানি না এমন খেলা ভাঙে কখন কে জানে ...

হামিদ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত সেই গো-ধূলী বেলায়

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৬

কংক্রিটের জঙ্গলের এই নাগরিক জীবনে গো-ধূলী বলে কিছু নেই। তবে সময়টা সত্যি অদ্ভুত! কী ইট পাথরের শহর, কী সত্যিকার গো আর ধূলিসমৃদ্ধ গ্রাম, সময়টা সবখানেই অদ্ভুত। এমনই এক গো-ধূলী মুহূর্তে একটি সাদা কবুতর কোথা থেকে উড়ে এসে বসেছে বালিকাটির সামনে। বালিকা ওটাকে ধরতে চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু যখনই ধরতে যায় তখনই কবুতরটা লাফ দিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসে। কবুতরের সাথে সমান তালে লাফিয়ে লাফিয়ে ওটাকে ধরতে চাইছে বালিকা। এ যেন এক খেলা। বালিকাটি খিলখিলিয়ে হাসছে আর খেলছে কবুতরটির সাথে। জন্মের পর কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই রূপোজীবী হয়ে যাওয়া এই বালিকাটিকে আমি আগে কখনও হাসতে দেখিনি!

এই বালিকাটির সাথে মাঝে মাঝেই আমার দেখা হয়। মাঝে মাঝে না, বলা যায় প্রায় প্রতিদিনই তাকে দেখি আমি। অফিস থেকে ফেরার পথে কোনো পড়ন্ত বিকেল কিংবা বিষণ্ণ সন্ধ্যায় পলাশী মোড়ে ঢুকার একটু আগে কিংবা ছুটির দিনে বিকেলে শাহবাগের পথে পলাশীর মোড়টা যখন পাড় হই মায়াবি মুখের এই কিশোরীর সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। চোখ দুটোতে কী এক কষ্ট! নাকি ক্লান্তি? হতে পারে দুটোই। ভাল করে কখনও তাকাতে পারি না অামি ঐ চোখ দুটোর দিকে!

বালিকাটিকে আমি অনেক দিন থেকেই জানি; অনেক ছোট থেকে কিংবা হয়ত জন্মের পর থেকেই। এখানটায় ফুটপাতে ছালা-পলিথিনের ছাউনিতে কয়েক ঘর ছিন্নমূল মানুষের বসতি ছিল। কিছু বাচ্চা-কাচ্চা হুটোপুটি করত সব সময়। হঠাৎই একদিন একটি ফুটফুটে মেয়ে বাচ্চা আমার নজর কাড়ল। এধরনের বাচ্চা ফুটপাতে দেখা যাওয়ার কথা না৷ আমি চমকে উঠি! এ বাচ্চা এখানে কেন! এই বাচ্চার তো অন্তত মধ্যবিত্তের ঘরে থাকার কথা! এরপর থেকে রিকশায় বা হেঁটে ঐ জায়গাটা পাড় হওয়ার সময় আমি বাচ্চাটাকে লক্ষ্য করি। দেখি বাচ্চাটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে৷ আর দেখি আশেপাশে শকুনের শ্যেন দৃষ্টি!

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে দেখি কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে দিয়েছে সেই ঝুপড়িঘরগুলো। জায়গাটা পরিস্কার করে ফেলা হয়েছে৷ তারপর অনেকটা সময় কেটে যায়। হয়ত এক বছর দুই বছর কিংবা হতে পারে ছয় সাত মাসও। আমার ভাল করে মনে নেই। সেই পথে আমার যাওয়া আসা আগের মতোই ছিল। এখানে প্রাচীন কিছু গাছ আছে। বিশাল বিশাল তাদের কান্ড! একদিন দেখি প্রকান্ড একটা কড়ই গাছের গোড়ায় পলিথিনের অাড়াল দিয়ে নতুন করে একটা ঝুপড়ি তৈরী করা হয়েছে। ঝুপড়িটা থেকে একটু দূরে বসে সেই বালিকাটি আয়না দেখে ঠোঁট রাঙ্গাচ্ছে আর তার মা ছাউনীর পাশে বসে পান খেতে খেতে একটা লুঙ্গি পরা লোকের সাথে কথা বলছে।

সেই থেকে আবার প্রতি দিন দেখা হতে লাগল বালিকাটির সাথে। ফুটপাতের উপর প্রাচীন গাছের গোঁড়ায় রূপের পসরা নিয়ে বসে থাকে। তবে মায়াকাড়া চোখ আর নিষ্পাপ মুখয়াববের এই বালিকাটিকে আজই আমি প্রথমবারের মতো হাসতে দেখলাম। গো-ধূলীর এই রহস্যময়তার সাথে বালিকার হাসির শব্দ আমার ভেতরে কী এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে! ঈশ্বরের প্রতি আমার মনে কেমন ক্ষোভ তৈরী হয়! আমার মনে হয় সব দোষ ঈশ্বরের। আমি তাই ঈশ্বরকে প্রশ্ন করতে গেলাম, হে ঈশ্বর! কেন এই বালিকাটিকে একটি নিরাপদ ঘর দিলে না, মমতাময় একটি পরিবার দিলে না! কিন্তু প্রশ্নটি করতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম। বলা যায় লজ্জায় পড়ে আমি শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটি করতে পারলাম না। কারণ আমার আশঙ্কা হল, ঈশ্বরও আমাকে এই একই প্রশ্ন করে বসবেন! তিনি বলে বসবেন, তোমার কি কিছুই করণীয় ছিল না? তোমার দায়িতটুকু পালন করে এসেছো কি?

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১২

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: বাহ্ বেশ ভাল লিখেছেন।এক কথায় অসাধারণ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০২

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ..

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: হে ঈশ্বর! কেন এই বালিকাটিকে একটি নিরাপদ ঘর দিলে না, মমতাময় একটি পরিবার দিলে না! কিন্তু প্রশ্নটি করতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম। বলা যায় লজ্জায় পড়ে আমি শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটি করতে পারলাম না। কারণ আমার আশঙ্কা হল, ঈশ্বরও আমাকে এই একই প্রশ্ন করে বসবেন! তিনি বলে বসবেন, তোমার কি কিছুই করণীয় ছিল না? তোমার দায়িতটুকু পালন করে এসেছো কি? --------------

শুধু ঈশ্বর নয়, সমাজও নয়, বিবেকের কাছেও যেন দায়বদ্ধতা থেকে যায়!!!!
অনেক ধন্যবাদ হামিদ ভই!!!!

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩

হামিদ আহসান বলেছেন: অাপা অনেক ধন্যবাদ ৷ ভাল থাকুন ..

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: একটা আশ্চর্য জিনিস খেয়াল করলাম, মেয়েটার চোখ নিষ্পাপ| মিষ্টি একটা মেয়ে বলেই কিন্তু গল্পের মূলচরিত্রের তার প্রতি করুণা জন্মছে| যদি কুৎসিত কেউ হতো? আজব আমাদের মন!
বেশ ভালো লেগেছে গল্পটা

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অাপনাকে৷ ভাল থাকুন ..

৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৪৭

আমিনুর রহমান বলেছেন:


গল্পের ছলে একটা রূহ সত্যের চিত্র তুলে ধরেছেন।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

হামিদ আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ৷ ভাল থাকুন ..

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:০৮

মামুন রশিদ বলেছেন: দারুণ! অল্পতে খুব চমৎকার লিখেছেন ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই৷ ভাল থাকুন ...

৬| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর +

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১৪

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সেলিম ভাই ..

৭| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৪

প্রামানিক বলেছেন: গল্পে গল্পে একটি বাস্তব সত্য তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ হামিদ ভাই।

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১৫

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই৷ ভাল থাকুন ....

৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১০

হামিদ আহসান বলেছেন: ..

৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪২

আহমেদ জী এস বলেছেন: হামিদ আহসান ,




কংক্রিটের জঙ্গলের এই নাগরিক জীবনে সময় বড় অস্থির । ধূলোবালির মতো শহরের বাতাসেও ছড়িয়ে যায় সে অস্থিরতা ।
তেমন অস্থির সময়ের এক মনের দেখা পেলুম এই গল্পে ।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ..

১০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯

হামিদ আহসান বলেছেন: ..

১১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

কিরমানী লিটন বলেছেন: আরণ্যক রাখাল বলেছেন: একটা আশ্চর্য জিনিস খেয়াল করলাম, মেয়েটার চোখ নিষ্পাপ| মিষ্টি একটা মেয়ে বলেই কিন্তু গল্পের মূলচরিত্রের তার প্রতি করুণা জন্মছে| যদি কুৎসিত কেউ হতো? আজব আমাদের মন!
বেশ ভালো লেগেছে গল্পটা

মুগ্ধ ভালোলাগার গল্প-চমৎকার

শুভকামনা সতত ...

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৬

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৷
শুভেচ্ছা নিরন্তর জানবেন ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.